সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন সুশাসন



ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি ও প্রকৃতি নিয়ে প্রথমেই কিছু কথা বলা যায়। সামগ্রিক অর্থনীতির সূচকগুলোর অর্জন ভালো। আমরা প্রবৃদ্ধির ৬-এর বৃত্ত থেকে বেরিয়ে গেছি। এটি ইতিবাচক। সার্বিক উন্নতি সন্তোষজনক। এ জন্য বাংলাদেশ একটা মডেল।

দুর্বল দিকটা হলো, অর্জনের এ ফলগুলো সমাজের নিচের স্তরে অপেক্ষাকৃত খুব কম পৌঁছেছে। ধরুন ধনাঢ্য শ্রেণী, যারা আগে একটা গাড়িতে চড়ত, তারা এখন একাধিক গাড়িতে চড়ছে। গরীব লোক আগে স্যান্ডেল পরত না, তারা স্যান্ডেল পরছে এবং কিছু আয় বেড়েছে। এর বেশি কিছু নয়। অর্থাৎ অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। যেটা ভালো নিদর্শন নয়। উন্নয়নটা সমতাভিত্তিক হচ্ছে না। সমতাভিত্তিক উন্নয়ন না হলে তা টেকসই হয় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা রাজনৈতিক স্বাধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি এ দুটিই চেয়েছিলাম। সেটি পূরণ হচ্ছে কি? এখন আমরা শুধু প্রবৃদ্ধি দেখছি, সুষম বণ্টন দেখছি না।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে গত চার দশক ধরে বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে উন্নয়নের নামে। ’৬০-এর দিকে প্রথম উন্নয়ন দশকের মূল লক্ষ্য ছিল প্রবৃদ্ধি (growth); দ্বিতীয় দশকে লক্ষ্য ছিল প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমতা (growth with equity); তারপরের দশকে এলো বিকেন্দ্রীকরণ (decentralization); গণচেতনা (mass awareness) এগুলো; তারপর এখন উদ্দিষ্ট লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন (participatory development), পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক উন্নয়ন উৎসাহে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মদদপুষ্ট বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। বাংলাদেশও এই রকম কৌশলের বাইরে থাকেনি। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি এরকম বিভিন্ন উন্নয়ন (sustainable development), নারী উন্নয়ন এগুলো। এই সমস্ত কৌশলই এসেছে দাতা দেশসমূহের প্রচেষ্টার ফলে তবু গণদারিদ্র‍্য দূর হয়নি বরং অনেক দেশে বেড়েই চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য দারিদ্র্য একটি বিশাল সমস্যা। বস্তুত আপেক্ষিক দারিদ্র‍্য ক্রমেই চরম আকার ধারণ করছে এবং এটা সামাজিক একটা challenge হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক স্থিতিশীলতাও সঙ্গীন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো ‘টার্গেট গ্রুপ’ ভিত্তিক প্রকল্প দারিদ্র্য কিছুটা লাঘব করলেও সার্বিকভাবে দারিদ্র্য তেমন কমেনি। বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ পল্লী অঞ্চলে। অতএব দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং পল্লী উন্নয়ন এই দুটির যোগসূত্র রয়েছে। তবে এটা লক্ষ্য করা যায় যে, ‘উন্নয়ন’ শব্দটির অস্পষ্ট ব্যবহারের ফলে অনেক সময় মূল সমস্যা দারিদ্র্য আড়ালে থেকে যায়।

উন্নয়নকে সুশাসন ও গণতন্ত্র থেকে আলাদা করে দেখা ঠিক নয়। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। উদাহরণ দেওয়া হয়, গণতন্ত্র ছাড়াও বিশ্বের কিছু দেশে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সে উন্নয়ন টেকসই ও সমতাভিত্তিক নয়। সেখানে শুধু বস্তুনির্ভর প্রবৃদ্ধি ও ভোগবাদের প্রসার হয়েছে। মূল্যবোধ, ব্যক্তি স্বাধীনতা এগুলোর প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ওই পথে চলুক, আমরা সেটি চাই না।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল, রাজনৈতিক স্বাধিকার এবং অর্থনৈতিক মুক্তি। বাংলাদেশের জন্য আন্দোলনটা বহু আগে থেকে শুরু হয়েছিল, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-র গণ-অভ্যুত্থান। বিশেষ করে ছয় দফা আন্দোলনের যে ভিত্তি ছিল, সেটা ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অন্যায় আচরণ এবং এখানকার লোকজনকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করা থেকে মুক্ত করা। অর্থনীতি মুক্তি অর্জন করার জন্য দরকার ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলাম। বিভিন্ন দোলাচল, অনিশ্চয়তা ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা এ পর্যায়ে এসেছি। আমাদের দেশে আসলে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নটা শুরু হয়েছে ১৯৯০ থেকে। প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার শুরু হলো এবং ১৯৯০-র পর ধারাবাহিকভাবে ভালোভাবেই অর্জনটা ছিল। তার পর আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, গার্মেন্ট এবং অন্যান্য সেক্টরে উত্তরোত্তর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই কন্ট্রিবিউশনটা বিশেষ কোনো একটা সরকারের সময়ে হয়নি। ধারাবাহিকভাবে সব সরকারের সময় হয়েছে। তাই এখানে কৃতিত্ব কিন্তু সবার। একক কোনো সরকার এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারবে না। আবার ব্যর্থতার ব্যাপারেও এককভাবে কাউকে দোষ দিতে পারবে না। এদিকে আমি যাচ্ছি না।

আমি এখন আমাদের যে মূল চ্যালেঞ্জগুলো এবং সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক চিন্তাধারা, রাজনৈতিক চিন্তাধারার কিছু কথা বলব। মানে রাজনৈতিক যে বিশ্লেষণ বা অর্থনীতির যে বিশ্লেষণ, সে বিষয়ে আমি প্রাসঙ্গিক কথা বলব। প্রথমত, চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের অর্থনীতির দিক দিয়ে, যেগুলো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়। প্রথম হলো আমরা যে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছি, সেটা এখন কিছুটা মন্থর, আবার বিনিয়োগও মন্থর হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, দেখছি যে সরকারের যে নীতিগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা বা নীতিগুলো যে খুব সুষ্ঠু নীতি হয়েছে সেটাও নয়। আবার নীতিগুলো বাস্তবায়ন যারা করবে, আমলা এবং সরকারের যে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আছে তাদের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নবহুল। সব শেষে সার্বিকভাবে যে উন্নয়নগুলো হয়েছে, বিশেষ করে সূচকের দিকটি বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে গড় হিসেবে। কিন্তু তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে কিনা। যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তার সুফল কিন্তু বহুলাংশে সাধারণ মানুষ পায় না। কারণ এখন আমরা দেখছি যে, দিন দিন কিন্তু ধনী-দরিদ্র-নিম্নমধ্যবিত্তদের ফারাক বাড়ছে। বঞ্চিতের সংখ্যা বাড়ছে। তবে আপেক্ষিকভাবে কেউ বলতে পারে যে, আগে তো কেউ শার্ট পরত না, প্যান্ট পরতে পারত না, মোবাইল সবার কাছে আছে। সেটা হলো আপেক্ষিকভাবে।

