বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে চবিতে মশাল মিছিল
দেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে(চবি) মশাল মিছিল করেছে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় জিরোপয়েন্ট এলাকায় এই মিছিল বের করেন তারা। মিছিলে তারা,‘জুলাইয়ের বাংলায়, মব অ্যাটাকের ঠাই নাই’; ‘মব অ্যাটাকের বিরুদ্ধে, লড়াই হবে একসাথে’; ‘ভার্সিটিতে মানুষ মরে, প্রশাসন কি করে’; এসব স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রোনাল চাকমা বলেন, ঢাবি এবং জাবিতে বিচারবহির্ভূত যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা শরীর শিউরে ওঠার মত । আওয়ামী লীগের শাসন আমলে পাহাড় এবং সমতলে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার কোন সুষ্ঠু বিচার আমরা দেখিনি। এখন এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া মানে আবার সেই শাসনামলে ফিরে যাওয়া। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
মার্কেটিং বিভাগে ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার বলেন, গতকাল রাতে ঢাবি ও জাবিতে এবং এর পূর্বে রাবিতে আমরা মব-অ্যাটাকের ঘটনা দেখতে পাই। চবিতেও ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে মব-অ্যাটাকের চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে মব-অ্যাটাকের নজির তৈরী করছে। আমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন অতিসত্বর এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং জড়িতদের বিচারের ব্যবস্থা করে।
সঙ্গীত বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী জসদ জাকির বলেন, ‘আজ আমরা ২৪ এর গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে মশাল নিয়ে দাঁড়িয়েছি, দাসপ্রথা, সামন্ত এমনকি জমিদারি প্রথার পতন ঘটিয়ে এই আধুনিক যুগে সামন্তীয় ভাবে হত্যা মেনে নেয়া যায় না। গতকাল রাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বিচারবহির্ভূত হত্যা সংগঠিত হয়েছে, ঢাবির প্রক্টর বলেছেন ‘আমরা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন মামলা রুজু করবো।’ আমরা বিগত ১৭ বছর ধরে এ কথা শুনে আসছি, আমরা এখন দেখতে চাই আর এমন বয়ান শুনতে চাই না।’
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদকে দেখতে পান কয়েক শিক্ষার্থী। পরে তাকে কয়েক দফা পিটিয়ে প্রক্টর অফিসে নেয়া হয়। সেখানেও কয়েক দফা মারধরের শিকার হন শামীম। পরে তাকে আশুলিয়া পুলিশের হাতে তুলে দিলে গুরুতর আহত অবস্থায় গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
অন্যদিকে একই দিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানা গেছে। সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ওই যুবককে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয়। পরে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েক শিক্ষার্থী। সেখানে চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করলে ওই শিক্ষার্থীরা মরদেহ রেখেই সরে যান।