বিশ্বায়নে সামিল হতে দেশে বিদেশি ভাষা-সংস্কৃতির বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন



ডক্টর এ.বি.এম.রেজাউল করিম ফকির
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১. পূর্বকথা

চলছে বিশ্ব জুড়ে পরিব্যপ্ত বিশ্বায়ন, যার কবলে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি আবর্তিত হচ্ছে। এই বিশ্বায়ন বিশ্বের দেশসমূহের জন্য সুযোগ হিসাবে অবির্ভূত হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের ব্যাপক প্রস্তুতি প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পশ্চাৎপদ জ্ঞানীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব নয়। সেজন্য দেশে বিশ্বায়ন সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চার অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।

২. বিশ্বায়নের অর্থ

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বায়ন বলতে কী বুঝায়। বিশ্বায়ন হলো- দেশাভ্যন্তরীণ গণ্ডী পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি আন্তঃদেশীয় প্রক্রিয়া, যাতে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে আন্তঃদেশীয় বিনিময় সম্পন্ন হয় বলে, এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া পুঁজিবাদের কবলে নিপতিত হওয়ায়, পুঁজিবাদী কুশলী দেশ ও বেনিয়া প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থনৈতিক শোষণের সুযোগ হিসাবে নিয়েছে। পুঁজিবাদী আদর্শের খপ্পরে পড়ে, বিশ্বায়ন কেবলমাত্র বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিদৃষ্ট হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি দৈশিক গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। এর ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছে এবং অভিন্ন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশগ্রহণ করছে, যার চালিকা শক্তি হিসাবে অবির্ভূত হয়েছে-পুঁজিবাদী শক্তি।

এই বিশ্বায়নের ঘূর্ণাবর্তে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন সূচীত হচ্ছে, যার নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি রয়েছে পুঁজিবাদী শক্তির হাতে।সেজন্য বাংলাদেশ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে যতো না সুবিধা পাচ্ছে, তার চেয়েও বেশী অর্থ পাচার ও অপসংস্কৃতির প্রসার ইত্যাদি নানা অনাঙ্খিত বিষয়ের শিকারে পরিণত হচ্ছে। এর কারণ, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটিতে পুঁজিবাদী কুশলী দেশ ও বেনিয়া প্রতিষ্ঠানসমূহ থাবা বিস্তার করে আছে। এই পূঁজিবাদী কুশলী দেশ ও বেনিয়া প্রতিষ্ঠানসমূহকে ডিঙ্গিয়ে দেশ ও জাতির জন্য সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সুবিধা আহরণ করতে হলে, বাঙালি জাতিকে কৌশলগতভাবে প্রস্তুত হতে হবে। কিন্তু বর্তমান কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কোমল অবকাঠামোতে বিশ্বায়নের পূর্ণ সুবিধা আহরণের মতো কৌশলগত প্রস্তুতি সম্ভব নয়। সে জন্য বিদেশবিদ্যা ও বিদেশি ভাষায় পারদর্শী অঞ্চল ভিত্তিক চিন্তকবর্গ (Think Tank) গড়ে তুলতে হবে।

৩. বিশ্বায়ন সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চার অবকাঠামো

দেশে বিদেশবিদ্যা ও বিদেশি ভাষায়পারদর্শী চিন্তকবর্গ গড়ে তুলতে হলে, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পর্কিত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এখানে আমাদের জানা প্রয়োজন যে, অবকাঠামো বলতে কী বুঝায়। অবকাঠামো হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থাবর ও সংবিধি সম্পর্কিত ব্যবস্থা বিশেষ। অবকাঠামোসমূহকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়: ভৌত অবকাঠামো ও কোমল অবকাঠামো। বিশ্বায়ন সম্পর্কিত শিক্ষা ও গবেষণামূলক অবকাঠামো গড়ে তুলতে হলে, প্রয়োজন হবে শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সহায়ক শিক্ষা ও গবেষণা ভবন, মিলনায়ন, গ্রন্থাগার, সম্মেলন কক্ষ ও বৈদ্যুত্যিক ও বৈদ্যুতিন সুবিধা সম্পর্কিত ভৌত অবকাঠামো, এবং নির্মিত এই ভৌত অবকাঠামোতে শিক্ষা ও গবেষণা কর্ম সম্পাদন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংবিধি, নীতিমালা ও আইন হলো কোমল অবকাঠামো। বিশ্বায়ন সম্পর্কিত চিন্তকবর্গ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও গবেষণা সম্পর্কিত অবকাঠামো সৃজন ও পরিচালনার জন্য গৃহীত পরিকল্পনার অংশ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে এক বা একাধিক বিদেশবিদ্যা বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়, যার নাম দেওয়া যেতে পারে―বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়। এই পরিকল্পনার আওতায়, দেশে বর্তমানে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান, যেমন-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (Bangladesh Institute of International and Strategic Studies)সমূ্হকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।

কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, শিক্ষানীতি ও ভাষানীতির কোথাও এই বিশ্বায়ন সম্পর্কিত চিন্তকবর্গ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও গবেষণা সহায়ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বিবৃত নেই। অথচ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার আবর্তে প্রবাহমান থেকে এর থেকে সুবিধা নিতে দেশে এই ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই প্রয়োজনীয়তাকে আমলে নেওয়া হলে, অন্তত একটি বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ভৌত ও কোমল অবকাঠমো গড়ে তুলতে হবে। সরকারি উদ্যোগ ও অর্থ বরাদ্দ থাকলে সহজেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু এই অবকাঠামোতে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গড়ে তুলতে হবেএকটি কোমল অবকাঠামো, যার অন্তর্ভুক্ত হলো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধি, আইন ও নীতিমালা। কাজেই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ভৌত কাঠামো যত সহজে গড়ে তোল সম্ভব, কোমল অবকাঠামোটি গড়ে তোলা ততো সহজ নয়। সেজন্য একটি নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনাধীনে এরূপ কোমল অবকাঠামোটি গড়ে তুলতে হবে।

৪. প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা

প্রস্তাবিত বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হলে, শূন্য থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ এ ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমল অবকাঠামো তৈরির উপাদান এ দেশে প্রায় অনুপস্থিত। এই উপদানগুলো হলো- শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় উপাদান, যার মধ্যে রয়েছে-শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা প্রশাসন। নিম্নেকোমল অবকাঠামোর এই উপাদানসমূহ পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করে, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি রূপরেখা তুলে হলো:

৪.১.শিক্ষক: বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণা জগতে বিদ্যমান বর্তমান কর্মশক্তি দিয়ে দেশে একটি বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সেজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিদেশি মাতৃভাষী কর্মশক্তির উপর নির্ভর করতে হবে। সেজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত সকল পদে বিদেশিদের নিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত রাখতে হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে একটু ব্যতিক্রমী ব্যবস্থায় বিদেশি কর্মশক্তি নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এই ব্যবস্থায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি পণ্ডিতদের টানতে আকর্ষণীয় বেতন ও ভাতাসহশিক্ষকপদেরঅতিরিক্ত গবেষক ও গবেষণা সহযোগী (Reseaerch Fellow)-এর মতো পদ সৃষ্টি করতে হবে।

