কক্সবাজারে ওভার ট্যুরিজমের আর্থ-সামাজিক প্রভাব



ড. মতিউর রহমান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি মনোরম উপকূলীয় শহর কক্সবাজার দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে হয়ে পরিগণিত হয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগর বরাবর ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ অবারিত বালুকাময় উপকূলরেখার জন্য পরিচিত, কক্সবাজার কয়েক দশক ধরে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আকষর্ণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। যাই হোক, আদিগন্ত সৈকত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হাজির হয়েছে – আর তা হল ওভারট্যুরিজম বা অতি-পর্যটন।

কক্সবাজারকে প্রায়ই পৃথিবীর অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এর সূর্যস্নাত সৈকত, প্রশান্তিদায়ক তরঙ্গ এবং প্রাণবন্ত স্থানীয় সংস্কৃতি বিশ্বের সমস্ত কোণ থেকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। শহরটি বিলাসবহুল রিসর্ট থেকে শুরু করে বাজেট-বান্ধব আবাসন, ভ্রমণকারীদের জন্য বিভিন্ন রকম উপাদেয় খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গর্বিত। শহরের আইকনিক সমুদ্রের তীরে প্রমোনেড, যা লাবনি পয়েন্ট নামে পরিচিত, স্থানীয় উপাদেয় খাবার, হস্তশিল্প এবং সীশেল স্যুভেনির বিক্রি করে এমন বিক্রেতাদের দ্বারা ভরা একটি ব্যস্ততাপূর্ণ কেন্দ্র।

তদুপরি, কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে, যা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রবাল প্রাচীরের আবাসস্থল। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো প্রধান শহর থেকে এর প্রবেশযোগ্যতা পর্যটকদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও পর্যটনের বৃদ্ধি অনস্বীকার্য সুবিধা নিয়ে এসেছে, এটি এই বৃদ্ধির স্থায়িত্ব এবং স্থানীয় সম্প্রদায় এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগও সৃষ্টি করেছে।

অতি-পর্যটন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এটি এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে অত্যধিক সংখ্যক পর্যটক একটি গন্তব্যে যান, যা পরিবেশ, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মানের ক্ষতি করে। অত্যধিক পর্যটনের নেতিবাচক পরিণতি কক্সবাজার বিভিন্নভাবে ভোগ করছে।

প্রথমত, কক্সবাজার ভ্রমণকারী পর্যটকদের বিপুল সংখ্যা এই অঞ্চলের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। সমুদ্র সৈকতের ক্ষয় যা একসময় একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ছিল, সমুদ্রের খুব কাছাকাছি হোটেল এবং রিসর্ট নির্মাণের কারণে এটি আরও তীব্র হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের কারণে এই অঞ্চলের আদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা পর্যটকদের আকর্ষণ করত তা ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, শহরটির অবকাঠামো পর্যটকদের আগমনের সাথে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা এবং অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সরকার এবং কর্তৃপক্ষ পর্যটন শিল্পের চাহিদা পূরণের জন্য অবিরাম চেষ্টা করছে, যার ফলে এই শহরের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার ওপর এর প্রভাব পড়ছে।

কক্সবাজারে অতি-পর্যটনের আর্থ-সামাজিক প্রভাব জটিল এবং বহুমুখী। যদিও পর্যটন এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে, এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। পর্যটন নিঃসন্দেহে স্থানীয় অর্থনীতিতে অর্থ যোগান দিচ্ছে। এটি আতিথেয়তা, পরিবহন এবং খুচরাসহ বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি তৈরি করেছে। পর্যটকদের অবিরাম আগমনের কারণে ছোট ব্যবসা, যেমন রেস্তোরাঁ এবং স্যুভেনির শপগুলি সমৃদ্ধ হয়েছে৷ উপরন্তু, বর্ধিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কিছু বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।

পর্যটন খাতও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ খুলে দিয়েছে। দর্শনার্থীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় উপকৃত হয়ে স্থানীয়রা তাদের নিজস্ব গেস্টহাউস এবং রেস্তোরাঁ চালু করেছে। এর ফলে অনেকের আয় বেড়েছে এবং জীবিকার উন্নতি হয়েছে।

যদিও পর্যটন অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসেছে, এই খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা স্থানীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলেছে। মৌসুমী পর্যটনের কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সারা বছর আয়ের ওঠানামা অনুভব করে। অফ-পিক সিজনে, অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে, যার ফলে ব্যবসার মালিক এবং তাদের কর্মচারী উভয়ের জন্যই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।

কক্সবাজারে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় স্থানীয় জনগণের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন খাত থেকে আবাসন এবং জমির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সম্পত্তির দাম বেড়েছে, সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য বাড়ি ও জমি কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র অনুভূতি তৈরিতে অবদান রেখেছে, কারণ তারা তাদের শহরকে প্রাথমিকভাবে পর্যটকদের জন্য পরিবর্তিত হতে দেখেছে।

কক্সবাজারে অতি-পর্যটন শুধু শহরের ভৌগোলিক ল্যান্ডস্কেপই পরিবর্তন করেনি বরং এর সাংস্কৃতিক বুননেও প্রভাব ফেলেছে। পর্যটকদের আগমন ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক চর্চাকে হ্রাস করেছে। পর্যটক-বান্ধব অভিজ্ঞতার চাহিদা প্রায়ই স্থানীয় রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের পণ্যীকরণের দিকে নিয়ে যায়, যা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নিছক দৃশ্য পণ্যে পরিণত করে।

অধিকন্তু, বহুজাতিক চেইন হোটেল এবং বিদেশী মালিকানাধীন ব্যবসার উত্থান স্থানীয় সংস্কৃতিকে আরও সংকোচিত করেছে। ঐতিহ্যবাহী বাজার এবং খাবারের দোকানগুলির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলির দ্বারা ছেয়ে গেছে, যা স্থানীয় অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্রতাকে নষ্ট করে দিয়েছে। এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের পরিচিতি ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে।

কক্সবাজারে অতি-পর্যটনের পরিবেশগত প্রভাব সম্ভবত সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। উপকূলরেখা বরাবর হোটেল এবং রিসর্টের অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাঠামো উল্লেখযোগ্য সৈকত ক্ষয়ের দিকে পরিচালিত করেছে। এই ভাঙন শুধুমাত্র শহরের পর্যটন আকর্ষণকেই হুমকির মুখে ফেলে না বরং স্থানীয় জেলেদের জীবিকাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে, কারণ সমুদ্রে তাদের প্রবেশাধিকার ব্যাহত হয়।

