নজর কেড়েছে চারু ও কারুশিল্প নিয়ে বাহারির প্রদর্শনী
চারু ও কারুশিল্পে বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। তবে দিন দিন এ ঐহিত্য হারিয়ে যাচ্ছে। হাতের কাজ করা দেশীয় পণ্যকে ধরে রাখতে চারু ও কারুশিল্প নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ক্ষুদ্র শিল্প ও নতুন উদ্যোক্তাদের প্লাটফর্ম 'বাহারি'।
তিনব্যাপী চলা এই প্রদর্শনীতে পোশাক পরিচ্ছদ, গৃহ ও অঙ্গসজ্জাসহ নানা পণ্যের পসরা দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। বাহারির এ আয়োজন ক্রেতা-উদ্যোক্তার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (১ এপ্রিল) ছুটির দিনে প্রদর্শনীতে নানান বয়সী মানুষের ভিড় জমে। প্রদর্শনীতে সাজানো পণ্য দেখে সোনালি অতীতে ফিরে যান অনেক বয়োবৃদ্ধরা।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে একটি বাড়িতে বাহারির আয়োজিত প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তবে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ৩১ মার্চ থেকে। রোজার ঈদ ও বৈশাখকে সামনে রেখে আয়োজিত এ প্রদর্শনী চলবে শনিবার (২ এপ্রিল) রাত নয়টা পর্যন্ত।
প্রদর্শনীতে স্পিকার বলেন, দেশীয় ঐতিহ্য ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ইনসেনটিভ দিয়ে এসব পণ্যের কারিগরদের উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে আমাদের ঐতিহ্য টিকে যাবে। সবাই মিলে আমাদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আমার বিশ্বাস আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে অবশ্যই সহায়তা করবেন।
উদ্যোক্তা ও মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বলেন, মানসম্মত পরিবেশবান্ধব হাতের কাজ করা পণ্য তৈরি করছে বাংলাদেশ। এবার বাজার ধরতে দরকার প্রচারণা।
বাহারির প্রদর্শনীতে এবার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধবতাকে। রাখা হয়েছে ঢাকাইয়া শিল্পকর্ম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতাও।
উদ্যোক্তারা বলছেন, পরিবেশের সুরক্ষা দিয়ে মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে প্রস্তুত তারা। এবার দরকার সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে প্রচার প্রচারণা।
প্রদর্শনীর আয়োজক ও পরিকল্পনাকারী স্টুডিও উড়ানের উদ্যোক্তা সাফিয়া শামা বলেন, আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ শুরু করছি। আজকের প্রদর্শনীতে ১২ টি ব্রান্ড যারা নিজেরা পণ্য উৎপাদন করে, তাদেরকে যুক্ত করা হয়েছে। এই ব্র্যান্ডগুলোর সম্মিলিত প্লাটফর্মে বাহারি। এটা তো কেবল শুরু করলাম। আমরা বাহারিকে আরো বড় পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন হলেও মানুষের আগ্রহ দেখে আমরা বিস্মিত। এটা সম্ভব হয়েছে সবার সহযোগিতার ফলে। দেশের হাতের কাজের পণ্যকে আমরা বহুদূর নিয়ে যেতে চাই।
প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ১২ জন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তদের মধ্যে রয়েছেন- ‘স্টুডিও উড়ান’-এর সাফিয়া শামা। তিনি পোশাক পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। চামড়াজাত পণ্য নিয়ে কাজ করা তাসলিমা মিজির ‘গুটিপা’। ফারহিন খানের ‘জুটমামা’ কাজ করছে পাটজাত পণ্য নিয়ে। পাটের বহুমুখী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন আরেক উদ্যোক্তা সহিদুল ইসলাম হেলাল। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বেনি বুনন’।
আম্মান রশীদের ‘আদি লোহাকাড়া’ কাজ করছে রিসাইকেল জুয়োলারি এবং খালেদ মাহমুদের ‘এম আই বি স্পিরিট’ কাজ করছে আপসাইকেল এক্সেসরিজ নিয়ে। জহরা খানের ‘জিকে কুটোর’ কাজ করছে জামদানি নিয়ে। প্ল্যান্ট ও উপহারসামগ্রী নিয়ে কাজ করছেন রুবাইয়াত আলী ও রাইসা বৃষ্টি। তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম প্লান্ট এফেয়ার।
আট অ্যান্ড ক্রাফট নিয়ে কাজ করছে ‘ঢাকা ইয়াহ’, ন্যাচারাল বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছে ‘রিবানা’, শাওন আকন্দ কাজ করছেন টি-শার্ট ও হ্যান্ডি ক্রাফট নিয়ে। তার প্রতিষ্ঠান ‘যথাশীল্প’। আব্দুস সালামের ‘ডিউ ক্রাফটস’ কাজ করছে হ্যান্ডি ক্রাফ্ট ও পোশাক নিয়ে।
ফিদা হকের ‘প্রাণীসেবা’। বিধান চন্দ্র পলের প্রভা অরোরা। তিনি কাজ করছেন ক্লে নিয়ে। মাহরুখ মহিউদ্দিনের ‘ইউপিএল’ কাজ করছে প্রকাশনী নিয়ে। রুবিনা রহমান চৌধুরীর ‘পিএইচডব্লিউসি’ মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক। এছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডালও রয়েছে এ উদ্যোগে।