জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অটোরিকশার ধাক্কায় শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচি নিহতের ৭ দিন পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে এক রিকশাচালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আটক রিকশাচালকের নাম আরজু। গতকাল রোববার (২৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। পরে দিবাগত রাত ২টায় তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় আশুলিয়া থানা পুলিশ।
আটককৃত রিকশাচালক আরজুকে শনাক্ত করেছেন নাঈম, আবু হায়াত ও নাহিদ নামের তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী৷ এদের মধ্যে নাঈম দুর্ঘটনার সময় সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি নির্মাণাধীন লাইব্রেরি ভবনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর। অন্য দুজন রিকশায় যাত্রী হিসেবে ছিলেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে আবু হায়াত ও নাহিদ সমাজবিজ্ঞান এক্সটেনশন ভবনের নির্মাণ শ্রমিক।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯ তারিখের দুর্ঘটনার পর রিকশা বিক্রির চেষ্টা করে রিকশাচালক আরজু। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রিকশার সামনের দিকে গ্লাস ছিল না, হেডলাইট ভেঙে গিয়েছিল যেগুলো দেখা যায় নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। এছাড়াও লাল রঙের বসার সিট বদলে নীল রঙের সিট লাগানো হয়।
পরবর্তীতে রিকশার যাত্রী আবু হায়াত ও নাহিদের বক্তব্য শুনে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ এছাড়া রিকশায় নতুন রঙের গন্ধ ও নতুন হুড লাগানোর আলামত'ও পাওয়া গেছে৷ সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অফিসে রিকশাটি নিয়ে আসা হলে সেটি পরীক্ষা করে দেখেন পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা৷
অভিযুক্ত আরজুর বক্তব্যের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার দুপুরের আগেই সে রিকশাটি সাভারের ছায়াবিথী এলাকার 'মাসুদ অটো পার্টস' এর মালিক মাসুদ নামের একজনের কাছে মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় রিকশাটি বিক্রি করে দেয়। এমনকি সন্দেহ থেকে বাঁচতে বিক্রির দলিলে দুর্ঘটনার আগের দিন ১৮ নভেম্বরের তারিখ উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর নাঈম বলেন, আমি তখন শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনার সাথে সাথে চিৎকার শুনে আমি ছুটে আসি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে সন্ধ্যা ৭:৫২ মিনিটে মেডিকেলে নিয়ে আসি৷ আমি রিকশাওয়ালাকে অনেকটা শনাক্ত করতে পেরেছি৷
অপরদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যকার অন্য দু'জন মল্লিক ব্রাদার্সের নির্মাণ শ্রমিক নাহিদ ও হায়াত বলেন, আমরা ওইসময় টারজান থেকে এই রিকশায় উঠি। আমরা নিশ্চিত রিকশা এটাই। সে রিকশায় সিট চেঞ্জ করেছে। এটার সামনের দিকে লাইট ভেঙে গিয়েছিল; সেগুলো এখনো আছে। গাড়ির নিচের দিকে নতুন রঙ করা হয়েছে। হাত দিয়ে দেখলাম, রিকশায় নতুন রঙ করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, আমরা যখন বিভিন্ন সূত্র ধরে তাকে খুঁজে পাই, তখন তার বাম হাতে খুব ব্যথা ছিল। তার গলার পাশেও আঘাতের চিহ্ন৷ সে বলেছে, এটা ১৫ দিন আগের ব্যথা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কোন ডাক্তার দেখিয়েছেন। পরে মেডিকেলের ডাক্তারকে দেখানোর পর নিশ্চিত হয়েছি, সে খুব সম্প্রতি কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সেদিনের দুর্ঘটনা থেকেই সে আঘাত পেয়েছ বলে আমাদের ধারণা৷
এ বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিকশাচালক আরজু বলেন, আমি আসলে রিকশা চালাই না। ১৫ দিন আগে থেকেই আমার হাতে ব্যথা ছিল। রিকশার ব্যাটারি একটু খারাপ ছিলো দেখে কম দামে বেচে দিছি। আমি ওইদিন জাহাঙ্গীরনগরে ছিলাম না।
তাকে সন্দেহের মূল কারণ বলতে গিয়ে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই অলক কুমার বলেন, তার মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা গেছে, সে ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগরে ছিল৷ বাকি আগে পরের সময় সে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিল। আবার ঘটনার পর সে রিকশা বিক্রির চেষ্টা করেছে। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাচ্ছি৷