মসলার ঘাটতি পূরণে নতুন জাত উদ্ভাবন



তরিকুল ইসলাম সুমন,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের মানুষের খাবারের চাহিদা পূরণে যেভাবে জোড় দেয়া হচ্ছে তেমন এসব খাদ্য মুখরোচক করার জন্য মসলার উৎপাদন বৃদ্ধিতের জোড় দিচ্ছে সরকার। দেশের ৫৮.৫০ লক্ষ টন মসলার চাহিদার বিপরীতে ৬.৩০ লাখ হেক্টর জমি থেকে ৫১.৯৬ লাখ টন মসলা উৎপাদন হলেও ৬.৬৬ টন ঘাটতি  থাকে। আর এ ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হয় প্রায় আট হাজার কোটি টাকার মসলা।


সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, দেশের প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদার ৩৫.৫ লাখ টন এর বিপরীতে উৎপাদন হয়৩০-৩২ লাখ টন, ৩-৪ লাখ টন ঘাটতি থাকে। ৮.৬৩ লাখ টন মরিচের চাহিদা বিপরীতে উৎপাদন হয় ৬.৭৬ লাখ টন হলেও ঘাটতি প্রায় ১ লাখ ৮৭ লাখ টন, রসুনের ৭.৭২ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ৬.৫৩ লাখ টন। ঘাটতি থাকে ১. ১৯ লাখ টন। ৪.৮১ লাখ টন আদার চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ২.৮৮ লাখ টন, ঘাটতি থাকে প্রায় ২ লাখ টন, হলুদের চাহিদা ২.৫১ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ১.৮৩ লাখ টন । ঘাটতি থাকে ৬৮ হাজার টন। ধনিয়ার উৎপাদন ৫৬ হাজার টনের বিপরীতে চাহিদা প্রায় ৭০ হাজার টন। এক্ষত্রে ঘাটতি থাকে ১৪-১৫ হাজার টন। কালজিরার ২০ হাজার টনের রিপরীতে উৎপাদন হয় ১৪ হজার টন, ঘাটতি থাকে প্রায় ৬ হাজার টন।

মসলার আমদনি কমাতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) বাস্তবায়ন করছে ‘বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় এখন অক্টোবর ২০১৭- জুন ২০২১ পর্যন্ত ৪৭ টি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ১৫৬ টি আধুনিক চাষ প্রযুক্তি উদ্ধাবন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায় এগুলো বিস্তারের মাধ্যমে মসলার ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিএআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার।


তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সীমিত কৃষি জমি ও জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলা করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি আমাদের মসলাজাতীয় সফল ও উৎপাদন করা প্রয়োজন। খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এটিও আমাদের বাধা হিসেবে কাজ করছে।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, দেশের ৬৪ টি জেলার ১৯৪ টি উপজেলায় প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মানসম্মত মসলার বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি করে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব।

প্রকল্প শুরু থেকে পর্যন্ত ৯টি মসলা ফসলের মোট ১১টি নতুন জাত এবং ৪৫টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে মসলা ফসলের চাষাবাদ, ফলন ও মসলার গুনগতমান বাড়ছে এবং ক্ষতির পরিমান কমানো যাবে। নতুন উদ্ভাবিত ও প্রচলিত জাতের সম্প্রসারনের জন্য এপর্যন্ত প্রায় ১১২.৫৮ টন বীজ/কন্দ ও ১২৮.০৬ লক্ষ চারা-কলম উৎপাদন ও বিতরন করা হয়েছে। হাতে কলমে চাষীদের প্রশিক্ষণের জন্য ৩৭০টি প্রদর্শনী, ১৯৬টি মাঠ দিবস আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর কৃষকের মাঠে বারি পেঁয়াজ-৫ এর ১০০টির অধিক প্রদর্শণীর প্রদানের ফলে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ সম্প্রসারন ও জনপ্রিয় হবে। এ ছাড়াও শীতকালে আরও দুইশতটি প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত ১৫ লক্ষ বারি পেঁয়াজ-৪ এর চারা উৎপাদন করা হয়েছে যা বগুড়া অঞ্চলের ১০০ জন কৃষককে ১৫০০০টি করে ডিসেম্বর, ২০২১ মাসের শেষ সপ্তাহে  বিতরণ করা হবে।


১১টি জাত মধ্যে (বারি চিভ-১, বারি একাঙ্গী-১, বারি পেঁয়াজ-৬, বারি মেথি-৩, বারি মরিচ-৪, বারি পুদিনা-১ ও ২, বারি অর্নামেন্টাল মরিচ-১ ও২), বারি পান-৩, বারি রাঁধুনী-১ ও বারি জিরা-১ (প্রস্তাবিত)।

