এবিএম মূসা : পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতা



কামরুল ইসলাম চৌধুরী
কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ছবি: বার্তা২৪

কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি। বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসার ৮৮তম জন্মদিন। বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের ৩৬ বছর পূর্তি। এদেশের পরিবেশ আন্দোলন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠন আর টেকসই উন্নয়ন সাংবাদিকতার বিকাশে বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের রয়েছে গৌরববোধ করার মতো অবদান। এবিএম মূসা ছিলেন পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠনেও রয়েছে তার অবদান।

জন্মদিনে প্রয়াত মূসা ভাইয়ের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতার প্রসঙ্গ এলেই আমার চোখে ভেসে ওঠে প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার অতি আপন চেনা চঞ্চল মুখ। মনে পড়ে এসএম আলী, তোয়াব খান, আহমেদ নূরে আলম, শেহাবউদ্দিন আহমেদ নাফা, বদিউল আলম, মোস্তফা কামাল মজুমদারের কথা। স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে ড. কাজী ফরজাদ জালাল আর ড. রেজাউল করিমের উৎসাহী উদ্যমী যত সব টেকসই উন্নয়ন আয়োজন।

আমি বলছি আশি দশকের গোড়া কথা। পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতা তখন আমাদের এ অঞ্চলের দেশগুলোতে পল্লবিত সবুজের আচ্ছাদন মেলেছে মাত্র।

উন্নয়ন আর পরিবেশের দ্বন্দ্ব চিরায়ত। চুম্বকের উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর মতোই যেন ধ্রুব সত্য। উন্নয়নের মাশুল গুনতে হয় প্রকৃতিকে, প্রাণবৈচিত্র্যকে, ইকো সিস্টেমকে, সর্বোপরি মানুষকে। আবার মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র হটাতে, প্রাচুর্যের যোগান দিতেই প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

ষাটের দশকে এসে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ চিন্তার জন্ম। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আর অর্থনীতিবিদরা ভাবতে শুরু করেন কী করে উন্নয়ন কৌশলে, পরিকল্পনায় পরিবেশ সংরক্ষণ চিন্তাকে একাকার করা যায়। বিশ্ব রাজনীতির পুতুল নাচের রূপক রাজারা বরাবরই সমৃদ্ধির যূপকাষ্ঠে প্রকৃতিকে বিসর্জন দিয়েছেন। গ্লোবাল ভিলেজ কনসেপ্টের বড় বাধাও হলেন তারা। তেমনি এক টালমাটাল স্নায়ুযুদ্ধকালে এলো পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতা। আপন ঐতিহ্য সংরক্ষণ চিন্তা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার এক নিরবধি প্রয়াস।

তাপদাহ উন্নয়নের অগ্নি স্রোতে আমার কৃষকের চিরচেনা বীজ যেন হারিয়ে না যায়। চিরসবুজ বৃক্ষরাজি যেন বিপণনী পণ্য গাছকাঠ লুপ্ত না হয়। চিরস্বাদের মিঠাপানির চেনা চেনা মাছগুলো যেন উন্নয়নের রাক্ষুসে প্রজাতি গিলে ফেলতে না পারে। নদ-নদী-খাল-বিলে-জলাভূমিতে দখলদারিত্ব যেন বন্ধ হয়। তেমনি এক টেকসই উন্নয়ন মতবাদ থেকেই পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্ম।

ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার হরণ না করে, প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে কীভাবে উন্নয়ন ঘটানো যায়, তেমনি চিন্তাধারাজাত সাংবাদিকতাই হলো পরিবেশ সাংবাদিকতার মূল কথা। পরিবেশ সাংবাদিকেরা উন্নয়ন নিয়ে যেমনি ভাববেন, তাদের রিপোর্ট, ফিচারে, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় লেখার সময় এবং ফটোগ্রাফে ঠিক তেমনি প্রাকৃতি ভারসাম্য সংরক্ষণের বিষয়টিও মাথায় রাখবেন। পরিবেশ সাংবাদিকতা, পরিবেশ আন্দোলন যেন নতুন বিশ্বের শান্তিরই এক বাতাবরণ।

জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান দেড় দশক আগে ঢাকায় এসে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।কফি আনানের সেই হুঁশিয়ারির সঙ্গে বিজ্ঞানীরা একমত যে, বাংলাদেশ মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে। আবহাওয়া পরিবর্তনের নির্মম শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে বিপর্যয় আরো ঘনীভূত হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মাত্র এক মিটার বাড়লেই দেশের সাড়ে ১৭ ভাগ ভূমি সাগরতলে হারিয়ে যাবে চিরতরে। কয়েক কোটি লোক পরিবেশ আর জলবায়ু শরণার্থী হবে। বিশ্বের সবচেয়ে যে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, তা সাগর কোলে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের কৃষি, জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হবে।

মোট কথা হলো, বাংলাদেশের পরিবেশ সমস্যা আর সংকট-এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক আলোচিত বিষয়। আমাদের আর্সেনিক সমস্যা, ঢাকা মহানগরীর বায়ূদূষণের সংকট বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে যারা মাথা ঘামান, তাদের উৎকণ্ঠিত করে তোলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এ দেশের পরিবেশ ভাগ্যবিধাতারা সে ব্যাপারে এখনও তেমন একটা উচ্চকণ্ঠ নন।

