‘চা’ এর ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিটিআরআই

  • বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। ছবি: বিভোর বিশ্বাস

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। ছবি: বিভোর বিশ্বাস

চুমুকেই যেখানে জাদু- এর নামই ‘চা’। এক কাপ চায়ে আসে সতেজতা। প্রাণবন্তভাব। এভাবেই চা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। দিন দিন বেড়েই চলেছে এর চাহিদা। চা এর শিকড় গাঁথা রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। কেননা, এখানেই ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেশের একমাত্র চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে চা এর রাজধানী শ্রীমঙ্গল। এখানে রয়েছে অসংখ্য চা বাগানের টিলাময় সবুজ শ্যামল পাহাড়ি জনপদ। এখানকার চা শিল্পের গুরুত্ব ও পরিবেশগত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে শ্রীমঙ্গলেই ১৯৫৭ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ বা ‘বিটিআরআই’।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। চা বোর্ড প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর অবাঙালিরাই চা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ জুন ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ হতে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রথম বাঙালি হিসাবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থেকে বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের চা শিল্পের হাল ধরার পর থেকে মহান স্বাধীনতার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী উভয় সময়ে দেশের চা শিল্পের জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন - যার ফলে দেশের চা শিল্প আজ বিকশিত হয়েছে।


তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টি রিসার্চ স্টেশনের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করে উচ্চ ফলনশীল জাতের (ক্লোন) চা গাছ উদ্ভাবনের নির্দেশনা প্রদান করেন। চায়ের উচ্চফলন নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি এবং শ্রীমঙ্গলস্থ ভাড়াউড়া চা বাগানে উচ্চফলনশীল জাতের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের চা বাগানসমূহ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। মহান স্বাধীনতা পরবর্তীকালীন সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময়ে তিনি ধ্বংস প্রাপ্ত চা বাগানসমূহ পুনঃগঠন ও পুনর্বাসনের জন্য “বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BTIMC)” গঠন করে যুদ্ধোত্তর মালিকানাবিহীন/পরিত্যাক্ত চা বাগান পুনর্বাসন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়াও যুদ্ধে বিদ্ধস্ত পরিত্যক্ত বাগান মালিকদের নিকট পুনরায় হস্তান্তর করেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত চা কারখানাগুলো পুনর্বাসনের জন্য চা শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করেন। চা শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর সরকার চা উৎপাদনকারীদের নগদ ভর্তুকি প্রদান করার পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। বর্তমানে তা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (BTRI) নামে পরিচিত। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভাবিত নতুন নতুন টেকনোলজি এবং উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।


বিটিআরআই এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষনার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীলতা ও গুনগত মান বৃদ্ধি, চা শিল্পের উন্নয়ন ও উৎকর্ষে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরামর্শ ও সহায়তা দান এবং গবেণালব্ধ প্রযুক্তি চা শিল্পে বিস্তার করাই এ প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য। বর্তমানে এ ইনষ্টিটিউট ১২টি জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবেও পরিগনিত। এ ইনষ্টিটিউট এ যাবৎ উচ্চ ফলনশীল ও আকর্ষনীয় গুনগতমান সম্পন্ন ২৩টি ক্লোন ও ৫টি বীজজাত উদ্ভাবন করেছে।

 ‘ইনস্টিটিউটের পরিচালক কারিগরি ও প্রশাসনিক প্রধান। বর্তমানে ৮টি গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান চা শিল্পে বিস্তার ও বাস্তবায়নে চা শিল্পের অগ্রগতি ও উন্নয়নে প্রবহমান অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

প্রতি বছর বিভিন্ন ভ্যালীর চা বাগানসমূহের ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপকগণ নিয়ে আমরা চা উৎপাদনে প্রুনিং, পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ এবং নার্সারী ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে থাকি বলে জানান পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী।