হেমন্তের কুয়াশা জড়িয়ে রেখেছে চা গাছেদের
চায়ের শহরে নেমেছে শীতের আমেজ। সকালের দিকে হিম অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে প্রকৃতি। দূরের দিকে তাকালে ঘন কুয়াশায় দীর্ঘ আবরণ। দৃষ্টিরেখার সীমাবদ্ধতা এ আবরণকে ভেদ করতে পারে না। চা গাছের সবুজ পাতাজুড়ে হিমের পরশ। গালিচা বিছানো সবুজ সমারোহ ঘন কুয়াশার আবরণে গোলাটে হয়ে শুভ্রতার রঙ ধারণ করছে।
শীত এসে গেছে। একটু একটু করে চা গাছের পাতায় পাতায় জমেছে শিশির। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে চায়ের বাগানগুলো। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা সেই সাথে মৃদু শীতের অনুভূতি।
সারা রাতের হিম অনুভূতিতে স্নাত হয়েছে প্রকৃতি। অগ্রহায়ণের এ সকাল পূর্ণ হয়ে উঠে কুয়াশা জড়ানো সৌন্দর্যে। এ কুয়াশার ফলে আকাশ দেখা যায়নি। কুয়াশার ঘন আবরণ ভেদ করে দেরি হয়ে যায় সূর্যের জ্যোতি ছড়াতে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে কনকনে ঠাণ্ডা গ্রাস করে ফেলবে চা গাছেদের। হিমাঙ্কের পারদ নিম্নমুখী হওয়া কেবল শুরু করেছে।
চায়ের প্রকৃতিকে কুয়াশা তার নিজস্ব চাদরে ঢেকে দিয়েছে। চায়ের সবুজ পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশির কণাগুলো শীতের এ শহরে এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। সিক্ততায় ভরে উঠা পাতাগুলো একে অপরের সাথে দারুণভাবে সংযুক্ত। সকালে কাজের ব্যস্ততায় শ্রমিকরা বেরিয়ে পড়েছেন কিন্তু কুয়াশা আর মৃদু শীত তাদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী অমর তালুকদার বলেন, আজ মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকালে সিলেটের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন রোববার সিলেটের তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুয়াশা থাকলে তাপমাত্রা কমে না। কুয়াশা না থাকলে আরো বেশি তাপমাত্রা কমে যায়। মাটিতে যে তাপটা থাকে সেই তাপটা আকাশে উঠে যেতে পারে না, আটকা পড়ে ফলে অপেক্ষাকৃত গরম লাগে। কিন্তু যখন ফাঁকা থাকে তখন তাপটা উপরে চলে যায়। আর উপরের ঠান্ডা তাপটা নিচে আসে, তখন আরো বেশি ঠান্ডা লাগে বলে জানান আবহাওয়াবিদ।
এই কুয়াশায় চা পাতাদের কী অবস্থা এবং এর কিরূপ প্রভাব পড়ে চা শিল্পে– এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশিয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র টি-প্লান্টার জিএম শিবলি বলেন, শীত এবং কুয়াশায় চা গাছগুলো কুঁড়ি ছাড়তে বিলম্ব করে। কুঁড়ি না বের হলে তো আমরা নতুন পাতা পাবো না। তাই চা গাছের কুঁড়ি বের হওয়া জরুরি। কিন্তু শীতকালে বাংলাদেশের সব চা বাগানগুলোতেই এই দিকটির ঘাটতি থাকে। ফলে আমরা শীত মৌসুমে ২/৩ মাস আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখি। আমরা তখন ফ্যাক্টরির যন্ত্রাংশগুলোর সংস্কার ও মেরামত করে থাকি এই সময়টাতে।
নতুন বছরের এপ্রিলে যখন আবার বৃষ্টি নামে তখন চা গাছগুলো কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করে। প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত এবং পরিপূর্ণ সূর্যালোকের মাধ্যমেই চা গাছগুলো কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করে বলে জানান সিনিয়র টি প্লান্টার জিএম শিবলি।