সেশনজটে নাকাল শেকৃবির শিক্ষার্থীরা
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) প্রতি অনুষদেই সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কোনো ভাবেই যেন পিছু ছাড়ছে না এই অনাকাঙ্ক্ষিত সেশনজট। চার বছরের স্নাতক শেষ করতে সময় লাগছে ৫ বছর বা তারও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কারণ হিসেবে পরস্পরকে দোষারোপ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পেছানোর প্রবণতা সেশন জটের অন্যতম কারণ। আর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকদের কারণ ছাড়া পরীক্ষা পেছানো, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকদেরও ক্লাস এবং পরীক্ষা না নেয়া, শ্রেণিকক্ষ সংকট, অনিয়ন্ত্রিতভাবে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমন, পর্যাপ্ত পরীক্ষা হল ও গবেষণাগারের (ল্যাব) অভাব, খাতা মূল্যায়ণে শিক্ষকদের অনীহা ও সময় মতো ফলাফল প্রকাশ না করার ফলে সেশনজটে আটকে যাচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচার, এনিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন, এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও ফিশারিজ এন্ড একোয়াকালচার এই চারটি অনুষদের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় পাঁচটি ডিগ্রি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের চারটি লেভেলে মোট ১৬টি সেকশনে শিক্ষার্থী ১ হাজার ৪২৭ জন। তাদের জন্য রয়েছে মাত্র ৭টি শ্রেণিকক্ষ। ফলে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের অষ্টম (শেষ) সেমিস্টার চলার কথা থাকলেও তারা ৮ মাস পিছিয়ে আছেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৭ মাস ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৬ মাস পিছিয়ে।
এনিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণিকক্ষ মাত্র তিনটি। এতে করে শিক্ষাবর্ষভেদে এখানেও সেশনজট ৬-৭ মাস।
এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদে ২০১৬ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডিগ্রী পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের হয়। ফলে সেই সময়কার সকল ব্যাচই ৬ মাস পিছিয়ে পড়ে। আন্দোলনের জন্য ৬ মাস পিছিয়ে পড়লেও গতানুগতিক সেশন জট থেকে রেহাই পায়নি এই অনুষদের শিক্ষার্থীর।
এমনকি আন্দোলনের পরে নতুন ভাবে ভর্তি হওয়া ৭৬তম ব্যাচের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরাও ৫মাস পিছিয়ে রয়েছে। এই অনুষদের বাকি ব্যাচ গুলোর মধ্যে ৭৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৩ মাস, ৭৫ ও ৭৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১১মাস।
এই অনুষদের ৭৫তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি সেমিস্টারে ২-৩ মাস বিলম্ব যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় মতো ফলাফল প্রকাশ না করা এর অন্যতম কারণ। প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় সবাই যখন ব্যস্ত তখন সেশন গলার কাটার মতো আটকে আছে। সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
২০১৭ সালে শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন অনুষদ ফিশারিজ এন্ড একুয়াকালচার। নতুন হলেও গতানুগতিক সেশন জট থেকে মুক্তি মেলেনি এই অনুষদের শিক্ষার্থীদের। এই অনুষদের ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি কোর্সের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর ৩ মাস, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ৪ মাস একাডেমির নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।
অনুষদের ডিনরা বলছেন, অবকাঠামোগত সংকট রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রবণতা বেশি। কিছু কিছু শিক্ষকের অবহেলায় ফলাফল দিয়ে বিলম্ব হয়। ডিন অফিস থেকে তাদের তাগাদা দিলেও লাভ হয় না। এরপরও আমরা সেশনজট কমাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সেকেন্দার আলী বলেন, শ্রেণি ও পরীক্ষাকক্ষের সংকট নতুন শেখ কামাল ভবন চালু হলে কেটে যাবে। নতুন বছরে যারা ভর্তি হচ্ছে, তাদের কোনো সেশনজট থাকবে না। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পেছানোর প্রবণতাও সেশন জটের অন্যতম কারণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের সদিচ্ছার পাশাপাশি শিক্ষকরাও যদি একটু পরিশ্রমী হন তাহলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সেশনজট রোধ করা সম্ভব।