জাবিতে দফায় দফায় ছাত্রলীগের হামলা, আহত অর্ধশতাধিক

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: জাবিতে দফায় দফায় ছাত্রলীগের হামলায় আহতরা

ছবি: জাবিতে দফায় দফায় ছাত্রলীগের হামলায় আহতরা

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল থেকে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্তৃক চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) বিক্ষোভ-মিছিল করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷ এসময় ছাত্রলীগের হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী, ১ জন শিক্ষক এবং ২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন৷

সোমবার (১৫ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচারসহ কোটা সংস্কারের ১ দফা দাবিতে সন্ধ্যা পৌনে ৭ টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে প্রাঙ্গণ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে৷

বিজ্ঞাপন

মিছিলটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয়ে চৌরঙ্গী দিয়ে ছাত্রীদের হল হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্মুখে আসলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে হামলায় নেতৃত্বে দিতে দেখা যায়। হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল, লাঠি ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের আক্রমণ করতে দেখা যায়৷

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে এলেও থামেনি দুপক্ষের সংঘর্ষ। এক পক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন গুরুতর আহত হন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেকুর রহমানকেও আঘাত করে আহত করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রায় অর্ধঘন্টা সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবিরসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও সংঘর্ষ থামাতে ব্যার্থ হন তারা। প্রথমে আন্দোলনকারী ও হামলাকারীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে দু'দিকে চলে গেলেও এর কিছু সময় পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে আবার-ও আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়।

এসময় দুই গ্রপের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উপর থেকে কোনো এক পক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন গুরুতর আহত হন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেকুর রহমানকেও আঘাত করে আহত করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এমনকি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ও সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার আহত হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. অমিতাভ জানান, আমি ৮ টার সময়ে এসে অন্তত ২০-৩০ জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছি৷ রাত সাড়ে আটটায় মেডিক্যাল সেন্টারে সর্বশেষ তথ্যমতে, অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে, গুরুতর আহত অবস্থায় অন্তত ২০-২৫ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া আহতদের মধ্যে 'মেঘ (পরিবেশ বিজ্ঞান, ৪৭), আব্দুর রশিদ জিতু( সিএলসি, ৪৭), সজীব (আর্কিওলজি ৪৮), সুমন (পরিসংখ্যান, ৪৮), মোবাশ্বির (প্রানিবিদ্যা, ৪৮), জাহিদ (সরকার ও রাজনীতি, ৪৮), আনজুম (সরকার ও রাজনীতি ৪৯), বাপ্পি (ইংরেজি, ৫০), গালিব (গনিত, ৫০), সাব্বির (ইতিহাস, ৫২)' এদের নাম নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে৷ এছাড়াও আহতের সংখ্যা বাড়ছে৷

সংঘর্ষে আহত আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আমরা সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমার ভাই ও বোনেরা গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং আমাদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিতে হবে৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অপ্রত্যাশিত। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দু'পক্ষের তুমুল সংঘর্ষ এখনো চলমান।