জাবিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ ও জাকসু চালুর দাবিতে বিক্ষোভ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দলীয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি বন্ধ, হলের ব্লক-গণরুম-গেস্টরুম নির্মূল ও জাকসুর দাবিতে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷
রবিবার (১৮ আগষ্ট) বিকাল ৫টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে ছাত্রী হল, চৌরঙ্গী ও পরিবহন চত্বর হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়৷
সমাবেশে 'যে শিক্ষকরা হত্যার রাজনীতি করে সে রাজনীতি আমাদের দরকার নেই' মন্তব্য করে বাংলা বিভাগের শিক্ষক আহসান ইমাম বলেন, আমাকে এতদিন বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়েছে। আমি এখন আস্তে আস্তে সব বলবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতির নামে যে অরাজকতা চলে সেগুলোই এই হামলার মদদদাতা হিসেবে কাজ করেছে। ১৫ জুলাইয়ের হামলায় আমি নিজেও আহত হয়েছি। রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই। আমি বলতে চাই যে শিক্ষকরা হত্যার রাজনীতি করে সে রাজনীতি আমাদের দরকার নেই৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, আজকে আমরা তিনটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। প্রথমত ক্যাম্পাসে কোন কর্মকর্তা—কর্মচারী রাজনীতি চলবে না। কেননা এই রাজনীতির লিয়াজু করে এরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে। তারা সময়মতো কাজ করে না, শিক্ষার্থীদের কোন কাজ নিয়ে গেলে তারা বলে দুপুরের পরে আসেন। আমরা মনে করি, এদের লিয়াজু ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে পারলে তারা শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্য করতে পারবে ন। দ্বিতীয়ত, আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাই কেননা এই ছাত্র রাজনীতি চলমান থাকার কারণেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা জোড় দিয়ে বলতে চাই, ক্যাম্পাসে যদি আমরা ছাত্র রাজনীতি চলতে দেই ক্যাম্পাসে আবারো ১৫ জুলাই ফিরে আসবে। সুতরাং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জাকসু চালু করা হোক। তৃতীয়ত, আমরা চাই ক্যাম্পাসে জাকসু চালু করা হোক। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের যে লড়াই সেটি লাঘব হবে। পাশাপাশি আমরা চাই হল সংসদ ও বিভাগীয় সংসদ অবিলম্বে চালু করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে কোন বাম, ডান, মধ্যমপন্থী কোন ছাত্র রাজনীতি চলবে না। ছাত্র রাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে যে অরাজকতা চালানো হয় আমরা ছাত্রসমাজ সেটি আর হতে দিব না। আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি আর দেখতে চাই না। তবে যারা রাজনীতি করতে চান তাদের নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই, আপনারা ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে করেন কিন্তু ক্যাম্পাসে কোন রাজনীতি করা চলবে না।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বছর বছর গণরুমে রেখে আমাদের স্বপ্নগুলো শেষ করে দিত। স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে না পারলে যুগ যুগ ধরে তাদের অত্যাচার সহ্য করতে হতো৷ সবার মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার রুপরেখা ও নীতিমালা তৈরি করা হবে৷ শিক্ষক রাজনীতির কবলে পড়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্বর্ণপদক পাওয়ার পরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেনি৷ বিশ্ববদ্যালয়ের প্রশাসনে যোগ্য ব্যক্তিদের বসাতে হবে। হুট করে একজন অদক্ষ ও উড়ে এসে জুড়ে বসা প্রক্টরকে আমরা মেনে নেব না।
তিনি আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতি দমন করে, হল সংসদ ও ছাত্র সংসদ চালু করাসহ আমাদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হলে আমরা এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানার ভেঙে ফেলব। তার আগে আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে দাবি আদায়ের কাজ করতে হবে৷