রাবির নতুন একাডেমিক ভবন হবে হিমেলের নামে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের নাম নিহত শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলের নামে হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলার মাঠে আয়োজিত শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের এক বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দশটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- নিহতের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহত শিক্ষার্থী রায়হান প্রামাণিকের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবন ও ওই রাস্তা হিমেলের নামে নামকরণ করা এবং রাস্তায় একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার করা, রাস্তা ঠিক না করা পর্যন্ত কন্সট্রাকশনের সকল কাজ বন্ধ রাখা, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা, মেইন গেইট ও বিনোদপুর গেইটে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া, বোটানিক্যাল গার্ডেনের অভ্যন্তরের বন্ধ রাস্তাটি পূনরায় উন্মুক্ত করা এবং আহত রিমেলের ক্ষতিগ্রস্ত মোটরসাইকেলের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের নাম হিমেলের নামে করা হবে। হবিবুর হলের পাশের ওই রাস্তাটিও তার নামে দেওয়া হবে। তাছাড়া ঘটনাস্থলে হিমেলের একটি স্থায়ী স্মৃতিফলক তৈরি করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
দাবিগুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে উপাচার্য বলেন, প্রথম দাবির বিষয়ে কোনো কথা দিতে পারছি না। বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করছি। এছাড়া এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ড্রাইভার ও হেলপারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সাবেক প্রক্টরকে অব্যাহতি দিয়েছি আমরা।
অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা হিমেলের মায়ের কাছে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছি। তার মায়ের নামে একটা একাউন্ট খুলে দিয়েছি। হিমেলের পরিবারের জন্য প্রতিমাসে তার মায়ের একাউন্টে ৩০-৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকেও মামলা করা হবে। পুলিশও মামলা করবে ৷ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুবই তৎপর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি, অনুষদের ডিনসহ বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী হিমেল ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন আরেকজন। তাঁরা মোটরসাইকেলের আরোহী ছিলেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থাকা পাঁচটি ট্রাকে আগুন দেন। রাত ২টা পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ করেন। পরে রাত ২টায় আন্দোলনে বিরতি দেওয়া হয়। বুধবার সকালে ক্যাম্পাসে হিমেলের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে নাটোরের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে লাশ দাফন করা হয়।
হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার দুপুরে নগরীর মতিহার থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. আরিফুর রহমান ট্রাকের চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেন। পুলিশ চালক ও হেলপারকে আটকও করেছে। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।