অথচ পরিবেশ খাতে বাংলাদেশের রয়েছে বেশ কিছু সাফল্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্বদানকারী বেশ কিছু পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদী রয়েছেন আমাদের। বিশ্ব জুড়ে গর্ব করে বলার মতো আমাদের রয়েছে প্রথম পরিবেশ কর্মপরিকল্পনা। তবু পরিবেশের সব মাপকাঠিতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়া এক দেশ। পরিবেশের ঘাত-প্রতিঘাতের নির্মম শিকারও। আঠার কোটি মানুষের জনবহুল এ দেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখোমুখি। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ আচ্ছাদন। অবাধে উজাড় হচ্ছে বনরাজি। সুন্দরবন, মধুপুরের শালবন, পার্বত্য বন-বনানী আজ হুমকির সম্মুখীন। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলীসহ নদ-নদীগুলোতে চলছে নির্লজ্জ দখলদারিত্ব। পানি দূষণ, বায়ূ দূষণ, আর্সেনিক দূষণ, মাটি দূষণ আমাদের পরিবেশ- প্রতিবেশ সমস্যাকে জটিল করে তুলছে। নানা সরকারি বেসরকারি কর্মসূচী সত্ত্বেও আমাদের পরিবেশ অবক্ষয় ঘটে চলছে দ্রুতগতিতে। পরিবেশ বিষয়ক আইন ও বিধি বিধানের ফাঁকফোকর ও শিথিল প্রয়োগের সুযোগে চলছে নির্বিচার এ ধ্বংসযজ্ঞ এবং ক্রমাবনতি। বাংলাদেশ ব্যাপক জনসংখ্যার ছোট এক দেশ। ১৯৭০ সালে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। ২০৩০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ কোটিতে। অর্থাৎ প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব হবে ২০০০ জন। শতাব্দী শেষে লোকসংখ্যা বর্তমানের চেয়ে প্রায় তিনগুণ হচ্ছে। আর এ জন্যে দেশটির প্রধান শঙ্কার কারণ হচ্ছে, টেকসই পরিবেশ বজায় রাখা যাবে কতটুকু? কার্যকর জীবনযাপন ব্যবস্থা গড়ে তোলা আমাদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল অথবা উপকূলীয় এলাকার আর্থ-সামাজিক জীবন, এর কৃষি ভিত্তি অথবা ঘূর্ণিজড়ের প্রচণ্ডতা, বিশ্ব উষ্ণায়ন অথবা টর্নেডোর ভীতি যাই হোক না কেন, বাংলাদেশকে এর পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যে একটি প্রতিরক্ষামূলক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া পরিবর্তনের এক বড় শিকারে পরিণত হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। এ তো আর অমূলক আশঙ্কা নয়। দেড় দশক আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আনান বাংলাদেশ সফরকালে এ ব্যাপারে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করে গেছেন। পরবর্তী সকল মহাসচিব সে আশংকার কথা জানিয়ে হুঁশিয়ার করেছেন। কিন্তু সমুদ্রপৃৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত সম্ভাব্য ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আমাদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের আর বন বিভাগের অনেক কর্মকর্তাকে তেমন উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।

অথচ আমাদের এখানে পরিবেশবাদীদের দাবিতেই পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম (এফইজেবি)সহ সংরক্ষণবাদীদের সেই শোরগোলের কারণেই পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি হয়েছে ১৯৮৯ সালে। পরিবেশ অধিদফতরের জন্ম ১৯৭৭ সালে। পরিবেশ আন্দোলনের কারণেই জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা (নেমাপ) প্রণীত হয়েছে ১৯৯১-৯৫ সময়কালে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, এনজিও আর পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই অংশীদারিত্বমূলক এই পরিবেশ পরিকল্পনা তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে। তৃণমূলের মানুষ তাদের পরিবেশ ভাবনা এই কর্মপরিকল্পনায় তুলে ধরেন, সমাধানও বাতলে দেন। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এডাব, এফইজেবি, সিইএনসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিবেশ কর্মপরিকল্পনা তৈরির কাজটি সম্পন্ন করে বিদেশী বিশেষজ্ঞ ছাড়াই। প্রণীত হয় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫। তৈরি হয় পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি ১৯৯৭। পরিবেশ আইন এবং বিধি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এডাব, সিইএন, বেলা, এফইজেবিসহ নাগরিক সমাজ। নবীণ মন্ত্রণালয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় সহযোগিতা, বিশেষজ্ঞদের জ্ঞান ও পরামর্শে পরিবেশ আইন ও বিধি প্রণয়নের মতো জটিল কাজ শুরু হয়। বাস্তবায়িত হয় ইউএনডিপি’র আর্থিক সহায়তায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশ কর্মসূচী- টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী। নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মন্ত্রণালয় বেসরকারি প্রতিনিধিরা একযোগে কাজ করেন। পরিবেশকে ঘিরে রচিত হয় সরকারি বেসরকারি সহযোগিতার এক অনন্য বন্ধন। নেমাপ অর্জন করে আন্তর্জাতিক প্রশংসা। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতার এই বন্ধন বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্¦ল করে। ব্রাজিলে ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিরা কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে কাজ করেন। ধরিত্রী সম্মেলন-উত্তরকালেও এ ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে। ২০১২ সালে রিও+২০ সম্মেলনেও সকলে এক সুরে কথা বলেন। নেমাপের অন্যতম প্রণেতা হিসেবে আমি মনে করি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সিকি শতাব্দী আগে তৈরি করা নেমাপ দলিলের হালনাগাদ করা এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সদস্য আর গণমাধ্যম কর্মীদের ক্লান্তিহীন পরিশ্রমে পরিবেশ বিষয়ক খবরাখবরের পরিমাণ এখন যথেষ্ট বেড়েছে। এদেশের সংবাদপত্রে, রেডিও- টেলিভিশনে ষাটের দশকে পরিবেশ বিষয়ক সংবাদ ছিল প্রায় শূণ্যের কোঠায়। সত্তর ও আশির দশকে শূন্য থেকে ২০ কলাম ইঞ্চিতে তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। এখন প্রতিদিনি ২৫০ থেকে ৩০০ কলাম ইঞ্চি পরিবেশ বিষয়ক রিপোর্ট, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, ফিচার, আলোকচিত্র দৈনিক কাগজে প্রতিদিন বেরুচ্ছে। নিয়মিত পরিবেশ বিষয়ক পাতাও প্রতি সপ্তাহে বেরুচ্ছে কয়েকটি কাগজে। টেলিভিশনে ষাট ও সত্তর দশকে নিয়মিত কোনও পরিবেশ বিষয়ক সংবাদ পাওয়া যেতো না। এখন বিটিভিতে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দশ মিনিট পরিবেশ বিষয়ক খবরাখবর ও অনুষ্ঠান থাকছে। অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো এবং রেডিওতেও একইভাবে পরিবেশ বিষয় থাকছে। মোট কথা, গুণগত মান যাই হোক না কেন, পরিমাণগত দিক থেকে পরিবেশ বিষয়ক লেখালেখি আর খবরাখবর গত কয়েক দশকে ধীরে ধীরে বেড়েছে। তবে গত কয়েক বছরে পরিবেশ সাংবাদিকদের কল্যাণে তা বেড়েছে অতি দ্রুত গতিতে। গণমাধ্যমের এই ইতিবাচক ও সক্রিয় ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ সামগ্রিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। এমনকি ওসমানী উদ্যান পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশ সমস্যা বিশ্ব পর্যায়ে উঠে এসেছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার হাত তেমন একটা বাড়িয়ে দেয়নি বিশ্ব সম্প্রদায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/28/1551332943055.jpg

বার বার তাই কানে ভেসে আসছে জাতিসংঘ পরিবেশ সংস্থার তদানিন্তন নির্বাহী পরিচালক ক্লাউস ট্রপারের কথা, ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ক্লাসিক কেস’। সত্তর দশকে ক্লাউস ছিলেন জার্মান পরিবেশমন্ত্রী। রাইন নদী তখন মারাত্মক দুষিত। তিনি ঝাঁপ দিলেন রাইনে। সাঁতার কাটলেন। ইউরোপের নানা দেশে নানা পরিবেশ জলবায়ু সম্মেলন সেমিনারের যোগ দিতে গিয়ে দেখি, সেই রান নদী এখন দূষণমুক্ত। মার্গারেট থ্যাচার দূূষিত টেমসকে রক্ষার জন্য তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘টেমস বাচাঁও’ শিরোনামে কর্মসূচী রেখেছিলেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি সত্যি সত্যি টেমস নদীকে বাঁচিয়েছিলেন। আজ টেমসের বুকে ঢেউ খেলে যায়। অথচ আমাদের বুড়িগঙ্গার জন্যে অনেকের মন গলে না। ঢাকার বায়ুতে সীসার পরিমাণ নিয়ে তেমন টনক নড়ে না। আর্সেনিক দূষণে গ্রাম-গ্রামান্তরের কোটি হতদরিদ্র মানুষ আক্রান্ত। নীতিনির্ধারকদের অনেকের সে ব্যাপারে নেই কোন মাথাব্যাথা। সত্যি এ যেন এক নির্লজ্জ ক্ষমাহীন ক্ল্যাসিক কেস। কফি আনানের কথা বোঝার মতো লোকের বড় অভাব এ দেশে। যেমন অভাব কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর (প্রয়াত পরিবেশবাদী ওবায়দুল্লাহ খান) কবিতার সুরেলা ধ্বনি মরমী সুর উদ্ধারকারীর। বাংলাদেশের মাটি, নিসর্গ, প্রকৃতি, শস্য-শ্যামল গ্রান্তরের প্রতি অসীম মমত্ববোধ সম্পন্ন এমন উচ্চমানের পরিবেশবাদী কবির জন্ম এ দেশে আর হবে কিনা সন্দেহ!

পাশের দেশ ভারতে পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে। ভারতীয় সুপ্রীমকোর্ট এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমাদের সুপ্রীমকোর্ট সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ আমাদের আরেক ব্যর্থতা। দেশের বিদ্যমান পরিবেশ আইনগুলো সুষ্ঠু প্রয়োগ হলে জাতির টেকসই উন্নয়ন যাত্রা এগিয়ে যেত অনেকদূর। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ, সমন্বয় আর পারস্পরিক সহযোগিতা পরিবেশ সংরক্ষণে আজ অপরিহার্য।

দু’দশক আগে সরকার ঢাকা মহানগরী থেকে টু স্ট্রোক থ্রী হুইলার বেবী ট্র্যাক্সি আর দেশব্যাপী পলিথিন নিষিদ্ধ করায় দেশবাসী পরিবেশগত সুফল ভোগ করতে শুরু করেছিলো। তবে, প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল যৎসামান্য। আমাদের নষ্ট রাজনীতির নকল পুতুল রাজাদের মনে রাখা উচিত, চীনের মতো ১৩৫ কোটি মানুষের দেশও আজ দুনিয়া জোড়া পরিবেশ আন্দোলনের সম্মুখ কাতারে থাকতে আগ্রহী। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে সবুজ জাতীয় আয় গণনার আর সবুজ উন্নয়ন নীতি কৌশল অনুমোদন তারই প্রমাণ। আরও প্রমাণ চান। কেন, দেখতে পাননি শান্তির জন্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কেনিয়ার বিপ্লবী পরিবেশবাদী ওনানদা মাথাই। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নোবেলও পেয়েছেন মার্কিন সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি আল গোর ও আইপিসিসি।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (বিসিসিএসএপি) আমরা তৈরি করি। ২০০৯ সালে তা সংশোধিত হয়। বাংলাদেশ প্রথম দেশ যে এটি করেছে। দশ বছর পর এখন এটি জন অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের দ্বারা হালনাগাদ করা প্রয়োজন। এ দলিলের অন্যতম প্রণেতা হিসেবে এটি আমার দাবি। তা হলে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্ম পরিকল্পনার একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন দেখতে পাবে। এটির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন। সকল জাতীয় পরিকল্পনার মূলধারায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দিতে হবে। এতে বাংলাদেশকে জলবায়ু সহিষ্ণু দেশে পরিণত করার জন্য রূপান্তরমূলক অভিযোজন অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এসডিজিগুলোর সঙ্গে ডেল্টা প্ল্যান এবং দেশের ৮ম ও ৯ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনকে সংযুক্ত করে সমগ্র সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করা দরকার। ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটিকেও জনমতের প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

আজ আমাদের শ্লোগান হোক-হটাও দূষণ, বাঁচাও মানুষ। ক্লাউস, মাথাই, কফি আনানের মতো হাজারো পরিবেশবাদীর জন্ম হোক আমার দেশে। আমরা সেই সবুজ বাংলাদেশের সন্ধানে। বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের ৩৬ বছর পূর্তির আনন্দঘন মূহূর্তে সেই হোক সকলের একান্ত কামনা। তাহলেই হয়তো ধরিত্রীর কাছে আমাদের অনেক ঋণের খানিকটা শোধ হবে। পাখ-পাখালির কলকাকলি মুখরিত সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের নদীর ঢেউ, কৃষকের ধানের শীষে ভোরের শিশির ফোঁটার অনিন্দকান্তি, পল্লীবধূদের বীজ তুলে রাখার প্রাণান্তকর প্রয়াস, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন, চঞ্চল হরিণ শাবকের প্রকৃতির কোলে নিশঙ্ক ছুটে চলা, রাখালের বাঁশির সুরেলা সুমধুর ধ্বনিতে পরিবেশ সংরক্ষণে উজ্জীবিত হোক আমাদের এ দেশ। সবুজ উন্নয়নের পথে টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শরীক হই।

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

   

দহনজ্বালা, বজ্রপাত, প্রকৃতির বিরূপতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদ



ড. মাহফুজ পারভেজ
দহনজ্বালা, বজ্রপাত, প্রকৃতির বিরূপতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদ/ছবি: সংগৃহীত

দহনজ্বালা, বজ্রপাত, প্রকৃতির বিরূপতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদ/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র গরমে ফের জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্টের সতর্কতা। এপ্রিলের শেষ দিকে লাগাতার তাপপ্রবাহের জেরে অস্থির হয়েছিল স্বাভাবিক জনজীবন। মাঝে বৃষ্টির ছোঁয়ায় এসেছিল স্বস্তি। মে মাসের মাঝামাঝি পুনরায় শুরু হয়েছে দহনজ্বালা। আবার জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপদাহের দাপটে হিট অ্যালার্টের সতর্কতা ঘোষণা করতে হয়েছে।

এপ্রিলে স্মরণকালের তীব্র গরমে মানুষের প্রাণ ছিল ওষ্ঠfগত। স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য স্বাভাবিক কাজকর্মেও নেমে এসেছিল স্থবিরতা। তারপর বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টির দেখা পেয়ে একটানা অগ্নিবাণে দগ্ধ ও ক্লান্ত জনজীবনে এসেছিল স্বস্থির পরশ। তবে, সে সময় অস্বস্তি বাড়িয়েছিল বৈশাখী বৃষ্টির দোসর বজ্রপাতের আধিক্য। যদিও গ্রীষ্মের তপ্ত পরিবেশে ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি, বজ্রপাত বাংলাদেশের চিরচেনা ছবি, তথাপি গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার কারণ। সামান্য বৃষ্টি ও উতাল হাওয়ার মধ্যেই বিকট শব্দে সিরিজ বজ্রপাতের ঘটনা আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে এবং বাড়িয়েছে প্রাণহানি। এমনকি, ফাঁকা জায়গায় বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি মর্মে প্রচলিত ধারণাকে উড়িয়ে দিয়ে শহরেও বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

এই যে তাপদাহের ফিরে আসা এবং বৃষ্টির সঙ্গে লাগাতার বজ্রপাতের ঘটনা, তা অবশ্যই বিরূপ প্রকৃতির প্রকাশ। প্রকৃতির বিরূপতা অতি উষ্ণায়ন, তীব্র শীত, বায়ু ও জলের দুষণ ইত্যাদি নানা বিপদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও আমরা এবং বিশ্ববাসী এসব বিপদের ব্যাপারে এখনও যথেষ্ট পূর্ব-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারছি না। ফলে বিপদের প্রকোপ ও পরিধি ক্রমান্বয়েই বাড়ছে প্রকৃতির নানামুখী বিরূপ আচরণের মাধ্যমে।

এসব বিপদের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বার বার সতর্কতা জানিয়েছেন। পরিবেশবাদী ও সিভিল সোসাইটির পক্ষেও অবিরাম বলা হচ্ছে এসব বিষয়ে। ফলে সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন প্রতিটি মানুষই জানেন যে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেই তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে এবং পরিণামে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসছে। সর্বশেষ গবেষণা বলছে, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন যদি ঠেকানো না যায় এবং ইতিবাচক দিকে না নেওয়া যায়, তাহলে বিশ্বে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বাড়বে ৪৫ গুণ। জলবায়ুর চোখরাঙানির জেরে বিশ্ব জুড়ে গড় তাপমাত্রা বাড়তে পারে ১.২ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনই আশঙ্কার ছবি উঠে এসেছে নানা গবেষণায়। বিশেষত ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)-এর সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে বিস্তর আলোকপাত করা হয়েছে।

গবেষণার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিপদ যে জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, তা চিহ্নিতকরণ। বলা হচ্ছে, এসব কারণ সামগ্রিক জনজীবনে বিপদ বাড়াবে। তবে বিশেষত যাঁরা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছেন, তাদের দুর্ভোগ বাড়বে সবচেয়ে বেশি। এর ফলে বিশ্বের দেশে দেশে বসবাসকারী দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী, যারা আগে থেকেই ক্ষুধা, অপুষ্টি, বঞ্চনার শিকার, তারা আরো মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন প্রাকৃতিক বিরূপতার কারণে।

