বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘আর্মি কোর্স’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কোর্সে অংশগ্রহণকারী সেনা অফিসাররা। ছবি: বার্তা২৪.কম

টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কোর্সে অংশগ্রহণকারী সেনা অফিসাররা। ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশের মানুষের কাছে চা একটি অত্যাবশ্যকীয় পানীয় হয়ে দঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপিও চায়ের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের এই দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া চা পানের চাহিদা বাংলাদেশের চা শিল্পের জন্য একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষেত্রের সৃষ্টি করেছে।

চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চা’কে গুণে-মানে উন্নতকরণ এবং বৈচিত্রায়ন সংযোজন করা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতাময় বৈশ্বিকবাজার আর আধুনিক প্রজন্মের এই চাহিদা পূরণ করা বাংলাদেশ চা শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় চা শিল্পকে বাস্তবিক অর্থে সফল করতে হলে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত গুনগতমান বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর অন্যতম লক্ষ্য বিশ্বে বাংলাদেশের চা কে একটি আদর্শ গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। চা আবাদীর বৈজ্ঞানিক পন্থা ও চায়ের গুণগতমান নিয়ে বিটিআরআই সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করে আসছে। গবেষণার পাশাপাশি বিটিআরআই প্লান্টার্স এবং চায়ের সাথে জড়িত সর্বস্তরের মানুষদের ‘আধুনিক পদ্ধতিতে চা চাষ’, ‘টি টেস্টিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিটিআরআই-তে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২দিনব্যাপী ‘Two Weeks Training Course on Tea Tasting & Quality Control for the Army and Navy Officers of Bangladesh’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করা হয়েছিল। কোর্সটিতে বাংলাদেশ আর্মির ১০ জন অফিসার এবং বাংলাদেশ নেভির ০২ জনসহ মোট ১২জন অফিসারকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম, এনডিসি-পিএসসি, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই আর্মি কোসের শুভ উদ্বোধন করেন।

কোর্সে অংশগ্রহণকারী সেনা কর্মকর্তারা হলেন- লেঃ কর্ণেল এইচ এম আনোয়ার আলী, লেঃ কর্ণেল তন্ময় তালুকদার, মেজর হাবিব আবদুল্লাহ সাঈদ, মেজর রুবাইয়া মাহারুক, মেজর জাহিদা পারভীন, মেজর মুনমুন রোয়াজা, মেজর তারিন আফরোজ, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ রাকীন রাফীদ। ক্যাপ্টেন মোঃ হাসান মাহমুদ, লেফটেন্যান্ট সুমাইয়া আফরোজ, লেঃ কমান্ডার এ. বি. এম. হাসিব রহমান, সাঃ লেঃ মিদুল মেহরাব শুভ।

কোর্সটির সমাপনী অনুষ্ঠান গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিটিআরআই কনফারেন্স রুমে আয়োজন করা হয়েছিল। বিটিআরআই এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোর্স কো-অর্ডিনেটর এবং মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসমাইল হোসেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরআই’র অন্যান্য চা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে কোর্সটির সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এই কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় এককভাবে প্রথম স্থান অধিকারী করেন লেঃ কর্ণেল এইচ এম আনোয়ার আলী, পিএসসি, ৩২ এসটি ব্যাটালিয়ন, চট্টগ্রাম সেনানিবাস। যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন মেজর হাবিব আবদুল্লাহ সাঈদ, পিএসসি, ৩৮ এসটি ব্যাটারিয়ন, সিলেট সেনানিবাস এবং লেঃ কর্ণেল তন্ময় তালুকদার, পিএসসি, ৩৬ এসটি ব্যাটিলিয়ন, রংপুর সেনানিবাস।

প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষ হতে দলনেতা লে. কর্ণেল এইচ এম আনোয়ার আলী, পিএসসি, বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতি বছরই প্রায় ছয় লক্ষ কেজি চা পাতা বাহিনীর প্রয়োজনে ক্রয় করে থাকে। এই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা উক্ত কোর্সের মাধ্যমে কোয়ালিটি চা তৈরির বৈজ্ঞানিক কৌশলসহ টি টেস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনেছি ও হাতে-কলমে শিখেছি। সহজেই ভালো চা এবং খারাপ চা সনাক্ত করার উপায় আমরা রপ্ত করতে পেরেছি।’

বিটিআরআই সূত্র জানায়, এবারের এই কোর্সটি ১২তম প্রশিক্ষণ কোর্স। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণটিতে এপর্যন্ত বাংলাদেশ আর্মি ও নেভীর সার্ভিস কোরের মোট ১০৮ জন কমিশন্ড অফিসার অত্যন্ত সফলতার সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।