৪.২.শিক্ষার্থী: প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয় সব ধরণের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন, যেন বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে মিথোষ্ক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমটি পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের আবহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় প্রবণতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের SAT-এর আদলে জ্ঞানীয় প্রবণতা পরিমাপক বাংলা-ইংরেজিতে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

৪.৩.পাঠ্যক্রম: পাঠ্যক্রম শিক্ষা কার্যক্রমের খু্বই গুরুত্ত্বপূর্ণ দিক। এই পাঠ্যক্রমে যে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, সেগুলো হলো- বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিকবিদ্যা বা বিদেশবিদ্যা বিষয়ক শাস্ত্র এবংসে সব অঞ্চলে কথিত ভাষাসমূহ। আঞ্চলিকবিদ্যা বা বিদেশবিদ্যা হলো―কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগোষ্ঠী, ভূগোল, ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, সামরিক শক্তি ও সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কিত জ্ঞান। বর্তমানে দেশে আঞ্চলিকবিদ্যা বা বিদেশবিদ্যা সম্পর্কিত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বিচ্ছন্নভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে বাংলা বা ইংরেজি মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু বিদেশের কোন বিষয় সার্বিকভাবে বাংলা বা ইংরেজিতে লিখিত বা প্রচারিত হয় না। যদিও ইংরেজিতে লিখিত ও প্রচারিত হয়, তা লেখক ও প্রচারক নিজস্ব প্রয়োজনে ও নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে লিপিবদ্ধায়ন ও প্রচারণা সম্পাদন করে বলে, তা থেকে বাংলাদেশের জ্ঞাতব্য বিষয় প্রতিফলিত হয় না। কাজেই প্রস্তাবিত বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম দেশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রণয়ন করতে হবে। সেজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণার মাধ্যম হবে বিদেশবিদ্যা সংশ্লিষ্ট বিদেশি ভাষা ও বাংলা ভাষা। এভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের বিষয় ও সে বিষয় অধ্যয়নের মাধ্যম- এই উভয়ই দেশজ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রণয়ন করতে হবে।

তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু প্রণয়ন করা যেতে পারে। বিষয় তিনটি হলো- ১)পাঠ্যক্রম সংশ্লিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চল, ২) পাঠ্যক্রমের জ্ঞানীয়, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক উপযোগিতা, ৩) পাঠ্যক্রমের পরিধি।আমরা জানিযে,বিশ্ব ভৌগলিক অঞ্চল অনুসারে ৮টি মহাদেশে বিভক্ত। কিন্তু এরমধ্যে জনবসতিপূর্ণ ৬টি মহাদেশ হলো- এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ওসেনিয়া। রীতি অনুসারে এই মহাদেশগুলোর প্রত্যেকটিকে কয়েকটি উপমহাদেশে বিভক্ত করা যায়।

এ প্রসঙ্গে, এশিয়া মহাদেশকে উদাহরণ হিসাবে নিয়ে প্রস্তাবিত বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের একটি রূপরেখা তুলে ধরা যেতে পারে। এশিয়া মহাদেশ কেমোট ৫টি উপমহাদেশে ভাগ করা যায়। সেগুলোহলো- পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া। বিভিন্ন উপমহাদেশে জ্ঞানীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহ হলো- পূর্ব এশিয়ার জাপান ও চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, মধ্য এশিয়ার কাজাখাস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার ইরান। জ্ঞানীয় কার্যক্রমের মাপকাঠিতেএ দেশগুলো বেশ এগিয়ে আছে বিধায়, এ দেশগুলোরভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহ হলো- পূর্ব এশিয়ার জাপান ও চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও মধ্য এশিয়ার কাজাখাস্তান ও উজবেকিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার ইরান, সউদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কাজেই বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসব দেশ সম্পর্কে সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। জ্ঞানীয় কার্যক্রম ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ গুরুত্বপূর্ণ এ সব দেশের কোনো কোনোটিতে বাংলাদেশীদের জন্য শ্রম বাজার উন্মুক্ত রয়েছে। এ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-পূর্ব এশিয়ার জাপান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া, পশ্চিম এশিয়ার প্রায় সকল দেশ। কাজেই প্রস্তাবিত উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখিত এ সব দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির অধ্যয়নও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

একই ধারায়, আফ্রিকার বড় অর্থনীতির দেশসমূহ, যেমন- নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর ও আলজেরিয়া সম্পর্কিত বিদেশবিদ্যা অধ্যয়ন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দু’টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা হলো- ইংরেজি আর পরবর্তী দু’টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা হলো-আরবি। কাজেই আফ্রিকার দুই জোড়া দেশ সম্পর্কে অধ্যয়ন ও গবেষণা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত ইংরেজি ও আরবি ভাষায় পরিচালনা করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে ইউরোপের বেশ কয়েকটিদেশ, যেমন-তুরস্ক, স্পেন, জার্মানি ও সুইডেন ইত্যাদি জ্ঞানীয় কার্যক্রম ও অর্থনীতির নিরিখে বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে অবির্ভূত হয়েছে। কাজেই দেশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ সব দেশ সম্পর্কিত বিদেশবিদ্যা ও ভাষাপাঠক্রমের অন্তুর্ভুক্ত করা আবশ্যক।

অন্যদিকে কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন উপমহাদেশে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক দেশে রয়েছে।তারমধ্যে অন্যতম হলো- প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যেমন- ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড ও নেপাল। প্রতিবেশী দেশের সাথে অবিরত নানা বিষয়ে বিভেদ লেগে থাকে। কিন্তু দেশের মঙ্গলের জন্য প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বিভেদ মিটিয়ে নিতে হয়। কিন্তু প্রতিবেশীর সাথে বিভেদ মিটাতে প্রতিবেশীর চিন্তা-চেতনা ও নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে জানতে হয়। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশের ভাষা, জনগোষ্ঠী, ভূগোল, অর্থনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকলে, সে প্রতিবেশী দেশের সাথে জ্ঞানীয়, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা ও অব্যাহত রাখা সহজতর হয়। সে অর্থে কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ বার্মা ও ভারত সম্পর্কে অধ্যয়ন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন হবে।

এভাবে উক্ত তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে, প্রস্তাবিত বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের নানা দেশ ও তার ভাষাসমূহ পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হলে, বাংলাদেশের উপযোগী চিন্তকবর্গ সৃজনেসহায়কশিক্ষাওগবেষণাকার্যক্রমপরিচালনাকরা সম্ভবপর হবে।

৪.৪.শিক্ষা প্রশাসন: প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশাসন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর আদলে গড়ে তোলা সম্ভব। তবেএই শিক্ষা প্রশাসনে বিশ্বেরমহাদেশ ও উপমহাদেশের বিভক্তি অনুসরণে অনুষদ ও বিভাগ গঠন করে তার অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম ন্যস্ত করা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী- ৬টি জন অধ্যুষিত মহাদেশের নাম অনুসরণে ৬টি অনুষদ- এশিয়া অনুষদ, আফ্রিকা অনুষদ, উত্তর আমেরিকা অনুষদ, দক্ষিণ আমেরিকা অনুষদ, ইউরোপ অনুষদওওসেনিয়াঅনুষদ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। প্রত্যেক মহাদেশের অধীনে উপমহাদেশ অনুসরণে এক বা একাধিক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। সে অনুযায়ী এশিয়া অনুষদে বিভাগগুলোর নাম হবে- পূর্ব এশিয়া বিভাগ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগ, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, মধ্য এশিয়া বিভাগও পশ্চিম এশিয়া বিভাগ।

একই ধারায় প্রত্যেক বিভাগের অধীনে উপবিভাগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।যেমন- মধ্য এশিয়া বিভাগ তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও কাজাকাস্তান এই তিনটি উপবিভাগ নিয়ে গঠিত হতে পারে।

উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েএকটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেতা বাস্তবায়ন করা হলে, দেশে বিশ্বায়নে জ্ঞানসম্পন্ন চিন্তকবর্গ সৃজনে সহায়কবিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

৫. উপসংহার

কিন্তু উক্ত ধাঁচের বিশ্ববিদ্যালয় অনুপস্থিত থাকায়,দেশে বিশ্বায়ন সম্পর্কিত কোন চিন্তকবর্গ গড়ে উঠেনি।সে জন্য ক্ষণে ক্ষণে বিচ্ছিন্নভাবে এখান থেকে বা ওখান থেকে বিদেশি ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে কিছু কথাবার্তা শোনা যায়। কিছুদিন আগে বিদেশি ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে শোনা গেলো শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে। এখন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বলছেন- ‘তরুণদের কেবল বাংলা বা ইংরেজি জানলে হবে না। সঙ্গে ফ্রেঞ্চ, জার্মান, স্প্যানিশ এবং চাইনিজ ভাষা শিখতে হবে। তাহলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ বেশি বেশি পেতে সুবিধা হবে। তাছাড়া শুধু ফ্রিল্যান্সিংয়ে নয়, বিদেশে আমাদের দেশের শ্রমিকদের চাহিদা বাড়বে (দৈনিক যুগান্তর ২৫শে আগস্ট ২০২০)’। এ ধরণের কথাবার্তা থেকে মনে হয় যে, দেশের নীতি-নির্ধারকগণ বিদেশি ভাষাকে শ্রমিকের ভাষা ব্যতীত আর কিছু মনে করেন না। অর্থ্যাৎ বিদেশি ভাষা সম্পর্কে এ ধরণের খণ্ড খণ্ড কথাবার্তা নীতি-নির্ধারকগণের বিশ্বায়ন সম্পর্কিত চিন্তাধারার দেউলিয়াত্বকেই প্রকাশ করে।

এ ধরণের খণ্ড খণ্ড চিন্তা দিয়ে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় সামিল হওয়া যাবেনা। সেজন্য আদর্শ, নীতি ও পরিকল্পনা ইত্যাদি থেকে নতুন করে শুরু করতে হবে।একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠে, কোনো একটি বিদেশি ভাষানীতিকে ভিত্তি করে। আর বিদেশ বিদ্যা বিষয়ক জ্ঞান চর্চার অবকাঠামো গড়ে উঠে একটি বিদেশ বিদ্যানীতিকে কেন্দ্র করে।কিন্তু বাংলাদেশের কোনো বিদেশি ভাষানীতি নেই এবং বিদেশ বিদ্যা নীতিও নেই।কাজেই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে সুবিধা পেতে হলে দেশে

একটি বিদেশি ভাষানীতি ও বিদেশ বিদ্যা নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং এই নীতির অনুসরণে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে, বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: ডক্টর এ.বি.এম.রেজাউল করিম ফকির, ভূতপূর্ব অতিথি শিক্ষক, টোকিও বিদেশ বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

   

রাজনৈতিক দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ ও হাস্যকর বাস্তবতা



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক দলগুলির সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক কোনো কর্মসূচি সেই অর্থে নেই বললেই চলে। তবু দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। এর প্রমাণ মেলে গ্রামাঞ্চলে পাড়া-মহল্লার মোড়ে কিংবা বাজারের চায়ের দোকানে। গেল রোজার ঈদের পূর্বে গ্রামের এক বাজারে গিয়ে দেখা গেল চায়ের দোকানের জমজমাট আড্ডা। কোনো আসন খালি না থাকায় পেছনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যা বোঝা গেল-তাতে সারাদিন মাঠে-ঘাটে কৃষি কাজ করা মানুষগুলো দেশের খবরাখবর শহুরে মানুষদের চেয়ে কম রাখেন না!

কোন দলের কোন নেতা কবে কী বলেছেন, কোন নায়িকার সংসার ভেঙে গেছে, ক্রিকেট খেলায় কোন দেশ কাকে হারিয়েছে ইত্যাদি বিতর্ক ছাপিয়ে পুতিন-বাইডেন কি বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিই যেন তাদের মুখস্থ! এসব চায়ের স্টলেরও আবার দলীয় পরিচয় আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের জন্য পৃথক স্টল। আর অন্য দলগুলোর সমর্থকরা সবগুলোতে মিলেমিশে থাকেন। আড়াই দশক পূর্বে গ্রাম ছেড়ে আসার যে স্মৃতি তাতে গ্রামের মানুষের এমন রাজনৈতিক সচেতনতা আগে কখনও দেখিনি। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রসারে মানুষের মাঝে এই সচেতনতা এসেছে। চা-স্টলের এসব আড্ডা আবার অনেক সময় সহিংসতাতেও গড়ায়।

এতে করে প্রতীয়মান হচ্ছে-দেশে রাজনৈতিক দলগুলির সক্রিয় কর্মসূচি না থাকলেও সাধারণ মানুষের মাঝে রাজনীতিমনস্কতা বিলীন হয়নি। বরং মিডিয়ার কল্যাণে দেশে-বিদেশে ঘটে যাওয়া সব খবরা-খবরই তারা রাখেন এবং নিজেদের চা-আড্ডায় স্ব-স্ব ভাবনা-চিন্তা উগড়েও দেন। সেখানে দলের সমর্থক হলেও অনেক সময় নিজ দলের কেন্দ্রীয় কোনো নেতার অসংযত বক্তব্য নিয়েও সমালোচনায় ছাড়েন না অনেকে। ‘পাবলিক পার্লামেন্ট’ বলে বহুল শ্রুত যে টার্মটি ব্যবহার করা হয় তা বোধহয় গ্রামের এই চা-স্টলগুলির প্রতিচ্ছবি।

রাজনৈতিক দলগুলিতে রাজনীতিহীনতার মাঝেই আবারও এসেছে এক নির্বাচনী উপলক্ষ্য। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই মুহূর্তে স্থানীয় সরকারের সক্রিয় প্রতিষ্ঠান হতে না পারলেও উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলির স্থানীয় নেতাকর্মীদের উৎসাহের কমতি নেই। নির্বাচিত পদ-পদবি হলেই কিছু সুযোগ-সুবিধার অংশীদার হওয়া যায়, সেইসঙ্গে কর্মী-অনুসারীদের প্রতিপালনও করা যায়-যা রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে। এমন বাস্তবতার দৌড়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাও শামিল হয়েছেন উপজেলা নির্বাচনে। এমপি হওয়ার দৌড়ে যারা ছিটকে পড়েছিলেন, লজ্জাশরম ভেঙে আকাঙ্ক্ষার অবনমন ঘটিয়ে অনেকেই উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছেন।

ক্ষমতার ভেতরে ও বাইরে থাকা দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র ‘হাইকমান্ড’ এর কিছু বক্তৃতা-বিবৃতি এই নির্বাচনকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে উপজেলা নির্বাচনে দলের কিছু অনুশাসন মেনে চলার ‘কড়া’ নির্দেশনা শুনিয়েছেন। এই কড়া বার্তাটি হচ্ছে, এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের এই উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়া।

গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্ষমতাসীন দলের অন্দরে তো বটেই, গোটা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেই এ নিয়ে নানা শোরগোল চলছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও এমপিদের সঙ্গে হাইকমান্ডের অনানুষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত দেনদরবার ব্যাপকভাবেই চলছে। দলের ‘কঠোর অবস্থান’ এর সঙ্গে দ্বিমত ও স্বজনদের স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কায় কোনো কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনাও নাকি ঘটেছে!

রাজনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাকি এও বলেছেন যে, তার ছেলে চেয়ারম্যান না হলে এলাকার উন্নয়নই নাকি হবে না!

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশের অধিকাংশ জেলাতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে এমপি ও মন্ত্রীদের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন এবং তাদের প্রার্থিতা বৈধ বলেও ঘোষিত হয়েছে। আমরা বিগত জাতীয় নির্বাচন ও তারও পূর্বে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন, এমনকি উপ-নির্বাচনগুলিতেও বহু নেতাকেই দলের সিদ্ধান্ত অমান্যের কারণে নোটিশ-বহিষ্কার, স্থায়ী বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে দেখেছি। আবার পরবর্তীতে দলের পক্ষ থেকে সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরাতেও দেখেছি। এমনকি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে বহিষ্কৃত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে ফের দলে ফেরানোর সিদ্ধান্তে নেতাকর্মীদের মাঝে বিস্ময়ও পরিলক্ষিত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের হাই কমান্ড থেকে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার ‘কড়া নির্দেশনা’ সাধারণ মানুষ, এমনকি মাঠের কর্মী-সমর্থকদের কাছে ‘হাস্যকর’ প্রতিপন্ন হচ্ছে কিনা তাও বোধহয় ভেবে দেখা দরকার।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক কর্মসূচিহীন অবস্থায় কিছু সংবাদ সম্মেলন আর বিদেশি কুটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে সীমাবদ্ধ বিএনপি’র দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলের ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে। তাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন ২১ জন। দলের হাই কমান্ডের অদূরদর্শী ও হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মাশুল গুণতে থাকা বিএনপি’র নেতা ও কর্মীরা যে অধৈর্য হয়েই দলীয় সিদ্ধান্তের থোরাই কেয়ার করছেন এও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ না পেলে নেতা বা কর্মীদের মাঝে যে এক ধরনের রাজনীতিহীনতা ভর করেছে তা দলটির তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে টের পাওয়া যায়।

স্বৈরতন্ত্রের আশ্রয়ে দীর্ঘ সময় দেশ শাসন করা এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতারা স্ট্যান্ডবাজি আর অন্যদলের লেজুড় হতে গিয়ে বর্তমানে এসে এমন গুরুত্বহীন অবস্থায় পর্যবেশিত হয়েছে যে এই দলের নেতাদের কথা মানুষ কতটা গুরুত্ব দেন তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া দলটির অন্তর্কোন্দল এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে দলের বর্তমান প্রধান নিজেই হতাশ। তাহলে সেই দলের কর্মী ও সমর্থকরা কতটা দিশাহীন তা সহজেই বুঝে নেওয়া যায়। সুতরাং উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের প্রবক্তা জেনারেল এরশাদের দলের কোনো ঠিকানাই পাওয়া যাচ্ছে না আসন্ন প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে।

এই অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলির হাই কমান্ডের ‘বিচার-বিবেচনা’ নিয়ে জনমানসে যে ‘হাস্যকর’ অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে তা মোটেও শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। যারা দলগুলির সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তাদের এই আত্ম-উপলব্ধি অত্যন্ত জরুরি যে, দেশের সাধারণ মানুষ এখন অনেক কিছুই বুঝতে শিখে গেছেন। গ্রামের সেই ‘পাবলিক পার্লামেন্ট’-গুলোতে প্রতিটি দলের ছোট-বড় সব নেতারই আমলনামার পোর্স্টমর্টেম হয়। ভালো ও সৎ কাজের প্রশংসার সঙ্গে বিতর্কিত ও জনস্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপের কারণে সংশ্লিষ্টদের পিণ্ডি চটকাতেও তারা দ্বিধা করেন না। সাধারণ মানুষের এসব উপলব্ধি ও মতকে যারা গুরুত্বহীন মনে করে তাদের আত্মচিন্তার প্রসার ঘটাতে তৎপর সেইসব ‘রাজনীতিকদের’ ভবিষ্যৎ যে মোটেও শুভ নয়, ইতিহাস তা বার বার প্রমাণ করেছে। তাই জনগণের কাছে হাস্যাস্পদ হওয়ার কর্ম থেকে দূরদর্শী ও স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণের চর্চা রাজনীতিতে খুবই জরুরি।

;

এক জায়গায় সবাই একাকার!



প্রফেসর ড. মো. ফখরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ছেলেবেলার এক বন্ধু এসেছিল আমাদের বাসায় বেড়াতে। বহুদিন আগে সে এই রাজধানীতে এসেছিল। তখন রাস্তাঘাট এত উঁচুনিচু ছিল না। তাই, বাসা চিনতে তার কষ্ট হতো না।

এবার দুপুর বেলা কমলাপুরে ট্রেন থেকে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাসার কাছাকাছি এসেও বাসা খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই, মোবাইল ফোনে বার বার কল দিচ্ছিল। অটোরকিশাওয়ালা বন্ধুটির অসহায়ত্ব বুঝে ফেলে বোধহয় মওকা খুঁজছিল কীভাবে তার যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করা যায়।

আড়াইশ’ টাকার ভাড়া মেটাতে গিয়ে খুচরা টাকা না থাকায় একটি এক হাজার টাকার নোট এগিয়ে দেয়। সে আবার আমাকে কল দেওয়ার সময় অটোরকিশাওয়ালা একহাজার টাকার নোটটি নিয়ে বাকি টাকা ফেরত না দিয়ে দ্রুত অটো চালিয়ে পালিয়ে যায়!

