সিঁড়িতেই ক্লাস নিলেন আকুতি জানানো সেই শিক্ষক
ক্লাসে ফেরার আকুতি জানিয়ে তিন দিন ধরে বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে অবস্থানকারী রুশাদ ফরিদী নামক সেই ঢাবি শিক্ষক সিঁড়িতেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী তার ক্লাসে অংশ নেন।
রোববার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান ভবনের সিঁড়িতে ক্লাস নেন অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক। প্রায় দেড় ঘণ্টা তিনি তার ক্লাস পরিচালনা করেন। প্রথম দিন পরিসংখ্যানের বেসিক পাঠ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলেও জানা যায়।
এর আগে ক্লাসে ফেরার আকুতি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড বহন করে অবস্থান করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সহকারী অধ্যাপক। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আদালতের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ক্লাসে ফিরতে না পেরে গত তিনদিন ধরে বিভাগের চেয়ারপারসনের কক্ষের সামনে অবস্থান করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষককে ৯০ দিনের বেশি বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখার বিধান নেই।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রুশাদ ফরিদীকে বিভাগে যোগদানে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনি জটিলতা দেখিয়ে তাকে ক্লাস নিতে দিচ্ছে না।
হাইকোর্টের রায়ের তিন মাস অতিক্রম করার পরও ক্লাসে ফিরতে না পেরে প্রতিবাদ হিসাবে গত মঙ্গলবার থেকে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে, ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে যেতে দিন।’
রুশাদ ফরিদীর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতার জন্যে তিনি অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত ছাড়াই তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি বিভাগের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেন বলে তার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলকভাবে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে।
তার বাধ্যতামূলক ছুটির কারণ হিসাবে জানা যায়, ২০১৭ সালে রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। তাদের অভিযোগ ছিল রুশাদ ফরিদী শিক্ষকসুলভ আচরণ করেন না। শিক্ষার্থীদের কাছে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সে সময় বিভাগে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়। পরে বিভাগ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট সুপারিশ করা হয়।
জানা যায়, বিভাগীয় শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীতে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২০১৭ সালের ১২ জুলাই তাকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছুটিতে পাঠানোর চিঠি দেয় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর তা পুনর্বিবেচনার দাবিতে ভিসি, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর উকিল নোটিশ পাঠান। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাড়া না দিলে একই বছরের ১৩ জুলাই তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন।
২৪ জুলাই সিদ্ধান্তটি কেন অবৈধ নয় সেটি জানাতে উচ্চ আদালত রুল জারি করেন। দীর্ঘ শুনানির পর চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্টের বেঞ্চ ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেয়া আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে একইসঙ্গে তাকে কাজে যোগদান করারও নির্দেশ দেন। তবে আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনও না আসায় সোমবার তিনি তার আইনজীবীর রায়ের সার্টিফিকেট ও যোগদানের কাগজপত্র বিভাগের অফিসে জমা দিতে গেলে অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা জানান চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কোনো চিঠি রিসিভ করা যাবে না। তখন তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলে চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া চিঠি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রায়ের বিষয়টিকে আইনি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে রায়ের কপি আসলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
বার্তা২৪.কম-কে রুশাদ ফরিদী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের বেশি বাধ্যতামূলক ছুটিতে কাউকে রাখা যায় না। তারপরও আমি ৭০০ থেকে ৮০০ দিনের বেশি ছুটিতে আছি। আমি নির্দোষ, আমাকে অন্যায় ভাবে দু’বছর ধরে হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু মামলার রায় হওয়ার পরও তাদের এখনো বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখছি না। তাই আমি প্রতিবাদ হিসাবে অবস্থান করে আসছি।
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শফিকুজ্জামান বিষয়টি সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আদালতের ব্যাপার দাবি করে বলেন, উনার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে জড়িত। মামলা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে, আমাদের বিভাগের সাথে নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা বলবে আমরা তাই করব। তাকে ক্লাসে ফেরার বিষয়ে আমাদের কিছু করার নাই।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। আইনের প্রতি আমরা সব সময় শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেলে আমরা পরবর্তীতে ভেবে দেখবো।