অধিকন্তু, পর্যটকদের ফেলে দেয়া প্লাষ্টিক কাপ, পানির বোতল ও অন্যান্য দ্রব্যাদি প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য তৈরি করে, যা প্রায়শই সমুদ্র এবং আশেপাশের অঞ্চলকে দূষিত করে। অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামো এবং অনুশীলনের ফলে সমুদ্র সৈকতে এবং শহরে দৃশ্যমান আবর্জনা দেখা দিয়েছে। এটি শুধুমাত্র পরিবেশেরই ক্ষতি করে না বরং পর্যটকদেরও নিরুৎসাহিত করে যারা আদি
প্রাকৃতিক পরিবেশ খুঁজতে আসে।

কক্সবাজারে অত্যধিক পর্যটন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন যা পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের সাথে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ভারসাম্য বজায় রাখে। পর্যটকদের আগমনকে আরও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার জন্য পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলোতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপকূলরেখার কাছাকাছি হোটেল ও রিসর্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে কঠোর প্রবিধান প্রয়োগ করা এবং দায়িত্বশীল নির্মাণ কাঠামো অনুশীলনের প্রচার করা সৈকত ক্ষয় কমাতে সাহায্য করতে পারে। পর্যটন পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থানীয় সম্প্রদায়কে জড়িত করা নিশ্চিত করতে পারে যে তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং তারা শিল্প থেকে উপকৃত হয়।

পর্যটন ব্যতীত অন্যান্য শিল্পকে সমর্থন করে এমন অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে পর্যটনের মৌসুমী দুর্বলতা হ্রাস করতে পারে। সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং স্থানীয় অভিজ্ঞতার সত্যতা প্রচার কক্সবাজারের অনন্য পরিচয় বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

দায়িত্বশীল এবং টেকসই পর্যটন অনুশীলন সম্পর্কে পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পরিবেশ ও সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে অবদান রাখতে পারে। এলাকাটি টেকসইভাবে ধারণ করতে পারে এমন সর্বাধিক সংখ্যক পর্যটক নির্ধারণ করা এবং পিক সিজনে দর্শনার্থীদের অবস্থানের সময়সীমা নির্ধারণ করা কিছু পরিবেশগত চাপ কমিয়ে দিতে পারে।

একটি শান্ত উপকূলীয় শহর থেকে একটি ব্যস্ত পর্যটন কেন্দ্রে কক্সবাজারের অভিযাত্রা অতি-পর্যটনের কারণে একটি চ্যালেঞ্জের তৈরি করেছে যা এই শহরের টেকসই পর্যটনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যদিও পর্যটন অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে, এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর গভীর আর্থ- সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাবও ফেলেছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে যাতে কক্সবাজার তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল হয়ে থাকে। এই মনোরম উপকূলে টেকসই পর্যটনের একটি রূপরেখা প্রণয়ন সরকারি, বেসরকারি, ব্যবসায়ী ও পর্যটকসহ সকল স্টেকহোল্ডারের অন্যতম দায়িত্ব।

ড. মতিউর রহমান: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

   

মিজোরামের ভোট, বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম



ড. মাহফুজ পারভেজ
মিজোরামের ভোট, বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম

মিজোরামের ভোট, বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রাম লাগোয়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামে ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ঘটেছে ক্ষমতার পালাবদল। পুরনো ও সশস্ত্র-অভিজ্ঞতার ভেতর থেকে আসা নেতাদের স্থলে নির্বাচিত হয়েছেন নতুন ও উন্নয়নমুখী নেতৃত্ব। এই নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাত ও বিচ্ছিন্নতার সম্পর্ক নেই। তারা জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়নের মাধ্যমে মিজোরামের ভাগ্য বদলের পক্ষে। মিজোরামের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে পাশের পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে। যার প্রতিফলন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।  

মিজোরামের নির্বাচনে জয়ী জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম) ৩৭.৯% ভোট পেয়েছে। ক্ষমতায় থাকা মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) ৩৫.১% ভোট পেয়ে মসনদ থেকে ছিটকে পড়েছে। পুরনো দল কংগ্রেস ২০% ভোট পেয়েছে এবং দেশে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পেয়েছে ৫.১% ভোট।

আপাতদৃষ্টিতে যদি মিজোরামে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ভোট শেয়ারের উপর নজর দেওয়া যায়, তাহলে স্পষ্ট হবে যে জেডপিএম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। রাজ্যের মোট ৪০টি আসনের মধ্যে তারা ২৭টি আসন পেয়েছে। ভোট ভাগাভাগি ও জাতিগত মেরুকরণের কারণেই এমন ফলাফল হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। এই ফল মিজোরামের রাজ্য রাজনীতির পরিবর্তনশীল ধারার ব্যাপারে একটা প্রাথমিক ধারণা প্রদান করে। একই সাথে, এই রাজ্যটির ক্ষমতা যে মূলত এমএনএফ এবং কংগ্রেসের হাতেই ঘোরাফেরা করেছে এতদিন ধরে, তার অবসানের চিত্রটিও তুলে ধরে।

অবাক করা বিষয় হলো, এবারের নির্বাচনে জয়ী আঞ্চলিক দলটি ক্ষমতাচর্চার ৩৬ বছরের প্রতিষ্ঠিত ট্রেন্ড ভেঙে দিয়েছে। এমএনএফ-কে পরাজিত করাও সহজ ছিল না। তার কারণ নানা সংঘাতে জড়িয়ে পড়া মণিপুরের কুকি-চীন উপজাতি এবং প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের চীন সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে সংহতি প্রদর্শন করার মাধ্যমে জনজাতিগত জাতীয়তাবাদে সুড়সুড়ি দিয়েছিল জোরামথাঙ্গার নেতৃত্বাধীন দল। কংগ্রেস মূলত প্রচার চালিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভোটারদের মন জয় করতে। চেষ্টা করেছে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যটিতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচার করা বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীদের আটকাতে। আর আঞ্চলিক দল এমএনএফ'কে নিয়ে বিজেপি যথারীতি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করেছে।