একজন রিকশাঅলার মোবাইল আছে, কিন্তু যে আট থেকে ১০ বছর আগে রিকশায় চড়তে পারত না, তারা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তাই ফারাকটা কী। একই ধরনের লোক একই কর্মদক্ষতা কিন্তু সে চলে যাচ্ছে কোথায়। বিভিন্ন ফাঁকফোকরে, রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে, এমনকি দুর্নীতির মাধ্যমে। তাই এই অসম উন্নয়নটা অ্যাক্সেপ্টেবল নয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ব্যাপার। এ জন্য আমরা দেখছি যে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা না থাকলেও অশ্চিয়তা আছে। কী হবে না হবে। কী ধরনের সরকার হবে। আর এখন যে রাজনৈতিক অবস্থাটা আছে বা যে কোনো সময় রাজনৈতিক যে গভর্নমেন্ট আসে, সেখানে আমরা কিন্তু গুড গভর্নেন্স দেখতে পাচ্ছি না। সুশাসনের অভাব আছে। সুশাসনের অভাব মানে স্বচ্ছতা নেই, জবাবদিহিতা নেই। কেউ যদি অন্যায় করে তার কোনো শাস্তি হয় না। সব থেকে মারাত্মক হলো রুল অব ল’ নেই। আইন আছে কিন্তু এটার বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। রাজনীতির মেজর জিনিসটা যে খালি ভোট দিলে হয়ে গেল তা নয়। সুশাসন ছাড়া কিন্তু কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

অনেকে বলে, কোনো কোনো দেশে তো মার্শাল ল’ছিল। কোনো কোনো দেশে তো ডিক্টেটর ছিল। উন্নয়ন হয়েছে। গণতন্ত্র ছাড়া। কিন্তু গণতন্ত্র ছাড়া যে উন্নয়নটা হয় সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সেখানে ১০ থেকে ২০ বছর পর দেখা গেছে, বেশিরভাগ লোকই দরিদ্র। তাই ওই পথে যাওয়া যাবে না। তার পর রেগুলেটরি বডি যেগুলো আছে, যেমন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। মানুষের বিবেচনায় তো কাজ করে না, যেভাবে গ্যাস-পেট্রলের দাম বাড়ে। বিটিআরসি নানারকমের নীতি দিচ্ছে। এগুলোর কোনো কনটিনিউটি থাকে না। সরকার চেঞ্জ হলে অন্য সরকার এসে পুরো সিস্টেমই পরিবর্তন করে দেয়। যদিও অনেক ভালো নীতি অনেক সময় নেয়। মোটামুটি যদি ধারাবাহিক থাকে, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যেমন ভারতেও কিন্তু অর্থনীতিবিষয়ক নীতিগুলো একেবারে চেঞ্জ হয়ে যায় না। মোদি এসে তো বলেননি যে, আমরা ইন্ডাস্ট্রি করব না। আমরা এক্সপোর্ট করব না। আমরা ম্যান পাওয়ার বাড়ব না। আমরা আইটি সেক্টরে কাজ করব না। তিনি বলছেন, আমি করব অন্যভাবে। লোকজন কিছু চেঞ্জ হবে। সেটা অন্য কথা। এটা আমেরিকায়ও করে। কিন্তু আমাদের দেশে দুঃখজনকভাবে এগুলো হয় না।

আর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ তো একেবারেই হয়নি। লোকাল গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন বলে কিছুই নেই। ঢাকা থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ঢাকা থেকে করার ফলে যেটা হয়, আমাদের প্রত্যেকটি অঞ্চলের লোকজন কিভাবে বেঁচে থাকে, তাদের চাহিদা আমলে নেওয়া হয় না। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ তাদের ভূমিকা নগণ্য। এখন আবার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের বেতন দেবে তাদের আয় থেকে।

সরকার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বেতন দিয়ে দিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। আর ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের বেতন দেবেন না। এটা কোনো কথা হলো নাকি। ওদের কি ট্যাক্স পাওয়ার আছে? ওদের কি অথরিটি দেওয়া হয়েছে? গরীব মানুষদের ওপর আর কত ট্যাক্স চাপাবে? ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে, এক্সপোর্ট বাড়লে ট্যাক্স বাড়ে। ওদের কি এক্সপোর্টের ওপর ট্যাক্স করার ক্ষমতা আছে? বা আয়ের ওপর ট্যাক্স করার ক্ষমতা আছে? তাই সার্বিকভাবে আমি বলব, আমাদের যে রাজনৈতিক চিন্তাধারা, তা হলো গতানুগতিক। মার্কেট ইকোনমির ওপর, বাজারের ওপর ডিপেন্ড করে আমরা চলব এবং বাজার সবকিছু নির্দিষ্ট করবে। ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই ঠিক করবে। সেভাবে যাবে। আর অর্থনীতিবিদরাও তখন চিন্তা-ভাবনা করছে যে, ঠিক আছে, বাজারের মধ্যে থেকেই আমরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি বিবেচনা করব। তার মানে কিছু কিছু জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে একটু মলম দিলাম। কিন্তু পুরো শরীরে যখন নানা সিস্টেমেটিক ডিজিজ হয়। আমার যদি ইমিউন সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়। আমার ব্লাড যদি দূষিত হয়। আমার নাকের মধ্যে ওষুধ দিলে, চোখের মধ্যে ওষুধ দিলে কী লাভ হবে। কোনো লাভ হবে না। এখন আমাদের তো হয়েছে সিস্টেমেটিক ডিজিজ। এক জায়গায় তো নয়। এটা সর্বগ্রাসী। পুরো সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। আর সেই সিস্টেম মানে রাজনৈতিক সিস্টেম। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো, বাজারগুলো এবং লোকাল লেভেলে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলো। স্কুলগুলো এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটিগুলোকেও প্রভাবিত করে পলিটিক্যাল মোটিভেশন।

