বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সকল অভিযুক্তদের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং ভর্তি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষায় অংশ নেয়া, শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান করতে দেয়া সহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে ক্যাম্পাসে তিন দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা দেড়টার সময় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রংপুর-ঢাকা ও ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
বিকেল পৌনে পাঁচটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষার্থীরা।
বিশ্বসেরা দুই শতাংশ গবেষকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তিন শিক্ষক ও এক সাবেক শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’র সমন্বিত জরিপে গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
বেরোবির মধ্যে তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ফেরদৌস রহমান এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. মোরশেদুল হাসান আরিফও তালিকায় রয়েছেন। তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের মরডক বিজনেস স্কুলে একাউন্টিং এন্ড ফাইনান্স বিভাগে লেকচারার (অস্থায়ী) হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় প্রথমবারের মত স্থান পাওয়া ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, আমি ২০১৩ সাল থাকে গবেষণা করে আসছি। প্রথমবারের মত আমার নাম আসায় এইটি সত্যিই আনন্দের। আমাদের দেশে গবেষণায় তেমন বরাদ্দ নেই। গবেষকদের তেমন মূল্যায়নও করা হয় না। অন্যদিকে গবেষণার উপকরণ সংকট। এরপরও বিশ্বসেরা দুই শতাংশ গবেষকের তালিকায় আমাদের নাম আসায় এইটি একটি বড় অর্জন।
মাত্র তিন শিক্ষক দিয়েই একাডেমিক কার্যক্রম চালাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। ফলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষার্জনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি শিক্ষকরাও অতিরিক্ত কর্মভারে মানসিক ও একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগটিতে বর্তমানে অধ্যয়নরত স্নাতকের ব্যাচ চারটি ও স্নাতকোত্তরের ব্যাচ দুইটি। ছয় ব্যাচ মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫১ জন। তবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগটির মোট নয়জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে ছয়জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষা ছুটিতে আছেন। ফলে ৩ জন শিক্ষক নিয়ে চলমান ৬টি ব্যাচের শ্রেণী কার্যক্রম চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০ হলেও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে এই অনুপাত হলো ১:৮৪। এদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে অধিকাংশ কোর্স চলছে গেস্ট টিচার দিয়ে। তবে অনলাইন ক্লাস ও গেস্ট টিচারদের কোর্স সম্পর্কিত সমন্বয়ের অভাবে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগের শিক্ষকদের ওপরও মানসিক চাপ পড়ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এ প্রসঙ্গে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর কয়েকবার চিঠি দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষক সংকট নিরসনের ব্যাপারে পূর্ববর্তী প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা ছিল, যা তাদের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষক সঙ্কটের ফলে শিক্ষকদের ওপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা ক্লাসের গুণগত মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা চাই-জরুরি ভিত্তিতে এ সঙ্কট সমাধান হোক।'
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা মৌ বলেন, 'বর্তমানে আমাদের বিভাগে ব্যাচ চালু আছে ৬টি। এই ৬টি ব্যাচ পরিচালনা করছেন মাত্র ৩ জন শিক্ষক। যা আমাদের ও আমাদের শিক্ষকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। শিক্ষকরা যেমন ক্লাস ঠিকভাবে পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনি আমরাও অনেক সময় বিভিন্ন কোর্সের ক্লাস ঠিকমত পাচ্ছি না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিৎ দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আমাদের এই সমস্যার সমাধান করা।
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মব জাস্টিস বন্ধ ও পাহাড়ে সংঘটিত অরাজকতার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মশাল মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ এলাকা ঘুরে মূল ফটকে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রশাসন থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একজন মানুষকে এভাবে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক চোর ছিনতাইকারী ধরেছি কিন্তু আমরা তাদের প্রশাসনের হাতে হস্তান্তর করেছি।
তারা আরও বলেন, দেশে আইন আছে, আদালত আছে, প্রশাসন আছে। কেউ যদি অন্যায় করে সেই শাস্তি প্রশাসন দিবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও কীভাবে এমন কাজ করতে পারেন।
দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আজীবনের জন্য সকল ধরণের ছাত্র, শিক্ষক, কমকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার জন্য বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এসে জড়ো হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ-মিছিল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, টার্জান পয়েন্ট, ছাত্রী হল হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের- ডান বামের রাজনীতি, চাই না কারো উপস্থিতি; রাজনীতির কালো হাত, এই জাবিতে নিপাত যাক; সব জাবিয়ান ভাই ভাই, রাজনীতির ঠাঁই নাই; রাজনীতির অংশীদার, এই মুহূর্তে জাবি ছাড়; এক দফা এক দাবি, চাই না কোনো রাজনীতি ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
উপাচার্যের বাসভবনের সম্মুখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি ক্যাম্পাসে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের নিকট ৩ দফা দাবি পেশ করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়নের দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো-
১। সকল ধরনের দলীয় (ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা) রাজনীতি অবিলম্বে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
২৷ দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন দিতে হবে।
৩৷ গত ১৪–১৭ জুলাই তারিখে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপর হামলাকারী ও মদদদতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় আইনে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করতে হবে ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী মো. শাকিল বলেন, আমরা একটি সমতার সমাজ গঠনের জন্যই আন্দোলন করেছি। আমাদের এ রক্ত যেন বৃথা না যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীই চায় দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। আশা করি উপাচার্য আমাদের দাবির পক্ষে সিদ্ধান্ত দিবেন।
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, যেহেতু এতোদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামো ছিল না, তাই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আগামী রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা জরুরি মিটিং ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।