‘চা’ এর ইতিহাসনির্ভর যে গ্রন্থ
বাংলাদেশের চায়ের ইতিহাস দেড়শত বছরের বেশি। এই চা-শিল্পের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন শতসহস্র অধিকার বঞ্চিত মানুষ। নীতিমালায় সেই সব অভাগা চা শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা থাকলেও তারা আজো জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠী।
এসব পিছিয়ে পড়া চা জনগোষ্ঠীর নানা অবদানের কথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সাথে চমৎকারভাবে জুড়ে দিয়েছেন রাজু। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯২ সালে কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা বাগানে জন্মগ্রহণ করেন এই চা শ্রমিক সন্তান। চা শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট বঞ্চনা-হতাশা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ হয়েছে তার।
সেইসব জমাটবদ্ধ কথামালাই প্রকাশ ঘটেছে রাজু দেশোয়ারা’র রচিত তথ্যবহুল ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের চা শিল্প’ গ্রন্থটিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ গ্রন্থমালায় স্থান পেয়েছে এ বইটি।
২০২০ সালের আগস্টের প্রথমদিকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজু দেশোয়ারার লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের চা শিল্প’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকু। সে সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম সরকার জীবন প্রমুখ।
এই বইয়ের মাধ্যমে জাতির পিতার কর্মময় জীবনের অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে উল্লেখ করে লেখকের ভূয়সী প্রশংসা করেন উপস্থিত অতিথিরা।
বইটির মূল প্রবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী নীলুফার আহমেদ বলেছেন, ‘উনিশ শতকের শুরুতে বাংলাদেশে চা শিল্পের বিকাশ ঘটে। এ শতকের শেষভাবে একক জেলা হিসেবে সিলেট সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে চা উৎপাদনে শীর্ষ এবং বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরে চা ছিল দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। শ্রমঘন এ শিল্পে বর্তমানে প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক (চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে) কাজ করছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৭ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের চা শিল্প’ বইটি ১৫৯ পৃষ্ঠার। মূল্য ৪শ’ টাকা। এটি প্রকাশিত হয়েছে শূন্য প্রকাশনী থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসে। ২১টি বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সাবলীলভাষায় ধাপে ধাপে যুক্ত করা হয়েছে। চায়ের বিশ্ব ইতিহাস, বাংলাদেশে সূচনা, চা শিল্পকে সুদূরপ্রসারী করতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা, চা শ্রমিকদের নানান সমস্যা-বঞ্চনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা, চা শ্রমিকদের সংস্কৃতি ও জীবনবৈচিত্র্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানকারী চা শ্রমিকদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা প্রভৃতি বিষয়গুলো বইকে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
বইটির লেখক রাজু দেশোয়ারা বাংলানিউজকে বলেন, উপমহাদেশের চা শিল্পের ইতিহাস, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চা শ্রমিকদের আত্মত্যাগের অবদান, চা-শ্রমিকদের জীবনমান আলোচনা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চা-শিল্প নিয়ে যত অবদান সবকিছুই এখানে প্রকাশের চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি- এই বইটি তরুণ প্রজন্মের চা-শিল্প ও তার শিল্পীদের (শ্রমিক) নিয়ে জানার আগ্রহ মেটাতে সক্ষম হবে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশে চা শিল্প’ বইয়ের রয়্যালটি বাবদ প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ চা শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়া খাতে ব্যয় হবে বলে জানান বইটির লেখক রাজু দেশোয়ারা।
বইটি পেতে রকমারি.কম অথবা প্রকাশক (০১৭১৯-৮৪৩১০৬, ০১৮২৪-৬০০৫৫৯) এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।