ব্যাংকিং সেক্টর দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। বর্তমানে এ সেক্টরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সুশাসনের অভাব। অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন বলতে কিছু নেই। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য যেসব নীতিমালা ও আইন-কানুন আছে, কোম্পানি আইন আছে, আন্তর্জাতিক নর্মস আছে, সেগুলো সঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে না। ব্যাংকিং সেক্টরে যেসব নীতিমালা ও আইন আছে, তা আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে পরিপালন এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এর ফলে নানারকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পরিচালনা বোর্ড থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট এবং নিচের দিকে কর্মকর্তা পর্যায়ে কোথাও সুশাসন আনুসৃত হচ্ছে না। সর্বত্রই মারাত্মক ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে ব্যাংকিং সেক্টর এখন মোটেও ভালো অবস্থায় নেই। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোয় সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। পরিচালনা বোর্ড ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেবে। তারা নীতিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। আর ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কাজ হবে সে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা। পরিচালনা বোর্ড এবং ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কার্যপরিধি আইন দ্বারা নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু প্রায়ই শোনা যায় বা অভিযোগ পাওয়া যায়, পরিচালনা বোর্ড ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কাজে হস্তক্ষেপ করে। এখন দেখা যায়, ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে যত না আগ্রহী, তার চেয়ে ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতেই যেন বেশি উৎসাহী। ফলে ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের পক্ষে স্বাধীনভাবে তাদের সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা পরিচালনা বোর্ডের দ্বারা প্রায়ই নির্দেশিত হয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

অবশ্য ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট যে সবসময় দক্ষ হয়, তা নয়। অনেক সময় ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা এবং ত্রুটির কারণেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব নানা কারণে ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতি দেখা দিচ্ছে এবং জবাবদিহিতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। পরিচালনা বোর্ড ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে পরস্পর দোষারোপ করার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে জবাবদিহিতার বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে। ব্যাংকিং সেক্টরে মনিটরিং এবং সুপারভিশনও খুব দুর্বল। যারা পরিচালনা বোর্ডে পরিচালক বা চেয়ারম্যান হয়ে আসেন, তাদের নিজস্ব ইন্টারেস্ট থাকে। তাদের নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য থাকে। আত্মীয়স্বজনের ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা প্রদানের জন্য ব্যাংক ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিয়ে থাকেন। নিজস্ব লোকদের ঋণ প্রদান বা চাকরি প্রদানের জন্য তারা ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আগে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় এমনটি ছিল না। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যারা নিয়োগ লাভ করেন, তাদের নিযুক্তি অনেকটাই নির্ভর করে পরিচালনা বোর্ডের ওপর। কাজেই তারা ইচ্ছা করলেই পরিচালনা বোর্ডের সদস্য বা চেয়ারম্যানের পরামর্শ বা নির্দেশনা উপেক্ষা করতে পারেন না। একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাংকে থাকবেন কিনা, তা অনেকটাই নির্ভর করে পরিচালনা বোর্ডের সদস্যদের সন্তুষ্ট করার ওপর। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দক্ষতা এবং পারফরম্যান্সের ওপর তার টিকে থাকা-না থাকা তেমন একটা নির্ভর করে না। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তার পক্ষে এমডি হিসেবে টিকে থাকায় কোনো সমস্যা হয় না। এজন্য দেখবেন কোনো কোনো ব্যাংকের এমডিদের বেতন-ভাতা অত্যন্ত উচ্চ। এদের বেতন-ভাতা অনেক বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে তারা পরিচালকদের কথাবার্তা শোনেন; তাদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেন। এতে ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা হলো কিনা, সেটা তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। পরিচালনা বোর্ড তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করতে চায়। পরিচালনা বোর্ডে অনেকেই থাকেন, যারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চান। একজন পরিচালক বা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে; কিন্তু তা যদি ব্যাংকের কাজে ব্যবহার করতে চান তাহলেই সমস্যা দেখা দেয়। ব্যবস্থাপনার মধ্যেও আবার অনেক লোক আছেন, যারা দক্ষ নন বা নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদি অদক্ষ বা দুর্বল হন, তাহলে তার প্রভাব সর্বত্রই পড়ে। এতে নিচের দিকের কর্মীরা নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতি-অনিয়ম উপর থেকে নিচের দিকে ধাবিত হয়। কাজেই টপ ম্যানেজমেন্ট যদি কঠোরভাবে সুশাসন নিশ্চিত করেন, তাহলে তার প্রভাব নিচের দিকে পড়বেই। কিন্তু আমাদের এখানে টপ ম্যানেজমেন্টের মধ্যেও সমস্যা রয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে এখন সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা জেঁকে বসেছে।

এখন আমাদের সময় এসেছে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করার। সরকার গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, গতিশীলতা এনে সুষম ও টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করবে, এটাই এখন বিশেষ প্রয়োজন। সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ করপোরেশন সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কিছু কিছু জায়গায় পাবলিক সেক্টরগুলো, করপোরেশনগুলোর মূল্য আছে। যেমন আমি উদাহরণ দিই, বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ খাতে যখন আমাদের ক্রাইসিস হলো, তখন ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জের মতো একটা ৫০০, ৬০০ মেগাওয়াটা বিদ্যুৎ প্লান্ট করা যেত সরকারি উদ্যোগে এবং নিয়ন্ত্রণে। এটা করলে ইন্ডিভিজুয়াল কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট যেটা দেখেছি বেসরকারি খাতে সেগুলোর ওপর নির্ভরশীল কম হতো, জনগণ স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ পেত এবং সরকারি খাত থেকে ভর্তুকির খরচ কমে যেত। পাওয়ার সেক্টরে পাবলিক সেক্টরের ইনভেস্টমেন্ট থাকা উচিত। পৃথিবীর সব দেশেই থাকে। ইনডিপেন্ডেন্ট কিছু কিছু ছোট জায়গায় যেখানে গভর্নমেন্ট একেবারে পৌঁছাতে পারবে না, সেখানে পাওয়ার প্লান্ট কিছু হতে পারে। তবে একেবারে ঢালাওভাবে সব প্রাইভেট সেক্টর করবে না।

