ইবির দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে প্রতিবাদ, সাম্য ও ভাতৃত্বের গ্রাফিতি

  • ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। আর ছাত্রজনতার এই অর্জিত স্বাধীনতার প্রতিটা মুহুর্ত স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পাস এবং রাস্তাঘাটের পাশের দেয়াল যেন ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে, ছেয়ে যাচ্ছে রং-তুলির ছোঁয়ায়। আন্দোলনে ক্যামেরাবন্দী বিভিন্ন মুহুর্ত রং-তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাদ যায়নি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও। শৈল্পিক ছোঁয়ায় জরাজীর্ণ দেয়ালও ফিরে পাচ্ছে সজীবতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে শিক্ষার্থীদের আঁকা বিভিন্ন দেয়াল লিখন, ক্যালিগ্রাফি ও প্রতিবাদী গ্রাফিতি। ক্যাম্পাসের টিএসসিসির প্রতিটি দেয়ালসহ বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের দেয়ালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে আঁকা হচ্ছে এসব গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি। শুধু আন্দোলনে সীমাবদ্ধ না থেকে দেয়ালে দেয়ালে স্বচ্ছ, সুন্দর ও প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার বার্তা দিচ্ছেন শিল্পীরা।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন দেয়ালগুলো পরিষ্কার করে তাতে চিত্রকর্মের উপযোগী করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে শৈল্পিক ছোঁয়ায় বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি, প্রতিবাদ, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও দেশপ্রেমের বার্তা লিখছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন, রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের দেয়ালের প্রতিটি অংশ যেন পরিণত হয়েছে তাদের ক্যানভাসে। দেয়ালে শোভা পাচ্ছে সবরকমের অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভাষা ও বীরোচিত নানাধরণের চিত্রকর্ম। তন্মধ্যে জুলাই গণহত্যা, বলো বীর চিরউন্নত মমশির, চা শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য, মুক্তবাক, ডিক্টেটর, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, অপরাজনীতি রুখে দাও, কল্পনা চাকমা, ছাত্ররা জানে তারা কি চায়, ব্যাঙ্গাত্মক বিটিভি ছাড়াও বেশ কয়েকটি ক্যালিগ্রাফি রয়েছে। তাদের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছে ক্যাম্পাসের ছাত্র শিক্ষকসহ সকলেই।

জানতে চাইলে আর্টিস্ট নাফিস তাহমিদ বলেন, গ্রাফিতির একটা মূখ্য বেপার হচ্ছে ইতিহাস সংরক্ষণ করা আর অন্যায় বা বৈষম্যকে তুলে ধরা। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরার জন্যই মূলত আমরা গ্রাফিতিগুলো করছি। এর মাধ্যমে আমরা চাই সবাই তাদের সমস্যাগুলো আশেপাশে কে কি দেখছে সেগুলো বলুক। যদি অন্যায়ভাবে কারো সাথে খারাপ কিছু করা হয় তাহলে সেটাও বলতে হবে। মুখে বলে যখন প্রতিকার কিছু হচ্ছে না তাই চিত্রকর্মের মাধ্যমে এই বার্তাগুলো সবার প্রতি দিতে চেয়েছি যাতে সবাই ইতিহাস জানতে ও শিক্ষা নিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ইবির সহ-সমন্বয়ক ইশতিয়াক ইমন বলেন, গ্রাফিতির মাধ্যমে আমরা কত কষ্ট করে চব্বিশের স্বাধীনতা পেলাম, আমাদের উপর দিয়ে কী কী গেছে সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমরা ৭১ নিয়েও কথা বলছি, ২৪ নিয়েও কথা বলছি। ইসলাম নিয়েও যেমন কথা বলছি, অন্যান্য ধর্ম নিয়েও কথা বলছি। যারা আমাদের স্বাধীন করতে প্রাণ দিয়েছে তাদের যেমন দেখানোর চেষ্টা করেছি তেমনি যারা আমাদের দমিয়ে রাখতে চাওয়া স্বৈরাচারকেও দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করি, একজন শিল্পী যদি তার রং তুলির আঁচড়ে একটি বিষয় তুলে ধরে এবং তা যদি মানুষের মনে গেঁথে যায় তাহলে সেটা অমর হয়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা ক্যানভাসেই একটি মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোথাও দেখিয়েছি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না কোথাও দেখানো হয়েছে তরুণদের চাপ দিয়ে দমায়ে রাখতে পারবেন না। কোথাও দেখিয়েছি আমাদের স্বাধীনতার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তবে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ক্যাম্পাসে গ্রাফিতে নষ্টের প্রচলন ছিলনা যেটা সরকারের পতনের পরে দেখা যাচ্ছে। আমরা শঙ্কিত যে আমাদের এত কষ্টের শিল্পকর্ম কেউ নষ্ট করবে কিনা। আমরা আশা করি আমাদের কাজগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীরাই রক্ষা করবে।