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)-এর গবেষণা রিপোর্টটি অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত। মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৩ জন বিজ্ঞানী রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। গত দু’বছরের রিপোর্টেও এ বারের মতোই ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কার্যকারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

নতুন রিপোর্টে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বিশ্লেষণের জন্য পৃথক মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছিল। পশ্চিম এশিয়ায় (যেমন সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, প্যালেস্টাইন) মার্চ-এপ্রিলের তিন দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা খতিয়ে দেখা হয়। ফিলিপিন্সে দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ১৫ দিনের গড় পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে ভারত, মিয়ানমার, লাওস-সহ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে এপ্রিলের গড় তাপমাত্রাকে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি। চলতি বছরের গ্রীষ্মেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে একই চিত্র ধরা পড়েছে।

রিপোর্ট যেমন বলছে, বাস্তবেও তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্বের দেশে দেশে। প্রায় সব দেশেই তাপমাত্রা বেড়েছে। তাপপ্রবাহের বিপদও বেড়েছে। তবে আগে থেকেই উষ্ণ অঞ্চল, যেমন পশ্চিম এশিয়ায় তাপমাত্রা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন বিজ্ঞানীদের। তাদের ধারণা, ২০৪০ বা ২০৫০ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি ছুঁতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণেই সাধারণ ভাবে এপ্রিল মাসে এশিয়ায় তাপমাত্রা এমনিতে বেশি থাকে। তারপরেও এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলকে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অংশ রূপেই বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সেই বাস্তবতা ক্রমেই বিলীন হওয়ার পথে। গবেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক কালে নানা কারণে তাপমাত্রা যে বিপুল হারে বাড়ছে (বিশেষত কিছু শহরে), তা নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। অত্যধিক তাপে যে সমস্ত প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে, তাদের সুরক্ষার বন্দোবস্তেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ব্যাহত হতে পারে জীববৈচিত্র। যার পরিণতিতে সবুজ ও নাতিশীতোষ্ণ এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্যেও চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করতে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা শুধু বলতেই শোনা যায়। কখনো কোনো প্রকল্প গৃহীত হলেও তা কার্যকর হয় কমই। উপরন্তু, শহরের দুষণ কমানো যাচ্ছেই না। নদী দখল থামছেই না। বৃক্ষ নিধন কমছেই না। তা হলে নতুন পরিকল্পনা কাজ করবে কেমন করে? বাংলাদেশে যখন এমনই শোচনীয় পরিস্থিতি, তখন বিশ্বের অবস্থাটাও বিশেষ ভালো নয়। অনেক অগ্রসর দেশই প্রকৃতি বিনাশের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাদের কারণে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। বিনষ্ট হচ্ছে জলবায়ুর ভারসাম্য। এবং নেমে আসছে নানা বিপদ।

অতএব, বিশ্ব জুড়ে যদি অবিলম্বে তাপ নিঃসরণের হার নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বিশ্ববাসীকে। আগামী দিনে এই বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রে তা হতে পারে ৭ ডিগ্রি। বিশেষ করে, যেসব দেশ দারিদ্র্য ও যুদ্ধ বা সংঘাতের কারণে তছনছ হয়ে পড়েছে, সেখানে বিপদ আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। একটি গবেষণা পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে, ইসরায়েলি আক্রমণে বিধ্বস্ত গাজ়ায় ভিটেহারা ১৭ লক্ষ মানুষের জীবন আরো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে অত্যধিক গরমে। এমন চিত্র বিশ্বের অন্যান্য শরণার্থী শিবিরেও দৃশ্যমান।

নগর ও উদ্বাস্তু জীবনের পাশাপাশি জলবাযু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ জনজীবনেও। অত্যধিক গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষাবাদ। ফলে খাদ্যশস্যের জোগানে ঘাটতির আশঙ্কাও দেখা দেবে সামনের দিনগুলোতে। জলসঙ্কটের কারণ ঘটবে অত্যাধিক গরমের ফলে। শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও ছেদ পড়বে বিরূপ পরিস্থিতির প্রভাবে। মৃত্যু হবে অসংখ্য গবাদি পশুর। মারা যাবে মানুষও। যেমন চলতি তাপদহনের কারণে গত এপ্রিলে মৃত্যুর সংখ্যা (সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী) বাংলাদেশে ২৮, ভারতে ৫ এবং গাজ়ায় ৩। থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্সেও দহনজ্বালায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে একজন করে। এমনকি, নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় আয়োজনও থমকে যাবে বা স্থিমিত হবে তীব্র গরমের কারণে। যেমন, ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনে ভোটদানের হারও বহু জায়গায় কমেছে তাপপ্রবাহের কারণে।

তাপমাত্রা জনিত কারণে যতগুলো বিপদ আপতিত হয়েছে, তার পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রয়েছে মানুষের অপরাধ। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে খলনায়ক মানুষই। বিশেষত সেইসব মানুষ, যারা রয়েছেন ক্ষমতায়, নেতৃত্বে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায়। তাদের ভুলের কারণেই অত্যধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। অরণ্যবিনাশের মতো অপরাধ হতে পারছে। যার মাসুল গুনছেন বিশ্বের সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশের মতো বৃষ্টির আধিক্য রয়েছে যেসব দেশে, সেখানে উষ্ণায়নের কুপ্রভাব হিসাবে যে সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়, বজ্রপাতও তার অন্তর্ভুক্ত। ফলে বন্যা, খরা, অতি গরম বা অতি ঠাণ্ডার মতোই বজ্রপাত নিয়েও মনোযোগী হওয়া দরকার। যে হারে বজ্রপাতের আধিক্য দেখা যাচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে বিষয়টি মোটেও উপেক্ষা করার মতো নয়। বরং এক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা হিসাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পথে অগ্রসর হওয়াই কর্তব্য। তবে, নিঃসন্দেহে জনসচেতনতা বৃদ্ধি বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকানোর পক্ষে অত্যাবশ্যক। বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে খেলা, উঁচু ছাদে মোবাইলে কথা বলা আটকানো যায়নি। শহরে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়েছে এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতা।