দুটি প্রক্রিয়াধীন (১টি চুইঝাল ও ১টি রসুন) এবং আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষনের পর রবি মৌসুমে বাকী দুটি জাত নিবন্ধণ করা হবে।এছাড়াও রয়েছে, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া, কালোজিরা, আলু বোখারাসহ বিভিন্ন মসলার জাত উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, মসলা জাতীয় ফসলের কৌলিসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, উচ্চফলনশীল ও উন্নত মানসম্পন্ন মসলা ফসলের ওপি ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন, সমস্যা সংকুল এলাকা ও প্রতিকুল পরিবেশে খাপ খাওয়ানো উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত মসলা ফসলের উন্নয়ন ও বহুমুখীকরণ, গুণগত মানসম্পন্ন মসলা জাতীয় পণ্যের উৎপাদন, বানিজ্যিকীকরণ প্রযুক্তি, ব্যাপকহারে বীজ উৎপাদন ব্যবস্থা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বা সুলভ মূল্যে বিতরণ, গবেষণা লব্ধ ফলাফল বিস্তারের সুবিধা- কৃষি সম্প্রসারণ ডিএই-এনজিওসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ।

মসলা গবেষণা কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা চাহিদা পূরণে বিএআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন মসলার উন্নত জাত এবং টেকসই প্রযুক্তি বিস্তারের বিকল্প নেই।

 

 

 

 

 

 

 

 

   

নারীর অধিকার আদায়ে ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা মোহর সঞ্চয়ী হিসাব



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মোহর ইসলামে নারীর প্রতি সম্মান আর অধিকার প্রদর্শনের একটি নিদর্শন। বিবাহের সময় কনের দাবিকৃত অর্থ মোহর, আর বরের পক্ষ থেকে কনেকে এই মোহর আদায় করা অত্যবশকীয় কর্তব্য।

পবিত্র কোরানের সুরা নিসায় আল্লাহ বলেন “আর তোমরা আনন্দের সাথে স্ত্রীদের মোহর আদায় করে দাও। তবে যদি তারা স্বেচ্ছায় মাফ করে দেয়, তাহলে তা সানন্দে ভোগ করতে পার”।

মোহর যে স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার এবং স্বামীকে যে অবশ্যই পালন করতে হবে এমন চিন্তা বেশিরভাগ মানুষের থাকে না। ফলে সমাজে মোহর আদায়ের সংস্কৃতি কিছুটা কম। বিয়েতে মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে এই মোহর আদায় কারো কারো পক্ষে কঠিন হয়ে উঠে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি মোহর আদায়ের সংস্কৃতি চালু রাখতে ও আরো সহজ করতে মুদারাবা মোহর সেভিংস একাউন্ট চালু করেছে।

সমাজের সর্বস্তরের মুসলিম জনসাধারণ বিশেষত পেশাজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, প্রবাসী তাদের সামর্থ অনুযায়ী মাসিক কিস্তিতে টাকা জমা দিয়ে এই প্রকল্পের আওতায় একাউন্ট খুলতে পারবেন। মাসিক কিস্তি ৫০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকার কিস্তিতে ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদী এ হিসাব পরিচালনাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করবে স্বামী বা বিবাহেচ্ছুক পুরুষ। কাবিননামায় উল্লেখিত মোট টাকার পরিমাণ, আদায়কৃত টাকা এবং আদায়যোগ্য টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে আদায়যোগ্য টাকার উপর মাসিক হার নির্ধারণ করা হয়। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকে মোহর একাউন্ট খুলেছেন।

বাংলাদেশের যে কোন বৈধ নাগরিক তার জাতীয় পরিচয় পত্র/পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি, নিজের ২ কপি ছবি, স্ত্রীর ২ কপি ছবি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও নমিনির এক কপি ছবি নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের যে কোন শাখা, উপশাখা কিংবা এজেন্টে মোহর একাউন্ট খুলতে পারবে, এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল অ্যাপস সেলফিনের মাধ্যমেও এই একাউন্ট খোলা যায়। অন্য শাখা, উপ-শাখা কিংবা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কিস্তির টাকা জমা দেওয়া যায়। মোবাইল ভিক্তিক ব্যাংকিং আ্যাপস সেলফিনের মাধ্যমে মাসের যে কোন দিন যে কোন স্থান থেকে খুব সহজে মাসিক কিস্তি দেওয়া যায় অথবা শাখায় স্পেশাল ইনস্ট্রাকশন দিয়ে রাখলে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অটোমেটিক সংশ্লিষ্ট সেভিংস হিসাব থেকে মোহর একাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এমক্যাশের মাধ্যমেও মাসিক কিস্তি পরিশোধ করা যায়। গ্রাহক চাইলে কিস্তির টাকা অগ্রিম পরিশোধ করতে পারেন। উক্ত একাউন্টের মূল টাকা ও প্রদত্ত মুনাফা সবই স্ত্রীর প্রাপ্য। হিসাব খোলার সময় কিস্তির হার ও মেয়াদ নির্ধারণ করতে হবে। পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করা যাবে না।