মার্কেটিংয়ের বেলায় এগ্রিকালচার মার্কেটিংয়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কিন্তু মার্কেট একেবারে ছেড়ে দেওয়া হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়া অরেঞ্জ উৎপাদন করে। বিরাট একটা প্রতিষ্ঠান আছে। ওরা ওটার কন্ট্রোলে থাকে উৎপাদকের স্বার্থ দেখার জন্য। এটা বাজারে ছেড়ে দেয় না। তার পর কানাডায় হুইট বোর্ড আছে। কানাডার ফার্মাররা যে গম উৎপাদন করে, তাদের স্বার্থে এটা কাজ করে এবং ভোক্তাদের স্বার্থও দেখে। আর এখানে কৃষকদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ফটকাবাজ বা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যাপারীদের হাতে। গভর্নমেন্টের তো এখানে কতগুলো রুলস, কতগুলো ফ্যাসিলিটিস থাকবে। এখানে কিন্তু পাবলিক সেক্টর রুল আছে। এখানে পাবলিক সেক্টরের প্রয়োজন। অনেকে বলে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে। আমি কিন্তু এর পক্ষপাতী নই। বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় যদি সততা ও স্বচ্ছতা নিয়ে আসে, তবে প্রতিযোগিতামূলক আবহ সৃষ্টি হবে ব্যাংকিং খাতে। আসলে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী যদি একেবারে নাই থাকে, তখন দেখা যাবে কী অবস্থা। অন্যরা ইচ্ছামতো কাজ করবে। অতএব রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক ছেড়ে দিলে কিন্তু চলবে না। একটা, দুইটা, তিনটা কিন্তু রাখতে হবে। যেমন সোনালী ব্যাংক প্রাইমারি স্কুলের টিচারদের বেতন দেয়। এখন প্রাইভেট ব্যাংকে দিলে কী করবে। টিচারদের বেতনও হয়তো পৌঁছাবে না সময়মতো। সরকারের টাকাটা নিয়ে রেখে দেবে। আরেকজনকে ধার দেবে। তার পর সরকার ট্রেজারি ফি জমা দিল কিন্তু এক মাস দুই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকাটা পাঠালই না। তবে অবশ্য কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও নজরদারি আরও স্বচ্ছ এবং জোরদার করা। দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব থেকে এগুলোকে মুক্ত করতে হবে।

কয়েক বছর আগে ফরাসি অর্থনীতিবিদ নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। তার নাম জ্যাঁ তি হল। তার মূল বিষয়বস্তু হলো, কী করে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মার্কেটকে লোকজনের হাতে ছেড়ে দেওয়া চলবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ খুব সোজা কাজ নয়। আদেশ-নির্দেশে কাজ হবে না। মেকানিজম তৈরি করতে হবে। চেক অ্যান্ড ব্যালান্স। কেউ যদি এটা না মানে তাহলে তার তখন কী পরিণতি হবে। ফাইন হবে। ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিসের ফলে বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ইতালি, গ্রিস, স্পেন এখনো এটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই সেই চিন্তাটা করতে হবে। আমার মনে হয়, আমাদের অর্থনীতিবিদরাও সে চিন্তা করছেন। জ্যাঁ তি হল অন্য লেখকের সঙ্গে আর একটি বই লিখেছেন। ‘ব্যালান্সিং দ্য ব্যাংকস’। ব্যাংকগুলো যা ইচ্ছা তাই করবে, লোকজনকে বিপদে ফেলে আমানত নিয়ে ইনভেস্ট করবে। এটার রেগুলেট করা। কেয়ারফুললি করতে হবে। রেগুলেটকারীরা নিয়ন্ত্রণকারী যেন না হয়। বিশেষ করে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে সেখানে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সংবেদনশীল। যথাযথভাবে এটাকে দেখতে হবে।

গভর্নমেন্ট নিশ্চিত করবে ফুড সিকিউরিটি। গভর্নমেন্ট নিশ্চিত করবে সুশাসন। তার মধ্যে সবাই থাকবে। প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করবে। একটা কথা আছে, বাংলাদেশে এখন সুশাসনের অভাব। ইনভেস্টমেন্টের আবহ নেই। পরিবেশ নেই। ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রবলেম আছে। আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারছি না। যত তাড়াতাড়ি আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম, সেটা পারছি না। একেবারেই যে স্থির হয়ে আছি সেটা নয়। রানওয়েতে কিছুক্ষণ চলার পর প্লেন টেক অফ করে। আমরা কিন্তু টেক অফ স্টেজে চলে এসেছিলাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, এখনো আমরা রানওয়েতেই আছি। তার মানে চলার গতি কম ও রানওয়েটা দীর্ঘ হচ্ছে। এখনো আমরা টেক অফ করে ওপরে উঠতে পারছি না। টেক অফ হলে আলটিমেটলি গ্রোথ রেটে আমরা ছয়, সাত, আট করে ওপরে উঠে যেতাম। সেটা হলে আমাদের দ্রুত একটা উন্নতি দেখতে পারতাম।

রাজনীতির চর্চা জনগণের স্বার্থে হচ্ছে না। দেশে রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সুস্থ রাজনীতি চর্চার অভাব প্রকট। জনগণকে বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ত না করার প্রবণতাও বেশি। এতে জনগণের অনেক সমস্যার সমাধান হয় না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সমস্যাগুলোর সমাধান না করে বরং তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং এর দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতা বিদ্যমান। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটোই পাশাপাশি চলতে হবে। আপনি শুধু উন্নয়ন নিশ্চিত করলেন, আর গণতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে গেলেন, তাহলে কিন্তু স্থায়ী, টেকসই, সমতাভিত্তিক ও অর্থবহ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আমাদের অঙ্গীকার হবে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এতে দিনে দিনে কেবল সমস্যার পাহাড় জমছে, কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। আরেকটা বিষয়, আইনের শাসন আরো দৃশ্যমান হতে হবে। তাহলে সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে। এর ফলে আমার বিশ্বাস, আমাদের সব সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

এখন প্রয়োজন পলিটিক্যাল ফিজিবিলিটি, রাজনৈতিক সম্ভাব্যতা, যার মানে শুধু ইলেকশন নয়, গণতন্ত্রের চর্চা এবং সুশাসন, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে জনগণের কথা শুনতে হবে। যেই ডিসিশনগুলো নেবে অর্থনীতির জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করে। অপজিশনের এবং বাইরের লোক সবার সঙ্গে আলোচনা করে। তারপর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেটা হবে, সবসময় দক্ষতার সঙ্গে করবে। ভালো লোকদের দিয়ে করবে। সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে না। সেখানে বলে দেবে না আমার লোককে তুমি কন্ট্রাক্টটা দেবে। বলে দেবে তুমি দক্ষতা ও সততার সঙ্গে করো যেন জনগণ উপকার পায়। তবেই দেশ দ্রুত অগ্রগতি, সুষম ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

   