এহেন জটিল রাজনৈতিক আবহে ভারতের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন জনসংখ্যা সম্বলিত মিজোরাম রাজ্যের ৮.৬ লক্ষ ভোটার নির্বাচনে অংশ নেন। যাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোটার জাতিগত জাতীয়তাবাদ বা সম্প্রদায় ভিত্তিক রাজনীতির অংশীদার। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-মুক্ত সরকার এবং সুশাসনের প্রতিশ্রুতি রাজ্যের যুব ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে, যার ফলেই মিজোরামে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিজোরামে পরিবর্তনের হাওয়াকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে জেডপিএম। তারা মিজোরামের নাগরিক সমাজের অনেক সদস্যকে দলের সমর্থনে শামিল করতে সক্ষম হয়েছে, এমনকি অনেককে প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। এই বিষয়টি প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং রাজ্যের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমার নেতৃত্বাধীন দলকে বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে এবং জেডপিএম নিজেদের সংখ্যার জোরেই ক্ষমতায় আসে। মূলত, জেডপিএম-কে একটি স্বচ্ছ এবং স্বতন্ত্র সরকার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ভারসাম্য তৈরি করতে সমর্থ হওয়ার কারণেও নির্বাচনী বিজয় অর্জন করেছে।

উত্তরপূর্ব ভারতের ছোট রাজ্যগুলোর রিসোর্স সংগ্রহের উপায়গুলো খুবই সীমিত এবং তারা নিজেদের আর্থিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর একটু বেশিই নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসাবে, ভারতে সর্বাধিক রেভেনিউ রিসিট রেশিও রয়েছে মিজোরামে, যার পরিমাণ ৮৫.৭%। ফলে জেডপিএম'কে ক্ষমতায় বসেই কৃষির বাইরে, পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের মতো এরিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিকে বহুমুখী করে তোলার উপর নজর দিতে হবে।  যদি রাজ্যের জনসংখ্যার উচ্চ স্বাক্ষরতা, জনদক্ষতা এবং শিক্ষাকে প্রয়োগ করে মূল্য-যুক্ত পরিষেবাকে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে দলটি রাজ্যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ঠিক পাশেই অবস্থিত মিজোরাম উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। আইজল মিজোরামের রাজধানী। মি (জাতি), জো (পাহাড়) এবং রাম (ভূমি), এই তিনটি শব্দ থেকে উদ্ভূত মিজোরাম বলতে "পাহাড়ি জাতির ভূমি" বোঝায়। ভারতের উত্তর-পূর্বে, এটি সর্বদক্ষিণের স্থলবেষ্টিত রাজ্য এবং ভারতের সপ্তভগিনী রাজ্যসমূহের ত্রিপুরা, আসাম, মণিপুর এই তিনটি রাজ্যের সাথে যার সীমানা রয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের প্রায় ৭২২ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে মিজোরামের সীমানা অবস্থিত।

ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী কালে মিজোরাম আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭২ সালে আসাম পুনর্গঠনে মিজোরাম কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে এটি ভারতে একটি 'পূর্ণ রাজ্যের' মর্যাদা পায়। রাজ্য মর্যাদার পর বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২২ বছর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই রাজ্যের ক্ষমতায় থাকে। লাল থানহাওলা এখানকার অন্যতম নেতা।

মিজোরাম মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে কিছু সামরিক পরিকাঠামো রয়েছে যা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অংশ। খ্রিস্টান অধ্যুষিত ভৈরেংতে তে সামরিক প্রশিক্ষণ হয়। সম্প্রতি ভারত -জাপান এখানে যৌথ মহড়া করে।

আদমশুমারী অনুসারে মিজোরামের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৮৭%) মিজো খৃস্টান ধর্মালম্বী যারা প্রধানত প্রেসবিটারিয়ান। বাকি জনসংখ্যার ৮.৩% বৌদ্ধ, ৩.৬% হিন্দু ধর্মালম্বী। কয়েক হাজার মানুষ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নৃতাত্ত্বিক মিজো, যারা ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ১.১% মুসলিম। মিজোরামে বেশিরভাগ মুসলমান জাতিগতভাবে রোহিঙ্গা। অবশিষ্ট ৩,০০০ মানুষ শিখ, জৈন এবং অন্যান্য ধর্মালম্বী।

ভারতের বাকি রাজ্যকে পিছনে ফেলে হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি প্রসারে শীর্ষে উঠে এসেছে মিজোরাম। মিজোরাম স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি (এমএসএসিএস)-এর একটি রিপোর্ট থেকে রাজ্যে রোজ গড়ে ৯ জনের রক্তপরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়ছে। এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ প্রবণতা যে রাজ্যগুলেতে সব থেকে বেশি, সেই তালিকায় মিজোরাম শীর্ষ স্থানে রয়েছে (২.৪ শতাংশ)।

সেই মিজোরাম আবার ভারতের সংঘাতপূর্ণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর একটি, যেখানে সুপ্ত রয়েছে জাতিগত সশস্ত্র সংঘর্ষ। মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সংঘাতের প্রভাবও মিজোরামে পড়েছে। চীন ও কুকি উপজাতির প্রচুর শরণার্থী মিজোরামে আশ্রয় পেয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র নাশকতায় লিপ্ত কুকি-চীন গোষ্ঠীর সমগোত্রীয় বহু মানুষও সেখানে বসবাস করে। ফলে মিজোরাম রাজ্যের ঘটনাবলি আশেপাশের অঞ্চলের জন্যেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

গুরুত্বের দিক থেকে মিজোরাম আরেকটি কারণে সবার নজরে। আর তা হলো, রাজ্যের ভূকৌশলগত অবস্থান। মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত ছাড়াও উত্তরে চীন আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় ইন্দোপ্যাসিফিক বলয়ের প্রান্তীয় জনপদের তাৎপর্য রাখে। পাহাড়ি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিশাল ভূগোলের পক্ষে সমু্দ্রপথে যেতে মিজোরাম গেটওয়ে।

দক্ষিণ এশিয়ায় আশ্চর্যজনক ভাবে একমাত্র খ্রিস্টান প্রধান মিজোরামের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের বাড়তি আগ্রহ ও মনোযোগ রয়েছে। আর এখানেই অদ্ভুতভাবে একদল মানুষ ইহুদি ধর্মগ্রহণ করায় ইসরায়েলের সাথেও মিজোরাম সম্পর্কিত।