মুদারাবা মোহর হিসাবে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে একজন স্বামী তার স্ত্রীর মোহরের ঋণ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন। মোহর পরিশোধের মাধ্যমে নারীর জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে। এবং সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বোপরি সমাজে নারীর অধিকার আদায়ের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন হয়। মোহর আদায়ের সংস্কৃতি চালু করতে ইসলামী ব্যাংকের এ উদ্যোগ কৃতিত্বের দাবিদার।

;

লিটারে ৪ টাকা বেড়েছে বোতলজাত সয়াবিনে, কমেছে খোলা তেলে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে এখন থেকে এক লিটারের দাম পড়বে ১৬৭ টাকা। একই সঙ্গে পাঁচ লিটারের তেলের বোতলের দাম ১৮ টাকা বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা করা হয়েছে। আর খোলা তেল ২ টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ তথ্য জানান।

আগামীকাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে এ দাম কার্যকর হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সয়াবিন তেলের যৌক্তিক মূল্য ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

এর আগে গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। লিটার প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৩ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ভোজ্য তেলের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন পর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে জারি করা এসআরওদ্বয়ের মেয়াদ ১৫ এপ্রিলে শেষ হচ্ছে। তাই আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে বাজারে ভোজ্য তেল (পরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত সয়াবিন তেল) সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি পূর্ববর্তী মূল্যে পণ্য সরবরাহ হবে।’

চিঠিতে ১৬ এপ্রিল থেকে বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৩ টাকা, ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা এবং খোলা ১ লিটার পাম তেলের দাম ১৩২ টাকা প্রস্তাব করা হয়।

;

ভোজ্য তেলের নতুন দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ভোজ্য তেলের নতুন দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজ

ভোজ্য তেলের নতুন দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজ

  • Font increase
  • Font Decrease

ভোজ্য তেলের নতুন দাম নিয়ে ঘোষণা আসতে পারে আজ দুপুরের মধ্যে। এর আগে মিল মালিকরা দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরেই একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের পরই এ নিয়ে আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত।

ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করে তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে ঘোষণা আসবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে মিল মালিক ও ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে আজকের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ট্যারিফ কমিশন নাকচ করলেও ভোজ্য তেলের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন তার নিজস্ব পর্যালোচনা অব্যাহত রেখেছে। ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।

 

;

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. বিরূপাক্ষ পাল

‘অর্থের প্রচলনগতি বাড়লে ১ টাকায় ১০ টাকার কাজ হবে’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'বিকাশ' বা 'নগদের' মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব সাধন করেছে উল্লেখ করে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেছেন, উচ্চ মুনাফার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানগুলোর যে মনোপলি, তা ভাঙতে হবে। এখানে আরও প্রতিযোগিতা আসা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কোর্টল্যান্ডে অবস্থিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতির অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. পাল আরও মনে করেন, রেমিট্যান্স খাতকে জনস্বার্থের সঙ্গতিপূর্ণ করে যে অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেমকেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেভাবে উন্নীত করা উচিত। তাতে দেশের অর্থের প্রচলনগতি বাড়বে। তখন ১ টাকায় ১০ টাকার কাজ হবে।

সম্প্রতি, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সমসাময়িক নানা ইস্যুতে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. বিরূপাক্ষ পাল। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে থাকছে আর্থিক সেবাখাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্ভাবনা, ডিজিটাল ফািন্যান্সিং, রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে ড. পালের মূল্যায়ন। কথা বলেছেন বার্তা২৪.কমের পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: আর্থিক সেবা সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল ফািন্যান্সিং প্রযুক্তিগুলো নিয়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্য থাকলেও শেষপর্যন্ত সেবা বহুমুখীকরণে প্রযুক্তিই তো ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আপনি কি মনে করেন...

ড. বিরূপাক্ষ পাল: সেটা তো অবশ্যই। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন মধ্যাহ্নে একজন ভদ্রলোক আসতেন। তিনি মানি অর্ডার নিয়ে আসতেন। তিনশ টাকার মানি অর্ডার থাকলে প্রথমে ২০০ টাকা দিতেন, বাকি ১০০ টাকাটা অনেক ভেঙে ভেঙে দিতেন; যাতে তাকে কিছু বকশিস দেওয়া হয়। চারদিকে খবর হয়ে যেতো তার টাকা আসছে।

তখন এত ডিজিটাল প্রযুক্তি ছিল না। এখন 'বিকাশ' বা 'নগদ' বলি এগুলো বিপ্লব সাধন করেছে। এ নিয়ে দ্য ইকনোমিস্ট পত্রিকায় আমার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। এখন একজন রিকশাচালক তাঁর স্বজনদের কাছে টাকা পাঠিয়ে ফোন করে বলে দেন। যদিও রেট (পাঠানোর ব্যয়) এখনও অনেক বেশি। আসলে উচিত হবে, রেটটাকে যেকোনো ভাবে শূন্যতে নিয়ে আসা। অন্য কোনোভাবে তাদের ফ্যাসিলিটি দেওয়া উচিত।

