করোনাকালে কমিটমেন্ট নিয়ে পথচলা

  • রাজীব কুমার দাশ, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।"

বাঁচার আকুতি কবিগুরুও করেছেন। নশ্বর পৃথিবী! বাঁচা বড়জোর ৭০-৮০ বছর। দেখতে দেখতে কখন যে দুরন্ত শৈশব পেরিয়ে বার্ধক্য জেঁকে বসে আমরা টেরও পাই না। যারা ধনে-জনে সৌভাগ্যবান তারাই অন্যদের তুলনায় একটু সহানুভূতি, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকেন। অন্যরা কোনোভাবে বিড়বিড় করে কান্নাখেকো জলে গান ধরেন--
"দয়াল দিন তো গেলো,সন্ধ্যা হলো,পার করো আমারে"।
সবাই মরতে হবে আমাদের; কেউ আগে কেউ বা পরে।

কিন্তু আমরা কেউ কি মরতে চাই? না, মোটে ও না। কারো এখনো জীবনের সংজ্ঞা জানা হয়নি। পৃথিবীর রূপ দেখা,অর্থ-বিত্ত, প্রাচুর্য, যশ ভোগ এখনো অনেক কিছু বাকি। সিজোফ্রেনিয়া রোগী, প্রতারিত প্রেম বিরহে কাতর জীবন থেকে পালানো প্রেমিক, রোগ যন্ত্রণা কাতর মৃত্যু পথযাত্রীও মৃত্যু কামনা করে না।

সবার মাঝেই আজ একটা রোগের ভয় জেঁকে বসেছে-করোনাভাইরাস? কেউ বলেন--প্রকৃতির প্রতিশোধ, পৃথিবীর ব্যালেন্স। প্রতি শতবর্ষ পরে প্লেটের পরিবর্তনের ফলে এ অবস্থা। এ কারণে আগেও একাধিক সমৃদ্ধ সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে। আবার কেউ বলেন, করোনাভাইরাস আমার হবে না, অমুক-তমুকের হবে। আরো কত কি?

এমন মৃত্যু! কেউ পাশে থাকে না। চিকিৎসা নেই। এমনকি সৎকারেও আপনজন পাশে থাকে না। এ চিন্তা এখন সবাইকে জেঁকে বসেছে। আসলেই কি তাই? এ পৃথিবীতে মড়ক রোগ কি প্রথম? একটু পেছনে ফেরা যাক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে জানা যায় ২০১১-২০১৭ এ সাত বছরে বিশ্বব্যাপী ১৩০৭ টি মহামারীর মতো ঘটনা ঘটেছে।

থুকিডাইডিসের রচনা থেকে আমরা জানি, পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়েছিলো গ্রিক নগর রাষ্ট্র এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে, তখন টাইফাস মহামারিতে এথেন্সের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। যার কারণে স্পার্টার জয়লাভ সম্ভব হয়েছিল।

দুনিয়ার বাতিঘর নামে পরিচিত রোম মাত্র ১৫ বছরে জনমানবশূন্য হয়ে যায় গুটি বসন্তের কারণে। সে সময় রোমকে বলা হত ভূতের নগরী।

খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০-এ গ্রিসের ফুসফুস নামে খ্যাত এথেন্সে বসন্ত রোগে ৩০ হাজারের ও বেশি মানুষ মারা যায়। ২৫০ খ্রি: সাইপ্রিয়ানের প্লেগ মহামারি রোমান সাম্রাজ্যকে বিপর্যস্ত করে দেয়। পরবর্তী দুই শতাব্দীতে বিউবনিক প্লেগে প্রায় ১০ কোটি মানুষ মারা যায়। এই রোগ মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূ-মধ্যসাগরীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। যাকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর মহামারি বলা হয়। মানুষের মরা-পচা দুর্গন্ধে বাতাস দূষিত হয়। এমনকি পশুপাখি কীট-পতঙ্গও সব মারা যায়।

২০১২ সালে সৌদি আরবে সার্স ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্তদের ৩৫ শতাংশ মারা যায়। উটের মাধ্যমে যার সংক্রমণ ঘটে।  ২০১৯ সালে হালনাগাদ চীনের উহান শহরে নোভেল করোনাভাইরাস ঘিরে ক্রমেই ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। এখন বিশ্বময় প্রযুক্তি উৎকর্ষতায় হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছি। পৃথিবীতে অনেক অজ্ঞাত ভাইরাসে সমৃদ্ধ নগর ও সভ্যতা হারিয়ে গেছে।

সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মহামারির সংক্রমণ হয়েছে। আবার বিভিন্ন ভয়াবহ রোগের প্রতিষেধক বা টীকাও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে অচিরেই হয়তোবা আমরা পাবো? কিন্তু আজ বিশ্বময় আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিশ্বময় এতোদিন আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, অশুভ প্রতিযোগিতা, নিউক্লিয়ার, জৈব, রাসায়নিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা, সমৃদ্ধি চিন্তা, সেকেন্ড হোম- আরো কত কি।

পৃথিবীতে এখন ক্রমেই 'মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান' কথাটি মরে যাচ্ছে। সৃষ্টির সেরা জীবের পরিচয় এখন ধর্মের বিভাজনে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। মানুষ পরিচয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে।

করোনাভাইরাস ক্রাইসিস মোকাবেলা আজ আমাদের জাতীয় ইস্যু। মানবীয় সরকার দেশের আপামর জনগণকে বৈশ্বিক ঘরানার আবর্তে দক্ষ টেকসই মানব সম্পদে পরিণত করেছে। আপামর জনগণের রাষ্ট্রের প্রতি কমিটমেন্ট থাকে। সে কমিটমেন্ট  হৃদয়ে লালন করে দেশপ্রেম, সততার কাণ্ডারি হয়ে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান দেশের নাগরিকরা। পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে আজ বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পুলিশও আজ যোদ্ধা।করোনাভাইরাসের এই  ক্রাইসিস মোকাবেলায় সর্বাগ্রে নিজের রেশন ও বেতন দিয়ে রাত-দিন দেশময় জনগণকে সচেতন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।

রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্ট অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছে জনবান্ধব বাংলাদেশ পুলিশ। মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনকের ডাকে সাড়া দিয়ে পরিবার,পরিজনের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে তারা। আজ বিশ্বময় করোনাভাইরাস সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ৩১ দফা নির্দেশনা পেয়ে কাজ করে চলেছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

কমিটমেন্ট দিয়েই ভরপুর আমাদের জীবন। জীবন মানেই কমিটমেন্ট। শুধু ধরনে ভিন্নতা। জনকল্যাণমুখী ও পেশাদারিত্ব নিয়ে  শতভাগ সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে চলেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার, শামসুন্নাহার পিপিএম। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গাজীপুর জেলা পুলিশের মানবীয় কমিটমেন্ট ও সচেতনতা এখন সবার জন্যে অনুকরণীয়। জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে নিজের রেশন নিয়ে কোন ফটোসেশন বা প্রচার ছাড়াই  প্রয়োজন মতো সামাজিক সম্মান-মর্যাদা সমুন্নত রেখে বিলিয়ে দিচ্ছেন ঘরে ঘরে। তার মাননীয় জনবান্ধব সচেতনতামূলক কার্যক্রম আজ করোনাভাইরাসের ভয় জয় করে প্রতিরোধের শপথে উদ্বুদ্ধ করছে সবাইকে।

রাজীব কুমার দাশ: পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