এই, থামো, থামো বলে বাকি টাকা আর ফেরত পাওয়া যায়নি।

এরকম চুরি, ছ্যাঁচড়ামি, হাইজ্যাকিং, প্রতারণা, জালিয়াতি, দুর্নীতি আমাদের সমাজের নিত্যদিনের ঘটনা। এসব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ বাহিনীরা তদারকিতে দিনরাত ব্যস্ত রয়েছেন। এজন্য বিভিন্ন প্রকারের দুর্নীতিদমনকারী সংস্থার কার্যক্রম প্রচলিত রয়েছে। তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে আরো অনেক গোয়েন্দা উইং।

সব ধরনের প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিদর্শন বিভাগ নামক শাখা রয়েছে। কিন্তু দমনকারীরাই যখন দুর্নীতিবাজ হয়ে যায়, তখন সমস্যা আরো জটিলতর রূপ ধারণ করে ফেলে।

সেগুলো পরিদর্শনের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন শত শত পরিদর্শক। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে নিজস্ব পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রয়েছে স্কুল, কলেজ পরিদর্শন শাখা-উপশাখা। সহকারী শিক্ষা পরিদর্শকগণ মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি তদারকি করে থাকেন। এজন্য তাদের ট্যুর প্রোগাম নির্ধারণ করা হয়।

সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, এই ট্যুর প্রোগাম ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপার ঘটছে। এসব ট্যুর প্রোগাম করতে যাওয়া বেশ লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় এটা বিক্রয় করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কারণ, এখানে ‘নাই’কে ‘হ্যাঁ’ বা মন্দটাকে ভালো বলে রিপোর্ট প্রদান করলেই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। ফলে, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও চাকরি করা যায় অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি, ভবন, খেলার মাঠ, ল্যাবসুবিধা না থাকলেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমতি মেলে। এসব অনুমতি মেলার পেছনের শক্তিকে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করে দেন দুর্নীতিবাজ দায়িত্বশীলরা।

দেশে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে বহুলাংশে পরিচালিত হচ্ছে, বড় বড় নির্মাণকাজগুলো। অনেক ঠিকাদারের ঠিকাদারি সনদ নেই। অনেকের সনদ আছে কিন্তু ভেজাল অথবা ধার করা। এখানে কাজ প্রাপ্তির আগে টাকা ভাগ-বাটোয়ার বিনিময়ে কাজ বাগানো হয়। অভিজ্ঞ একজনের নাম ভাঙিয়ে অনভিজ্ঞ আরেকজন বা বহুজন সেসব কাজের অংশীদার সেজে কাজ করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সমাপ্ত করতে না পেরে সরকারী অর্থের অপচয় ঘটিয়ে বাজে বাড়িয়ে দেবার আন্দোলনের নামে কাজ বন্ধ করে রাখেন।

এটা আমাদের দেশের নির্মাণ সরকারি কাজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। এজন্য জাপান বা মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের দেশে নির্মাণ কাজের খরচ বেশি গুণতে হচ্ছে।

এখনও নতুন পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে কালক্ষেপণ সমস্যা টাকা ছাড়া সমাধান হবার নজির নেই। সরকারি চাকরি পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হেনস্তা হবার ঘটনা আমাদের দেশে স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। এজন্য একজন বিসিএস ক্যাডারকেও প্রমোশনের জন্য ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পেতে অবৈধ অর্থ খরচ করার নজির রয়েছে।

কিছুদিন আগে একজন এমপি ঘোষণা দিলেন, তার ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা নির্বাচনি খরচের কথা! যেটা নির্বাচন কমিশনের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার কথা। কিন্তু নির্বাচনক কমিশন সেটাকে পাশ কাটিয়ে গেছে!

এসব লেখা নিয়ে যখন ভাবছিলাম তখন হঠাৎ মাথায় বজ্রাঘাতের মতো একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকের প্রথম পাতায় সংবাদ শিরোনাম এসে সবকিছু ওলটপালট করে দিলো। তা হলো- র‌্যাবের সাবেক এক মহাপরিচালকের অর্থিক নিয়মের বিষয়টি।

পত্রিকাটিতে নানান অনিয়মসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, ফ্ল্যাট, স্থাপনা ক্রয় এবং একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরির জন্য ছবিসহ নানা তথ্য।

পত্রিকাটি আবাদি জমিতে রিসোর্ট তৈরির জন্য লিখেছে, ‘কেনা জমির কয়েকজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্রমাগত চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। ভয়ভীতিতে কাজ না হলে ভেকু দিয়ে জমির মাটি নিয়ে যেতেন। গভীর গর্ত করে শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পদে থাকায় তাঁর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি জমির মালিকরা।’

পত্রিকাটিতে আরো বলা হয়েছে, ‘শুধু তাই নয়, রিসোর্টটির নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি না হলেও এই রিসোর্টে প্রবেশ স্বাচ্ছন্দ্য করতে সাত কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়েছে সরকারি খরচে।’

এছাড়া ওয়াসার সাবেক এমডি, কতিপয় সাবেক ভিসি, মহাপরিচালক ইত্যাদির দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির খবর বেশ চাউর হলেও সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াতে খুবই ধীরগতি লক্ষণীয়।

এদেশে ছাত্র সংসদের নেতা হওয়া বেশ লাভজনক। তাই ছাত্রনেতা হবার দৌড়ে লবিং, তোয়াজ-তোষণ, তোড়জোর, নির্বাচনি প্রচার খরচের বাহুল্য পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আছে কি না তা জানা যায়নি। দেশের টেকনিক্যাল ও গবেষণাধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রাখার আহ্বান কেউ কর্ণপাত করছেন না।

দেশের সিংহভাগ আমলা ও রাজনীতিবিদরা সন্তানদেরকে বিদেশে পড়াশোনার জন্য পাঠান। স্কলারশিপ ছাড়া বিদেশে পড়ার এত টাকা একজন সরকারি চাকুরে কীভাবে জোগাড় করেন!

একসময় রেলে ‘কালো বিড়াল’ ছিল বলে তৎকালীন মন্ত্রী সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সেই কালো বিড়ালের অস্তিত্ব ডিজিটাল টিকিটসহ গোটা রেল পরিবহন ব্যবস্থাপনায় এখনো বিদ্যমান রয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, ‘কালো বিড়াল বনের মধ্যে বসতি গেড়েছে’!

কিন্তু আমার তো মনে হয়, ‘কালো বিড়াল’ দেশের সব জায়গায় ওঁৎ পেতে থেকে গোঁফে তা দিচ্ছে। তাদের গায়ে ঢিল ছোড়ার কেউ নেই। কারণ, এই পৃথিবীতে যে যত বড় অপরাধী, তার নেটওয়ার্ক তত বেশি শক্তিশালী। এর সঙ্গে থাকে সমকালীন রাজনৈতিক যোগাযোগ ও ভাগ-বাটোয়ারা অর্থনীতির যোগসাজশ।

পদবিধারী ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা’ চটকদার কথা বলে নানান কায়দায় জাল বিস্তার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অসহায় মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের ভোগবিলাসের পথ প্রশস্ত করছেন। বিপদ আঁচ করে এসব মাফিয়া স্মার্টরা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আরো বেশি প্রচারে অর্থ খরচ করে ও মেগাদুর্নীতি শুরু করে দিয়েছেন।

দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। কেউ যদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন, দুদক তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’… আইনে প্রভাবশালী নিয়ে কিছু বলা নেই। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীরও দুর্নীতির বিচার হয়েছে। সুতরাং যে কারো দুর্নীতির বিষয়ে দুদক চাইলে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘… কারো বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির তথ্য উঠে এলে অবশ্যই সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের এ বিষয়ে বিশদভাবে অনুসন্ধানে নামা উচিত।

তিনি আরো বলেন, সরকারের যেকোনো পর্যায়েই চাকরি করুন না কেন, বৈধ উপায়ে কোনোভাবেই এত সম্পদ অর্জন করা সম্ভব নয়।...যদি সত্যিই এত সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন, সেটি বিস্ময়কর। ...তার দুর্নীতির পুরো চিত্র উন্মোচন করা উচিত। কারণ আইন সবার জন্য সমান।’

অন্য এক পত্রিকায় বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে ...অনেকে ষড়যন্ত্র বা সন্দেহও প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু তাতে কারো দুর্নীতি কিংবা রাজকীয় আবাসস্থল, রিসোর্ট, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার এসবকে তো আর বায়বীয় বলা যাবে না। একজন সরকারি চাকরিজীবী, যার মাসিক বেতন এক লাখ টাকাও নয়, তিনি কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের এত সম্পদের মালিক হলেন! এমন প্রশ্নের জবাব তো দেশের মানুষ চাইতেই পারে’।

সেদিন এক ভিক্ষুক প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দড়িতে পা বেঁধে রাজপথে বস্তা গায়ে গড়াগড়ি দিয়ে শুয়ে থালা পেতে ভিক্ষা করছেন… নিকটস্থ এক দোকানি দীর্ঘসময় সেটা পর্যবেক্ষণ করে তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বললে তিনি রাজী হননি। কিন্তু একটি লাঠি হাতে নিয়ে তাড়া করতেই সেই ভিক্ষুক উঠে দৌড়ে পালিয়ে গেল!

এদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ ও মেগা-অপরাধীদের অমিল কোথায়! মিল একজায়গায় অবশ্যই আছে। তা হলো ভিক্ষুকেরা ভিক্ষার পয়সা দিয়ে চাঁদা দেয় মাস্তানদের। আর বড় অপরাধীরা বড় অংকের ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেশের নীতি-নির্ধারকদের।

আসলে ছোট-বড়, ভদ্র, স্মার্ট, সব দুর্নীতিবাজরাই এক জায়গায় সবাই একাকার হয়ে গেছেন! তা হলো, অবৈধ উপায়ে অর্থ অর্জন।

স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, চাঁদাবজি, পরিদর্শন, জালিয়াতি, চুরি, ভেজালকরণ ইত্যাদি যেন সবার মজ্জাগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলবাজ অপরাধীরা সবসময় দলের কৃপা ও দয়া পেয়ে ছাড় পাবার নিয়ম আমাদের কৃষ্টিতে নতুন করে বিকশিত হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে হেডলাইন সংবাদ বের হলেও তাদের বিরুদ্ধে তদন্তেও দুদকের ধীরগতির কথা সংবাদে প্রচরিত হচ্ছে। ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের’ পক্ষে রাজনৈতিকভাবে একচোখা ও দলকানা নীতিও সাড়ম্বরে চালু হয়ে গেছে। তাই, এখন শুধু অপেক্ষা এসব মেগা-অপরাধমূলক ঘটনার প্রেক্ষিতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা দেখার।

*লেখক- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিনE-mail: [email protected]

;

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কী করা হচ্ছে



ব্রিঃ জেঃ হাসান মোঃ শামসুদ্দীন (অবঃ)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ সাতবছর ধরে মিয়ানমার সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকটের বোঝা বহন করে চলছে। বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এ এ) এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যেকার সংঘর্ষে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং এর পাশাপাশি এ এ’র তীব্র আক্রমণ সহ্য করতে না পেরে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী (বিজিপি) এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর এদেশে পালিয়ে আসা একটা নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে এবং এর ধারাবাহিকতায় তাদেরকে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম ও অন্যান্য প্রাশাসনিক কাজ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ জন সদস্যকে মিয়ানমারের জাহাজে নৌপথে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। প্রায় সাড়ে বার লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বহনের পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কে এন এফ) সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষের ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোন থেকে এই ধরনের ঘটনা আদৌ কাম্য নয়। বাংলাদেশের এই অঞ্চল বিভিন্ন কারণে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, পার্বত্য চত্তগ্রামে কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাত পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে নিরসন করায় বেশ কয়েক দশক ধরে সেখানে শান্তি বিরাজ করছিল এর ফলে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন বেগবান হয়েছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুনরায় এই এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো এবং কক্সবাজার জেলার সাথে আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত রয়েছে। কক্সবাজার ও এই অঞ্চল পর্যটনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এই অঞ্চলের বিশেষ ভুমিকা আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পূর্বক শান্তি ফিরিয়ে আনা জরুরি।

কক্সবাজারে গত সাত বছর ধরে আশ্রয় নেয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাবার কার্যক্রম ও উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফিরে যেতে হলে ও সেখানে রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সাথে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের জন্য একটা সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি জরুরি। বহু বছর ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে সেই পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্মম সেনাঅভিযানের আগে তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকের মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ঘৃণা ছড়ানো হয়েছিল এবং এর পেছনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাত ছিল বলে জাতিসংঘের তদন্তে উৎঘাটিত হয়েছে। ফেসবুক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ২০২১ সালে রোহিঙ্গারা ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মামলা করে। এখন জাতিসংঘের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমারের (আইআইএমএম) তথ্য থেকে প্রমানিত হয়েছে যে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গোপনে ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচারণা চালিয়েছিল।

তদন্তকারীদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সেনাবাহিনী 'নিয়মতান্ত্রিক ও সমন্বিতভাবে' সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভয় ও ঘৃণা ছড়ানোর জন্য পরিকল্পিত উপাদান ছড়িয়েছিল। এসব বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিষয়বস্তু প্রায়ই রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে প্রচলিত বৈষম্যমূলক ও অবমাননাকর বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে চালানো হয়। রোহিঙ্গারা সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ বা 'ইসলামীকরণের' মাধ্যমে মিয়ানমারের জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সেখানে জানানো হয় এবং তারা বার্মিজ জাতিগত বিশুদ্ধতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। এসব প্রচারণার কারণে রাখাইনের সাধারণ জনগণও রোহিঙ্গা নিধনে অংশ নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারণার কারণে সময় হাজার হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুকে মারধর, যৌন নিপীড়ন এবং হত্যা করা হয় ও তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এখনও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি এই মনোভাব দূর করতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বা হয়েছে বলে জানা যায় নাই।

রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের আচরণ এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে রাখাইনে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ব্যবহার করে বুথিডং শহর জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টদরা জানায় যে, রাখাইন রাজ্যে জাতিগত বিভাজনের বীজ বপন করতে জান্তা রোহিঙ্গা রিক্রুটদেরকে রাখাইনদের বাড়িঘর ও গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে বাধ্য করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদানের বাধ্যবাধকতার আইন ঘোষণার পর রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের আটক করে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করা হচ্ছে ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে রোহিঙ্গাদের ফ্রন্টলাইনে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে সেনাবাহিনী। রাখাইন রাজ্যে গত বছরের নভেম্বরে এ এ’র অভিযান শুরুর পর থেকে বেশ কিছু শহর এবং অনেক সেনা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী মার্চ মাসে বুথিডং, মংডু ও সিতওয়েতে এ এ’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা বিক্ষোভের আয়োজন করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভোলকার টার্ক সতর্ক করে জানিয়েছেন যে, রোহিঙ্গা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে লড়াই ও উত্তেজনা বেসামরিক জনগণের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর ফলে অতীতের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

গ্রুপ অব সেভেন (জি-সেভেন) দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ১৯ এপ্রিল ইতালির ক্যাপ্রিতে অনুষ্ঠিত জি-সেভেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তা এবং রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে। তারা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে সহিংসতা বন্ধ, নির্বিচারে আটক সব বন্দির মুক্তি এবং একটি অর্থবহ ও টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে সব অংশীজনের সঙ্গে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের আহ্বান জানায়। এটা একটা গঠনমূলক উদ্যোগ কিন্তু এর বাস্তবায়ন কবে হবে এবং রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে এর ভুমিকা তেমন স্পষ্ট নয়। আসিয়ান নেতৃবৃন্দ থাই সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র মায়াওয়াদ্দি অঞ্চলে তীব্র সংঘর্ষের পর সাম্প্রতিক সংঘাত বৃদ্ধিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং সংঘাতময় মিয়ানমারে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আসিয়ান মিয়ানমারের চলমান সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত সাড়ে বার লাখ রোহিঙ্গা গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত এবং তাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া থমকে আছে। মিয়ানমারে চলমান সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করায় আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চায় এবং তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয়েছে। সীমান্ত এলাকা ঘেঁষে আরাকান আর্মির তৎপরতার পাশাপাশি নতুন করে কেএনএফ বেপরোয়া হয়ে ওঠায় সীমান্ত এলাকা অস্থির হয়ে উঠতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমার সীমান্তের অস্থিরতার সুযোগে কেএনএফ বেপরোয়া আচরণ করছে ও হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার পার্বত্যাঞ্চলের আশপাশের সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার কাজ করছে। অনেকের মতে এ এ’র সাথে কেএনএফের ভালো যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ভারতের মণিপুরের কুকিদের সঙ্গেও কেএনএফের যোগাযোগ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেএনএফসহ তিন দেশীয় সন্ত্রাসীদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠার বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সীমান্তে অস্থিরতার সুযোগ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোও নিতে পারে। এর ফলে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং কক্সবাজার এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটতে পারে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অস্ত্রের লেনদেন এবং পরস্পরকে সহায়তা করার বিষয়টিও ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। কেএনএফ পার্বত্য তিন জেলার প্রায় অর্ধেক এলাকায় তৎপর, তারা ‘কুকিল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কুকি সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতের মণিপুর ও মিজোরাম এবং মিয়ানমারে রয়েছে। ওই দুই দেশেও তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা আছে। কেএনএফ ভারতের মণিপুর, মিজোরাম এবং মিয়ানমারে সক্রিয়। ওই সব এলাকায় চলমান অস্থিরতার প্রভাবে কেএনএফ ফের তৎপর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান প্রেক্ষাপটে সীমান্ত এলাকায় আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে।

রাখাইনে জাতিগত বিদ্বেষ সহনীয় অবস্থায় আনার জন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরি এবং গত সাত বছরে ও রোহিঙ্গাদের প্রতি সামরিক জান্তার মনভাব পরিবর্তন না হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাখাইনের পরিস্থিতি যে রকমই হোক না কেন স্থানীয় জনগণের সাথে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রত্যাবাসনের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সকল পক্ষকে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। রাখাইনের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু ও তা অব্যাহত রাখতে হবে যাতে দারিদ্র পীড়িত জনগণের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয় । অর্থনৈতিক মুক্তি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যেকার তিক্ত সম্পর্কের সুন্দর সমাধান হতে পারে। মিয়ানমার ও রাখাইনের রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাইকে পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন একটা সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের এই সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শক্তহাতে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে হলে সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে তাই এ বিষয়ে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

ব্রিঃ জেঃ হাসান মোঃ শামসুদ্দীন, এন ডি সি, এ এফ ডব্লিউ সি, পি এস সি, এম ফিল (অবঃ)
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক

;

আকাশ পথে স্বপ্নযাত্রার সঙ্গী ইউএস বাংলা



মো. কামরুল ইসলাম
আকাশ পথে স্বপ্নযাত্রার সঙ্গী ইউএস বাংলা

আকাশ পথে স্বপ্নযাত্রার সঙ্গী ইউএস বাংলা

  • Font increase
  • Font Decrease

ইউএস- বাংলা। এটা শুধু একটা নাম নয়। এটা একটা স্বপ্নের নাম। বাংলাদেশের একটি অন্যতম বেসরকারী এয়ারলাইন্স এটি। ইউএস-বাংলা আকাশে ডানা মেলে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে। একের পর এক সাফল্য যেন এই স্বপ্নের পরিধি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে সেরাদের সেরা হয়ে উঠছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। আকাশপথে ভ্রমণকারীদের চাহিদার শীর্ষে অবস্থান করছে ইউএস- বাংলা এয়ারলাইন্স। সাধারণ যাত্রীরা ভ্রমণ পরিকল্পনায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকেই বেছে নিচ্ছেন। বিমান যাত্রীরা যেন শুধু ইউএস-বাংলাকেই বেছে নিচ্ছেন না, তারা বেছে নিচ্ছেন ইউএস- বাংলার স্বপ্নকেও। যে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মানুন।

বাংলাদেশের বেসরকারী বিমানসংস্থা হিসেবে প্রথমবারের মতো ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবীতে ফ্লাইট শুরু করে ইতিহাস স্থাপন করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ এভিয়েশন তথা বেসরকারী এয়ারলাইন্সের ইতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বেসরকারী এই বিমান সংস্থা। বর্তমানে দুবাই, শারজাহ এর পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৃতীয় গন্তব্য আবুধাবীতে ফ্লাইট শুরু করেছে ইউএস-বাংলা। দুবাই, শারজাহ ছাড়া বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গন্তব্য মাস্কাট, দোহা, প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, মালে, পর্যটক বান্ধব অন্যতম গন্তব্য ব্যাংকক ও চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর গুয়াংজু, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা ও চেন্নাইতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মান বাংলাদেশের এভিয়েশনকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নিত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের পরিধি বিস্তার করে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বিমান অবতরণের সুযোগ করে দিচ্ছে। যশোর, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের টার্মিনালকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডের রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও রানওয়ের সম্প্রসারণ দেশের এভিয়েশনের অগ্রযাত্রাই নির্দেশ করছে। এরমধ্য দিয়ে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশের অন্যতম বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাথে কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নিত করার চেষ্টায় লিপ্ত বাংলাদেশ সরকার। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নিত করলে ভারতের সাতকন্যা খ্যাত রাজ্যগুলো, নেপাল ও ভুটানের সাথে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো বেশী জোরদার হবে।

বর্তমানে আটটি বিমানবন্দর দেশের অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের আকাশ পথকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। যা মানচিত্রের অর্ধেক জনগোষ্টিকে সেবা দিয়ে থাকে। বর্তমানে চালু বিমানবন্দরগুলো হচ্ছে- ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর. চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দর, রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও বরিশাল বিমানবন্দর।