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা ও আরাকান আর্মি



ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির (এ এ) সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাত চলমান রয়েছে। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ এই সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রাখাইনে প্রায় ছয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছে এবং সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে। চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে ১২ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। তারা সেখানে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদারকরণে করণীয় সম্পর্কে এবং শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় বলে জানায় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কবে নাগাদ মিয়ানমার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাই এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সহায়তা নিশ্চিতে পাশাপাশি রাখাইনে তাদের ফিরে যাবার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসীরা সক্রিয় রয়েছে, তারা সেখানে হত্যা, মারামারি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কিছু এন জি ও’র সহায়তায় ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যাবাসন বিরোধী প্রচারণার দায়ে দুটি এনজিওকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং এর পরপরই এনজিওগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত এনজিওগুলো যাতে প্রত্যাবাসন বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত না থাকে তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে ধরার জন্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে তাদের আস্তানায় অভিযান চালায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত ১৬ জন নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে রোহিঙ্গারা জীবিকার তাগিদে ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। যারা এই অবৈধ কাজে জড়িত এবং যারা রোহিঙ্গাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তাদের সদস্য সংগ্রহ করছে এবং এর ফলে বাংলাদেশে সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি আশপাশের দেশেও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক বিস্তারজনিত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে। আইওএম মহাপরিচালক কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে। বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে এবং ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় প্রতি বছর আন্তর্জাতিক সহায়তা কমেছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধিরা তাদের মত ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আরো মানবিক ও টেকসই সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ২০২৪ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্লানকে (জে আর পি) সমর্থন জানাতে হবে। এতে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মিলে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের জন্য ৮৫২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চাহিদা উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭.৬ মিলিয়ন, জাপান ২.৬ মিলিয়ন ডলার এবং নরওয়েও ৬.৫ মিলিয়ন ক্রোনার দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছে। সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড জে আর পি’কে সমর্থন জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে যাওয়ার ফলে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে উত্তোরন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য নতুন উৎস থেকে আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য এবং ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমানে রাখাইনের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও সংঘাতপূর্ণ। এ এ জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর জন্য স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ এ রাখাইনের ১৯ টা টাউন শিপের মধ্যে ১৭ টাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। রাখাইনে এ এ ৬ মে বুথিডাং শহরের কাছে মিলিটারি অপারেশন কমান্ড ১৫ দখলের জন্য আক্রমণ চালালে প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর জান্তা সৈন্যরা এ এ’র কাছে আত্মসমর্পণ করে। রোহিঙ্গা ও রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ, কম্বোডিয়ার তথ্য সংগ্রহকারীদের সঙ্গে সম্প্রতিকালে ২০১৬ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনে অংশগ্রহণকারী অনেক রাখাইনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা জানায় যে, সে সময়ের ঘটনার জন্য তারা অনুতপ্ত এবং তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। সে সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যপক প্রচারণার মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো কারনে তারা এই কাজ করেছিল এবং তা ঠিক করেনি বলে জানায়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখনও আরাকানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাখাইনদের মধ্যে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এর বিপরীতে কোনো মহলে তেমন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায় না। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালালেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভামারদের অনেকে তা গ্রহণযোগ্য মনে করছে না। সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদেরকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জাতিগত সংঘাত উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে, তবে এবার তাদের এই প্রচেষ্টা তেমন কার্যকরী হচ্ছে না। এ এ তাদের দখলকৃত এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনো বৈষম্য মূলক আচরণ করছে না বলে জানা যায়। তারা মিয়ানমার সেনা ক্যাম্প দখল করার পর সৈন্যদের পরিবারগুলোকে ও নিরাপদে হস্তান্তর করছে। এ ধরনের আচরণ তাদের সহনশীলতা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দেয়।

এ এ’কে তাদের সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক গবেষক এই সহস্রাব্দের সশস্ত্র দল হিসেবে আখ্যায়িত করে। এন এল ডি’র শাসনামলে এ একে সন্ত্রাসী দল হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০২১ সালে সেনাঅভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরেই সেনাসরকার সংগঠনটিকে কালো তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের সঙ্গে একটি অঘোষিত যুদ্ধবিরতির আয়োজন করে। আরাকান আর্মি এই সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগায়। প্রায় দুই বছর তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সঙ্ঘাত এড়িয়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে মনোনিবেশ করে ও রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক গণসংযোগ চালায়। প্রতিটি এলাকায় তারা তাদের রাজনৈতিক এবং বিচারিক নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়। উত্তর এবং দক্ষিণ রাখাইনের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে এনে ধীরে ধীরে তারা রাখাইনবাসীদের একমাত্র আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠে। এ এ’র সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে রাখাইনবাসীদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অঙ্গীকার। মিয়ানমারের সেনা-সরকার এবং এনএলডি রোহিঙ্গাদের প্রতি বরাবরই বিদ্বেষমূলক আচরণ দেখিয়ে আসলেও এ এ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় বলে জানিয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় জান্তা সরকার অত্যন্ত কৌশলে রাখাইন ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে রেখেছিল। বর্তমানে এ এ নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে রাখাইনদের এক ধরনের স্বস্তিমূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে জানা যায়।

২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) এর সামরিক শাখা এএ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের অন্যতম স্টেকহোল্ডার হিসেবে রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায়। রাখাইনরা আরাকানে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনদের সমর্থন ছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে না। মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিলেও রাখাইনে শান্তিতে বসবাস করতে হলে রোহিঙ্গাদেরকে রাখাইনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে আরাকানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার সরকারের মতো আরাকানের রাজনৈতিক দল এবং জনগণের মতও গুরুত্বপূর্ণ। এ এ’র কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল তোয়াং ম্রা নায়েঙ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক নিয়ে জানায় যে, এ এ বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় এবং এটা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে।

এ এ জাতিগত রাখাইনদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে ও তাদের দূরদর্শী নেতৃত্ব মিয়ানমারের ফেডারেল কাঠামোর আওতায় একটা স্বশাসিত আরাকান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে এ এ’র সঙ্গে তাদের যোগাযোগ স্থাপন করেছে। সামনের দিনগুলোতে রাখাইনে তাদের প্রভাবের কারনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে তাদের সহযোগিতা দরকার হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জড়িত আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশকে এ এ’র সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ এ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে আন্তরিক হলে তারা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখাইন জনগণের মধ্যে প্রচার করতে পারে। রাখাইন সমাজের ওপর তাদের প্রভাব থাকায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পক্ষে রাখাইন সমাজে জনসচেতনতা তৈরিতে এ এ’র প্রচারণাই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সঙ্গেও নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে রোহিঙ্গাদেরকে পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ ফেরত নেয়ার বিষয়ে তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদেরকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোনো দ্বিমত বা বিভক্তি থাকতে পারবে না। নিজেদের ভিতরের বিভক্তি দূর করে তাদেকেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এম ফিল, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক।

;

দহনজ্বালা, বজ্রপাত, প্রকৃতির বিরূপতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদ



ড. মাহফুজ পারভেজ
দহনজ্বালা, বজ্রপাত, প্রকৃতির বিরূপতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদ/ছবি: সংগৃহীত