'বিকাশ' এই প্ল্যাটফর্মটা ব্যবহার করতে দিচ্ছে। যারা এই প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন করছে; তাদের কাছ থেকে একটা পয়সা নিচ্ছে। আরও কিছু পেমেন্ট সরকার দেখতে পারে। যদি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১০০০ টাকায় ২০ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়, এটা তার জন্য কষ্টের ব্যাপার। সে ২০ টাকা দিয়ে আরেকটা জিনিস কিনতে পারে। এটি প্রথম অবস্থায় বিকাশের মনোপলির কবলে পড়ে। যখন আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিলাম, তখন 'বিকাশ' ৮৫ ভাগ করতো (মোবাইল ফিনান্সিং), তারপর অন্যান্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আসে।

বাংলাদেশে যা হয়, একবার যে মনোপলি তৈরি করতে পারে, সে মনোপলি ধরে রাখতে পারে দীর্ঘদিন। বিদেশে উল্টো, যখন কেউ মনোপলি তৈরি করবে, তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কেউ হাইকোর্টের কাছে গেলেই মনোপলি ভেঙে দেবে। দ্বিতীয়ত: দুই কোম্পানি যদি এক হতে চায়, তখন মনোপলি সৃষ্টি করবে কি না তা আদালত খতিয়ে দেখবে। বিদেশে এন্টি-কম্পিটিশন কমিশন আছে, আমাদের যেটা কম্পিটিশন কমিশন। অস্ট্রেলিয়াতে এর নাম 'এন্টি-কম্পিটিশন কমিশন' (এ সি সি)। মানে এন্টি-কম্পিটিশন কেউ কিছু করলে তারা অ্যাকশন নেবে। যেভাবেই ডাকি না কেন, তারা খুবই অ্যাক্টিভ। আমাদের যে কমিশন আছে, তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। এটা অনেকটা জীবনানন্দের শিশিরের শব্দের মতো। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে বানানো হয়। তাদের পুনর্বাসনের একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়। রিটায়ার্ড আমলারা বাংলাদেশ ব্যাংকেও থাকবে, কম্পিটিশন কমিশনে থাকবে; ব্যাংকিং ডিভশনে থাকবে পরিচালকের বোর্ডে থাকবে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবে। এজন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানের ইনোভেশন ইনডেস্কে খুব দুর্বল। যাঁরা প্রতিষ্ঠান চালান, তারাও র‌্যাংকিংয়ে দুর্বল। আমলাতন্ত্র-ব্যবসায়ীতন্ত্র জেঁকে বসেছে। সবদিকে তাদের উপস্থিতি। পার্লামেন্টই তাদের দখলে থাকে। তবে এখন কম্পিটিশন এসেছে, আরও বেশি আসা উচিত। এখানে অর্থের ব্যাপার থাকা উচিত নয়।

বার্তা২৪.কম: রেমিটেন্স নিয়ে যে সিস্টেম ডেভেলপ করেছে, অভ্যন্তরীন মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ে সেটা কেন করা গেল না?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের অতিরিক্ত কিছু দিতে হয় না। তারা কি সার্ভাইব করছে না! অবশ্যই সার্বাইভ করবে। মেজর এজেন্সি সাপোর্ট দিতে হবে। মানুষ যাতে সহজে অর্থটা পায়, অর্থ প্রিন্ট করলে যেমন অর্থনীতিতে অর্থ সৃষ্টি হয়, তেমনি এর প্রচলনগতি যত বাড়ে অর্থাৎ ভেল্যুসিটি যত বাড়ে, অর্থনীতি তত শক্তিশালী হয়। কয়েকশ বছর আগে ‘কোয়ান্টিটি থিওরিস অব মানিস'-এ একথা বলা আছে। শুধু অর্থনীতিবিদদের ক্ষেত্রেই নয়, জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। ভেল্যুসিটি যদি বাড়ানো যায়, তাহলে ১ টাকায় ১০ টাকার কাজ করা যাবে। অর্থনীতিকে অর্থায়ন অর্থাৎ মনিটাইজেশন ইনডেস্ক মনে হয় এখন ৫৫ বা সর্বোচ্চ ৬০ হতে পারে। মনিটাইজেশন এখনও দুর্বল অবস্থায় আছে। অর্থাৎ গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলো মনিটাইজেশন বাড়াতে পারে, অর্থের প্রচলনগতি বাড়াতে পারে, মানুষের প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে মেটাতে পারে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করে বলবো, আমি এখান থেকে অনুষ্ঠান করি অথচ বাংলাদেশে আমার ভাইয়ের যে অ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে অনুষ্ঠান শেষে সেকেন্ডে টাকা পৌছে যায়। একজন রিকশাচালক সারাদিন রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যায় স্ত্রীর কাছে টাকা পৌছে দেন, যেটাকে বলে 'কনজ্যুমার সারপ্লাস'। কনজ্যুমারের লক্ষ্য কী, ম্যাক্সিমাম সেটিসফেকশন। তারমানে ওভারঅল সেটিসফেকশন যখন বাড়তে থাকে, তখন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বাড়ে। অন্তর্ভুক্তি বাড়ে। সমাজে নিশ্চিন্তে থাকা যায়। এমন হয়েছে, পরিবারে কেউ অসুস্থ, সময়মতো টাকা পৌঁছেনি বলে স্বজনটি মারা গেছেন। কিন্তু এই ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে কেউ নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। এর মমতাগত দিক আছে। মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে। মাঙ্গলিক দিক আছে এবং অর্থনৈতিক দিক আছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আরও প্রমোট করা উচিত।

