কোটা বিরোধী আন্দোলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের একাত্মতা

  • ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

সরকারি চাকরিতে 'কোটা' পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। একইসাথে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারও দাবি করেছে সংগঠনটি। 

রোববার (৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান জানায় সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক রাগীব নাঈম। 

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। অথচ ৫৩ বছর পরও বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা জারি রাখার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মর্মবস্তুকে অস্বীকার করা হয়েছে। একইসাথে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার মধ্য দিয়ে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের প্রকৃত সুফল থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, কোটা প্রথা বাতিল করাকে আমরা সমাধান মনে করি না। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল '১৮ তারিখে শেখ হাসিনা ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরীতে সকল ধরণের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এই চটকদার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৮ সালে ছাত্রদের দাবি ছিল কোটা সংস্কারের। অথচ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। মাত্র ছয় বছরের মধ্যে হাইকোর্ট সেই পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে কোটা বাতিল কোনভাবেই সমাধান নয়, প্রয়োজন কোটার যৌক্তিক সংস্কার।

তিনি যোগ করেন, কোটা পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনগ্রসর জাতি, সংখ্যালঘু জাতিসত্তার জন্য কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। কানাডায় নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং সংখ্যালঘুদেরকে কোটা সুবিধার আওতায় আনা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা না করেই কোটা বাতিল কিংবা বহালের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থে দীর্ঘকাল অস্বাভাবিক মাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা যেমন বৈষম্য তৈরি করেছে, তেমনি অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর প্রাপ্য কোটা বাতিলের মধ্য দিয়েও সামাজিক বৈষম্য প্রকট হবে। তাই অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণীর (কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ইত্যাদি) সন্তানদের জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সফলতা আদায় করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট দুটি দাবি জানায়। 'বৈষম্যমূলক' মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল এবং নারী, অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দীপা মল্লিক, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তওফিকা প্রিয়া প্রমুখ।