শিক্ষকদের আন্দোলনে স্থবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

  • মাহমুদুল হাসান, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার, সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষক সমিতি।

সোমবার (১ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা। এতে সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তী প্রজন্ম এবং তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি মন্তব্য করে শিক্ষক সমিতি সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, বিগত তিন মাস যাবত চলে আসা ধারাবাহিক আন্দোলনে আমরা পরীক্ষাকে এর আওতামুক্ত রেখেছি৷ আমরা জানি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখলে ক্ষতিটা পারতপক্ষে আমাদের শিক্ষার্থীদেরই হয়৷ এখন আসলে আমাদের আর কিছু করার নাই, দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে৷ আমাদের নতুন প্রজন্মের ভালোর জন্য, ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভালোর জন্যই আমরা এই আন্দোলন করছি৷

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যারা শিক্ষক হবেন এমনকি আজকে থেকে যারা জয়েন করবেন তারা কোন পেনশন পাবেন না৷ তাহলে এর মধ্যে যারা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান তারা তো আর আসবেন না৷ আর ভালো ছাত্রছাত্রীরা যদি শিক্ষকতা পেশায় না আসে তাহলে গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে৷ এমনটা হলে একটা জাতি কিভাবে চলবে? এর ফলে দেশ ও জাতির সুস্থ বিকাশে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিবে৷ আমরা চাই সার্বিক বিবেচনায় সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে৷ সরকার দাবি মেনে নিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক্সট্রা ক্লাস নিয়ে হোক, ছুটির দিনে ক্লাস নিয়ে হোক আমরা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব৷

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, আমরা যারা বর্তমান শিক্ষকতা পেশায় আছি তারা কিন্তু বিদ্যমান যে পেনশন ব্যবস্থা রয়েছে সেটার অন্তর্ভুক্ত৷ আমরা প্রত্যয় স্কিমের অন্তর্ভুক্ত নই এবং এই স্কিমে কিন্তু আমাদের লাভ বা ক্ষতি কোনটাই হচ্ছে না৷ আমরা আমাদের এই আন্দোলন করছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, ভালো শিক্ষার্থীরা যারা শিক্ষকতায় পেশায় আসতে চান তাদের মঙ্গলের জন্য৷

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আজকে থেকে যারা শিক্ষক হিসেবে যোগদান করবে তারাও আমাদের মতোই সুযোগ-সুবিধা যেন পায়৷ এখানে আমি পাব এক স্কেলের পেনশন আমার পরবর্তীতে যারা আসবে তারা পাবে আরেক স্কেলের পেনশন, যেটা বৈষম্য সৃষ্টি করবে৷ এসব সার্বিক বিষয় নিয়েই আমাদের এই আন্দোলন৷ আমরা আশা করছি সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের এই ন্যায্য দাবি মেনে নিবে৷

এদিকে সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল থেকেই পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাবি অফিসার সমিতি।

একই দেশে দুই ধরণের পেনশননীতি চলতে পারে না মন্তব্য করে অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, আমরা এই পেনশন প্রথা বাতিল করে পূর্বের প্রথা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো। তিনি আরো বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতি এবং কর্মচারী সমিতি মিলে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করবো।

এর আগে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৫,২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতির পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিগত কর্মসূচিতে শ্রেনীকার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পরীক্ষাসমূহ ছিল চলমান। কিন্তু আজ সোমবার থেকে সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।