দহনজ্বালা, বজ্রপাত, প্রকৃতির বিরূপতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদ/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র গরমে ফের জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্টের সতর্কতা। এপ্রিলের শেষ দিকে লাগাতার তাপপ্রবাহের জেরে অস্থির হয়েছিল স্বাভাবিক জনজীবন। মাঝে বৃষ্টির ছোঁয়ায় এসেছিল স্বস্তি। মে মাসের মাঝামাঝি পুনরায় শুরু হয়েছে দহনজ্বালা। আবার জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপদাহের দাপটে হিট অ্যালার্টের সতর্কতা ঘোষণা করতে হয়েছে।

এপ্রিলে স্মরণকালের তীব্র গরমে মানুষের প্রাণ ছিল ওষ্ঠfগত। স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য স্বাভাবিক কাজকর্মেও নেমে এসেছিল স্থবিরতা। তারপর বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টির দেখা পেয়ে একটানা অগ্নিবাণে দগ্ধ ও ক্লান্ত জনজীবনে এসেছিল স্বস্থির পরশ। তবে, সে সময় অস্বস্তি বাড়িয়েছিল বৈশাখী বৃষ্টির দোসর বজ্রপাতের আধিক্য। যদিও গ্রীষ্মের তপ্ত পরিবেশে ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি, বজ্রপাত বাংলাদেশের চিরচেনা ছবি, তথাপি গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার কারণ। সামান্য বৃষ্টি ও উতাল হাওয়ার মধ্যেই বিকট শব্দে সিরিজ বজ্রপাতের ঘটনা আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে এবং বাড়িয়েছে প্রাণহানি। এমনকি, ফাঁকা জায়গায় বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি মর্মে প্রচলিত ধারণাকে উড়িয়ে দিয়ে শহরেও বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

এই যে তাপদাহের ফিরে আসা এবং বৃষ্টির সঙ্গে লাগাতার বজ্রপাতের ঘটনা, তা অবশ্যই বিরূপ প্রকৃতির প্রকাশ। প্রকৃতির বিরূপতা অতি উষ্ণায়ন, তীব্র শীত, বায়ু ও জলের দুষণ ইত্যাদি নানা বিপদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও আমরা এবং বিশ্ববাসী এসব বিপদের ব্যাপারে এখনও যথেষ্ট পূর্ব-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারছি না। ফলে বিপদের প্রকোপ ও পরিধি ক্রমান্বয়েই বাড়ছে প্রকৃতির নানামুখী বিরূপ আচরণের মাধ্যমে।

এসব বিপদের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বার বার সতর্কতা জানিয়েছেন। পরিবেশবাদী ও সিভিল সোসাইটির পক্ষেও অবিরাম বলা হচ্ছে এসব বিষয়ে। ফলে সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন প্রতিটি মানুষই জানেন যে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেই তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে এবং পরিণামে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসছে। সর্বশেষ গবেষণা বলছে, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন যদি ঠেকানো না যায় এবং ইতিবাচক দিকে না নেওয়া যায়, তাহলে বিশ্বে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বাড়বে ৪৫ গুণ। জলবায়ুর চোখরাঙানির জেরে বিশ্ব জুড়ে গড় তাপমাত্রা বাড়তে পারে ১.২ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনই আশঙ্কার ছবি উঠে এসেছে নানা গবেষণায়। বিশেষত ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)-এর সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে বিস্তর আলোকপাত করা হয়েছে।

গবেষণার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিপদ যে জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, তা চিহ্নিতকরণ। বলা হচ্ছে, এসব কারণ সামগ্রিক জনজীবনে বিপদ বাড়াবে। তবে বিশেষত যাঁরা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছেন, তাদের দুর্ভোগ বাড়বে সবচেয়ে বেশি। এর ফলে বিশ্বের দেশে দেশে বসবাসকারী দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী, যারা আগে থেকেই ক্ষুধা, অপুষ্টি, বঞ্চনার শিকার, তারা আরো মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন প্রাকৃতিক বিরূপতার কারণে।

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)-এর গবেষণা রিপোর্টটি অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত। মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৩ জন বিজ্ঞানী রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। গত দু’বছরের রিপোর্টেও এ বারের মতোই ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কার্যকারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

নতুন রিপোর্টে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বিশ্লেষণের জন্য পৃথক মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছিল। পশ্চিম এশিয়ায় (যেমন সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, প্যালেস্টাইন) মার্চ-এপ্রিলের তিন দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা খতিয়ে দেখা হয়। ফিলিপিন্সে দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ১৫ দিনের গড় পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে ভারত, মিয়ানমার, লাওস-সহ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে এপ্রিলের গড় তাপমাত্রাকে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি। চলতি বছরের গ্রীষ্মেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে একই চিত্র ধরা পড়েছে।

রিপোর্ট যেমন বলছে, বাস্তবেও তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্বের দেশে দেশে। প্রায় সব দেশেই তাপমাত্রা বেড়েছে। তাপপ্রবাহের বিপদও বেড়েছে। তবে আগে থেকেই উষ্ণ অঞ্চল, যেমন পশ্চিম এশিয়ায় তাপমাত্রা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন বিজ্ঞানীদের। তাদের ধারণা, ২০৪০ বা ২০৫০ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি ছুঁতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণেই সাধারণ ভাবে এপ্রিল মাসে এশিয়ায় তাপমাত্রা এমনিতে বেশি থাকে। তারপরেও এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলকে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অংশ রূপেই বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সেই বাস্তবতা ক্রমেই বিলীন হওয়ার পথে। গবেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক কালে নানা কারণে তাপমাত্রা যে বিপুল হারে বাড়ছে (বিশেষত কিছু শহরে), তা নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। অত্যধিক তাপে যে সমস্ত প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে, তাদের সুরক্ষার বন্দোবস্তেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ব্যাহত হতে পারে জীববৈচিত্র। যার পরিণতিতে সবুজ ও নাতিশীতোষ্ণ এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্যেও চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করতে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা শুধু বলতেই শোনা যায়। কখনো কোনো প্রকল্প গৃহীত হলেও তা কার্যকর হয় কমই। উপরন্তু, শহরের দুষণ কমানো যাচ্ছেই না। নদী দখল থামছেই না। বৃক্ষ নিধন কমছেই না। তা হলে নতুন পরিকল্পনা কাজ করবে কেমন করে? বাংলাদেশে যখন এমনই শোচনীয় পরিস্থিতি, তখন বিশ্বের অবস্থাটাও বিশেষ ভালো নয়। অনেক অগ্রসর দেশই প্রকৃতি বিনাশের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাদের কারণে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। বিনষ্ট হচ্ছে জলবায়ুর ভারসাম্য। এবং নেমে আসছে নানা বিপদ।