যাত্রা শুরুর পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে একটি এয়ারলাইন্স যাত্রীদের চলার পথে যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠে। যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠতে অন-টাইম পারফর্মেন্স, নিরাপত্তা, ইন-ফ্লাইট সার্ভিস জরুরী হয়ে উঠে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যাত্রা শুরুর পর থেকে ৯০ শতাংশের উপর ফ্লাইট অন-টাইম বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। এয়ারক্রাফটের পর্যাপ্ততা একটি এয়ারলাইন্স এর এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় ভূমিকা রাখে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দু’টি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন বহরে যুক্ত করেছে ২৪টি এয়ারক্রাফট। যার মধ্যে ২টি এয়ারবাস ৩৩০-৩০০, ৯টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ১০টি এটিআর ৭২-৬০০ ও ৩টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে। খুব শীঘ্রই অভ্যন্তরীণ রুটকে শক্তিশালী করার জন্য আরো একটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট যুক্ত করতে যাচ্ছে। অন-টাইম পারফর্মেন্স বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ সকল রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পর আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রীদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যাত্রা শুরু করে। একের পর এক নতুন নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্য শুরু করতে থাকে ইউএস-বাংলা। যাত্রীদের চাহিদাকে পরিপূর্ণতা দিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা করছে। নূন্যতম ভাড়ায় ভ্রমণ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। পর্যটকদের ভ্রমণকে আরো বেশী আকর্ষণীয় করতে নানা ধরনের ভ্রমণ প্যাকেজ ঘোষণা করছে। ইএমআই সুবিধা দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা পর্যটকদের ভ্রমণ পরিকল্পনাকে সহজতর করে দিচ্ছে। কলকাতা কিংবা চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ করলে এ্যাপোলো হাসপাতালে ডিসকাউন্ট অফার দিচ্ছে ইউএস-বাংলা। ইউএস-বাংলায় ভ্রমণকে উৎসাহিত করার জন্য ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লাইয়ার প্রোগ্রাম “স্কাইস্টার” চালু রয়েছে শুরু থেকেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গন্তব্য মালদ্বীপের রাজধানী মালের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। যার ফলে ভারত মহাসাগরের নীলাভ সৌন্দর্য দর্শনে পর্যটকরা ঢাকা থেকে মালে ভ্রমণ করছে। বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ সুবিধা নিয়ে মালদ্বীপের আকর্ষণীয় দ্বীপগুলোতে ভ্রমণ করছে। মধ্যপ্রাচ্যে পর্যটকদের আকর্ষণীয় গন্তব্য দুবাই, শারজাহ ভ্রমণে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিদিন ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত মাস্কাট ও দোহাতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক কিংবা গুয়াংজু রুটে বাংলাদেশি যাত্রীদের পছন্দক্রমে ইউএস-বাংলা অগ্রগণ্য। যাত্রী বিবেচনায় প্রবাসী শ্রমিক ও পর্যটকরা আরামদায়ক আসন ব্যবস্থা, ইনফ্লাইট সার্ভিস, সর্বোপরি অন-টাইম পারফর্মেন্স ইউএস-বাংলাকে পছন্দক্রমে এগিয়ে রাখতে সহায়তা করছে। বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সসমূহের এর দশ বছর অতিক্রমকাল অত্যন্ত জটিল ও ক্যালকুলেটিভ। বিগত দিনে বন্ধ হওয়া বিমানসংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কিংবা জিএমজি এয়ারলাইন্স দশ বছর অতিক্রমকালীন সময়ে চরম বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে বন্ধ হওয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছে। ঠিক সেই সময়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স তার বিমান বহরে যোগ করে চলেছে আধুনিক ওয়াইড বডি এয়ারবাস ৩৩০ এয়ারক্রাফট। সাথে গন্তব্যের পরিধিও বৃদ্ধি করে চলেছে। প্রতিনিয়ত যাত্রীদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে ইউএস-বাংলা। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জগৎখ্যাত এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে সেবা দিয়ে প্রতিযোগিতা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানচিত্রকে সমুন্নত রেখে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসার পরিধির বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। পছন্দক্রমে যাত্রীরা ইউএস-বাংলাকে অগ্রগণ্য করেছে। স্বাধীনতা লাভের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বল্পতম জীবদ্দশায় বেশ কতগুলি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাতীয় বিমান সংস্থা গঠন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিজয় লাভের পর মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারী জাতীয় বিমান সংস্থা গঠন করে এবং ঠিক এক মাস পর ৪ ফেব্রুয়ারী প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। সর্বাধিক অগ্রাধিকারের মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠন করেন ১৯৭৩ সালে। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের জীবদ্দশায় দেয়া দিক নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলছে উন্নয়নের সোপানে।

১৭ কোটির অধিক জনসংখ্যার দেশে প্রায় ১৩/১৪ মিলিয়ন নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সূত্রে কিংবা শিক্ষার বা চিকিৎসার কারনে, ভ্রমণের সূত্রে আকাশপথ ব্যবহার করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের প্রায় ৭৫ ভাগ বিদেশি এয়ারলাইন্স এর দখলে সেখানে দেশীয় এয়ারলাইন্স এর কাছে মাত্র ত্রিশভাগ যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারেনা। আরো বেশ কিছু বিদেশী এয়ারলাইন্স এর আগমনে অপেক্ষায় বাংলাদেশের এভিয়েশন।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর প্রসার বাংলাদেশ এভিয়েশন যেন কিছুটা পজিটিভ মেরুকরনের গতিপথ পাওয়ার আশা করছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছে বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সের। দেশীয় এয়ারলাইন্সের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পসহ হোটেল ইন্ডাস্ট্রিও ঘুরে দাড়ানোর সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশের যাত্রীদের উপর ভিত্তি করে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সাজায় অথচ বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না, তা সত্যিই ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশিরা পৃথিবীর অনেক জাতি থেকেই অনেক বেশী দেশপ্রেমিক। কিন্তু সেই দেশাত্ববোধকে সম্মানের জায়গায় রেখে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে সেবা প্রদান করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশি যাত্রীরা বিদেশী এয়ারলাইন্সের তুলনায় দেশীয় এয়ারলাইন্সে ভ্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে। ফলে শুধু এয়ারলাইন্সের আয় বাড়বে না, দেশীয় জিডিপিতে অধিক অংশগ্রহণ দেখা যাবে। বেকারত্ব দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশি প্রবাসীরা পৃথিবীর যেসকল দেশে বসবাস করছে সবখানেই বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করবে, একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে সব সময়ের প্রত্যাশা। জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারী বিমান সংস্থা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে এই স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দেখি একজন বেসরকারী এয়ারলাইন্সের কর্মী হিসেবে। নীতি নির্ধারকগণ সবক্ষেত্রে জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারী এয়ারলাইন্স এর গুরুত্ব অনুধাবন করে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ করে দিলে বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলোর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হবে। পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে এয়ারলাইন্সগুলোর স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ এভিয়েশন এগিয়ে যাবে। বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে সহায়তা করবে। সুবর্ণ সময়ের প্রত্যাশায় স্বপ্ন দেখি আর স্বপ্ন উড়াই বাংলাদেশ এভিয়েশনে।

লেখক: মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

;