জবি শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে এই দাবি জানান তারা।
জানা যায়, গত ২৭ জুন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ভোলাই মুন্সিকান্দি গ্রামে জমি নিয়ে বিবাদের জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রিয়াজ মাদবর (১৭) নামে এক কিশোর গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিয়াজ মারা যায়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনের নামে মৃতের বাবা লিটন মাদবর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। পরে ৩০ জুন দুপুরে মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মামলার এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও মনিরকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'মনির আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। এই লকডাউনের জন্য সে গ্রামের বাড়িতে ছিল। তার সাথে বাদী বা বিবাদী পক্ষের কারো সাথে কোনো সংযোগ ছিলো না। সে তৃতীয় পক্ষের লোক এবং ঘটনার দিন সে ঘরেই অবস্থান করছিল। কিন্তু প্রহসনমূলকভাবে এই হত্যার ঘটনায় তাকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আটক করা হয়। এখন তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা অনতিবিলম্বে মনিরের মুক্তি চাই। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।'
এদিকে মনিরের সহপাঠীদের দাবি, 'মনিররা কোনো পক্ষের সাথে জড়িত থাকা দুরের কথা সমর্থকও নয়। এমনকি মনিরের পরিবারের কোনো সদস্য এই মামলার আসামী নয়। অথচ তালিকাভুক্ত আসামীরা সব গা ঢাকা দিলেও মনির তার বাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করছিল। কিন্তু নিরীহ মনিরকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা মনিরের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মনিরেরর ভাই সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় মারামারি লাগত। গত ২৭ জুন এসব ঘটনার জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় রিয়াজ আলী মাতবর (১৭) নামে একজন নিহত হয়। একজন নিহত হওয়ার পর নিহত পক্ষের লোকজন হত্যাকারী পক্ষের লোকজনদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষে আমরা যুক্ত ছিলাম না। আমার ভাই ওই সময় বাড়িতে অবস্থান করছিল। কিন্তু এসব ঘটনায় একটি পক্ষ বাণিজ্যের আশ্রয় নেয়। স্থানীয় নিহত পক্ষের মাতবর করিম মাষ্টার মামলায় নাম দেয়ার ভয় দেখিয়ে অনেকের কাছে টাকা পয়সা নেয়। করিম মাষ্টার আমার বাবার কাছে তিন লক্ষ টাকা দাবি করে। না হলে আমাদের পরিবারের কাউকে মামলায় নাম দিবে বলে হুমকি দেয়। পরে ৩০ জুন আমার ভাইকে পুলিশ আটক করে। এসময় তাকে থানা থেকে ছাড়া হবে বলে আবার টাকা দাবি করে। আমার বাবা এ সময় দুই লক্ষ টাকা দেয়ার জন্য রাজি হয়। এবং স্থানীয় মাতবর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইসমাইল মোল্লার সাক্ষীতে ১ লক্ষ টাকাও দেয়া হয়। কিন্তু ১ জুলাই আমার ভাইকে কোর্টে চালান করে দেয়া হয়। আমার নির্দোষ ভাইয়ের মুক্তি চাই। দোষীদের শাস্তি চাই।
শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার মাতবর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইসমাইল মোল্লা বলেন, মনির একজন ভাল ছেলে। সে ঘটনার সাথে জড়িত না। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও বাদী পক্ষের লোক করিম মাষ্টার, এমতাদ মাতবরসহ কয়েকজনের চক্রান্তের শিকার তার পরিবার। আমি বাদী বিবাদী, ওসি, এসপি ও স্থানীয় এমপির সাথে কথা বলে ছেলেটার যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে চেষ্টা করব।
জাজিরা থানার ওসি আযহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, মন্টু শেখ গং ও করিম মাষ্টারদের দুই পক্ষের আধিপত্যের জেরে ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। মামলায় নাম দেয়া নিয়ে কোনো চাঁদাবাজি হলে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করবে। মামলার এজাহারে ছেলের নাম নেই, সন্দেহভাজন হিসাবে তাকে আটক করা হয়। ছেলে ঘটনার সাথে জড়িত ছিল কিনা তদন্তের পরে বের হয়ে আসবে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের অভিযোগ তিনি এ সময় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় এমপি বাদীর সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে যেন মামলায় জড়ানো না হয়।