অন্য দিকে, প্রকৃত জ্ঞানের অভাবও বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা সময়ে শুরু করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বজ্রপাতে আহতদের স্পর্শ করলে নিজেরাও বিদ্যুৎপৃষ্ট হতে পারেন ভেবে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন না। এই ভ্রান্ত ধারণাও দূর করা আবশ্যক। কালবৈশাখীর সময় পেরিয়ে যায়নি, বর্ষা শুরুর বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির দিনও সমাগতপ্রায়। বজ্রাঘাতে মৃত্যু ঠেকাতে এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন সরকার থেকে সাধারণ মানুষ— উভয় পক্ষেরই। বিশেষ করে, বার বার দহনজ্বালার ফিরে আসা এবং প্রকৃতির বিরূপতায় ধেয়ে আসা বিপদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বহুমুখী বিপদ যেন আরো বৃদ্ধি না পায়, সে ব্যবস্থা করার কথাও নীতিপ্রণেতাদের জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে। নইলে প্রাকৃতিক বিপদের পথ ধরে যে সামাজিক বিপদ ও অস্থিতিশীলতা নেমে আসবে, তা সামাল দেওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসেোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; প্রফেসর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;

ব্যাংক ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের প্রভাব ও সম্ভাবনা



কানজুল কারাম কৌষিক, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ব্যাংক ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের প্রভাব ও সম্ভাবনা

ব্যাংক ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের প্রভাব ও সম্ভাবনা

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাংক ব্যবস্থার আবিষ্কার একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু মুনাফা অর্জনই ব্যাংক এর প্রধান এবং একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। মুনাফা অর্জন ছাড়াও একটি ব্যাংককে বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নানা চড়াই-উতরাই পার করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। তার পেছনেও ব্যাংক ব্যবস্থার অবদান অনস্বীকার্য।

সম্প্রতি বাংলাদেশের নানা ইস্যুতে ব্যাংক ব্যবস্থার কার্যক্রম নিয়ে কৌতূহল জাগে। তাই ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা ও উদ্দেশ্য আমাদের ধারণা পরিষ্কার হওয়া উচিত।

একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক কিছু উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে প্রথমেই ব্যাংকিং কাজকর্ম পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে মুনাফা অর্জন করা অন্যতম।

ব্যাংক পরিচালনায় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করাও ব্যাংকের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তুলনামূলক বেশি সুদে ঋণ প্রদান করলেও মানুষ ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি অধিক আস্থা স্থাপন করায় ব্যাংক থেকেই ঋণগ্রহণ করে থাকে। শুধু লেনদেনই নয়, ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাদেরকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা। ব্যাংকগুলো তাদের সেবা ব্যবস্থা অনুযায়ী বিনিময়ে কিছু সার্ভিস চার্জও আদায় করে থাকে।

এছাড়াও ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- অর্থনীতিতে বিনিয়োগের মাধ্যম তৈরি করা। বিনিয়োগ পরিচালনা লাভজনক করার মাধ্যমে এবং আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য চেক বিনিময় বিল ইত্যাদি প্রচলন করা ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঋণ ও মুদ্রা বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যাবলির পাশাপাশি রয়েছে কিছু আর্থসামাজিক উদ্দেশ্যাবলি। তার মধ্যে অন্যতম হলো মূলধনের জোগান ব্যবস্থা। ব্যাংক জনগণের হাত থেকে অল্প অল্প অর্থ সঞ্চয় করে মূলধন সংগ্রহ করে এবং তার উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে। শিক্ষিত ও দক্ষ বেকার লোকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং তাদের নিয়োগ দিয়ে বেকার সমস্যার সমাধানও ব্যাংক এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

এছাড়াও ব্যাংক উদ্যোক্তাদের মূলধনের চাহিদা পূরণের জন্য ঋণ প্রদান করে এবং শিল্পায়নে সহযোগিতা করে । অর্থনীতিতে  প্রমাণিত যে, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটলে মানুষের ব্যয় ও ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বিনিয়োগ, ঋণদান, ব্যাবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির দ্বারা জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়। এটিও ব্যাংক এর কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।

ব্যাংকের কিছু প্রতিনিধিত্বমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। ব্যাংক গ্রাহকের এবং সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও ব্যাংকের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। কখনো কখনো ব্যাংক রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। ব্যাংক পুঁজিবাদের স্বার্থরক্ষা করে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থের ব্যবহার করে।

আধুনিক বিশ্ব একটি প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির সময় পার করছে। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাপকাঠিই হচ্ছে উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা। উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাঠামোকে মজবুত করে।

দেশের অর্থনৈতিক চাকা সবল রাখতে ব্যাংক কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা পালন করতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম মূলধন সৃষ্টি করা। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধনের গুরুত্বই সর্বাধিক। তাই ব্যাংক জনগণের সঞ্চয়কৃত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে দেশের বাণিজ্য ও শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব মিটানোর জন্য মূলধন সৃষ্টি করে থাকে। ব্যাংক সমাজের সকল স্তরের জনগণকে সঞ্চয়ী হতেও  উৎসাহিত করে। এছাড়াও শিল্প কারখানায় ব্যাংক শুধু পুঁজি সরবরাহ করেই ক্ষান্ত হয় না উপবস্তু শিল্প পরিচালনা ও গঠনেরনব্যাপারে সাহায্য করে শিল্পের প্রসারও ঘটায়।

