কোটা বাতিলের দাবিতে বন্দরনগরীর ব্যস্ত সড়ক অবরোধ

  • চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কেউ কেউ বুকে পিঠে কোটা থেকে মুক্তি চেয়ে স্লোগান লিখে আন্দোলন করেন/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

কেউ কেউ বুকে পিঠে কোটা থেকে মুক্তি চেয়ে স্লোগান লিখে আন্দোলন করেন/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম সড়ক চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে বন্দর নগরীর ষোলশহর স্টেশনে চবি অধিভুক্ত কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দলে দলে যোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। বিকাল পাঁচটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা শাটলযোগে ১৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আন্দোলনে যোগ দিলে এটি রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ষোলশহর স্টেশন থেকে একটি মিছিল নিয়ে ২ নং গেট অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন
চাষার ছেলে চাষা কেন স্লোগানে মুখর ২নং গেইট চত্বর

চবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন বলেন, আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজকে আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরব না। মেধাবীদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা না হলে দেশ থেকে একসময় মেধাপাচার হয়ে যাবে। এতে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবো ঠিক তেমনি আমাদের দেশেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মিছিল ও অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’,— ইত্যাদি স্লোগান দেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।

কোটা বাতিলের দাবিতে বন্দরনগরীর ব্যস্ত সড়ক অবরোধ

ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।