বিপণন বিবেচনায় ‘দেশসেরা’ চা বাগানসমূহ
গরম চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠে। আবার মিলিয়ে যায়। এভাবে ধোঁয়া মিলিয়ে যেতে যেতে পড়ে থাকে চা আর কাপ। বাড়ির এক টুকরো নির্জন কোণে চা এর সাথে একাকী সময় ব্যয় বরাবরই দারুণ এক অনুভূতি।
চাপ্রেমী বাঙালি তার সতেজতা ফিরে পায় এমন চায়ের প্রতিটি চুমুকে। তরতাজা শরীর-মন অভিযাত্রী হয় আপন সৃজনশীল কোনো কাজে। আর সেটা মস্তিস্ক নির্ভরই হোক কিংবা কায়িকশ্রম নির্ভর। চায়ের চুমুক প্রতিবারই জানান দেয় সে অতুলনীয়।
পাহাড়ি এবং টিলাময় ভূমিতে চা বাগান তৈরির উদ্দেশ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধিতে চা চারা রোপণ করলেই কয়েক বছরের মধ্যে চা উৎপাদন সম্ভব। বিভিন্ন জাতের চায়ের সংমিশ্রণ, ক্লোনিংয়ের সমন্বয়ে ব্লেন্ডিং করা না গেলে চায়ের গুণগত মান বাড়ানো যায় না। দেশে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয় এমন বাগানের সংখ্যা কম নয়। তবে ভালো মানের চা উৎপাদনের জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় বাগানের তালিকায় রয়েছে মুষ্টিমেয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সূত্র জানায়, মূলত বছর বছর নতুন জাতের চা গাছ সৃজন, পর্যাপ্ত অপ্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত শেডট্রি বা ছায়াবৃক্ষ রোপণ, সময়মতো কুঁড়ি উত্তোলন ও দক্ষ শ্রমিকের সমন্বয়ে একটি বাগান ভালোমানের চা উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করে। একটি রুগ্ন চা বাগানে দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিক বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন ও মান বাড়ানো যায়। শুধু প্রাকৃতিক সেচ ও পরিবেশের ওপর নির্ভর না করে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেও চায়ের মান বাড়ানো সম্ভব।
তবে দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বাগানই বাংলাদেশ চা বোর্ডের হিসাবে রুগ্ন রয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেশ কয়েকটি চা উৎপাদনকারী শিল্প গ্রুপ চা খাতে তাদের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
দেশে সবচেয়ে ভালো মানের চা উৎপাদনের শীর্ষস্থানটি বরাবরের মতো ধরে রেখেছে খৈয়াছড়া ডালু চা বাগান। ব্র্যাকের পরিচালিত এ বাগানটি বেশ কিছুদিন ধরে ভালো মানের চা উৎপাদনের ‘প্রথম স্থান’ ধরে রেখেছে। শীর্ষ ২০টি বাগানের মধ্যে ব্র্যাকের অন্য বাগানগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী ষষ্ঠ ও কোদালা রয়েছে ১৪তম অবস্থানে। দেশের প্রথম সারির চা উৎপাদক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি গ্রুপের চারটি বাগানই শীর্ষ ২০ বাগানের মধ্যে অবস্থান করছে। এরমধ্যে ইস্পাহানির জেরিন, নেপচুন, মির্জাপুর ও গাজীপুর চা বাগান যথাক্রমে অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশতম অবস্থানে রয়েছে।
বিটিআরআই সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের হিসেব মতে খৈয়াছড়া বাগান সর্বোচ্চ ২৫৩ দশমিক ৪০ টাকা কেজি দরে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৯০ কেজি চা বিক্রি করেছে নিলামে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মধুপুর চা বাগান ২৪৬ দশমিক শূন্য ৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩০ কেজি চা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা দারাগাঁও চা বাগান ২৩৮ দশমিক ৯২ টাকা কেজি দরে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪২৯ কেজি চা বিক্রি করেছে। এছাড়া চতুর্থ আমরাইল ২৩১ দশমিক ৬৮ টাকা কেজি দরে ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ কেজি, পঞ্চম এইচআরসি গ্রুপের ক্লিভডন বাগান ২৩০ দশমিক ৯৩ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৭ কেজি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা কর্ণফুলি চা বাগান ২২৪ টাকা কেজি দরে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯০ কেজি, সপ্তম অবস্থানে থাকা বালিচেরা বাগান ২১৯ দশমিক ৯৪ টাকা কেজি দরে ১৭ লাখ ৩০ হাজার ৩৭ কেজি, অষ্টম অবস্থানে থাকা ইস্পাহানির জেরিন চা বাগান ২১০ দশমিক ৭৬ টাকা কেজি দরে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ১০৫ কেজি, নবম অবস্থানে থাকা একই প্রতিষ্ঠানের নেপচুন চা বাগান ২১০ দশমিক ৬০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪৩ কেজি এবং দশম অবস্থানে থাকা ইস্পাহানির মির্জাপুর চা বাগান ২১০ দশমিক ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ২৭২ কেজি চা নিলামে বিক্রি করেছে।
শীর্ষ ২০টি বাগানের মধ্যে একাদশতম অবস্থানে রয়েছে ইস্পাহানির গাজীপুর চা বাগান (প্রতি কেজি গড়ে ২১০.০২ টাকা), দ্বাদশতম ডিনস্টোন (২০৯.৭০ টাকা), ত্রয়োদশতম রাঙ্গাপানি (২০৯.৬৪), চতুর্দশতম ব্র্যাকের কোদালা চা বাগান (২০৯.৯১), পঞ্চদশতম বারমাসিয়া (২০৬.৬২), ষষ্ঠদশতম রশিদপুর (২০৬.৩৪), সপ্তদশতম রাজঘাট (২০৬.৩৪), অষ্টাদশতম লস্করপুর (২০৫.২৯), ঊনবিংশতম বারাউড়া (২০৪.২২) ও বিংশতম অবস্থানে থাকা ডিউন্ডি চা বাগান ২০৩ দশমিক ৪৭ টাকা কেজি দরে চা বিক্রি করেছে বলে বিটিআরআই সূত্র জানায়।