গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ১২ দেশের গবেষকদের মিলনমেলা
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়ে দুই দিনব্যাপী ‘সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পূর্বাচল আমেরিকান সিটিস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন ও জাপানসহ বিশ্বের ১২টি দেশের কয়েক শতাধিক গবেষক ও প্রফেসররা অংশ নেন। সম্মেলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া ২০৭টি গবেষণা প্রবন্ধের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৭৯টি প্রবন্ধ মৌখিকভাবে এবং ৩৬টি প্রবন্ধ পোস্টার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফসল হিসেবে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের নানা পরিবর্তন এসেছে; তবে এই পরিবর্তন কেবলই সূচনা। কেননা চীন, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম যেখানে কলকারখানায় রোবট পর্যন্ত স্থাপন করেছে, সেখানে আমরা ওই অর্থে চিন্তাও করতে পারিনি। স্বভাবতই বাংলাদেশের আরএমজি খাত এখন হুমকির মধ্যে। শুধু আরএমজি খাত নয়, আগামী ১০ বছরে ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে আমরা সব ক্ষেত্রে এমন সব পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, যা এর আগে ৫০ বছরেও সম্ভব হয়নি। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পেতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সামদানী ফকিরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ফ্লোরিডা’র আইইইই ফেলো এবং ইইই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ এইচ রশিদ; আইইইই ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র প্রফেসর সজল কে দাস; আইইইই বিডিএস চেয়ার ও বুয়েট প্রফেসর ড. সেলিয়া শাহনাজ প্রমুখ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য সম্মানিত প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত হলেও এর সফলতা মূলত কৌশলগত প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের টেকনোলজি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা, না চাইলেও আমাদের এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যেহেতু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে জোর দিয়েছি; তাই এটাকে মূল ধরেই শিক্ষিত সমাজের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো গেলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হবে না। এ সময় তিনি বাংলাদেশি গ্রাজুয়েটদের স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর বড় প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, একুশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শর্তই হলো টেকনোলজিক্যাল জ্ঞান। তবে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পর্ক সহজ নয়। এ সম্পর্ক সবসময়ই জটিল হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এটাকে মোকাবেলা করতে পারলেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে উন্নত ও স্ব-নির্ভর। তিনি বলেন, গ্রিন ইউনিভার্সিটি শুধু শিক্ষার্থীদের গ্রাজুয়েট হিসেবেই তৈরি করে না, তাদেরকে নৈতিক বোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ার পাশাপাশি প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ হিসেবেও গড়ে তোলে।
সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিগত কয়েক বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় এতটাই পরিবর্তন আসছে, যা মানুষ আগে কল্পনাও করেনি। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পেতেও শিল্প বিপ্লবের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত: সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যেই ‘সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ শীর্ষক এই আয়োজন করা হয়েছে।
সম্মেলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত গবেষকরা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবটিক্স অ্যান্ড সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমের ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত গবেষণার ফলাফল ও শিল্প প্রদর্শন করা হয়। যা শুধু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়াই নয় বরং স্নাতকদের দক্ষতার মান বাড়াতে শিক্ষা ও শিল্পের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সম্মেলনে মোট তিনটি পৃথক টেকনোলজি তথা ইন্টেলিজেন্ট কম্পিউটিং, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেমস; ইলেকট্রনিক্স, পাওয়ার অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেমস এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংকে প্রাধান্য দেয়া। সম্মেলন পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গবেষণা প্রবন্ধগুলো আইইইই এক্সপ্লোর ডিজিটাল লাইব্রেরিতে স্থান পাবে।
সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকরা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ফ্লোরিডা’র আইইইই ফেলো এবং ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ এইচ রশিদ; আইইইই ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি’র প্রফেসর সজল কে দাস; উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও ডিরেক্টর ডেং ঝংমিন; আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি টেসিড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আলমগীর হোসাইন; পরিচালক ফাহিম কাওসার; দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ং হি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ভিশন বিভাগের প্রফেসর ওকসাম চে; জার্মানির ডার্মস্টাড্ট ইউনিভার্সিটির ফলিত বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর রহমতুল্লাহ খোন্দকার; জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইই’র সিনিয়র সদস্য মো. আতিকুর রহমান আহাদ; আইইইই বিডিএস চেয়ার ও বুয়েট প্রফেসর ড. সেলিয়া শাহনাজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস’র প্রফেসর লতিফুর খান।
সম্মেলনে উপস্থাপিত মোট পাঁচটি প্রবন্ধকে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করা হবে এবং তা পরবর্তীতে গ্রিন ইউনিভার্সিটির জার্নালে প্রকাশ পাবে। এছাড়াও সম্মেলনে সেরা প্রবন্ধের জন্য তিন জনকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড হিসেবে ‘ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা’, ‘ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা’ এবং ‘ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা’র টিকেট দেয়া হবে। অন্যদিকে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড হিসেবে দেয়া হবে যথাক্রমে ১০ হাজার, ৬ হাজার এবং ৪ হাজার টাকা। আইইইই বাংলাদেশ সেকশনের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে আরও একটি বিশেষ পুরস্কার। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইইইই, বাংলাদেশ সেকশন। গ্রিন ইউনিভার্সিটি ছাড়াও এতে বাংলাদেশ সরকারের ‘আইসিটি ডিভিশন’ ও ‘ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস’ আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে।