সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন
রাজশাহীতে দ্বিতীয় দিনেও সড়ক অবরোধ
রাজশাহীতে দ্বিতীয় দিনের মতো সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ (ব্লকেড) কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে দিকে রাজশাহী কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
অবরোধের ফলে সৃষ্ট যানজট নিয়ে পথচারীরা অভিযোগ করেন, এই ধরনের অবরোধ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করছে। আমরা আশা করি, প্রশাসন দ্রুত বিষয়টি সমাধান করবে।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এ অবস্থায় নগরীর সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে এবং শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।
শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, বর্তমান কোটা ব্যবস্থা তাদের জন্য বৈষম্যমূলক এবং এটি পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা স্লোগান দিচ্ছেন এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কোটা ব্যবস্থা তাদের মেধা ও পরিশ্রমকে অবমূল্যায়ন করে। তারা চান ন্যায্য প্রতিযোগিতা, যেখানে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া যাবে।
বর্তমান কোটা ব্যবস্থা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে এবং যোগ্য প্রার্থীরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। কোটার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছেন এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতার সুযোগ পাচ্ছেন না। কোটার কারণে সমাজে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এটি দূর করতে হলে অবশ্যই কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে এবং সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
এদিকে, বুধবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ।
স্থিতিবস্থা জারিতে রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত
হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর সম্মান জানিয়ে আগামী চার সপ্তাহের জন্য সব ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীরা। তবে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত শুনানিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় না আসলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আন্দোলন অব্যাহত রাবি ও রুয়েট শিক্ষার্থীদের
রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করলেও টানা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
তারা জানিয়েছেন, কেবল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতেই নয় বরং সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তারা। তারা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের দাবি আদায় হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
সরেজমিন
সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ছাত্রাবাস থেকে জাতীয় পতাকা, কোটাবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। জড়ো হওয়ার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
সেখানে ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে মিছিলসহ যোগ দেন রুয়েটের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর সাড়ে ১২টায় প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চৌদ্দপাই এলাকার বিহাস বাইপাস মোড়ের দিকে রওয়ানা হন তারা। প্রায় ১৫ মিনিট পর বিহাস মোড়ে পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
বাইপাস মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ’১৮-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
জানতে চাইলে রাবির কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আমানুল্লাহ খান বলেন, শিক্ষার্থী সমাজের সব ধরনের চাকরিতে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। নির্বাহী বিভাগকে দায়িত্ব নিয়ে নতুন পরিপত্র জারির মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের পথ দেখাতে হবে, যাতে করে আবারও আইনি জটিলতা তৈরি না হয় এবং শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।