রাবিতে রাতের আঁধারে গবেষণার মাছ চুরি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রাতের আঁধারে একটি পুকুরের ১৮টি খাঁচা থেকে গবেষণার মাছ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের পেছনের একটি গবেষণা পুকুরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি নগরীর চন্দ্রিমা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রকল্পটির দায়িত্বে থাকা ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান।
বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি অনুষদ সংলগ্ন ভবনের পেছনের একটি পুকুরে ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজ চলছিল। পুকুরে রুই ও কাতলা মাছের বৃদ্ধির ওপর এবং তেলাপিয়া মাছের ‘ফ্যাটি এসিড কম্পোজিশন’ প্রভাবের ওপর গবেষণা করা হচ্ছিল। প্রতিদিন সকাল-বিকাল মাছের খাবার দেওয়ার দায়িত্ব ছিল গবেষণা কাজে নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের। শনিবার বিকালেও শিক্ষার্থীরা মাছের খাবার দিয়েছিল। তবে রোববার সকালে খাবার দিতে গিয়ে দেখেন ১৮টি খাঁচার সব মাছ চুরি হয়ে গেছে। পরে শিক্ষার্থীরা দায়িত্বরত শিক্ষককে বিষয়টি জানান।
গবেষণার কাজে নিয়োজিত ফিশারিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লিখন অধিকারী বলেন, রোববার সকালে খাবার দিতে গিয়ে দেখি মাছের খাঁচাগুলো এলোমেলো, পানি ঘোলা। তখন আমাদের কিছুটা সন্দেহ হয়। পরে খাঁচা তুলে দেখি কোনো খাঁচাতেই মাছ নেই। সব মাছ চুরি হয়ে গেছে। আমাদের গবেষণা কাজ আর সম্পন্ন হলো না।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা মাছের খাবার দিতে দেখেন গবেষণার ১৮টি খাঁচার মাছ চুরি হয়ে গেছে। পরে বিষয়টি তারা জানালে আমি পুকুর পরিদর্শনে যাই। সেখানে রুই, কাতলা ও তেলাপিয়া মাছের ওপর গবেষণা চলছিল। গবেষণা শেষ হবার আগেই মাছ চুরি হয়ে গেল। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক্রমে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় একটি সাধারাণ ডায়েরি করেছি।
তিনি আরও বলেন, রুই ও কাতলা মাছের বৃদ্ধির জন্য মাছ চাষীরা বাজারের বিভিন্ন ‘গ্রোথ প্রমোটার’ ব্যবহার করে। আমরা সেসব গ্রোথ প্রমোটারের ওপর গবেষণা করে আসছিলাম। আর কিছুদিন পরেই গবেষণাকাজ শেষ হতো। তেলাপিয়া মাছের ‘ফ্যাটি এসিড কম্পোজিশন’ ঠিক মতো না হলে মানবদেহে নানা রোগের ঝুঁকি থাকে। তাই তেলাপিয়া মাছের ওপরও গবেষণা কাজ চলছিল।
পুকুরের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে একজন নিরাপত্তারক্ষী ছিল। তিনি সবার সঙ্গে অসদাচরণ করতেন। তাই তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম বলেন, বিষয়টা শুনেছি। আমি স্যারদের সঙ্গে কথা বলব, দেখি কি ব্যবস্থা করা যায়।
নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, গবেষণা প্রকল্পের পক্ষ থেকেই ওখানকার নিরাপত্তা পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভাগের সভাপতি এবং সংশ্লিষ্টরা কিছু বলতে পারছেননা। বিভাগ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ওনাদের বলেছি থানায় মামলা করার জন্য। ওসিকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছি। আর ওই জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখলাম, চোররা সিসিটিভি সংলগ্ন রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তা ব্যবহার করেছে। ওইটাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমান্ত এলাকা। এজন্য বারবার নিরাপত্তাজনীত সমস্যা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ৯জুন দিবাগত রাতে এই একই গবেষকের গবেষণার ১৬টি খাঁচা থেকে ৩টি খাঁচার মাছ চুরি হয়ে যায়