‘চা’ কে গুণেমানে উন্নিতকরণে বিটিআরআই-এ বার্ষিক কোর্স
বাংলাদেশের মানুষের কাছে চা একটি অত্যাবশ্যকীয় পানীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপিও চায়ের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের এই দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া চা পানের চাহিদা বাংলাদেশের চা শিল্পের জন্য একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষেত্রের সৃষ্টি করেছে।
চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ‘চা’কে গুণে-মানে উন্নতকরণ এবং বৈচিত্রায়ণ করা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতাময় বৈশ্বিক বাজার আর আধুনিক প্রজন্মের এই চাহিদা পূরণ করা বাংলাদেশ চা শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই বাংলাদেশ চা বোর্ড দেশে উন্নতমানের চা উৎপাদন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চা আবাদী ব্যবস্থাপনা ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) এর ৫৬তম বার্ষিক কোর্স শুরু হয়েছে। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিটিআরআই এ অবস্থিত প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট ইউনিট (পিডিইউ) এর অডিটোরিয়ামে ৬দিনব্যাপী ‘৫৬তম বিটিআরআই বার্ষিক কোর্স-২০২২’ এর উদ্বোধনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম এনডিসি, পিএসসি।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিডিইউ'র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক, ‘৫৬তম বিটিআরআই বার্ষিক কোর্স-২০২২’ এর আহ্বায়ক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র টি প্লান্টার জিএম শিবলী। এছাড়াও বিভিন্ন চা বাগানের ম্যানেজার, সিনিয়র ম্যানেজারগণ, প্রশিক্ষণার্থী, বিটিআরআই ও পিডিইউ এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কোর্সটিতে মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা, উন্নত জাত নির্বাচন কৌশল, আধুনিক চা চাষাবাদ পদ্ধতি (প্রুনিং, টিপিং, প্লাকিং, ড্রেনেজ ও খরা ব্যবস্থাপনা) পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, চা প্রাণরসায়ন, স্ট্যাটিস্টিক্স, চা প্রক্রিয়াজাতকরন ইত্যাদি বিষয়াদি হাতে কলমে সংশ্লিষ্ট চা বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
০৫ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক কোর্সের প্রথমদিনে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা তুজ জোহরা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাঈম মোস্তফা আলী এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারহানা জাহান চৌধুরী মাটির গুনগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৃত্তিকা ও সার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আলাপ করেন।
০৬ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক কোর্সের দ্বিতীয় দিনে Tea Botany, Importance of BTRI released clones, Improved Planting Materials, VP nursery, Nucleus Clone Plot, Seedbarie Plantation,Tea Tasting ইত্যাদি বিষয়ে Theoretical এবং Practical ক্লাস নেয়া হয়। উক্ত বিষয়াদিতে রিসোর্স পার্সোনেল হিসেবে লেকচার প্রদান করেন ক্রপ প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইসমাইল হোসেন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল আজিজ এবং সহযোগী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রিয়াদ আরেফিন।
০৭ফেব্রুয়ারি বার্ষিক কোর্সের তৃতীয় দিনে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের Land preparation, young tea management, pruning, tipping & plucking ইত্যাদি বিষয়ে Theoretical এবং Practical ক্লাস নেয়া হয়। উক্ত বিষয়াদিতে রিসোর্স পারসোনেল হিসেবে লেকচার প্রদান করেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তৌফিক আহমেদ, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাসুদ রানা এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুলতান মো. মনোয়ারুল ইসলাম
বিটিআরআই সূত্র জানায়, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রতি বছর দেশের ১৬৭টি চা বাগানের ব্যবস্থাপক, সহকারি ব্যবস্থাপকদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে থাকেন। এই বছর বার্ষিক কোর্সটিতে দেশের চা বাগানসমূহের ৩১টি চা বাগান হতে ৪২ জন নব নিযুক্ত সহ-ব্যবস্থাপক বৈজ্ঞানিক উপায়ে চা চাষের সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।