ইবিতে সমন্বয়কদের একাংশের পদত্যাগ

  • ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পদত্যাগের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ইতিমধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রশাসনের শীর্ষ পাঁচ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দায়িত্বশীলরা। এবার তাদের পথেই হাঁটছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও। পদত্যাগের হিড়িকে এবার যুক্ত হয়েছে ইবির সমন্বয়কদের নাম।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়ে সমন্বয়ক প্যানেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করছেন তারা। তারা হচ্ছেন মাতিন আনন্দ, ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন, সুমাইয়া জেসমিন, আইরিন সুলতানা আশা, শাওয়ানা শামীম, নাঈমুল ফারাবী ও মাহিমা হিমা। এরা সবাই ইবির ৩০ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ২১শে আগস্ট রাতে ইবির ৩৬ তম ব্যাচ (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) 'সংবর্ত-৩৬' ব্যাচের ফেসবুক পেজ থেকে ইবির সমন্বয়ক নেতৃবৃন্দের সাথে 'জানতে চাই' শিরোনামে একটি ফেসবুক লাইভের আয়োজন করা হয়। লাইভের একপর্যায়ে কমেন্ট বক্স থেকে সাম্প্রতিক বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে তাদের প্রশ্ন করা হয়৷ প্রশ্নোত্তরের একপর্যায়ে ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট ও সহ সমন্বয়ক নাহিদ হাসান লাইভ থেকে বেরিয়ে যান।

লাইভের পরপরই সরকার পতনের পর হল খোলার পরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগের সদুত্তর দিতে না পারা, হলের সিট দখল, বৈধ সিটধারীদের নামিয়ে দেওয়া, ক্যাম্পাসে অপরাজনীতি রুখতে পদক্ষেপের অভাব এবং ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের মতো দাবি আদায়ে পদক্ষেপ নিতে না পারার অঅভিযোগে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সমাধান দিতে না পারার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন উক্ত কয়েকজন সহ-সমন্বয়ক।

বিজ্ঞাপন

পদত্যাগকারীদের অভিযোগ, পুরো বাংলাদেশে সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক পরিচয় একটি পাওয়ার প্র্যাকটিসের জায়গায় চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, হলের তালা ভাঙ্গা হচ্ছে, রুমে ভাঙচুর করা হচ্ছে, ফাকা রুম গুলোতে অনাবাসিকদের অবস্থান করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে লিগ্যাল সিটধারী শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়ারও যে বিষয়ে সমন্বয়কদের সাথে কথা বলে সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। তাছাড়া আগেও শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ট্যাগ দেওয়া হতো যেটা এখনো হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রুপে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিলো সেখান থেকে এখন অনেকটা বিচ্যুত।

এবিষয়ে ইশতিয়াক ইমন বলেন, আমরা ঠিক করেছিলাম ইবির শিক্ষার্থীরা আগে যেভাবে ছাত্রলীগের দ্বারা হলে নির্যাতিত হয়েছে পাঁচ তারিখের পর তা আর কোনোভাবেই হবে না। যদি হয় সেক্ষেত্রে দায় আমাদের উপর বর্তায়। কিন্তু ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং সে দায় মাথায় নিয়ে আমি আমার অবস্থান থেকে সরে আসছি। সমন্বয়কদের বলতে চাই, যেকোন রাজনৈতিক আধিপত্য যেন সমন্বয়কদের থেকে বিস্তার করতে পারে এবং এই ব্যানারে কেও আধিপত্য বিস্তার করছে কিনা সেটা শক্তপোক্তভাবে দেখভাল করবেন। নতুবা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আপনাদের সাথে থাকবে না।  

শাওয়ানা শামীম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সাথে আমি আমার আদর্শের মিল খুঁজে পাইনি। তবুও কিছু মানুষকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু সংবর্ত ৩৬ কর্তৃক আয়োজিত সমন্বয়ক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের আলোচনা এবং মতবিনিময় লাইভের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা ঘটেছে; আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে তা পর্যালোচনা করেছি। আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলন করেছি, ভবিষ্যতেও সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবেই থাকতে চাই। নৈতিকতার প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ কোন প্রকার ট্যাগ আমি রাখবো না।

নাঈমুল ফারাবী বলেন, ৫ ই আগস্ট স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এখানে অনাবাসিক অনেক ছাত্রকে জিনিসপত্র নিয়ে এসে হলে অবস্থান করা এবং হলের তালা ভাঙতে দেখছি। গঠনমূলক সমালোচনা করলে ছাত্রলীগ ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা হল পাহারা দিচ্ছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে হলগেট পাহারা দেয়ার মাধ্যমে নব্য বৈষম্য তৈরির ক্ষেত্র তৈরি করলে সেই ত্যাগ তিতিক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়ে। সমন্বয়ক প্যানেলকে ব্যবহার করে কেউ যদি বৈষম্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে সে দায় সমন্বয়কদের উপর বর্তায়। তাই আমি পদত্যাগ করছি।

আইরিন সুলতানা আশা বলেন, ক্যাম্পাস থেকে প্রতিদিন অগণিত অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। সমন্বয়ক পরিষদে প্রশ্ন করে দুই পক্ষের কথা শুনেছি। সংবর্ত-৩৬ ব্যাচের লাইভ সেশনের পর আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর তারা পেয়ে গেছে। আন্দোলন শেষ হওয়ার পর এই সমন্বয়ক পরিষদে নিজেকে রাখার কোন যৌক্তিকতা দেখছি না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে। যেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্যানেল গঠন হয়েছিলো, সেই প্যানেলই যদি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের বৈষম্য তৈরি করে তার বিরুদ্ধেও আমরা একত্রিত হয়ে লড়বো। যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখে আমার ভাইয়েরা রক্ত দিল তাদের রক্তের সাথে কোন বেইমানি করতে পারবো না।