কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না দ্রব্যমূল্য, কষ্টে আছে মানুষ
প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত দু-তিন দিনে বেশির ভাগ পণ্যের দর আরও বেড়েছে। অন্যদিকে সরকার চালের দাম বেঁধে দিলেও তার প্রভাব পড়েনি বাজারে। এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। কাঁচা বাজারে যেয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতার। কেনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না কাঁচাবাজার।
সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বন্যাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে দাম বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছে উৎপাদন কম হওয়া বা পরিবহনের জন্য সবজি বা কাঁচাবাজারে সাময়িক সময়ের জন্য দাম বাড়তে পাবে। তবে চাল-ডালের মত পণ্যের দাম বৃদ্ধি মধ্যেবিত্তের জন্য অস্বস্তিকর। কাঁচাবাজারের স্বস্তি ফিরতে অপেক্ষা করতে হতে পারে শীত আসা পর্যন্ত।
এ সপ্তাহে ১০০ টাকার ঘর ছুঁই ছুঁই বেশকিছু সবজির দাম। অধিকাংশ সবজি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি ১২০ টাকা বেড়ে বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম উঠেছে ২৮০ টাকা।
রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি শসা ১০০ টাকা, ছোট প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, সিম কেজি প্রতি ১২০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, লাউ ৭০ টাকা পিস, আলু ৫০ টাকা কেজি, বরবটি ৮০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৩০০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, পেয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বন্যার কারণে চড়া দাম, দাবি ব্যবসায়ীদের
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, এই মাস পুরোটাই এমন বাড়তি থাকবে সবজির দাম। শীত এলে দাম কমবে। তবে বিগত বছরগুলোর থেকে এবারে সবজির দামটা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বন্যাকে দায়ী করছেন তারা।
মাসুম বিল্লাহ নামের বেসরকারি চাকরিজীবী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, কয়েকদিন ধরেই সবজির দাম বেশি। দিন দিন এ দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক পোয়া কাঁচা মরিচ কিনতে গেলে লাগে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি বাজারে নেই। কোনো কোনো সবজির দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। করোনার কারণে একদিকে বেতন কমেছে অন্যদিকে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মানুষ কষ্টে আছে
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ভোগ পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে মানুষ কষ্টে আছে। করোনা মহামারি কারণে একদিকে মানুষের আয় কমে গেছে, অনেকের চাকরি চলে গেছে, সরকারের হিসাবে শতকরা ২০ ভাগ আয় কমেছে, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। দাম বৃদ্ধিতে উচ্চবিত্তের মানুষের তেমন কিছু হয় না। কিন্তু নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মানুষ কষ্টে আছে।
কাঁচাবাজারের সম্পর্কে তিনি বলেন, শাকসবজির যদি উৎপাদন না হয়, পরিবহন ব্যবস্থা যদি ভালো না হয় তাহলে কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এখানেও যে কারসাজি নেই তা নয়। কৃষক সবজি উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করলেও দেখা যায় শহরে আসার পর দাম বেড়ে যায়, এর পিছনে মধ্যসত্বভোগী সংখ্যা বেশিকে দায়ী করেন তিনি।
গোলাম রহমান বলেন, চাল-ডাল বা আরো কিছু পণ্য আছে যার সাথে পরিবহনের কোনো সংযোগ নেই কিন্তু দাম বাড়ছে। এটি খুবই শঙ্কার ব্যাপার।
সবজির দাম বেশি হওয়ার কৃষকরা যদি শীতকালীন সবজির আগাম চাষ করে তাহলে তাহলে বাজারে স্বস্তি আসতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন বলেন, নিত্য ভোগ পণ্যের দাম বৃদ্ধি সবার জন্যই সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এর পিছনে দেশে দীর্ঘ মেয়াদি বন্যাকে দায়ী করেন তিনি। তবে সরকার এই বন্যার কথা স্বীকার করে না। এখন বাজারে এটার প্রভাব পড়েছে।
পরিবহনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, পরিবহনের অনেক সময় লাগে, যার জন্য সবজি নষ্ট হয়, আবার পরিবহন অনেক চাঁদাবাজি হয়। সরকার দলের লোক ও পুলিশ এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। এখানে সরকারকে মনোযোগ দেয়া দরকার। চাঁদাবাজি বন্ধ ও সহজ পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারলে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি আসবে বলে মনে করেন মিস্টার মনসুর।