মূলধন সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংক জনগণের সঞ্চয়কৃত অর্থ দেশের শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন মেয়াদে মূলধন হিসাবে সরবরাহ করে শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের গতিকে সচল রাখে। বাংলাদেশের মতো কৃষি প্রধান দেশগুলোতে ব্যাংক বড় ভূমিকা পালন করে কৃষি উন্নয়নের জন্য সার, বীজ, কীটনাশক ঔষধ, চাষাবাদ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ক্রয়ের জন্য কৃষকদের ঋণ দিয়ে। এর মাধ্যমে ব্যাংক দেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ব্যাংক দেশের ব্যবসায়ীদেরকে আর্থিক সাহায্য, লেনদেনের ক্ষেত্রে সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সহায়তা করে। বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাংক দেশের আমদানি ও রফতানি, ব্যবসায় বাণিজ্যে সহায়তা দান করে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারের পথকে সুগম করে থাকে। ব্যাংক উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহে প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ করে, দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

এছাড়াও ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখে। একই রকমভাবে কলকারখানায় পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হওয়ার পর তার সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংক বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদেরকে অর্থ সাহায্য এবং পরামর্শ দিয়ে থাকে এবং পরামর্শমূলক সহায়তা দান করে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ব্যাংকসমূহ তাদের নিজস্ব শাখা খোলার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ সংস্থান করে বহুলোকের কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশেও এসব উদ্দেশ্যাবলি সাধনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনসহ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যাংক ব্যবস্থা এ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যাংক ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছাড়া বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্যাংক ব্যবস্থা আরো দূরদর্শী ও সুপরিকল্পিত হোক এটাই আমাদের কামনা। 

;

জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: কতখানি ঢেলে সাজানো হলো?



মাইশা মালিহা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ক্রমবর্ধমান ব্যাংকঋণের সুদের হারসহ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জকে সাথে নিয়ে আগামী ৬ জুন পেশ হতে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। ইতোমধ্যে বাজেটের সারসংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ৫ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি টাকার সিংহভাগ পূরণ হবে বিদেশি ঋণে, বাকিটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকবে অভ্যন্তরীণ ঋণ ও ব্যাংকঋণে।

এবারের বাজেট নির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ হিসেবি থাকার চেষ্টা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সাবেক অর্থমন্ত্রীর ব্যর্থতার ফলাফল প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি, ভঙ্গুর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মন্থর সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের দায়, ক্রমহ্রাসমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি। চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে  নির্বাচন-পরবর্তী নতুন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর ওপর চাপটা যেন তাই স্বাভাবিকভাবেই বেশি।

আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬.৭৫ শতাংশ। যেখানে চলতি বছরের বাজেটে তা ছিল ৭.৫০ শতাংশ। আদতেই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে হলেও অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কারণ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বিনিয়োগ। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আশানুরূপ হচ্ছে না নানা কারণে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো নানাবিধ সমস্যাকে এর কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। বিদ্যমান মূল্যস্ফীতিও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে।

মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে ১০ শতাংশের কোঠায়। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট বর্তমান বাজার কাঠামোকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিত হওয়াই এখন হুমকির মুখে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামছাড়া মূল্য বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে ছাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। তাই এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সাথে যেমন জনগণ পেরে উঠছে না, তেমনি এই চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে আগামী বছরের বাজেট প্রণেতাদেরকে।

মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক কারণে বিভিন্ন দেশে, এমনকি ইউরোপ আমেরিকাতেও ৮-৯ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি দেখা গেছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সাথে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক উন্নয়নশীল দেশও সংকটের মুখে পড়েছিল। অন্যান্য দেশ এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেলেও বাংলাদেশ তা পারেনি নানা দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে। সেই সাথে টাকা ছাপানোর মতো সিদ্ধান্ত মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে।

বর্তমানে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় রকমের অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতিতে বড় রকম অবদান রাখছে। তাই উপায় এখন ডলার সরবরাহের সুযোগ বৃদ্ধি। প্রয়োজন প্রবাস আয় বৃদ্ধি ও হুন্ডির পথ পরিহার করে সঠিক নিয়মে তা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ। দেশের রপ্তানি পণ্যের যথাযথ ভর্তুকির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করলে তা ডলার সরবরাহে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই বাজেটে প্রণেতারা অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে দুটি উপায় মেনে চলবেন বলে জানিয়েছেন। এক, দেশের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত রাজস্ব কর বাড়বে; দুই, সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করবে। রাজস্ব বাড়াতে হলে অবশ্যই একটি দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আদায় করা সম্ভব নয় এমন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে তা হিতে বিপরীতই হবে। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় আদায় করতে হলে করের হার না বাড়িয়ে করযোগ্য মানুষের কাছ থেকে সঠিক ও যথাযথ হারে কর আদায় করা গেলে সার্বিকভাবে চাপ কমবে জনগণের ওপর, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মাইশা মালিহা, ৩য় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

;

ঢাবি ভিসির গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রয়াস ও বিসিএস বিতর্ক



মিজানুর রহমান
ঢাবি ভিসির গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রয়াস ও বিসিএস বিতর্ক

ঢাবি ভিসির গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রয়াস ও বিসিএস বিতর্ক

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও আবাসিক হলে ছাত্রত্বের মেয়াদোত্তীর্ণরা প্রবেশ করতে পারবেন না- বর্তমান উপাচার্যের এমন একটি বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক গ্রুপ তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বক্তব্য নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক চলছে। এর মধ্যে কিছু কথা উপাচার্যের মুখে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে- যা আদতে তিনি বলেনই নি। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই সে সব কথা। অনেক বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী মূল বিষয়টি না যাচাই করেই মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ অতীতের উপাচার্যদের বক্তব্যকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে কটাক্ষ করছেন। একজন লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার অবস্থান জানান দিতে মাঝে মধ্যে কিছু উদ্ভট কথা বলেন।’

