প্রণোদনা ঋণ ১৮ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ কিস্তির সুবিধা চায় বিজিএমইএ

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনাকালে শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের অর্থ ১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৩৬ কিস্তিতে পরিশোধের দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা।

শনিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসানের উত্তর আমেরিকা সফর বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়। এ সময় বিজিএমইএ-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য-নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ এর সভাপতির আমেরিকা সফরকালে তৈরি পোশাক রফতনি বৃদ্ধি ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনা করেন তা এই সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।

ফারুক হাসান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের প্রস্তাবিত ২০২৪-২০৩৪ জিএসপি রেগুলেশনে ইম্পোর্ট থ্রেশোল্ড শর্তটি বাদ দিয়েছে। এর ফলে আমরা যখনই ইবিএ সুবিধা হারাই না কেন, জিএসপিপ্লাস সুবিধা পেতে আর বড় কোন বাঁধা থাকল না। জিএসপি প্লাসের একটি অন্যতম শর্ত ৭.৪% ইম্পোর্ট থ্রেশোল্ড থেকে অব্যাহতি দেওিয়া বা এর বিকল্প ফর্মুলা প্রবর্তনের অনুরোধ করেছিলাম। এটা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে কোটা ফ্রি’র সুবিধা হারানোর পর দ্রুতই জিএসপিপ্লাস সুবিধার আওতায় বিশেষ সুবিধা পাওয়ার পথ অনেকটা উন্মুক্ত হলো।

বিজ্ঞাপন

সরকারের প্রণোদনা দেওয়ার কারণে করোনাকালে অভিঘাত মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে কারখানা রিমেডিয়েশন এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে হয়েছে। কোভিডের মধ্যে কারখানা খোলা রেখে আমরা কেবল ব্যবসা ধরে রেখেছি, কিন্তু এর পেছনে প্রতিটি কারখানা কতটা ত্যাগস্বীকার করে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে সেটিও দেখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আমাদের বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। এই বছরের শুরুতে মজুরি বেড়েছে ৭.৫%, ওভার হেড খরচও বাড়ছে। করোনার ফলে বিশ্বব্যাপী ফ্রেইট ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় কন্টেইনার ভাড়া ২০০%-৩০০% বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ডাইস, কেমিক্যালসহ অন্যান্য ইনপুটের খরচ বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক কারখানা ইমেজ সংকটে পড়ে। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে তৈরি পোশাক শিল্প সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উপযুক্ত নয়, রক্তমাখা পোশাক পশ্চিমা ক্রেতারা কিনবে না- বলে এক সময় ক্যাম্পেইন হতো। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের কর্মপরিবেশের বদলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে গ্রিন কারখানা এখন বাংলাদেশে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকেও শিল্পকে আরও টেকসই করার প্রচেষ্টা থেকে আমরা পিছ পা হইনি। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়নে আমরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছি। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রিন পোশাক কারখানার দেশ। আমাদের দেশে ১৪৮টি ইউ এস জিবিসি এলইইডি সার্টিফাইড কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি প্লাটিনাম ক্যাটাগরির। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে ৪০টি এদেশে অবস্থিত। আরও প্রায়৫০০টি কারখানা সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় আছে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান সাতটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো-

১) শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ১৮টি’র পরিবর্তে ৩৬টি করা।

২) লোকাল ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত কাঁচামাল, সুতা ও আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বন্ডেডওয়্যার হাউজ লাইসেন্স থাকার বাধ্যবাধকতার হিত করা।

৩) গ্রুপ অব কোম্পানির একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ না করা।

৪) বন্ড লাইসেন্সে এইচ এস কোড ও কাঁচামালের বিবরণ অন্তর্ভুক্তির জটিলতা নিরসন করা।

৫) সুতা থেকে নীট গার্মেন্টস উৎপাদনে অপচয় হারবৃদ্ধির কারণে জরিমানা আরোপ করা।

৬) বিমানবন্দরে রফতানি পণ্য ত্বরিত স্ক্যানিং করার জন্য স্থাপিত ইডিএস মেশিনগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং পণ্য নামানোর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেনোপির ভিতরে পণ্য নিয়ে আসা, যাতে করে পণ্যগুলি বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট না হয়।

৭) বেনাপোল বন্দর সহ অন্যান্য স্থলবন্দর, বিশেষ করে ভোমরা ও সোনা মসজিদ এর মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় তুলা, সুতা, কাপড় এবং বস্ত্র ও পোশাক খাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি এবং আংশিক শিপমেন্টের অনুমোদন প্রদান করা।