বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘চা আস্বাদন’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চা মুখে নিয়ে টেস্ট নিরুপণ করছেন টি টেস্টার ড. ইসমাইল/ ছবি: বার্তা২৪.কম

চা মুখে নিয়ে টেস্ট নিরুপণ করছেন টি টেস্টার ড. ইসমাইল/ ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) চা এর গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন চা বাগানে কর্মরত টি-প্লান্টরদের আধুনিক পদ্ধতিতে চা চাষের নানা ধরণের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কার চা কেমন অর্থাৎ কোনো বাগানের চা উৎকৃষ্ট কিংবা কোনো বাগানের চা আরও ভালো করা উচিত সেসব বিষয়ের ওপর বিশ্লেষণকৃত এ প্রোগ্রামটির নাম- ‘টি টেস্টিং’। শব্দটিকে বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘চা আস্বাদন’।

এই টি টেস্টিং এর মাধ্যমেই জানা যায়, কোনো চা বাগানগুলোর চায়ের আপডেট অবস্থান কি? দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন অভিজ্ঞ টি টেস্টার তার মুখে একেকটি চা বাগানের চায়ের সেম্পুল পান করে চায়ের ক্যাটাগরি মূল্যয়ান করে থাকেন। এর নামই হলো ‘চা আস্বাদন’।

বিজ্ঞাপন

গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর বিটিআরআই এর টি টেস্টিং রুমে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘টি টেস্টিং প্রোগ্রাম’। মোট ৩ দিন ৩টি ভ্যালির ৬৮টি চা বাগানগুলো এখানে অংশগ্রহণ করেছিল। টি টেস্টিং এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরআই এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসমাইল হোসেন।

প্রথম দিন ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেট চা শিল্পাঞ্চলের জুড়ী ও মনু-দলই ভ্যালির প্রায় ২০টি বাগানের চায়ের স্যাম্পল (নমুনা) যাচাই করার জন্য বিটিআরআইয়ের 'টি টেস্টিং রুমে' ক্লিভডন চা বাগান, সাগরনাল চা বাগান, কুরমা চা বাগান, চাম্পারায় চা বাগান, পাত্রখোলা চা বাগান, রত্না চা বাগান যুক্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট চা শিল্পাঞ্চলের লস্করপুর এবং লংলা ভ্যালির বৃন্দাবন চা বাগান, দেউন্ডি চা বাগান, গাজিপুর চা বাগান, নোয়াপাড়া চা বাগান, সুরমা চা বাগান, মুনিপুর চা বাগানসহ মোট ২৫টি চা বাগান অংশ নেয়।

২৮ সেপ্টেম্বর বালিশিরা ভ্যালি এবং নর্থ সিলেট ভ্যালির রাজঘাট চা বাগান, আমতলী চা বাগান, ক্লোনাল চা বাগান, নুরজাহান চা বাগান, ডিনস্টোন চা বাগান, জেরিন চা বাগান, ভাড়াউড় চা বাগান, লাক্কাতুরা চা বাগানসহ মোট ২৩টি চা বাগান বিটিআরআই এর টি টেস্টিং এর যুক্ত হয়।

বিটিআরআই এর টি টেস্টিং অনুষ্ঠান। ছবি: বার্তা২৪.কম


 

প্রতিটি বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক, সহকারি ব্যবস্থাপকগণ নিজ নিজ চা বাগানের নমুনা নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। ‘চা আস্বাদনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান ‘টি টেস্টার’ হিসেবে চায়ের মান নিরুপণ করেন অত্র ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসমাইল হোসেন। সহযোগিতা করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রিয়াদ আরিফিন।

বিটিআরআই এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, অধিকাংশ বাগানের চা-কেই ‘ফোর প্লাস’ (4+) থেকে ‘ফোর’ (4) ক্যাটাগরির চা হিসেবে মান নিরুপণ করা হয়েছে। টি টেস্টিং আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশ চায়ের গুনগতমানের অবস্থা যাচাই করা এবং সর্বপরি বাংলাদেশ চায়ের গুনগত মান নিরুপণ করা। টি টেস্টিং এমন একটা পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি কোম্পানি তার তৈরি চায়ের মার্কেট মূল্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়। টি টেস্টিং এর মাধ্যমে গুণগত মান নিরুপন হলেই বাজারে বিদ্যমান মার্কেট ট্রেন্ড অর্থাৎ সহজলভ্যতা এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে এর নির্দিষ্ট মূল্যনির্ধারণ করা সম্ভব।

টি টেস্টিং এর এক ফাঁকে ‘টি টেস্টার’ ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, চায়ের প্রাইজ (মূল্য) হলো- ব্লোম সাইন (Bloom Shown) আনতে হলে গুড লিফ (Good Leaf) কমপক্ষে ৪৫ ভাগ থাকতেই হবে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চা তৈরি জন্য কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ পারসেন্ট গুড লিফ (ভালো চাপাতা) মেনটেইন করতে হবে। তিনি সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দেন।

তিনি আরো বলেন, ফোর প্লাস (4+) ক্যাটাগরির চা পেতে হলে কমপক্ষে ৬০ ভাগ গুড লিফ (ভালমানের চা পাতা) এবং ফোর (4) ক্যাটাগরির চা পেতে হলে কমপক্ষে ৫০ ভাগ গুড লিফ এবং ফোর মাইনাস (4-) ক্যাটাগরির চা পেতে হলে কমপক্ষে ৪৫ ভাগ গুড লিফ মেইনটেন (নিয়ন্ত্রণ) করতে হবে।

ওপরে উল্লেখিত গুড লিফ পারসেন্টিজগুলো দুটি পাতা একটি কুঁড়ি, তিনটি পাতা একটি কুঁড়ির নরম অংশ কোমল ‘বাঞ্জি’ চা পাতা হতে পেতে হবে বলে অভিমত দেন চা বিজ্ঞানী ড. ইসমাইল।