বাংলা ভাষায় কথা বলা বিরাট লড়াইয়ের অংশ: আনু মুহাম্মদ

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাতৃভাষা উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ছবি: বার্তা২৪.কম

মাতৃভাষা উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ছবি: বার্তা২৪.কম

শিক্ষাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার একটা বিরাট লড়াইয়ের অংশ। বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও নীতিমালাসহ সকল কার্যক্রমে বাংলা ভাষা পরিত্যক্ত।'

শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ আয়োজিত মাতৃভাষা উৎসবে তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী রয়েছে তাদের মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা কীভাবে হবে যেখানে রাষ্ট্র সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রে যখন তার রাজনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শতকরা একভাগের শাসন নিশ্চিত হয় তখন আর বাকি নিরানব্বই ভাগের ভাষা যাই হোক না কেন, তার কোনো গুরুত্ব থাকে না। যে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশে আন্দোলন হয়েছে মানুষ জীবন দিয়েছে সেই দেশে মাতৃভাষা পরিত্যক্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাতৃভাষায় কথা বলতে না পারাটাই এখন গৌরবের বিষয়। আভিজাত্যের বিষয় মাতৃভাষায় লেখাপড়ার অধিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই। মাতৃভাষায় আদালতে রায় হয় না। বাংলাদেশের যে পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ভাষা সেটার ভাষাও ইংরেজি। বাংলাদেশে জ্বালানি বিদ্যুৎ নিয়ে মহাপরিকল্পনা হয় ইংরেজি ভাষায়। বাংলাদেশের জনগণ নিয়ে যত ধরনের পরিকল্পনানীতি বা সিদ্ধান্ত হয় সেটা সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণ কিছুই জানে না।’

বিজ্ঞাপন
বিলুপ্তপ্রায় এমন ১১টি ভাষায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণকে সবকিছু থেকে দূরে রাখার জন্য যতরকম কায়দা-কৌশল আছে তার মধ্যে ভাষা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে যত কম জানে সে ততবেশি মানে। জনগণ থেকে যত দূরে থাকা যায় আভিজাত্য তত বেশি হয়। এই দর্শন ধারায় চলছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং তার কারণেই আমরা দেখি দেশের শতকরা একভাগ মানুষের হাতে আমাদের সম্পদ এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত, যথেচ্ছাচার চলছে সর্বত্র। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যত লড়াই আছে তার মধ্যে মাতৃভাষা অন্যতম। মাতৃভাষায় শিক্ষা গবেষণা করে সম্মানজনক কাজ পাওয়ার অধিকার। সমাজে বুক ফুলিয়ে চলার জন্য মাতৃভাষা যথেষ্ট। অন্য ভাষা জানাটা ভালো কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি প্রয়োজন মাতৃভাষা জানা। এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অনেক ভাষা জানতে হবে কিন্তু আমাদের পায়ের নিচে মাটি রাখতে গেলে মাতৃভাষায় আমাদের নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করার মতো পরিস্থিতি রাষ্ট্রের তৈরি করতে হবে।'

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের বক্তব্য শেষে ভাষা উৎসবে বিলুপ্তপ্রায় এমন ১১টি ভাষায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে বম, পাংখুয়া, ত্রিপুরা, চাকমা, বাংলা, তেলেগু, মাহাতো, ম্রো, গারো, হাজং ও মারমা ভাষায় কবিতা, গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। উৎসবে স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।