রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘ছাত্র রাজনীতি সংস্কার প্রস্তাবে ছাত্র নেতৃবৃন্দের বোঝাপড়া’ শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন।
সভায় ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি দেখে বড় হওয়ায় বর্তমান প্রজন্মের অনেকের মধ্যে ছাত্র রাজনীতি বিষয়ে নেতিবাচক সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাত্র রাজনীতি ছিল না, সেটা ছিল সন্ত্রাসী কার্যক্রম। আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব নতুন ধারার রাজনীতির প্রচলন করতে চাই।
রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছরে যে রাজনৈতিক প্র্যাকটিস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক চর্চা হয়েছে, সেটা আমরা রাজনীতির মধ্যে বুঝি না। আমরা বিগত সময় দেখেছি সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি বা কোন একটা পদ পেলে তিনি মনে করত আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক। হলের কোনো একটা পদ পেলে মনে করতে তিনি হলের মালিক। ছাত্র রাজনীতি মানে মনে করেছিল হল থেকে ফ্রি খাওয়া, পেশী শক্তি দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা, আধিপত্য বিস্তার করা। কিন্তু প্রকৃত ছাত্র রাজনীতির ডেফিনেশন এটা না। আমরা এই রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনি। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নতুন রাজনীতির প্রচলন করব। রাজনৈতিক ধারাই আমরা চেঞ্জ করে দিব।
রাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুল মোহাইমেন বলেন, ছাত্র রাজনীতি সংস্কারের একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা প্রয়োজন। এজন্য আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই। আমাদের নিজেদের দ্বারা এ সংস্কার সম্ভব না। সব সংগঠনই তাদের মত করে বিভিন্ন দাবি করবে। তাই এটা আমাদের ভিতরে না থেকে যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন্দ্রীক একটা নীতিমালা হয় এবং এই নীতিমালার ভিতরে যদি সবাই ছাত্র রাজনীতি চর্চা করে, যেই ছাত্র রাজনীতি হবে শিক্ষামূলক, গবেষণামূলক, যেখানে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য নীতিমালা থাকবে, যে বিধিমালা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তারা পালন করবে এবং একটা দল দলীয়ভাবে পালন করবে-যদি আমরা এমন একটা রূপরেখা দিতে পারি, তাহলেই কেবল এই ছাত্র রাজনীতি সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
মতবিনিময় সভার সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ রেজিমের ছাত্র রাজনীতির সংজ্ঞায়ন যেভাবে করা হয়েছিল, ছাত্র রাজনীতি বলতে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, হল দখল করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখা, ছাত্রদল-শিবির কিংবা অনেক ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করা। এজন্য সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের ভয় হয় বিগত দিনের মতো ছাত্ররাজনীতি চালু হলে আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারবো কিনা।
সভায় রাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা অনুপস্থিত ছিলেন।
স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ফাহিম রেজার সঞ্চালনায় এই মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবি'র অন্যতম সমন্বয়ক তাসিন খান। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় পাঁচশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।