বার্তা২৪.কম: সামষ্টিক অর্থনীতির যে লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবো, সেই লক্ষ্য পূরণে ডিজিটাল প্রযুক্তি কতখানি অপরিহার্য হবে?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: প্রযুক্তিগত দিকে তো আমাদের অবশ্যই উন্নত হতে হবে। গ্লোবাল টেকনোলজি ইনডেস্কে আমরা কতখানি পিছিয়ে আছি, তা দেখতে হবে। এখানে পিছিয়ে থাকলে তো আমরা উন্নত হবো না। মাথাপিছু আয় বাড়লেই একটা দেশ উন্নত হয় না। ধরুন, ইয়েমেনে আজ তেল পাওয়া গেল। তারা তেল বেচে মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে ফেললো। তাই বলে তো তারা উন্নত দেশ হবে না। সোমালিয়াতে হঠাৎ করে স্বর্ণ পাওয়া গেল। এমনিতেও ওদের খনিজসম্পদ আছে অনেক। স্বর্ণ বিক্রি করে তাদের জিডিপি হঠাৎ বেড়ে গেল আর জিডিপিকে সেদেশের মাথাপিছু আয় দিয়ে ভাগ করলেই তো সে দেশ উন্নত নয়।

কারণ, সোমালিয়ার জনসংখ্যার বড় অংশ জলদস্যু। সেখানে সভ্যতা নেই। অন্যায়, অবিচার, হত্যা-এগুলো এদের পরিচয়ের সঙ্গে মিশে আছে। উন্নত হতে হলে আরও কিছু ইন্ডিকেটর দরকার। ইউরোপে শিক্ষা আছে। সেরকম রেঁনেসা দরকার হয়। চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে একটা বিপ্লব ও বিকাশ দরকার হয়। উন্নত জীবনধারা, পারস্পারিক মমতা, সমীহ, ‘অ্যামপেথি ফর আদার্স’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন এখন সুখের ইনডেক্স করি, সুখ মানে শুধু টাকা নয়। এখানে সোশ্যাল সেফটি নিশ্চিত হচ্ছে কি না, আমার সমাজে একটা মেয়ে সন্ধ্যায় বের হলে যদি নির্যাতনের শিকার হয়, সেটা উন্নতির লক্ষণ না। উন্নতি মানে অধিকার, আদালতের গতি। এগুলোতে যে বাংলাদেশ খুব পিছিয়ে তা না, এগিয়ে যাচ্ছে। কথা হচ্ছে, এজন্য প্রয়োজন মুক্ত মিডিয়া।

অমর্ত্য সেন বলেছেন, যে দেশে উন্নত মিডিয়া থাকে, সে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না। কারণ, মুক্ত মিডিয়া অনেকগুলো দিক উদঘাটন করে। তারা সংবাদ প্রকাশ করলে সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে। দ্বিতীয়তঃ ইকনমিকস অব ইনফরমেশন এখন খুব ভালো। ইনফরমেশনের ওপর কাজ করার জন্য এখন অনেককে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে। তথ্য জানাটা একটা বিরাট ব্যাপার। র‌্যাশনাল একস্পেকটেশন বা যৌক্তিক প্রত্যাশা সৃষ্টি করে।

বার্তা২৪.কম: উন্নত দেশে রূপান্তরের একটি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এর বাস্তবতা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: ২০৪১ সালে উন্নত দেশের ব্যাপারটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তিনি একজন স্বাপ্নিক মানুষ। সবদিক দিয়েই স্বপ্ন দেখেন। সব ইঞ্জিনিয়াররা যখন বললো, পাতাল রেল করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকার সময়ে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে আমিও এ নিয়ে অনেক কাজ করেছি। ইঞ্জিনিয়াররা ‘না’ করলেও তিনি এগিয়ে গেলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশের অনেক উপদেষ্টারা তাকে ভুল উপদেশ দেন বা ভুল তথ্য দেন।

২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশ হতে হবে কেন! এটা কোন ফোরকাস্টিং বা অংক করে পেলেন তারা, এটা আমি অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে বুঝি না। এ নিয়ে আমি পত্রিকাতেও লিখেছি। এতে সরকার পক্ষের অনেকে ভেবেছেন, বোধহয় আমি সমালোচক। এটা সমালোচনা নয়। অর্থনীতির বিষয় কিন্তু রাজনৈতিক উচ্ছ্বাস দিয়ে চলে না। রাজনীতির মধ্যে অনেক ভেগ জিনিস থাকে। ধরুন, যিনি লুটেরা, তিনিও সমাজে জনদরদী হন! তার চরিত্র খারাপ থাকলেও তিনি চরিত্রবান হন। ফুলের মতোন পবিত্র হন, এগুলো বলা যায়!

