জাবিতে প্রক্টরের অপসারণসহ ৪ দফা দাবিতে মশাল মিছিল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রক্টরের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, অবৈধ ক্ষমতাচর্চা, অকর্মন্যতা ও বিভিন্ন অপরাধের সাথে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগসহ ৪ দফা দাবিতে মশাল মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।
শনিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
মশাল মিছিলে ‘ধর্ষকদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘নিপীড়কের গদিতে, আগুন জালো একসাথে’, ‘মাদকের বিরুদ্ধে গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘গেট আউট-গেট আউট, প্রক্টর গেট আউট’, ‘যে প্রক্টর ধর্ষক পুষে, সে প্রক্টর চাই না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিস্তারিত স্মারকলিপি উপাচার্যের নিকট হস্তান্তর করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতিতে মাদকের অবাধ সিন্ডিকেট, অছাত্রদের দৌরাত্ম, নিপীড়ন ও ধর্ষনের মতো নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের অদক্ষতা সুস্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন ও সন্ত্রাসের তৎপরতার এ ভয়াবহ অবস্থা বর্তমানে দায়িত্বরত প্রক্টরের সরাসরি তত্ত্বাবধানেই সংগঠিত হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা এবং শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিতকরণে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ চার দফা দাবি জানায়।
এসময় নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ তাদের পূর্বের ৫ দফা দাবির যে দাবিগুলো এখনো অবধি বাস্তবায়িত হয়নি সেগুলোর কথাও উল্লেখ করেন।
এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায় বলেন, আমাদের প্রক্টর ৩ দফায় ক্ষমতা দখল করে আছে। ক্যাম্পাসে ধর্ষক পুষে ও গণরুম বিলুপ্তি না করে বছরের পর বছর ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন এই প্রক্টর। এই প্রশাসন দিনের পর দিন এই সমস্ত কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আরো দেখতে পাই, ক্যাম্পাসে একটি হলের শিক্ষার্থীরা তাদের ইচ্ছেমতো হলের সামনে খাল কেটেছে। অথচ আমাদের অথর্ব প্রশাসন, আমি জানি তারা ঠিক কি কাজে এই ক্যাম্পাসে আছে? তাদের নাকের ডগার সামনে দিয়ে এত অন্যায় হচ্ছে অথচ তাদের কাছে সেগুলো কোন অন্যায় ই মনে হচ্ছে না।
এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, র্যাবের প্রেস বিফ্রিংয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে মাদক ব্যবসা করছে প্রক্টর সেটি জানার পরেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। আমরা বলতে চাই, আগামীকাল এর সিন্ডিকেট সভায় প্রক্টর ও প্রভোস্টকে অব্যাহতি দিয়ে দিবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের যে দায় দায়িত্ব আছে, সে দায় এড়াতে পারেন না। কিন্তু সেই প্রক্টর এখনও তাকে তার পদে বহাল রাখা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল আমরা বার বার বলেছি যে প্রক্টর ও মীর মোশারফ হোসেন হলের প্রোভোস্ট কে সাময়িক অব্যাহতি দেয়ার জন্য কিন্তু উপাচার্য আমাদের সে কথার কোনো কর্ণ পত করেন নাই।
এ সময় সবাইকে আশ্বস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ধর্ষনের ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট জমা হয়েছে বলে শুনেছি, তবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে সিন্ডিকেট। এছাড়া চলমান বিষয়গুলো সিন্ডিকেটে উঠানো হবে এবং আশা করি সিন্ডিকেট এই বিষয়ে তদন্তের স্বাপেক্ষে একটা সিদ্ধান্ত আসবে। এছাড়া চলমান দেয়াল ভাঙার পর পুকুর খননের বিষয়টি সিন্ডিকেটে উঠবে।
পরে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, উপাচার্য আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন আগামীকাল সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আমাদের যে দাবিগুলো সেগুলো উঠবে এবং প্রক্টরের যে অথর্বতা সেগুলো নিয়ে একটা ফলাফল আমরা পাব। এছাড়া আমাদের অন্যান্য যে দাবিগুলো রয়েছে সেগুলোর একটা দ্রুত ব্যাবস্থা দেখতে পাব।