মিজোরামের মতো এমন বিচিত্র বিন্যাস ভারতে তো বটেই, সারা দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনও এলাকার নেই। যদিও সেখানে রয়েছে সুপ্ত কিছু সমস্যা, তথাপি দীর্ঘ জাতিগত সংঘাত থেকে উন্নয়নের পথে চলেছে রাজ্যটি। মিজোরামের ভোটের ফলেও দেখা গেছে চমক। সশস্ত্র পথ থেকে যারা  নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে এসে বহু বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল, তারা পরাজিত হয়েছে নতুন এক দলের কাছে, যে দল উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাণ্ডরী। মিজোরমের ভোটের পর পরই পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে মিজোরামের অভিজ্ঞতা সারা বাংলাদেশে না হলেও সংলগ্ন পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি প্রভাব বিস্তার করবে। বিশেষত, মিজোরামের অভিজ্ঞতায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও সংঘাত-বিরোধী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উন্নয়নমুখী নেতৃত্বের এগিয়ে আসার সম্ভবনা প্রবলতর হয়েছে। যদি বাংলাশের পাহাড়ে নতুন ও উদ্যোগী নেতৃত্ব আসে, তাহলে তারা বাংলাদেশের পাহাড়ে মানবসম্পদ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাকে বেগবান করতে পারবেন এবং পাশের ভারতীয় পার্বত্য রাজ্যগুরোর সঙ্গে শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করে আঞ্চলিক নবজাগরণের সূচনা ঘটাতে পারবেন।

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিচুক্তির পর থেকেই যাবতীয় স্তরের নেতৃত্ব রয়েছে সশস্ত্র রাজনীতি থেকে উত্থিত নেতাদের হাতে। তারা চুক্তির পর দীর্ঘ ২৬ বছর রে শান্তির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। সন্ত্রাস থেকে শান্তিতে রূপান্তরে এবং ধ্বংস থেকে উন্নয়নে অভিমুখে যত্রাপথে তাদের অবদান অসামান্য। কিন্তু বয়সের কারণে এই নেতৃত্ব এখন শেষজীবনে উপনীত। অনেকেই মারাও গেছেন। আবার অনেকে প্রাচীন চিন্তা ধরে আছেন। এমতাবস্থায় শান্তিচুক্তি-পরবর্তী ২৬ বছরে যে শিক্ষিত, দক্ষ ও বাস্তবতার বোধ সম্পন্ন তরুণ-যুবক প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, তাদের দায়িত্ব রয়েছে নেতৃত্বের জায়গায় এসে পাহাড়ের মাটি ও মানুষের মধ্যে সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক ধারা শান্তি, সম্প্রতি ও উন্নয়নের রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়া। তাদেরকে পাহাড়ের আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির মধ্যে সেতুবন্ধের মতো কাজ করতে হবে। জাতীয় থেকে স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বের শূন্যতাকে পূর্ণ করতে হবে তাদের মাধ্যমেই। আর বর্তমানে দেশের মোট ভোটারের সিংহভাগই নতুন ও তরুণ প্রজন্মের। ফলের এদের প্রত্যাশা ও চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে তরুণদের মধ্য থেকে উঠে আসা তরুণ-যুবক নেতৃত্ব।

দ্বাদশ জাতীয় সংস নির্বােচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র ও জনপ্রিয় প্রার্থীদেরও এগিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেখা যাক, পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন ও সম্ভাবনাময় নতুন প্রজন্ম এই সুযোগকে কতটুকু কাজে লাগাতে পারে।  

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)

;

গোটা ভারতের তৃপ্ত বাসনার সেই প্রতিধ্বনি



আশরাফুল ইসলাম
গোটা ভারতের তৃপ্ত বাসনার সেই প্রতিধ্বনি

গোটা ভারতের তৃপ্ত বাসনার সেই প্রতিধ্বনি

  • Font increase
  • Font Decrease

 

৬ ডিসেম্বর ২০২৩। প্রতি বছরের মতো এবারও নানা আয়োজনে গতকাল বুধবার পালিত হলো ঐতিহাসিক মৈত্রী দিবস-বাংলাদেশ ও ভারতের গভীরতম সম্পর্কের ঐতিহ্যিক পরম্পরার নবউদযাপন। কিছু মানুষের কাছে হয়তো দিনটি আর দু’চারটি দিবসের মতোই কিছু আনুষ্ঠানিকতা আর বক্তৃতার ফুলঝুড়ি। কিন্তু অনেকের কাছেই এদিনটি আরও বেশি কিছু। সমকালীন বিশ্বে তো বটেই গত শতাব্দির বিশ্ব সমীকরণের মারপ্যাচ ডিঙিয়ে এই শতাব্দির দুই দশকও পেরিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ভাতৃত্বপূর্ণ বিরল সম্পর্কের সমান কোন উদাহরণ আজও সৃষ্টি হয়নি! নিন্দুকদের ভাষ্যে এনিয়ে যতো কথাই হোক না কেন, দুই দেশের মৈত্রীময় সম্পর্কের দৃষ্টান্তে আজও কেউ সমকক্ষ হতে পারেনি, এ কথা জোর দিয়েই বলা যাবে।

জীবন্ত হয়ে থাকা অতীতের ইতিহাসই আমাদের এই বিরল সম্পর্কের আখ্যান মেলে ধরবে। বাংলাদেশের জন্য তো বটেই সমগ্র বাঙালি জাতি তথা ভারতবর্ষের জন্য ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চিরকালের গৌরবের প্রতীক। সেই সময়কার জীবন্ত হয়ে থাকা ইতিহাস আমাদের জানাচ্ছে, কী বিস্ময়কর এক ঐক্যে গোটা ভারতবর্ষ সেদিন নিপীড়িত পূর্বপাকিস্তানের পূর্ণ মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল হয়েছিল! আমার কাছে অন্ততঃ মনে হয়, অভূতপূর্ব সেই সময়কার ঘটনাপ্রবাহকে স্মরণে আমরা এই সময়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি না। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ভারত যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে তখনকার গণমাধ্যমে আমরা খুঁজতে চেষ্টা করি, দুই দেশের এই মৈত্রীময় সম্পর্ক কেনইবা এতো শক্তিশালী?


৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। স্বীকৃতি প্রদানের পরদিন ‘বাঙলাদেশ মুক্তি পেল/জয়বাংলা ধ্বনির মধ্যে লোকসভায় ঘোষণা’ শীর্ষক শিরোনামে কলকাতার দৈনিক যুগান্তর লেখে, ‘ভারত সরকার আজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই স্বীকৃতির ফলে এই উপ-মহাদেশে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সাধারণ তন্ত্রের অভ্যুদয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হলো।’

‘প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধী আজ সকালে সংসদের যুক্ত অধিবেশনে বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি করেন এবং উভয় সভার সদস্যগণই দাঁড়িয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। সেইসঙ্গে সংসদ কক্ষে প্রবল হর্ষধ্বনি উত্থিত হয় এবং সদস্যবর্গ উৎসাহ আবেগে মিলিত ধ্বনি তুলেন ‘জয় বাংলা’ ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’।’

ওইদিনই ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’র ভবিষ্যত নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়, আমরা বর্তমানেও তার প্রতিফলন দেখতে পাবো। সেখানে লেখা হচ্ছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরার এই বিশ্বাস যে, ভবিষ্যতে ভারত সরকার ও বাংলাদেশ এবং এই দুই দেশের জনগণ সম-আদর্শ ত্যাগ-ধর্মের অনুসারী বলে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলবেন, যার ভিত্তিতে থাকলে পারস্পারিক সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখ-তা, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, সমভাবে পোষণ ও পারস্পারিক কল্যাণ। এই মহৎ লক্ষ্যগুলি বাস্তবে রূপায়িত করতে উভয় রাষ্ট্রই মিলেমিশে কাজ করবেন। আমরা প্রতিবেশি হিসাবে বসবাস করবার একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করব আর এতে এই অঞ্চলের শান্তি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়ে উঠবে।’


আমরা যদি জনগণের ওইদিনের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল তা জানার চেষ্টা করি তবে শ্রদ্ধায় মাথা নোয়াতেই হবে তখনকার জনগণের প্রতি। ‘স্বীকৃতিতে কলকাতায় উল্লাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আমরা হৃদয়মথিত সেই প্রতিক্রিয়া জানতে পারছি। তাতে লেখা হচ্ছে, ‘দিল্লিতে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের ঘোষণা এবং শহর কলকাতায় তার জন্য আজ আনন্দ ও উল্লাসের জোয়ারÑদুই-ই ঐতিহাসিক, দুই-ই অভূতপূর্ব। বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের খবর শহরময় ছড়িয়ে পড়ে, রাস্তায় রাস্তায় আনন্দের বাণ ডাকে। কলেজপাড়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা দলে দলে রাস্তায় নেমে পড়েন, আনন্দ করতে করতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল এগিয়ে চলে। মুজিবর ও ইন্দিরাজীর জয়ধ্বনিতে মিছিল হয় কল্লোলিত। স্বীকৃতিদানের খবরে বহু স্কুল-কলেজ ছুটি হয়ে যায়’

গণমাধ্যমগুলো এক নিরঙ্কুশ ঐক্যে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সাফল্য অব্যাহত রাখতে সমর্থন যুগিয়ে যায়। ‘স্বাগত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধে যে অভিব্যক্তি ফুটে উঠতে দেখব আমরা তাতে আঁচ করতে পারব, তখনকার বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশ প্রশ্নে কতোটা আবেগপ্রবণ ছিলেন।


‘সোমবার ৬ ডিসেম্বর। ইতিহাসের এক যুগান্তকারী দিন। অধীর আগ্রহের বাঞ্ছিত অবসান। বাংলাদেশকে কুটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছেন নয়াদিল্লি। প্রায় আট মাস আগে সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে যার প্রথম আবির্ভাব, আজ তার পূর্ণ অভিষেক সমাপ্ত। নবজাতকের মাথায় কল্যাণ বারি বর্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের পঞ্চান্ন কোটি নরনারীর অন্তরের শুভেচ্ছা মিশান রয়েছে তার সঙ্গে। লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা করছিলেন ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত তখন আনন্দমুখর হয়ে উঠেছিল পরিষদ কক্ষ। দলমত নির্বিশেষে সবার কণ্ঠ গিয়েছিল মিশে। স্বাগত জানাচ্ছিলেন তারা বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রটিকে। উচ্ছল হৃদয়ের এই সাদর অভিবাদন গোটা ভারতের তৃপ্ত বাসনার প্রতিধ্বনি’

আমরা ভারতের সরকার ও জনগণের এই সহমর্মিতা পরবর্তী কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহে যেন আরও গতি লাভ করতে দেখব। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের অন্ধ কারাগার থেকে স্বদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সরকার এহেন তৎপরতা নাই যা তারা চালাননি। বঙ্গবন্ধু তখন গোটা ভারতের ঘরে ঘরে এক নন্দিত ও বন্দিত নাম।


শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের মর্মস্পর্শী লেখায় আমরা আঁচ পাবো, কি গভীর ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে ফেব্রুয়ারি ১৯৭২-এ কলকাতায় আলিঙ্গন করেছিল সাধারণ মানুষ।

‘স্বপ্ন ও জাগরণের নায়ক’ শীর্ষক প্রবন্ধে শ্রী গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘আপনার বিমান সরাসরি ঢাকা উড়ে গেল। যদি নামেন-সেই আশায় আমরা এক লক্ষ মানুষ দমদমের আকাশে তাকিয়ে ছিলাম। আমাদের স্বপ্ন ও জাগরণের নায়ক-বঙ্গবন্ধু আজ আপনি কলকাতায় আসছেন’

‘প্রাক্-স্বাধীনতা যুগে আমরা দীর্ঘদিন ভারত নামক দেশটির যে মানচিত্র ভূগোল পড়তে গিয়ে এঁকেছি তা নানাদিক থেকে বহু মিলনে এক। ভাষা, সঙ্গীত, রুচি, খাবারের অভ্যাস অভিন্ন। আন্তর্জাতিক সীমান্ত তো সেদিনের ব্যাপার’

‘জনগণমন অধিনায়ক হয়েও খালি স্লেটখানি হাতে নিয়ে আপনি রাষ্ট্রপতির আসন থেকে নেমে স্বেচ্ছায় ভোটে বদলানো যায় এমন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ঢাকায় পা দিয়েই বাঙালীর নয়নের নয়ন নিজের নামের আগে ভালবাসার বিশেষণগুলি নির্মমভাবে ছাঁটাই করেছেন’