কিন্তু অর্থনীতিতে এ ধরনের ভণ্ডামির জায়গা নেই। অর্থনীতিতে অংকগুলো খুব সঠিকভাবে আসে। এখন দেশের জিডিপি একটা স্থিমিতভাবের মধ্যে পড়ে গেছে। তিন বছর আগেই হিসাব করেছিলাম, ৯.৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি যদি ধরা হয় তবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পৌঁছানো যেতে পারে। হঠাৎ করে পৌছে গিয়ে বলে দিলাম উন্নত হয়ে গেছি। এটাকে উন্নতি বলে না। উন্নতির আরও কিছু সোশ্যাল ইন্ডিকেটর আছে। এজন্য সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর সিনেমাটা সবার দেখা উচিত।

খানদানি জমিদার আর হঠাৎ করে পয়সা হলো আর আমি জমিদার হয়ে গেলাম, বাঈজী নাচিয়ে পয়সা ছুড়ে দিলাম, এটা হয় না। খানদান অভ্যাস যেটা ইউরোপে বা ভারতীয় সভ্যতাতেও দেখি, সেই আভিজাত্য, মানুষের প্রতি মমতা, দরদ-স্বাস্থ্যগত উন্নতি, মানসিক উন্নতি, অঙ্গীকার, স্বাধীনতাবোধ- এই জিনিসগুলো না থাকলে হঠাৎ করে জিডিপিতে স্পর্শ করে গেলেই আমরা উন্নত দেশ হবো না।

তারমানে আমরা আশা ছেড়ে দেবো! না! ২০৪১ সালে না হলেও অনেক ইন্ডিকেটরে আমরা নিশ্চয়ই পৌছে যাবো। এট দ্য সেইম টাইম উই হেভ লট অব আনসার্টেনিটিস... কোভিড হঠাৎ করে আসলো বা কোনো ডিজাস্টার আসলো, হঠাৎ করে ভূমিকম্প বা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ আসলে, তখন কী হবে, যেটা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এখন ফেস করছে! ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের আবহাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত। হঠাৎ পকেটে টাকা হয়ে গেলেই কেউ বড়লোক হয়ে যায় না। বড়লোক হতে গেলে মন মেজাজ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সমৃদ্ধ এই জিনিসগুলো আনতে হবে।

এই জায়গাগুলোকে ঠিক মতো নার্চার করা হচ্ছে না। আমরা শুধুমাত্র ‘জিডিপি-জিডিপি’ আর ‘পার ক্যাপিটা ইনকামের’ ধাক্কায় পড়েছি। সম্প্রতি, ডিভেলুয়েশনে দেখলাম পার ক্যাপিটা ইনকাম কমে গেছে। এখন এটাকে চাপা দেওয়ার জন্য বিবিএস (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) বললো, টাকার অংকে তা প্রকাশ করবে। এভাবে করলে তো হবে না, আন্তর্জাতিক বিচারের বেলায় তো টাকায় আসবে না, ডলারে আসবে।

এই বিচারে আমি বলবো, উন্নতবিশ্ব হতে হলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুন্দর করতে হবে, যাতে আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা রাখতে পারি। পাসপোর্ট অফিসে গেলে বা রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠানে গেলে যাতে আমরা ভরসা করতে পারি যে, আমাদের কাজটা হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা উন্নতি করছি কিন্তু পাশাপাশি দুর্নীতি ভেতরটা খেয়ে দিচ্ছে। তার রিফ্লেকশনটা আয়নায় পড়ছে। গ্রোথ কমে যাচ্ছে, এখন তো কমার কথা নয়। কোভিডের পর আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে সুদের হার বাড়াতে বাড়াতে সর্বোচ্চ করে ফেললো (যা ৩০ বছরে দেখা যায়নি), সেখানেও তো গ্রোথ হচ্ছে ভালো। সব জায়গায় গ্রোথ হচ্ছে ভালো। তারা তখন ১%-২% গ্রোথ সেলিব্রেট করতো। সেই সময় আমাদের ৭-৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল কিন্তু এখন আমরা এত নেমে গেলাম কেন! এখানে দুর্নীতিগুলো কাজ করেছে। বড় মাপের মানি লন্ডারিং হয়েছে।

