শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে জাবিতে মশাল মিছিল
সারাদেশে কোটা সংস্কারের ১ দফা দাবিতে চলমান 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবিতে মশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷ এছাড়া মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের সাথে সমর্থন জানিয়ে সাভারের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন৷
শুক্রবার (১২ জুলাই) রাত পৌনে ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বসে 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' -এর ব্যানারে একটি মশাল মিছিল বের করে ছাত্রদের হল হয়ে নতুন রেজিস্ট্রার ভবন, চৌরঙ্গী দিয়ে ছাত্রী হল হয়ে পুনরায় শহীদ মিনারে এসে রাত সোয়া ৯টায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়৷
এসময় মশাল মিছিলে শিক্ষার্থীরা- ‘কুবি/চবি/শেকৃবিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘পুলিশ/হামলা/মামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না-যাবে না’, '৭১ এর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই', '১৮ এর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার', 'জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে', লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লোগেছে', ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’,'মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, 'আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি কোটা সংস্কারপন্থী স্লোগান দেন।
মশাল মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতুর সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোনো অন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য দাঁড়াইনি৷ তবুও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সহযোদ্ধা ভাই-বোনদেরকে আঘাত করা হয়েছে। আমরা এর যথাযথ বিচার দাবি করছি৷ আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পড়ার টেবিলে ফিরে যাব না।
এসময় সমাবেশে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে সকল ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে।এই আন্দোলন কোনো বিচ্ছিন্ন আন্দোলন নয়৷ আমাদের যৌক্তিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ হামলা করেছে। আমরা হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই হামলা-মামলা করে আমাদের আন্দোলনকে থামানো যাবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে। পুলিশ আমাদের দমন করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে অবিলম্বে আইন পাশ না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, গতকালকের কর্মসূচিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় গুণ্ডা বাহিনীর হামলার নিন্দার প্রতিবাদে আমাদের এই মশাল মিছিল। আমাদের যে ভাইদের ধরে নেওয়া হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এর ফল সরকারকে ভোগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে শুরু থেকেই কোটা বিরোধী হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই আমরা চাই কোটার সংস্কার। যৌক্তিক সংস্কার করে সংসদে আইন পাশ করতে হবে। সরকারের কাছে আহ্বান আমাদের দাবি মেনে নিন এবং দ্রুত পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে দিন।
'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' -এর জাবি শাখার সদস্য সচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের রক্তের বিনিময়ে হলেও আমরা দাবি আদায় করে নিব। আমাদের যে ভাইদের রক্ত ঝরেছে তার বিচার করতে হবে। একজনকে আঘাত করা হলে লাখোজন দাঁড়াবে। আন্দোলনকারী ভাইরা আমরা আমাদের সফলতার দ্বারপ্রান্তে। আপনাদের নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, এছাড়া গত ৭ জুলাই থেকে সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ৫ শতাংশে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা৷
'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) কোটা সংস্কারের ১ দফা দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধা প্রদানসহ হামলা ও মামলা করা হয়েছে৷ এ ঘটনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আহত হয়েছেন অনেকেই৷