পুলিশের বাধা ও প্রধান ফটকের তালা ভেঙে জাবি শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ
কোটা সংস্কারের ১ দফা দাবিতে চলমান 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের অবরোধকে বাধা দিতে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে সাভার ও আশুলিয়া থানার পুলিশ সদস্যরা সতর্কতামূলক অবস্থান নেয়৷ এসময় তালা ভেঙে পুলিশি বাঁধা ঠেলে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল পৌনে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে আন্দোলনকারীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রধান ফটকে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ অবরোধ না করার অনুরোধ করলে তা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা৷ পরে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পুলিশি বাধা ঠেলে মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে তারা৷
এসময় আপীল বিভাগের শুনানিতে স্থিতাবস্থা ঘোষণাকে প্রহসনমূলক আখ্যা দিয়ে সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ৫ শতাংশে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কারের এক দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অবরোধের ঘোষণা দেন কোটা ইস্যুতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷
এর আগে দুপুর ২:৫০ মিনিট থেকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পৌনে ৪টার দিকে সেখান থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ থেকে বিরত থেকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এসময় শিক্ষার্থীদের ভুয়া-ভুয়া সম্বোধন করে প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে মহাসড়কে অবস্থান নেয়ার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তারা। এসময় পুলিশের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করলেও শিক্ষার্থীরা পুলিশের অনুরোধ ও বাধা উপেক্ষা করে স্লোগান দিতে দিতে মহাসড়কে নেমে সড়কের উভয় পাশ ব্লক করে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়কে দেখা যায়, দুপুর ২টা থেকেই সাভার ও আশুলিয়া থানার ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা আছে৷ মহাসড়কে পুলিশের অন্তত ১২টি গাড়িতে হেলমেট পরিহিত ও লাঠিসোটা হাতে তাদের টহলরত অবস্থায় দেখা গিয়েছে৷
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ এন্ড ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মোঃ আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, গত কয়েকদিনের টানা অবরোধে উত্তরবঙ্গগামী মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে৷ যেহেতু আদালতের রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসেছে। আদালতের পক্ষ থেকে তাদের কাছে এক মাসের সময় চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি আদালতের প্রতি সম্মান রেখে তারা তাদের অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকবে। শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে৷
তবে আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক আরিফ সোহেল বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলবে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আমরা আমাদের কর্মসূচি চলমান রাখবো। আশা করি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহযোগিতা করবেন।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মহাসড়কে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা৷ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেলে ৪:৫০ মিনিট নাগাদ মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে অসংখ্য পুলিশ সদস্যদের উপস্থিত দেখা গিয়েছে।