আমি ঘুরেফিরে যে জায়গাতে আসতে চাইছি, ডিজিটাইজেশনকে ফাঁকি দিয়ে মানি লন্ডারিং হয়ে যাচ্ছে, আমরা ইনভয়েসিং করছি। ওই জায়গাগুলিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। আমি একটি বই লিখেছি, ‘ম্যাক্রো ইকোনমিকস পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন ফর গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’। ইনস্টিটিউশনগুলোকে যদি শক্ত করা না যায়, পলিসি যদি অসামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, তাহলে ডিজিটাইজেশনে কাজ দেবে না। সেক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন চোরকে কাজে দেবে। প্রযুক্তি তো সোমালিয়ার হাতেও আছে। সোমালিয়ার প্রযুক্তি তো পাইরেটদের হেল্প করছে বেশি, র‌্যাদার দেন কমন পিপল। বানরকে ক্ষমতা দিতে হয় না। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে একটি জায়গায় আনা দরকার। দুর্নীতি দমন কমিশন যেন কাজ করতে পারে, করাপশন ইনডেস্ক থেকে আমাদের নড়চড় হচ্ছে, নলেজ ইকোনমি ইনডেস্কে কীভাবে ওঠা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। ইনোভেশন ইনডেস্ক দেখতে হবে। এই ইনডেস্কগুলো একাধিক্রমে হেলপ করবে ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন এবং গরিবের ক্ষমতায়ন। রাজনীতিতে আমরা বলি, ‘জনদরদী’, ইলেকশন শেষে এখন তাদের আর পাওয়া যায় না এলাকায়! এই জায়গাগুলিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ইটস লাইক এ প্যাকেজ অব ইওর হেলথ, স্বাস্থ্য সবদিকে দিয়ে ভালো, কিন্তু আঙুলটা কাটা, সব পারফর্ম্যান্স নষ্ট করে দেবে।

বার্তা২৪.কম: আর্থিক সেবাখাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্ভাবনা কতটা কাজে লাগাতে পেরেছি আমরা?

ড. বিরূপাক্ষ পাল: গ্রামে চায়ের দোকান দিতেও ক্যাপিটাল দরকার। ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনটা যে ধাক্কায় শুরু হয়েছিল, সেভাবে কিন্তু কাজ হয়নি। তাকে ক্রেডিটের একসেস দিতে হবে। তারা ক্যাপিটাল মার্কেটে আসবে না। কারণ, সবগুলো ছোট ব্যবসা। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ব্যাংক ইজ দ্য বেস্ট প্লেস। এই জায়গাগুলোতে প্রচুর ঘাটতি আছে। বিভিন্ন এনজিও চেষ্টা করছে। একটি গ্রামে গিয়ে যদি আমরা ৫০ জন লোককে ধরি, তাদের এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরে কাজ করি, তাদের টাকা দিয়ে ৫০ জনে ৪০ জনই দাঁড়াবে। তারা দাঁড়িয়ে একজন আরও ৩ জন করে লোক রাখবে। ৫০ জনের টাকা একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরির লোক একদিনেই মেরে দিলো। এখান থেকে সুফলটা পাওয়া যাচ্ছে না। এই জন্য ফান্ডের অল্টারনেটিভ ইউজগুলো দেখতে হবে। এদেরকে লোটাললি ফান্ড দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দিলেও খুব পার্শিয়াল।

দেখতে হবে, ব্যালান্সশিটে কত পার্সেন্ট বন্ড ইস্যু করেছেন আর কত পার্সেন্ট এক্যুইটি আছে। এই ফিন্যান্সিয়াল আর্টিটেকচার অনুযায়ী জাজমেন্টে আনতে হবে। ওই লাইনে আমরা এখনও দক্ষতা বিস্তৃত করিনি। নীতি-নিয়মও করিনি। কোনো নিয়ম-নীতি করিনি। কারণ, আমাদের নিয়মগুলো উল্টোদিকে যায়। আমাদের ডিরেক্টরশিপ ল’টা অ্যান্টি ইনক্ল্যুশন।

একটি ব্যাংকের যত ডাইভার্স ডিরেক্টরশিপ থাকবে, তত ভালো। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে আসছি, তখন আমি পত্রিকায় লিখেছিলাম, এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) কী করে ওয়ার্ল্ডমার্টে ডিরেক্টর বডির মধ্যে একজন আর্টিস্ট নিয়েছেন, যাদের ডাইভার্স ডিরেক্টরশিপ থাকে তাদের কাছে এসিমিনেশন অব নলেজ হয়, আইডিয়া হয়-কালচার হয়। যত ডাইভার্সিটিতে যাওয়া যায়, তত মঙ্গল।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন শুধু সাদা নেবে না, শুধু কালো নেবে না; শুধু ইন্ডিয়ান নেবে না, শুধু চাইনিজ নেবে না, শুধু মেয়ে নেবে না বা ছেলে নেবে না। আমরা হেমোজিনয়াস সোসাইটির দিকে যাই। বাংলাদেশে উল্টো দেখছি, একটা ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সব এক ধরনের মানুষ থাকতে হবে। একটি স্কুলে সব সমমনা রাজনীতির লোক থাকতে হবে। আমরা এন্টি-ডাইভার্সিটি। এই এন্টি-ডাইভার্সিটি আসলে এন্টি-ইনক্লুশন। ইনক্লুশন করতে হলে তো আসলে সব কিছুকে ইনক্লুশন করতে হবে। সব এক মতবাদ হতে হবে কেন! উনি কোনপন্থী, এসব ব্যাপার কাজ করে বাংলাদেশে। অথচ বিদেশে ডাইভার্সিটি খোঁজে। হার্ভার্ডয়ের প্রোডাক্ট হার্ভার্ড নেয় না। অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে আসবে। কালচারাল এসিমিনেশন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেই ঠিক করে রাখে এই ছেলেটাকে আমরা নেবো, অনেকটা ‘ঘর জামাই’। আর এই ‘ঘর জামাই’ তো খুব রিবোল্ড করতে পারে না। ‘ঘরজামাই’ খুব কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে না।