‘...এই মিরাকলের সরল জাদুকর আপনি বৈষম্য ঘোচানোর পাঠ নিয়েছেন সহজভাবে। ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী’ আপনার কণ্ঠেই যেন আবেগ পুষ্প হয়ে ফুটে উঠে’

বঙ্গবন্ধুকে যেভাষায় চিত্রিত করা হয়েছে তা অতুলনীয় বললেও কম বলা হবে..‘আমাদের দেশের যা কিছু জীর্ণ-অন্যের যা-কিছু মহান-এই রোগে আমরা যখন ভুগছিলাম তখন আপনি স্বদেশ, মাতৃভাষাকে স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে আমাদের শূন্য মন্দিরে পূর্ণকুম্ভ বসিয়েছেন। আপনি দ্বিজোত্তম। আপনার ভিতরকার উত্তম সংগ্রামের ভিতর যাচাই হয়ে আপনি অর্জন করেছেন। আপনি এই দশকের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। আমাদের দুই দেশ ভাষা, ইতিহাস ও সংস্কৃতির বন্ধনে আবদ্ধ।’


বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রীর যে চিরকালীন বন্ধন তৈরি হয়েছে তার নির্মাতা বঙ্গবন্ধু ও শ্রীমতী গান্ধী। আমরা যদি ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে দৃষ্টিপাত করি তবে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। কলকাতায় পা দিয়ে বঙ্গবন্ধু হৃদয়মথিত যে অভ্যর্থনা লাভ করেন জনগণের কাছ থেকে তার ইতিহাস বহু যুগেও মুছে ফেলা যাবে না। আজকের সম্পর্কের এই ভিত তাদের হাতেই নির্মিত।

তখনকার খবরে, ‘ইতিহাসের মহানায়কের ঐতিহাসিক সম্বর্ধনা/ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডে উত্তাল জনসমুদ্র। মহামানবের তীর্থক্ষেত্র-ইতিহাসের অন্যতম মহামিলন কেন্দ্র মহানগরী কলকাতা মাঘের শেষের দুদিনের বর্ষণকে কাটিয়ে উঠে রবিবার রৌদ্রস্নাত হয়ে গঙ্গা আর পদ্মার মিলিত উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আর পূর্বদিগন্তে এই নতুন সূর্যোদয়ের অন্যতম রূপকার আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এদিন মহানগরীতে একই সঙ্গে উপস্থিত। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর দুই প্রধানমন্ত্রীকে একই সঙ্গে সম্বর্ধনা।’

‘কলকাতা মহানগরী বারংবার আকাশ বাতাশ মুখরিত করে ধ্বনি তুলছে, ‘ইন্দিরা মুজিব জিন্দাবাদ’ ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক’।

কলকাতা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডে আধুনিককালের বিশালতম সমাবেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠেও একই ধ্বনি ‘‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী দৃঢ় হোক।’’

‘দুই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় একই সুর-জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা-এই দুই রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও নীতি। তাই এই বন্ধুত্ব। বিশ্বের কোন শক্তির কোন ষড়যন্ত্র এই মৈত্রীতে ফাটল ধরাতে পারবে না।’

‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী অটুট থাকবে’-বঙ্গবন্ধু। ‘বাংলাদেশের জন্য কর্তব্যই করেছি’ -ইন্দিরা এমন মন্তব্যের ৫ দশক পরে আমরা যথার্থ উপলব্ধি করছি যে যুগস্রষ্টা এই দুই রাজনীতিবিদ কি গভীরভাবে এই সম্পর্কের ভিত রচনা করে গেছেন!

‘ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডের ময়দানে বিশাল জনসমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সম্বর্ধনা ভাষণের প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আবেগ-কম্পিত কণ্ঠে বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামে ভারত সরকার, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের জনগণ ও সেনাবাহিনীর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, চারটি আদর্শ ও লক্ষ্য-ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রবাদের উপর ভিত্তি করে ভারত আর বাংলাদেশের মৈত্রী গড়ে উঠেছে। এই আদর্শ অনুসরণ করেই এই মৈত্রী গড়ে উঠেছে। এই আদর্শ অনুসরণ করেই এই মৈত্রী চিরকাল অটুট ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। কোনো দেশের কোনো চক্রান্ত এই মৈত্রীতে ফাটল ধরাতে পারবে না। এই মৈত্রীর উপর ভিত্তি করেই দুই দেশ তার ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলবে সুখ ও সম্বৃদ্ধির পথে’

‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্বে শ্রীমতী গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের সমস্ত স্বাধীনতাকামী মানুষকে প্রেরণা দিয়েছে। আদর্শের দিকে লক্ষ্য রেখেই ভারত এই মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে, লাভের দিকে লক্ষ্য রেখে নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিজয়ে লাভ হয়েছে ভারতের। ভারত চিরদিন ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য সংগ্রাম করে এসেছে। এই ধর্মনিরপেক্ষতার পথ আরো সুগম হয়েছে।’

সেই সময়কার একটি দৈনিকের সম্পাদকীয় নিবন্ধের এক স্থানে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রিক সীমানায় স্বতন্ত্র দেশ, কিন্তু যেখানে আত্মিক বন্ধন সেখানে এক অভিন্ন সত্তার জীবন্ত প্রকাশ’-আমরা এই লাইনটি উচ্চারণ করে বলতে চাই দুই দেশের অভিন্ন সত্তার জয় হোক। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরজীবী হোক। জয় বাংলা। জয় হিন্দ। 

লেখক: ইতিহাস গবেষক

;

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভূয়া ভিডিও ছড়ানো ব্যক্তিরা কেন ছাড় পাচ্ছে



আসাদুল হক খোকন
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কক্ষের কয়েকটি ভিডিও বিশেষ করে- হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক, টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ব্যাঙ লাফসহ ছড়ায় ছড়ায় নাচের বেশকিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নিজেদের পেজে শেয়ার দিয়ে এসব ভিডিও নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ বলে জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ কেউ কেউ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের রীতিমত বিষোদগার করছেন। এমনকি নতুন শিক্ষাক্রমকে দেশ ও জাতি বিরোধী বলে মন্তব্য করে বৃহৎ আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন কেউ কেউ।

গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে তোলপাড় হলেও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবশেষে গত রোববার বিষয়টি পরিস্কার করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এসব ভিডিও নতুন শিক্ষাক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছড়ানো হচ্ছে তাই ভিডিওগুলো ভাইরাল হবার আগে বা সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে তা নিয়ে দেশের মানুষকে জানানো উচিত ছিল। একই সঙ্গে উচিত ছিল- এসব ভিডিও ছড়ানো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা। তাহলে পরবর্তীতে এমন ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনার হার কমে যেত।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এনসিটিবির এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়, এই শিক্ষাক্রমের কোথাও নবীর ছবি আঁকতে বলা হয়নি। স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী অপচেষ্টার অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজকে শিক্ষাক্রমের কাজ বলে প্রচার করছে।

এনটিসি জানিয়েছে, হিন্দি গানের সঙ্গে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলেমেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে শিক্ষক্রমের নির্দেশনা, যা সব মিথ্যা। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে, এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে এটা নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। নতুন শিক্ষাক্রমে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।

এনটিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যারা এমন মিথ্যাচার করছেন তাদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তারা। একই সঙ্গে এসব মিথ্যাচারে সর্বসাধারণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এনটিসির এই বিজ্ঞপ্তির পর নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যে পুনরায় নতুন আঙ্গিকে জল ঘোলা করা হবে না, ষড়যন্ত্র করা হবে না তা হলপ করে বলা যায় না। এর কারণ খুঁজতে হলে ঘটনার একটু গভীরে যেতে হবে। দেশ বিদেশে অসংখ্য আলোচিত, সময়োপযোগি ঘটনা বিশেষ করে দেশে নির্বাচনের মতো গরম খবর থাকলেও হঠাৎ নতুন শিক্ষাক্রমকেই কেন টারগেটে পরিণত করা হলো? কেন খুঁজে খুঁজে শিশুতোষ নাচানাচিসহ হাস্যরসাত্মক ভিডিওকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করা হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।

যদিও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে আমি ভিডিওগুলো নিয়ে ফ্যাক্ট চেক শুরু করেছিলাম গত সপ্তাহে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি পরিস্কার করবেন বলে বিশেষ সূত্রে জানতে পেরে ফ্যাক্ট চেক স্থগিত করি। কয়েকদিন অপেক্ষা করে ফ্যাক্ট চেক করি এবং এর মধ্যেই এনটিসির বক্তব্যও পেয়ে যাই।

এর মধ্যে ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই’ ভিডিওটির ফ্যাক্ট চেক করে পাওয়া গেছে- নতুন শিক্ষাক্রম তো দূরের কথা এটি আমাদের দেশের কোনো ভিডিও নয়। ভারতের আসামের রতন লাল সাহা নামের একজন প্রশিক্ষকের পেজে এই ভিডিওটি আপলোড করেন ২০২২ সালে। এ সম্পর্কে রতন লাল তার এক পোস্টে লেখেন- ‘টিলিং টিলিং সাইক্লিং যা 2022 সালে আসামে ভাইরাল হয়ছিল। এবার বাংলাদেশও ভাইরাল।’

একই দিন তিনি আরও একটি পোস্টে লেখেন- আসাম সরকারি স্কুল, ক্লাস-১, লেসন-৪, (হাট বাজার চল)...। অর্থাৎ এটি যে আসামের সরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষাক্রম তা তার এ পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। রতন লাল মূলত একজন এফএলএন ট্রেইনার। মজা বা আনন্দের মধ্য দিয়ে, অভিনয়, ছড়া প্রভৃতির মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষাক্রমকে সহজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য রতন লাল আসামে জনপ্রিয়। এছাড়া অন্য ভিডিওগুলোও আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের নয় যা ইতিমধ্যে এনটিসি পরিস্কার করেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো- ভারতের এই ভিডিও তুলে এনে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলো কেন? কেন এসব ভিডিও আপলোড করে দেশের জনসাধারণকে ক্ষেপিয়ে তোলা হলো? এর উদ্দেশ্যই বা কি? এসবের বেশ কয়েকটি উত্তর হতে পারে। এর মধ্যে দুটি উত্তর নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। প্রথম- নতুন শিক্ষাক্রম নয়, ভেতরে ভেতরে কৌশলে সরকারের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীকে দাঁড় করিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত- নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরোক্ষভাবে অস্বীকার করা।

ভূয়া ভিডিও ছড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ দাঁড় করানো এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে এর বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরোক্ষভাবে যারা লাভবান হতে চাইছেন তারা নিশ্চয় দেশের মঙ্গল কামনা করছেন না। কারণ যাই হোক, যে বা যারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, পেছনের কলকাঠি নাড়ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার বা সংশ্লিষ্ঠ মহল কি যথেষ্ট সচেতন? এমন অভিনব মিথ্যা ভিডিও উপস্থাপন করে যে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তারা দেশের জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন তাদের বিরুদ্ধে কি এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল না?

যেখানে এনটিসি প্রমাণ পেলো যে, ‘স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী অপচেষ্টার অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজকে শিক্ষাক্রমের কাজ বলে প্রচার করছে।’সেখানে এই প্রমাণিত মিথ্যা, অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে এনটিসি?

যে কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হয়, অপরাধ প্রমাণিত হলে তার জন্য যথাপযুক্ত শাস্তি পেতে হয়- এই নজির বা দৃষ্টান্ত স্থাপিত না হলে এমন অপরাধ, মারাত্মক অপপ্রচার বারবার যে ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই। উপরন্তু, এসব অপরাধীর অনেকেই ‘বিচার বা শাস্তির আওতায়’ আসেনি বলে এহেন কার্যকলাপে বরং উৎসাহিত বোধ করবে। এসব অপরাধী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়ায় বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে তারা পুনরায় নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদ তৈরি করে পায়ের উপর পা তুলে নিশ্চিন্ত মনে হাওয়ায় দোল খাবে। সুতরাং- সাধু সাবধান!

লেখক: সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

;

মাথায় যখন ‘বিরোধীদল  গঠনের’ ভাবনাও!



