‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবি ঢাবি শিক্ষক সমিতির
বাংলাদেশ সরকার গত ১৩ মার্চ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে 'প্রত্যয় স্কিম' এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। এ ব্যবস্থা আগামী ১লা জুলাইয়ের মধ্যে বাতিল করা না হলে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষকগণ।
রোববার (২৬ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে 'প্রত্যয় স্কিম' বাতিলের এক মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড নিজামুল হক ভূঁইয়ার এতে সভাপতিত্ব করেন।
মানববন্ধনে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম ওহিদুজ্জামান, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা কাউসার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী,জসীমউদ্দিন হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক শাহীন খান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যাক্ষ আব্দুর রহিম প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড.জিনাত হুদা বলেন,আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে কারা সেই শক্তি সেটি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। সব শিক্ষক আজ সংগ্রামে আছে, বাঁচা মরার লড়াইয়ে আছে।
তিনি কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আমরা আজ মানববন্ধন করছি, যদি আমাদের দাবি আগামীকালের মধ্যে মেনে নেয়া না হয় আমরা আগামী ২৮ মে সকাল ১০টা থেকে ১২ টা অব্দি ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করব। এর পরও দাবি না মানা হলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সব শিক্ষকের ম্যান্ডেড নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। যদি ৩রা জুনের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হয় আগামী ৪ঠা জুন আবারো সবের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অর্ধবেলা কর্ম বিরতি পালন করবে ঢাবির সব শিক্ষক। তবে এসব কর্মসূচিতে পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যেহেতু জুন মাসে বাজেট হবে আমরা অপেক্ষা করব এবং দেখব এই স্কিমটি বাতিল করা হয় নাকি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। যদি প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে ১লা জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ক্লাস বন্ধ হবে, সব পরীক্ষা স্থগিত হবে, কোনো ধরণের কোনো একাডেমিক কার্যক্রম চলবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষকরা আত্মপরিচয়, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচে। সেটি যখন যখন সমস্যায় তখন আমাদের এমন প্রতিবাদ করতে হয়। যারা আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কারিগর প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাদের দিকে বিশেষ নজর দিবে। ১০৬১ জন শিক্ষক স্বাক্ষর দিয়েছেন এই প্রত্যয় স্কিম এর বিরুদ্ধে। তবুও কেউ এই ধরনের বৈষম্যমূলক স্কিম গ্রহণ করবেন না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আজকে এই মানববন্ধন পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য জারিকৃত প্রত্যয় স্কিম নামে যে পেনশন স্কিম সেখানে অনেকগুলো সুযোগ সুবিধা কর্তন করা হয়েছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই এই স্কিমকে গ্রহণ করতে পারে নাই। দাবি না মানা হলে পর্যায়ক্রমে আমরা আন্দোলন পালন করব। কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।
টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছিল একটি ভাল উদ্দেশে। যারা পেনশনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না তাদের পেনশনের ব্যবস্থা করার জন্যে এ ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে আমরা দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ গবেষণা সংস্থাগুলোকে এ পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর কারণটা কি? আজকে প্রত্যয় স্কিমের মধ্য দিয়ে সমগ্র দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজকে রাজপথে নেমে এসেছে। তাদেরকে রাজপথে নামিয়ে আনাই কি প্রত্যয় স্কিমের উদ্দেশ্য? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য অর্থনীতিবিদরা একটি সমীক্ষা করেছেন সেখানে দেখানো হয়েছে এই প্রত্যয় স্কিম কীভাবে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বলা হচ্ছে পহেলা জুলাইয়ের পরে যাদের নিয়োগ হবে তাদের জন্য এটি কার্যকর হবে কিন্তু তারা হয়তো জানেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা প্রমশন হচ্ছে নতুন নিয়োগ। স্কিমটি এখন পর্যন্ত যে অবস্থায় আছে সেক্ষেত্রে প্রতি নিয়োগেই এই স্কিম বাস্তবায়িত হবে। অর্থাৎ লেকচারার থেকে সহকারী, সহকারী থেকে সহযোগী, সহযোগী থেকে অধ্যাপক প্রতিটি আলাদা নিয়োগেই এই স্কিম বাস্তবায়িত হবে। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন এই নীতি বাস্তবায়িত হলে ঢাবি সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হবেন।