নানা সংকটে রাবির সাংস্কৃতিক অঙ্গন

  • রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঝিমিয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাংস্কৃতিক অঙ্গন। নেই আগের মতো সেই প্রাণচাঞ্চল্যতা। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কর্মী সংকট, অপূর্ণাঙ্গ টিএসসিসিসহ নানা কারণে ক্রমেই মুখ থুবড়ে পড়ছে এক সময়কার জমজমাট ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাকী সংগঠনগুলোর তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। নিয়মিত মহড়াও হয় না। এমনকি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিমনা অধ্যাপকরা বলছেন, গৎবাঁধা এবং দিবস ভিত্তিক পরিবেশনা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যতিক্রম কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন নেই। একদিকে, সংগঠনগুলোতে অর্থ, কর্মী ও অবকাঠামো সংকট, অন্তকোন্দল বিদ্যমান। অন্যদিকে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিমুখতা।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ কয়েক বছর জমজমাট সময় পার করে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। নিয়মিত নাটক, পথনাটক, মূকাভিনয়, মঞ্চনাটক, যাত্রাপালা, সংগীত চর্চাসহ নানা কর্মসূচিতে মুখর থাকত ক্যাম্পাস। এমনকি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানসহ দেশের বিভিন্ন সংকটময় মুহূর্তে জোরালো ভূমিকায় ছিল সংগঠনগুলো। কিন্তু বর্তমান চিত্র পুরোই উল্টো। সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে সংস্কৃতির চর্চা। নাটক-পথনাটকসহ অন্যান্য কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হলেও তা খুবই কম।

টিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৮টি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন (রুডা), সমকাল নাট্যচক্র, অরণি সাংস্কৃতিক সংসদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর কালচার অ্যান্ড এডুকেশন, তীর্থক নাটক, অনুশীলন নাট্যদল, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার রাজশাহী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, গণশিল্পী সংস্থা, স্বনন উল্লেখযোগ্য। তবে নানামুখী সমস্যা ও কর্মী সংকটের কারণে আবহমান, ঐকতান, মুক্ত পাঠক দল, সমগীত সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণ’র কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ।

বিজ্ঞাপন

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন, বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন মিডিয়ায় তারা বেশি সময় কাটান। ফলে ধীরে ধীরে কমে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্থায়ন, সংস্কৃতি চর্চার সুস্থ পরিবেশ তৈরি, আবাসিক হল ও বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক মনন তৈরি হয় পরিবার থেকে। বর্তমানে দেশের কোনো এলাকায় সাংস্কৃতিক চর্চা নেই। শিক্ষার্থীরা শুধু 'জিপিএ-৫' এর পেছনে সময় ব্যয় করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তারা কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হচ্ছে না। আবার তথ্য প্রযুক্তির যুগে শিক্ষার্থীরা পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলে তারা সেখানে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার সাথে সাংস্কৃতিক চর্চার মিলন ঘটাতে হবে। পারিবারিকভাবে আগের মত সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে যে ক্যারিয়ার ভালো করা যায়, সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে।

কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, পূর্বে আমরা দেখেছি যেকোনো ধরনের অন্যায় হলে সবার আগে সাংস্কৃতিক কর্মীরাই প্রতিবাদ জানাত। কিন্তু সে জায়গাটি এখন বেশ স্থবির। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো সংগঠন আছে। কিন্তু কর্মী ও আর্থিক সংকট তাদের প্রবল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রচ্ছন্নভাবে সংগঠনগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেষ্টা করে। সংগঠনগুলো ঝিমিয়ে পড়ার এটিও একটি কারণ।

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মহিউদ্দিন মানিক বলেন, প্রযুক্তির প্রভাবে ছাত্ররা এখন ঘরমুখো হয়ে পড়েছে। অবসর সময়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করছে। তারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। যার কারণে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের আগ্রহ কমছে।