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না—এটা পুরনো খবর। নতুন আলোচনা কে বা কারা হচ্ছেন এমপি? এমপি হচ্ছেন কারা, সেটা জানার কথা নির্বাচনের পর। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পরের দিনগুলো দেখে মনে হচ্ছে এর কিছুটা ইঙ্গিতও মিলেছে। সরকার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে  আসন ভাগাভাগি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের দেন-দরবার চলছে। কে কত আসন নিজেদের ভাগে নিয়ে আসতে পারে—এটা নিয়েই মূলত দৌড়ঝাঁপ, দেন-দরবার।

নির্বাচনের মৌলিক ভাষা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আসছে নির্বাচনে সেটা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলোর কারোরই জনভিত্তি কিংবা সামর্থ্য নাই নির্বাচনে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার। আওয়ামী ছাড়া অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলোর মধ্যে বড় দল জাতীয় পার্টি, তবে তাদের সামর্থ্য নাই সরকার গঠনের। নির্বাচনে দলটির প্রার্থীদের কজন জিততে পারেন সেটাই বরং দেখার। এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা জাতীয় পার্টির লোকদেখানো বলেই মনে হয়। তলে তলে তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেন-দরবারে ব্যস্ত। এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে ইতোমধ্যে।

একদিকে, যোগাযোগ আর অন্যদিকে গত রোববার জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রাজধানীর বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা এখন সাবালক হয়েছি। কারও সঙ্গে আলোচনা, দর-কষাকষিতে আমরা এখন নাই। ...আমরা এখন নিজের শক্তিতেই নির্বাচন করতে চাই। কারও সঙ্গে সমঝোতা বা এসব যোগাযোগ আমাদের হয় নাই। আমাদের ইচ্ছাও নাই।’ তার ভাষায়, দেশে আওয়ামী লীগের চাইতে আওয়ামী-বিরোধীদের ভোট বেশি। তার বিশ্বাস এ ভোটগুলো জাতীয় পার্টিই পাবে।

এদিকে, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুখে যতই ‘দর-কষাকষিতে আমরা নাই’ বলুন না কেন, দলটি তাকিয়ে আছে আওয়ামী লীগের দিকে। আগের চাইতে এখন বেশি আসন চাইছে তারা আওয়ামী লীগের কাছে, গণমাধ্যমের খবর এমনই। দলটির জনভিত্তি সরকার গঠনের পর্যায়ে নাই এটা যেমন সবাই জানে, তেমনি ভালোভাবেই জানে তারাও। প্রয়াত স্বৈরশাসক এরশাদের দলটিকে অনেকেই ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’ আখ্যা দিয়ে থাকেন; তারা এটাকে এড়িয়ে গেলেও অস্বীকার করতে পারে না। গত দুইবারের সংসদের তারা বিরোধী দলে থেকেও ছিল সরকারের অংশ হয়ে। চলমান সংসদে জাতীয় পার্টির কেই মন্ত্রিসভায় না থাকলেও বিরোধী দলের যথাযথ ভূমিকাও পালন করতে পারেনি। বলা যায়, সরকারের আনুকূল্যে করেছে বিরোধীদলের দায়িত্ব পালন।

জাতীয় পার্টি মাত্র ২২টি আসন নিয়ে বর্তমান সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত না হলেও তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে ছাড় দেওয়া হয় ২৬ আসনে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৬৬ আসন, জাতীয় পার্টি ২২ আসন, বিএনপি জোট ৭ আসন আর চারটি আসনে জয় পেয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ওই নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, সমালোচনা আছে। সমালোচনার জবাব জোরগলায় দেওয়ার ভাষাও শোনা যায়নি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। বরং সকল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, একাদশের চাইতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হবে। এটা যেমন বলা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে, তেমনি বলা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।

নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। পাঁচ বছর মেয়াদ থাকে প্রতিটি কমিশনের। আগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনকে সেখান থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করছি বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের। তারা তাদের অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছেন-করছেন, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারেননি এখনো। আস্থার এই সংকটে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনেই যায়নি বিএনপি, যদিও তাদের মূল দাবিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিপক্ষ ছিল না, তাদের মূল প্রতিপক্ষ সরকার। বিএনপির ‘এক দফা’ দাবি সরকারের পদত্যাগের। এই দাবিতে আন্দোলনে আছে বিএনপি।

মাঠের আন্দোলনে বিএনপির সাফল্য নেই। ‘রুটিন কর্মসূচিতে’ আছে তারা। এই কর্মসূচিগুলো জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে নির্বাচনের পথেই রয়েছে দেশ। তবে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আভাষ মিলছে না। বিএনপির ‘রুটিন কর্মসূচির’ মতো মনে হচ্ছে ৭ জানুয়ারিতে হতে যাচ্ছে ‘রুটিন নির্বাচন’, যার মধ্য দিয়ে ফের সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। এবার তাই এমপি হতে দৌড়ঝাঁপ নেতাদের, দেন-দরবারে ব্যস্ত রাজনৈতিকগুলো। এখানে কে এমপি হবে, আর কোন রাজনৈতিক দল কতজন এমপি পাবে সেটা নির্ধারণের কর্তৃপক্ষ যেন আওয়ামী লীগ! নির্বাচক এখানে জনগণ নয়, আওয়ামী লীগ। অথচ নির্বাচনের মৌলিক যে ভাষা, সে ভাষায় সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণই হওয়ার কথা ছিল। বদলে যাওয়া দৃশ্যপটে জনগণের ক্ষমতা চলে গেছে রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কাছে।

নির্বাচনের আগে সকল আলোচনার কেন্দ্রে থাকে কে যাবে ক্ষমতায়, আর কে বিরোধীদলে। কিন্তু এবার যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা সেখান থেকে কেবল প্রশ্নই করতে পারি—কে হবে বিরোধীদল?

আওয়ামী লীগ ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে প্রার্থিতা ঘোষণার পর ‘কৌশলগত কারণে’ নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় উদ্বুদ্ধ করেছে। এবার সর্বাধিক সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এদের অনেকেরই জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংখ্যাটা এমনকি জাতীয় পার্টির চাইতেও বেশি হয়ে যেতে পারে। ফলে বিরোধীদল সংকটে পড়ে যেতে পারে সংসদ। জাতীয় পার্টি যতই নিজেদের ‘সাবালক’ দাবি করুক না কেন, তারাও জানে তাদের সামর্থ্য, তাই তলে তলে চলছে দেন-দরবার। এখনই ‘হ্যাঁ’ না বললেও আওয়ামী লীগও নিশ্চয় সরকার গঠনের ভাবনার পাশাপাশি মাথায় রাখছে ‘বিরোধীদল গঠনের’ ভাবনাও।

;