কালচারাললি যদি জিনিসগুলো ঠিক করা না হয়, তবে কার্যকর ফল কিছু আসবে না। ওয়েস্টার্ন কালচারে বুঝে গেলাম, তাদের টলারেন্স ও ওপিনিয়ন অব ডাইভার্সিটি। আমাকে এসেসমেন্টের সময় কারেক্ট এসেসমেন্ট করবে। আর কারো বিরুদ্ধে যদি আমি বোর্ডরুমে কথা বলি পরের দিন গিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে। ওটার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি না।

বিদ্যাসাগর বলে গেছেন, ‘বাঙালি অসার চরিত্র’। আমাদের সিস্টেমের মধ্য দিয়ে আমরা করাপ্ট করে রেখেছি। কম্পিটিশনকে হাতে ধরে ধ্বংস করেছি। বিভিন্ন ধরনের রিফাইনারিগুলো...ইন্ডিয়াতেও বড়লোক ডেভেলপ করে তবে সেখানে একটা কর্পোরেট স্ট্রাকচার গড়ে উঠেছে। তাদের কন্ট্রিবিউশন আছে। অনেক বড় বড়। কিছুদিন আগে বিএটিএ হয়েছে। এরা কত লোককে এমপ্লয়মেন্ট দিয়েছে! 'ডাইভার্সিটি স্ট্রেন্থ ড্রাইভার্সিটি'! কালচারাল ডাইভার্সিটি, রিলিজিয়াস ডাইভার্সিটি, ওপিনিয়ন ডাইভার্সিটি, জেন্ডার ডাইভার্সিটি-এগুলোর মধ্য দিয়ে শক্তি অর্জন করতে হবে আমাদের।

আমেরিকার শক্তিটা কোথায়! আমেরিকা তো প্রকৃত অর্থে কারোর দেশ না। কালচারাল ডাইভার্সিটি, রিলিজিয়াসস ডাইভার্সিটি-এগুলোর মধ্য দিয়ে শক্তি লাভ করে দেশটি। সব মাইগ্র্যান্টদের দেশ। এই মাইগ্র্যান্টদের মধ্যে যদি ডাইভার্সিটি না থাকতো, তাহলে এত কিছু করা সম্ভব হতো! তাদের শক্তিটা মেধাকে নিয়ে তাদের শত রকম দোষ থাকলেও তারা গ্লোবাল ইনডেক্সে এক নম্বর দেশ। নলেজই তাদের শক্তিমান করেছে।

অর্থনীতিবিদ ডেভিড রোমার বলেছেন, 'এক সময় ধারণা করা হতো ধনীদেশ আর ধনী হবে না। সেচুরেটেড হয়ে গেছে'। কিন্তু তারা আবারও ধনী হয়। কেন হয়! সব কিছুর লেবারে ডিমিনিশন মার্ক আছে। নলেজের কোনো ডেমিনিশিন রিটার্ন নেই।

জ্ঞান মানুষকে যে এত ক্ষমতাশালী করে, সেটা যুক্তরাষ্ট্রকে দৃষ্টান্ত ধরা যেতে পারে। আমেরিকা যখনই কলাপসের মধ্যে পড়ে, তখন দেখা যায় টেক কোম্পানিগুলো তাকে টেনে তুলে ফেলে, অ্যাপল-আমাজন-সিলিকন ভ্যালি তাকে টেনে তুলে ফেলে। কারণ, নলেজ দিয়ে তারা অনেক এমপ্লিফাই করতে পারে। হর্স পাওয়ার অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। ওই জায়গাটাতে চর্চা হওয়া দরকার।

যেটা আমরা বুঝি, তা যেন সততার সঙ্গে করি। দরিদ্রের ক্ষমতায়ন শুধু মুখে বললে হবে না! নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে সমাজে। সেভাবে দরিদ্রের ক্ষমতায়ন হয় না। সেজন্য এক মন্ত্রী বলেছেন, ২৫ হাজার টাকার জন্য কৃষককে আমরা হাতকড়া পরাই কিন্তু ২৫ হাজার কোটি টাকা যে নিয়ে গেল, তার বিচার হয় না। বিচার হতে হতে ১৬ বছর চলে যায়। এই ১৬ বছরে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা বাইরে পাচার করে দেয়। যেদিন রায় হবে তার আগের দিনে সে বিদেশে চলে যায়। এই হচ্ছে বাস্তবতা! 

;