রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ জরুরি

  • আনিসুর রহমান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র রমজান মাস এলেই নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এদেশের বেশ পুরোনো বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই রমজানে কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় ভোজ্য তেল, ডাল, চিনি, ছোলা এবং মসলার চাহিদা বেশী থাকে। এই চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু চক্র নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নানান সিন্ডিকেট তৈরি করে বাড়িয়ে দেয় পণ্যের দাম। যার প্রভাবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দারিদ্র্য মানুষের মড়ার উপর খড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়ায়। খেটে খাওয়া, দিনমুজুর ও যাদের দৈনিক বা মাসিক আয় নিদৃষ্ট, পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে তাদের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। তাছাড়া রমজানে এসব মানুষের আয় বৃদ্ধি পায় না, বরং অনেকের আয় কমে যায়।

কয়েক বছর যাবৎ একটা বিষয় দৃষ্টিগোচর হয়েছে এখন আর রমজানে দাম তেমন বাড়ছে না। সিন্ডিকেট চক্র রমজান আসার এক-দুই মাস আগে থেকেই পণ্যের দাম কয়েক দফা বাড়িয়ে দিচ্ছে যাতে কেউ বলতে না পারে রমজানের কারণে দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ-রসুনের দাম ঠিক থাকলেও ভোজ্যতেল সহ অন্য পণ্যের দাম ইতিমধ্যে কয়েক দফা বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই সিন্ডিকেট চক্র গুলো বিভিন্ন সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। হুটহাট বাড়িয়ে দেয় কোনো পণ্যের দাম। এই সিন্ডিকেটের কারণে অনেক সময় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের এখানে বেশি থাকে।

অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার এবং প্রসাশন মাঠে সক্রিয় থাকলেও দাম বাড়ার হিরিক থামে না। নানান বৈঠক, আলোচনা হলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা খুব বেশী চোখে পড়ে না।

বিজ্ঞাপন

দাম বাড়ার প্রশ্নে খুচরা বিক্রেতা দোষ চাপান পাইকারি বিক্রেতার উপর, পাইকারি বিক্রেতা দোষ চাপান আমদানিকারকের উপর। আবার আমদানিকারক কারণ হিসেবে বলেন, আমদানি মু্ল্য, পরিবহন ব্যয়, চাঁদাবাজি। এভাবে একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সবাই দায় এড়িয়ে যায়। এরকম চাপাচাপি যেন আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।

আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদক আর ভোক্তার মাঝে দামের বিস্তর ফারাক। কৃষক যে দামে পণ্য বিক্রি করছেন সেই পণ্যই ভোক্তাকে কয়েকগুন বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। একজন কৃষক পরিবারের সন্তান হিসাবে দেখেছি, অনেকসময় পণ্য বাজারেই নেওয়া হয় না, পরিবহন খরচটা উঠবে কি-না এই ভয়ে। পণ্য ক্ষেতেই নষ্ট হয়। অপরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থার কারনে কৃষক তার কষ্টে অর্জিত পণ্যের দাম পাচ্ছে না। ফলে দারিদ্রের দুষ্টচক্র নামক এক অভিসাপের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, এবার ছোলা ছাড়া অন্যান্য পণ্যের মুজুদ কম। বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা বেশী হওয়ায় কোনো আমদানিকারক বেশী পণ্য আমদানি করছেন না। যা আমদানি করছেন তা দ্রুত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাজারে চলে যাচ্ছে। ফলে রমজান শুরু হলে চাহিদা বাড়ার সাথে দাম বাড়ার সংশয় রয়েছে। তাই দ্রুত পণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। টিসিবির পণ্য বিক্রির পরিমান আরো বৃদ্ধি করা জরুরী। টিসিবি স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করে। ফলে বাজারে তেমন প্রভাব পড়ছে না। এজন্য টিসিবির উচিৎ সরাসরি পণ্য আমদানি করা।

সবশেষে বলতে চাই, রমজানে অধিক চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম বাড়ানো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সকল কতৃপক্ষকে আরো কঠোর হতে হবে। ভাঙতে হবে সিন্ডিকেটের সকল দরজা-জানালা। অন্যথায় নিম্ন আয়ের মানুষের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে

লেখক: শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়