গত ১০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ‘নবীনবরণ ও অগ্রায়ন’ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের এক বক্তব্যের সূত্র ধরেই মূলত এই আলোচনা। সেখানে উপাচার্যের বক্তব্য উদ্ভট কিনা সে সম্পর্কে মতামত দেওয়ার আগে তিনি কী বলেছিলেন সেটা একবার জেনে নেওয়া যাক।

ওই অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, "আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ঢোকার জন্য নির্ধারিত আইডি কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে। যদি কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র থাকে, কেউ যদি বহিরাগত থাকে, তারা হলে ঢুকতে পারবে না। আগামী এক মাসের ভিতরে লাইব্রেরিতে কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে। এছাড়া ছাত্রত্বের মেয়াদোত্তীর্ণদের যারা সেখানে (লাইব্রেরি) গিয়ে বিসিএস'র বই পড়ে আগামী মাস থেকে তাদের সেখানে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। কথাগুলো বলার কারণ হলো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ট্রান্সফরমেশনের (রূপান্তর) কথা ভাবছি। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও ভাবতে হবে তাদের ট্রান্সফরমেশনের কথা।"

বর্তমান উপাচার্য দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে কিছু পদক্ষেপের কথা বলে আসছেন। তার এই বক্তব্য সেই প্রচেষ্টারই ধারাবাহিকতা তা বলাই বাহুল্য।

ওই আলোচনায় তিনি শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস, যারা গবেষণা করবে শুধু তাদেরকেই মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া এবং উন্নত বিশ্বের মতো বিদেশি তত্ত্বাবধায়কের অধীনে ফান্ডেড পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার কথাও বলেন। গ্রন্থাগারে বিসিএসের বই পড়তে দেওয়া হবে না এমন কথা তিনি বলেননি। অথচ সামাজিক মধ্যমে এমন একটি কথাই বেশি ছড়িয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে।

ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রায় ছয় লাখ বই ও সাময়িকী রয়েছে। সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারে বর্তমান শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পান না বলা চলে। কারণ অধিকাংশ আসন ছাত্রত্বের মেয়াদোত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশীদের দখলে থাকে। ফলে উপাচার্য যদি শুধু বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রবেশের উদ্যোগটি নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই লাভবান হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত হবে।

আমি নিজের কথাই বলতে পারি। আমার মাস্টার্স শেষের দিকে। ফলে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আমি নিজেও ঝামেলায় পড়ব। কিন্তু তারপরেও বলছি, গ্রাজুয়েশন শেষেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় আমার দায়িত্ব নেবে? সেক্ষেত্রে উপাচার্যের কথাটি নিঃসন্দেহে যৌক্তিক।

অনেক শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সরকারি চাকরিকেন্দ্রিক পড়াশোনা শুরু করে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার পরে। কারণ ঢাবিতে সাধারণত চাকরি না হওয়া পর্যন্ত ফ্রিতে থাকা যায়। তাই অনেকে হলে রুম দখল করে দীর্ঘদিন ধরে থাকেন। ছাত্ররাজনীতিতে যারা জড়িত তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত অনুসন্ধানে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৬০ জন শীর্ষ নেতা এক দশক ধরে হলে রয়েছেন।

হল নিয়ে যে পরিকল্পনার কথা উপাচার্য বলেছেন, সেটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি এবং সদিচ্ছা থাকলেই কেবল বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ, হলে ছাত্রত্বের মেয়াদোত্তীর্ণদের অবস্থান করতে না দিলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে। তখন ক্যাম্পাসে অন্য সংগঠনের প্রভাব বাড়বে। ঢাবিতে অন্য সংগঠনের প্রভাব বাড়লে সেটা জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে, সেটা অতীত ইতিহাস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যদি সেটা প্রশাসন দিয়ে সামলাতে চান তাহলেই ঢাবি শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষেই বৈধ সিট পাবে। তাতে একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন গণরুমে পচে যাবে না। হলের গণরুমে রাত কাটানোর বিনিময়ে জোরপূর্বক রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া লাগবে না। একজন শিক্ষার্থী নিজেকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ পাবে।

অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, পড়াশোনা শেষ হলেও চাকরি না পাওয়া এতগুলো বেকার শিক্ষার্থী কোথায় যাবে? সেটি একটি প্রশ্ন বটে। যার সমাধান খুঁজতে হবে। কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী করণীয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ছাত্রদের দায়িত্ব নেওয়া। একজন শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর শেষেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন দায়িত্ব নেবে?

আমি মনে করি একজন মেয়াদউত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়ার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ক্যাম্পাসে  প্রথম পা দেওয়া একজন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া। সে সময় শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি নাজুক অবস্থায় থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যাশাগুলো যখন পূরণ হয়না তখন তারা আরও নাজুক আরও ভঙুর অবস্থায় পড়েন। একজন নবীন শিক্ষার্থীকে আবাসিক সুবিধা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক দায়িত্ব। অথচ দেখা যায়  এই শিক্ষার্থীরা পাঁচজনের রুমে ২৫ জন, আর মেয়াদোত্তীর্ণ অছাত্ররা রুম দখল করে আরাম-আয়েশে কাটাচ্ছেন।

অতএব, উপাচার্য যদি তার ইচ্ছাকে শুধু বক্তব্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের তথা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও সার্বিকভাবে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলময় হবে।

লেখক: মিজানুর রহমান, সাংবাদিক, ঢাবি শিক্ষার্থী

;