উৎপাদিত ‘চা’ এর ক্যাটাগরি সমূহ
চা বাঙালির প্রিয় পানীয়। দিন দিন বেড়েই চলেছে চায়ের চাহিদা। এক সময়ে চা রফতানি করা হলেও দেশে আভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে রফতানি এখন বন্ধ। দেশের মানুষের চায়ের চাহিদা পূরণ করতেই ফুরিয়ে যায় দেশের মোট উৎপাদিত চা।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীলতা ও গুণগত মান বৃদ্ধি, চা শিল্পের উন্নয়ন ও উৎকর্ষে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরামর্শ ও সহায়তা দান এবং গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি চা শিল্পে বিস্তার করাই বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিটিআরআই) মূল লক্ষ্য।
চা এর মাঝে রয়েছে নানান সূক্ষ্ম বিষয়াবলী। এ সমস্ত বিষয়াবলীর মাঝে একটি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চা এর ক্যাটাগরি নিরূপণ। এ ক্যাটাগরি নির্ণয়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশের পরিচালিত প্রতিটি চা বাগানের সত্যিকারের চিত্র প্রকাশের সুযোগ পায়। বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের উৎপাদিত চা সমূহ এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।
বিটিআরআই এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টি টেস্টিং এর এক ফাঁকে বিটিআরআই এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং চা বিজ্ঞানী ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, চায়ের ক্যাটাগরি মূলত ৪ প্রকারের। এই ৪ প্রকারের একেকটিকে আবার ৩টি এবং ৪টি করে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেগুলো যথাক্রমে: ১) ক্যাটাগরি-ফাইভ (সর্ব উৎকৃষ্ট চা)। একে ইংরেজিতে Very Best Tea বলা হয়। ২) ক্যাটাগরি-ফোর (উৎকৃষ্ট চা)। একে ইংরেজিতে Excellent Tea বলা হয়। এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত চাগুলো হলো: ফোর প্লাস (4+), ফোর (4), ফোর মাইনাস (4-)।
পরবর্তী ক্যাটাগরি সম্পর্কে তিনি বলেন, ৩) ক্যাটাগরি-থ্রি (উত্তম চা)। একে ইংরেজিতে Above Average Tea বলা হয়ে থাকে। এ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত চাগুলো হলো: থ্রি ডাবল প্লাস (3++), থ্রি প্লাস (3+), থ্রি (3), থ্রি মাইনাস (3-)। ৪) ক্যাটাগরি-টু (মধ্যম চা)। একে ইংরেজি ভাষায় Average Tea বলা হয়। এ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত চাগুলো হলো: টু প্লাস (2+), টু (2), টু মাইনাস (2-)। ৫) ক্যাটাগরি-ওয়ান (গ্রহণযোগ নয়)। একে ইংরেজি শব্দে Below Average Tea বলা হয়ে থাকে।
চা এর দানার ভিত্তিতে চা এর গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। চা প্রক্রিয়াজাতকরণের পর প্রায় ৩ ধরনের দানা তৈরি হয়। এই ৩ ধরনের দানাকে আবার কয়েকটি নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
এ গ্রেড প্রসঙ্গে বিটিআরআই এর চা বিজ্ঞানী ড. ইসমাইল বলেন, ‘ব্রোকেনস দানা’ অর্থাৎ BOP এবং GBOP দানাগুলো ব্লাকিস, ইভেন, রাউন্ড, ইউথ গুড ব্লোম করতে হবে। ‘ফেনিংস দানা’ গুলোর মধ্যে OF, FOF, PF জাতের অপেন ফেকি (Flaky) না হয়ে বরং ব্ল্যাকিশ রাউন্ড (Blackish Round), গ্রেইনি (Grainy) হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। ‘ডাস্ট গ্রেড’ গুলোর মধ্যে PD, RD এবং ডাস্ট গ্রেডগুলো ব্ল্যাকিস এপিয়ারেন্সসহ ওয়েলমেইড এবং ক্লিন হতে হবে। চা একটি ফুডগ্রেড হওয়ায় চুরামনি ডাস্ট বা CD তে মাঝে মাঝে যে বালির উপস্থিতি পাওয়া যায় তাও পরিহার করতে হবে।
চা সম্পর্কিত কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বালকি (Bulky) দুটি পাতা একটি কুড়ি ও ফাইন (Fine) তিনটি পাতা একটি কুঁড়ি চয়ন করে সেরামানের ও সর্বোচ্চ ফলন অর্থাৎ প্রোডাকটিভিটি অর্জন করা সম্ভব। এছাড়াও তিনি ব্লোম (Bloom) অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রোম (Prome) সেন্টিং এর বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন। কেয়ারলেস হেন্ডলিং (Careless Handling) এবং কেয়ারলেস ট্রান্সপোটেশন (Careless Transportation) এর কারণে লিফ টেম্পারেচার ৩৫ ডিগ্রির ওপরে গেলে গ্রিনলিভগুলো বার্ড (জ্বলে যাওয়া) কারণ তৈরি হয়। তখন চায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত রেডিস (Reddish) বা মরচা রঙের উপস্থিতি পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেন।
সিটিসি চা মানেই কালো চা। তৈরি চায়ের এপিয়ারেন্স ব্ল্যাক, গ্রেইনি (Grainy), ওয়েল কার্লড (Well Curled), ওয়েল টুইসড (Well Twised) সহ লিকারের সজীবতা, গাঢ়ত্ব, শক্তি, উজ্জ্বলতা আনতে পারলে সেরা প্রাইজ পাওয়া যাবে বলে অভিমত পোষণ করেন চা বিজ্ঞানী ড. ইসমাইল হোসেন।