গোপনে চলছে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অপারেশন

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে চলছে ডিজিএফ'র (গ্যাস উন্নয়ন তহবিল) অপারেশনের কাজ। খোদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, কি ধরণের সংশোধন হচ্ছে সেটা তার জানা নেই।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, অন্যায় কিছু করা হলে কোর্টে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এই ফান্ডের অনেক নয়-ছয় করা হয়েছে। ভোক্তারা এই ফান্ড গঠন করার জন্য টাকা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের স্বার্থই দেখা হয়নি। এই টাকা জনগণের টাকা। এখানে হাত দেওয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয় কিংবা পেট্রোবাংলাকে কে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি এক সভায় খসড়া নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা সংশোধনীর বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছেন, বৈঠকে উত্থাপিত সংশোধনীতে এই ফান্ডকে গ্যাস বিক্রির উদ্ধৃত অর্থ হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া এই তহবিল থেকে প্রদত্ত ঋণের সুদ পেট্রোবাংলার তহবিলে নেওয়া এবং এলএনজি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সুযোগ রাখা হচ্ছে।

তহবিলটি গঠন করাই হয়েছিল তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও সংস্কারে ব্যবহার করার জন্য। ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আদেশ দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সঙ্গে জিডিএফ গঠনের জন্য ভোক্তাদের উপর প্রতি ঘনমিটারে ৪৬ পয়সা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করা হয়। যা ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে কার্যকর করা হয়। ওই গণশুনানিতে বলা হয়েছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন সংকটের কারণে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। প্রকল্প নিয়ে বিদেশি সাহায্যের জন্য বসে থাকতে হয়, এতে কাজে অনেক বিলম্ব হয়। আর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে দাতাদের নানা রকম শর্ত ও ফরমায়েশ থাকে। এতে অনেক সময় প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তাই এই ফান্ড হবে সুদমুক্ত। এই ফান্ডের অর্থ দিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলো প্রকল্প গ্রহণ করবে। যাতে দেশের গ্যাস সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস পাবেন।

বিজ্ঞাপন

যদিও পরে ৪ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করা হয়। কথা ছিল এই ফান্ডের অর্থায়নে প্রকল্প নিতে গেলে যথাযথ ভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং বিইআরসি পূর্বানুমতি নিতে হবে। পরে এই তহবিলের যাচ্ছে তাই ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছর আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো জমা হওয়ার কথা। করোনাকালে সরকারও এই তহবিলে থাবা বসিয়েছে। এই ফান্ড থেকে ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

ডিডিএফ’র কাটা-ছেঁড়া প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের উপ-সচিব ড. মুহা. মনিরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সে কারণে এর সময় বাড়ানো হচ্ছে বলে জানি। আর হয়তো টুকটাক কিছু সংশোধনী থাকতে পারে। খসড়া ড্রাফট পাওয়া যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি পেট্রোবাংলার অর্থ বিভাগ দেখছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) হারুণ অর রশীদও খসড়া প্রদানের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানান। বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, আমার জানা মতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসছে না। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি এই নীতিমালার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তাই এর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। হয়তো টুকটাক কিছু সংশোধনী থাকতে পারে। তহবিলের টাকার সুদ পেট্রোবাংলার তহবিলে নেওয়া প্রসঙ্গে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, আমার জানা মতে এমন হচ্ছে না। যে তহবিলের টাকা সেই তহবিলেই সুদের টাকাও থাকার কথা।

তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ভূমিকায় গ্যাস বিক্রির উদ্ধৃত তহবিল আখ্যায়িত করা এবং প্রফিট পেট্রোবাংলার তহবিলে নেওয়ার খসড়ার বিষয়ে বৈঠকেই আপত্তি ওঠে। যে কারণে বিষয়টি হয়তো এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে ভাবনায় আসতে পারে।