রমজানের দেড় মাস আগেই শুরু পণ্যের দাম বাড়ানো
প্রতিবছরই রমজান মাসকে ঘিরে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবার দেড় মাস আগ থেকেই এই মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়েছে রাজধানীসহ পুরো দেশবাসী। এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারগুলোতে রমজানের আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে।
লাগামহীন হয়ে পড়েছে নিতপণ্যের দাম। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে আবারও বেড়েছে সবজি, গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজের দাম। আসছে রমজানে যে এই মূল্যবৃদ্ধির হার আরো উর্ধ্বমূখী হবে না তার কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেননা কেউই।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সরকারি বিপণন সংস্থার (টিসিবি) প্রতিদিনের প্রকাশিত বাজারদরের তালিকা থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৭টি পণ্যের। যার মধ্যে রয়েছে মুরগি, গরুর মাংস, সয়াবিন তেল, পাম তেল, পেঁয়াজ, চিনি, ডিম, জিরা, আটা, ময়দা ইত্যাদি। বিপরীতে কমেছে মাঝারি আকারের চাল, রসুন ও হলুদের দাম।
শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, খিলক্ষেত বাজার, আজিমপুর কাঁচাবাজার ও হজ্জ ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধা কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায় সবধরনের মাংসের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ২৫০-২৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায়। কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। প্রতিকেজি গরুর মাংশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা।
এদিকে ঝাঁজ বেড়েছে পোয়াজেরও। মৌসুম শেষ না হতেই গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা করে। গত সোমবার দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তিন-চার দিনের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
দাম বেড়েছে মোটা চালের। প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। অন্যদিকে দাম কমেছে মাঝারি মানের চালের। কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। দাম বেড়েছে তেলের। সম্প্রতি বোতলজাত সয়াবিনের লিটারে আট টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল১৪৬ থেকে ১৫৩ টাকা, বোতলজাত বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৮ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা।
রমজানে চিনির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। কয়েক মাস স্থির থাকার পর আবার নড়েচড়ে উঠেছে চিনির বাজার। এছাড়াও চার থেকে পাঁচ মাস ধরে মসুর ডালের দাম বেড়্তিেই চলেছে।
শীতের সবজির ভালো ফলন থাকলেও পুরো মৌসুমজুড়েই ছিল সবজির চড়া দাম। দুই-একটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির কেজি ৪০ টাকার ওপরে। কোনোটির দাম ১০০ টাকাও ছুঁয়েছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ বিষয়ে বলেন, ' সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষের। ভোক্তাদের সোচ্চার হতে হবে। নয়ত সরকার শুনবে না। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কয় দিন পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি তুলবেন তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য। সরকারও হয়তো মেনে নেবে। কিন্তু সরকারি চাকুরির বাহিরে সাধারণ মানুষের তো আয় বাড়ছে না। কষ্টটা তাদেরই বেশি হবে। সে জন্য নিত্যপণ্যের বাজারে এখনই লাগাম টানতে হবে।'