অতএব, বিশ্ব জুড়ে যদি অবিলম্বে তাপ নিঃসরণের হার নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বিশ্ববাসীকে। আগামী দিনে এই বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রে তা হতে পারে ৭ ডিগ্রি। বিশেষ করে, যেসব দেশ দারিদ্র্য ও যুদ্ধ বা সংঘাতের কারণে তছনছ হয়ে পড়েছে, সেখানে বিপদ আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। একটি গবেষণা পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে, ইসরায়েলি আক্রমণে বিধ্বস্ত গাজ়ায় ভিটেহারা ১৭ লক্ষ মানুষের জীবন আরো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে অত্যধিক গরমে। এমন চিত্র বিশ্বের অন্যান্য শরণার্থী শিবিরেও দৃশ্যমান।

নগর ও উদ্বাস্তু জীবনের পাশাপাশি জলবাযু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ জনজীবনেও। অত্যধিক গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষাবাদ। ফলে খাদ্যশস্যের জোগানে ঘাটতির আশঙ্কাও দেখা দেবে সামনের দিনগুলোতে। জলসঙ্কটের কারণ ঘটবে অত্যাধিক গরমের ফলে। শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও ছেদ পড়বে বিরূপ পরিস্থিতির প্রভাবে। মৃত্যু হবে অসংখ্য গবাদি পশুর। মারা যাবে মানুষও। যেমন চলতি তাপদহনের কারণে গত এপ্রিলে মৃত্যুর সংখ্যা (সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী) বাংলাদেশে ২৮, ভারতে ৫ এবং গাজ়ায় ৩। থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্সেও দহনজ্বালায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে একজন করে। এমনকি, নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় আয়োজনও থমকে যাবে বা স্থিমিত হবে তীব্র গরমের কারণে। যেমন, ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনে ভোটদানের হারও বহু জায়গায় কমেছে তাপপ্রবাহের কারণে।

তাপমাত্রা জনিত কারণে যতগুলো বিপদ আপতিত হয়েছে, তার পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রয়েছে মানুষের অপরাধ। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে খলনায়ক মানুষই। বিশেষত সেইসব মানুষ, যারা রয়েছেন ক্ষমতায়, নেতৃত্বে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায়। তাদের ভুলের কারণেই অত্যধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। অরণ্যবিনাশের মতো অপরাধ হতে পারছে। যার মাসুল গুনছেন বিশ্বের সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশের মতো বৃষ্টির আধিক্য রয়েছে যেসব দেশে, সেখানে উষ্ণায়নের কুপ্রভাব হিসাবে যে সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়, বজ্রপাতও তার অন্তর্ভুক্ত। ফলে বন্যা, খরা, অতি গরম বা অতি ঠাণ্ডার মতোই বজ্রপাত নিয়েও মনোযোগী হওয়া দরকার। যে হারে বজ্রপাতের আধিক্য দেখা যাচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে বিষয়টি মোটেও উপেক্ষা করার মতো নয়। বরং এক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা হিসাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পথে অগ্রসর হওয়াই কর্তব্য। তবে, নিঃসন্দেহে জনসচেতনতা বৃদ্ধি বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকানোর পক্ষে অত্যাবশ্যক। বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে খেলা, উঁচু ছাদে মোবাইলে কথা বলা আটকানো যায়নি। শহরে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়েছে এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতা।

অন্য দিকে, প্রকৃত জ্ঞানের অভাবও বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা সময়ে শুরু করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বজ্রপাতে আহতদের স্পর্শ করলে নিজেরাও বিদ্যুৎপৃষ্ট হতে পারেন ভেবে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন না। এই ভ্রান্ত ধারণাও দূর করা আবশ্যক। কালবৈশাখীর সময় পেরিয়ে যায়নি, বর্ষা শুরুর বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির দিনও সমাগতপ্রায়। বজ্রাঘাতে মৃত্যু ঠেকাতে এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন সরকার থেকে সাধারণ মানুষ— উভয় পক্ষেরই। বিশেষ করে, বার বার দহনজ্বালার ফিরে আসা এবং প্রকৃতির বিরূপতায় ধেয়ে আসা বিপদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বহুমুখী বিপদ যেন আরো বৃদ্ধি না পায়, সে ব্যবস্থা করার কথাও নীতিপ্রণেতাদের জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে। নইলে প্রাকৃতিক বিপদের পথ ধরে যে সামাজিক বিপদ ও অস্থিতিশীলতা নেমে আসবে, তা সামাল দেওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসেোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; প্রফেসর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;

ব্যাংক ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের প্রভাব ও সম্ভাবনা



কানজুল কারাম কৌষিক, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ব্যাংক ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের প্রভাব ও সম্ভাবনা

ব্যাংক ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের প্রভাব ও সম্ভাবনা

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাংক ব্যবস্থার আবিষ্কার একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু মুনাফা অর্জনই ব্যাংক এর প্রধান এবং একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। মুনাফা অর্জন ছাড়াও একটি ব্যাংককে বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নানা চড়াই-উতরাই পার করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। তার পেছনেও ব্যাংক ব্যবস্থার অবদান অনস্বীকার্য।

সম্প্রতি বাংলাদেশের নানা ইস্যুতে ব্যাংক ব্যবস্থার কার্যক্রম নিয়ে কৌতূহল জাগে। তাই ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা ও উদ্দেশ্য আমাদের ধারণা পরিষ্কার হওয়া উচিত।

একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক কিছু উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে প্রথমেই ব্যাংকিং কাজকর্ম পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে মুনাফা অর্জন করা অন্যতম।

ব্যাংক পরিচালনায় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করাও ব্যাংকের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তুলনামূলক বেশি সুদে ঋণ প্রদান করলেও মানুষ ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি অধিক আস্থা স্থাপন করায় ব্যাংক থেকেই ঋণগ্রহণ করে থাকে। শুধু লেনদেনই নয়, ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাদেরকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা। ব্যাংকগুলো তাদের সেবা ব্যবস্থা অনুযায়ী বিনিময়ে কিছু সার্ভিস চার্জও আদায় করে থাকে।

এছাড়াও ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- অর্থনীতিতে বিনিয়োগের মাধ্যম তৈরি করা। বিনিয়োগ পরিচালনা লাভজনক করার মাধ্যমে এবং আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য চেক বিনিময় বিল ইত্যাদি প্রচলন করা ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঋণ ও মুদ্রা বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যাবলির পাশাপাশি রয়েছে কিছু আর্থসামাজিক উদ্দেশ্যাবলি। তার মধ্যে অন্যতম হলো মূলধনের জোগান ব্যবস্থা। ব্যাংক জনগণের হাত থেকে অল্প অল্প অর্থ সঞ্চয় করে মূলধন সংগ্রহ করে এবং তার উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে। শিক্ষিত ও দক্ষ বেকার লোকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং তাদের নিয়োগ দিয়ে বেকার সমস্যার সমাধানও ব্যাংক এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

