বয়স ভুলে সবাই ফিরে গেলেন তারুণ্যদীপ্ত অতীতে

  • উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান/ছবি: বার্তা২৪.কম

আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান/ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রায়হানা তাসনিম। প্রায় ৩০ বছর পর এসেছেন শিক্ষা জীবনের স্মৃতিময় ক্যাম্পাস ময়মনসিংহের ঐহিত্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগে। যাদের সাথে কাটিয়েছিলেন অনার্স লাইফের পুরো সময়, সেই সহপাঠী-বন্ধুদের দীর্ঘ সময় পর কাছে পেলেন। জড়িয়ে ধরলেন একে অপরকে। শুরু করলেন স্মৃতি রোমন্থন।

এসময় অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে ১৯৮৫-৮৬ সেশনের এ প্রাক্তণ শিক্ষার্থী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে যখন হাত মেলালাম বা জড়িয়ে ধরলাম, মনে হচ্ছিল যেন মনের সঙ্গে মন মেলালাম।’

বিজ্ঞাপন

শুধু রায়হানাই নন, এমন মধুর অনুভূতি কলেজটির প্রাক্তণ গণিতজ্ঞদের। কয়েক যুগ পর প্রিয় বন্ধু-বান্ধবকে কাছে পেয়ে বয়স ভুলে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন তারুণ্যদ্বীপ্ত সোনালী অতীতে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনীতে হাজির হয়েছিলেন ১৯৭১-৭২ থেকে ২০১৪-১৫ সেশন পর্যন্ত প্রায় হাজারখানেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এদিন পুরোনো ক্যাম্পাসে, পুরোনো বন্ধুদের পাশে পেয়ে সবাই মেতে উঠেছিলেন হারানো দিনগুলো ছুঁয়ে দেখার উচ্ছ্বাসে। স্মৃতির ঝাঁপি আর আনন্দ-আড্ডা-খুনসুটি যেন এক মুহূর্তেই ফিরিয়ে আনলো বিগত সময়কে।

বিজ্ঞাপন

গণিত বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধু জিয়াউল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মুনজুরুল হক ও আব্দুল কাদিরের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন ১৯৮২-৮৩ সেশনের প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডি বয়েজ কলেজের শিক্ষক লুৎফুল রহমান। অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকের মিলনমেলায় যে আবেগ-উচ্ছ্বাস তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই কলেজের ইট-পাথর সবগুলোর সাথেই আমরা পরিচিত। এখানে এসে আমাদের সময়কার স্যার ও সিনিয়র-জুনিয়রদের কাছে পেয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। এমন আয়োজন হলেই নবীন-প্রবীনদের মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে।’

পুনর্মিলনী উপলক্ষে এদিন সকাল ৯টায় নগরের টাউন হল প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করা হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালির। বর্ণাঢ্য বলতে যা বোঝায়, বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে একাকার নবীন-প্রবীনরা। র‌্যালিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে ফুল দিয়ে সবাইকে স্বাগত জানান গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আবুল কাশেম আকন্দ।

এরপর সবাই বেশ কিছু সময় সবান্ধবে ঘুরে বেড়ান প্রিয় ক্যাম্পাস ও গণিত ভবন। এসময় কেউ হাতড়ে নিলেন ছাত্রজীবনের স্মৃতি। কারও আবার চোখের কোণে জমলো পানি। ক্যাম্পাসে সুমধুর আড্ডা শেষে সবাই যোগ দেন টাউনহলস্থ অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভায়।

সভায় বক্তব্য রাখেন- গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আবুল কাশেম আকন্দ, সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর এম এ কুদ্দুস, আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক ভিপি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, বাকৃবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও পুনর্মিলনী কমিটির সভাপতি প্রফেসর আব্দুল হাই, সেক্রেটারি কাজী আজাদ জাহান শামীম প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে দুপুরের খাবারের পর শুরু হয় ব্যাচ ভিত্তিক ফ্রেমবন্দী ও স্মৃতিচারণ পর্ব। এসময় মজার মজার ঘটনার ঘনঘটা ঢেউ খেলে যায় অগ্রজ-অনুজদের হৃদয়ে। আবার স্মরণ করা হয় এ ভুবন ছেড়ে চলে যাওয়া সহপাঠীদেরও।

সর্বশেষ পর্বে র‌্যাফেল ড্র, নাটিকা, নৃত্য, আবৃত্তি, গানে অংশ নেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে অনেকে শেষ সময়ের জন্য খুঁজে নিচ্ছিলেন একে অপরকে, বেঁধে রাখছিলেন স্মৃতির ফ্রেমে।