এছাড়াও ব্যাংক উদ্যোক্তাদের মূলধনের চাহিদা পূরণের জন্য ঋণ প্রদান করে এবং শিল্পায়নে সহযোগিতা করে । অর্থনীতিতে  প্রমাণিত যে, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটলে মানুষের ব্যয় ও ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বিনিয়োগ, ঋণদান, ব্যাবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির দ্বারা জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়। এটিও ব্যাংক এর কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।

ব্যাংকের কিছু প্রতিনিধিত্বমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। ব্যাংক গ্রাহকের এবং সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও ব্যাংকের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। কখনো কখনো ব্যাংক রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। ব্যাংক পুঁজিবাদের স্বার্থরক্ষা করে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থের ব্যবহার করে।

আধুনিক বিশ্ব একটি প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির সময় পার করছে। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাপকাঠিই হচ্ছে উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা। উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাঠামোকে মজবুত করে।

দেশের অর্থনৈতিক চাকা সবল রাখতে ব্যাংক কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা পালন করতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম মূলধন সৃষ্টি করা। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধনের গুরুত্বই সর্বাধিক। তাই ব্যাংক জনগণের সঞ্চয়কৃত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে দেশের বাণিজ্য ও শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব মিটানোর জন্য মূলধন সৃষ্টি করে থাকে। ব্যাংক সমাজের সকল স্তরের জনগণকে সঞ্চয়ী হতেও  উৎসাহিত করে। এছাড়াও শিল্প কারখানায় ব্যাংক শুধু পুঁজি সরবরাহ করেই ক্ষান্ত হয় না উপবস্তু শিল্প পরিচালনা ও গঠনেরনব্যাপারে সাহায্য করে শিল্পের প্রসারও ঘটায়।

মূলধন সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাংক জনগণের সঞ্চয়কৃত অর্থ দেশের শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন মেয়াদে মূলধন হিসাবে সরবরাহ করে শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের গতিকে সচল রাখে। বাংলাদেশের মতো কৃষি প্রধান দেশগুলোতে ব্যাংক বড় ভূমিকা পালন করে কৃষি উন্নয়নের জন্য সার, বীজ, কীটনাশক ঔষধ, চাষাবাদ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ক্রয়ের জন্য কৃষকদের ঋণ দিয়ে। এর মাধ্যমে ব্যাংক দেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ব্যাংক দেশের ব্যবসায়ীদেরকে আর্থিক সাহায্য, লেনদেনের ক্ষেত্রে সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সহায়তা করে। বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাংক দেশের আমদানি ও রফতানি, ব্যবসায় বাণিজ্যে সহায়তা দান করে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারের পথকে সুগম করে থাকে। ব্যাংক উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহে প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ করে, দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

এছাড়াও ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখে। একই রকমভাবে কলকারখানায় পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হওয়ার পর তার সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংক বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদেরকে অর্থ সাহায্য এবং পরামর্শ দিয়ে থাকে এবং পরামর্শমূলক সহায়তা দান করে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ব্যাংকসমূহ তাদের নিজস্ব শাখা খোলার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ সংস্থান করে বহুলোকের কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশেও এসব উদ্দেশ্যাবলি সাধনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনসহ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যাংক ব্যবস্থা এ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যাংক ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছাড়া বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্যাংক ব্যবস্থা আরো দূরদর্শী ও সুপরিকল্পিত হোক এটাই আমাদের কামনা। 

;

জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: কতখানি ঢেলে সাজানো হলো?



মাইশা মালিহা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ক্রমবর্ধমান ব্যাংকঋণের সুদের হারসহ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জকে সাথে নিয়ে আগামী ৬ জুন পেশ হতে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। ইতোমধ্যে বাজেটের সারসংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ৫ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি টাকার সিংহভাগ পূরণ হবে বিদেশি ঋণে, বাকিটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকবে অভ্যন্তরীণ ঋণ ও ব্যাংকঋণে।

এবারের বাজেট নির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ হিসেবি থাকার চেষ্টা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সাবেক অর্থমন্ত্রীর ব্যর্থতার ফলাফল প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি, ভঙ্গুর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মন্থর সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের দায়, ক্রমহ্রাসমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি। চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে  নির্বাচন-পরবর্তী নতুন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর ওপর চাপটা যেন তাই স্বাভাবিকভাবেই বেশি।

আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬.৭৫ শতাংশ। যেখানে চলতি বছরের বাজেটে তা ছিল ৭.৫০ শতাংশ। আদতেই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে হলেও অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কারণ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বিনিয়োগ। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আশানুরূপ হচ্ছে না নানা কারণে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো নানাবিধ সমস্যাকে এর কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। বিদ্যমান মূল্যস্ফীতিও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে।

মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে ১০ শতাংশের কোঠায়। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট বর্তমান বাজার কাঠামোকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিত হওয়াই এখন হুমকির মুখে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামছাড়া মূল্য বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে ছাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। তাই এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সাথে যেমন জনগণ পেরে উঠছে না, তেমনি এই চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে আগামী বছরের বাজেট প্রণেতাদেরকে।

মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক কারণে বিভিন্ন দেশে, এমনকি ইউরোপ আমেরিকাতেও ৮-৯ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি দেখা গেছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সাথে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক উন্নয়নশীল দেশও সংকটের মুখে পড়েছিল। অন্যান্য দেশ এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেলেও বাংলাদেশ তা পারেনি নানা দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে। সেই সাথে টাকা ছাপানোর মতো সিদ্ধান্ত মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে।

বর্তমানে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় রকমের অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতিতে বড় রকম অবদান রাখছে। তাই উপায় এখন ডলার সরবরাহের সুযোগ বৃদ্ধি। প্রয়োজন প্রবাস আয় বৃদ্ধি ও হুন্ডির পথ পরিহার করে সঠিক নিয়মে তা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ। দেশের রপ্তানি পণ্যের যথাযথ ভর্তুকির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করলে তা ডলার সরবরাহে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই বাজেটে প্রণেতারা অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে দুটি উপায় মেনে চলবেন বলে জানিয়েছেন। এক, দেশের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত রাজস্ব কর বাড়বে; দুই, সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করবে। রাজস্ব বাড়াতে হলে অবশ্যই একটি দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আদায় করা সম্ভব নয় এমন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে তা হিতে বিপরীতই হবে। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় আদায় করতে হলে করের হার না বাড়িয়ে করযোগ্য মানুষের কাছ থেকে সঠিক ও যথাযথ হারে কর আদায় করা গেলে সার্বিকভাবে চাপ কমবে জনগণের ওপর, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মাইশা মালিহা, ৩য় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

;