বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মন্দাবস্থার দিকে ধাবমান!



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মন্দাবস্থার দিকে ধাবমান!

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মন্দাবস্থার দিকে ধাবমান!

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনা আর ইউরোপের প্রান্তে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চরমে। জ্বালানি তেল, পরিবহণ ব্যবস্থা ও সরবরাহ নেটওয়ার্কে চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণেই অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বেড়েছে দ্রব্যমূল্য এবং মূল্যস্ফীতি। এহেন পটভূমিতে পর্যবেক্ষকদের সিদ্ধান্ত আশঙ্কা হলো, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এক মন্দাবস্থার দিকে ধাবমান

বাঙালি চিরায়ত সমাজে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চিত্রটি সবাই চেনা। বাজার যখন আগুন, তখন বাড়ির মেয়েদের গায়েই তার আঁচ লাগে সবচেয়ে বেশি। কারণ দুর্দিনে সংসারের সকলের মুখে পুষ্টিকর খাবার জোগানোর সমস্ত দায় এসে বর্তায় ‘সুগৃহিণী’দের কাঁধে। বস্তুত,  বাইরে পুরুষের মেজাজ আর বাড়িতে মেয়েদের সংগ্রামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.২২ শতাংশ, যা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.১৭ শতাংশ। তার আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে গ্রামের খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমি ৬২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর মার্চ মাসে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারিতে তা আবার বেড়েছে। যা মার্চেও অব্যাহত ছিল। তবে সরকার বা বিবিএসের দেয়া হিসাবের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবে অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ মানুষও জানেন যে, পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি তথ্য বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বাজারে গেলেই সেটা বিলক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আশার কথা হলো এই যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে 'অপেক্ষাকৃত কম খারাপ' বলা যেতে পারে। তথ্যানুযায়ী, আমেরিকার ক্ষেত্রে ভোক্তার নিরিখে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৮.৫ শতাংশ। ৪০ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ইউরো-নির্ভর দেশগুলোতে তা ৭.৫ শতাংশ। এই সব অর্থনীতি সাধারণত দুই শতাংশেরও কম স্ফীতিতে অভ্যস্ত ছিল। ভারতে পেট্রোল, ডিজেল-সহ কিছু খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আর্তস্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করছে জনতা। তবে, ভারতে ভোক্তার নিরিখে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নীচেই থেকেছে।

অন্যদিকে, এ প্রসঙ্গে ‘ব্রিকস’ অর্থনীতির দেশগুলোর দেশগুলোর দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতিকে ২০১০ সাল থেকে 'ব্রিকস' নামেই অভিহিত করে হয়। ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল দাবি করেছিলেন, ঐ দেশগুলোই ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান পরিচালক শক্তিতে পরিণত হবে। কিন্তু বর্তমানে ব্রাজিলের মুদ্রাস্ফীতি দুই অঙ্কের ১১.৩ শতাংশ, রাশিয়ার ১৬.৭ শতাংশ। কেবল মাত্র চীনের মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা সংহত। ১.৫ শতাংশে তারা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলছে। এই পরিসংখ্যানগুলি ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ সূত্রে প্রাপ্ত।

অর্থনীতিবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারত প্রবৃত্তিতে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। তার বৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এর পরেই রয়েছে চীন। তার বৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশ। তুলনায় আমেরিকা এবং ইউরো-নির্ভর অঞ্চলের দেশগুলোর বৃদ্ধিহার যথাক্রমে ৩ এবং ৩.৩ শতাংশ।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোর বৃদ্ধির হার ‘উন্নয়নশীল’ তকমাধারীদের চাইতে স্বাভাবিক ভাবেই শ্লথ। এ সব সরিয়ে রেখেও দেখা যায়, বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্রাজিল স্থবিরতা প্রাপ্ত। আর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১০.১ শতাংশ ধসের কারণে রাশিয়া ঘোরতর সঙ্কটে। তুলনায় জাপানে মুদ্রাস্ফীতির হার কম এবং বৃদ্ধির হারও ক্রমোন্নতির দিকে।

দৃশ্যত বৈশ্বিক সঙ্কটের পটভূমিতে বিশ্বের নানা দেশের মুদ্রাগুলো একটি শক্তিতে পরিগণিত হতে শুরু করেছে। গত এক বছরে আমেরিকান ডলারের নিরিখে ভারতীয় রূপির মূল্যমান হ্রাসের মাত্রা ছিল মাত্র ১.৪ শতাংশ। চীনের ইউয়ানকে বাদ দিলে ডলারের নিরিখে যে মুদ্রাগুলোর মানোন্নয়ন ঘটেছে, সেগুলো মূলত খনিজ তেল রফতানিকারক দেশগুলোর মুদ্রা, যার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া এবং মেক্সিকো।

খনিজ তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকলে ভারতীয় টাকার মানও তেজি থাকবে। সর্বোপরি, আমেরিকার অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ হারের ভবিষ্যদ্বাণী ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলেই মনে হচ্ছে। ‘ইন্টারেস্ট ইল্ড কার্ভ’ (যে লেখচিত্র দ্বারা বন্ড বা ঋণপত্রগুলোর পরিমাণগত সমতা রয়েছে, কিন্তু তাদের পূর্ণতাপ্রাপ্তির দিনক্ষণ পৃথক বলে ইঙ্গিত করা হয়)-এর বিপরীত গতি (অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বগতি প্রাপ্তি না ঘটে ধীরে ধীরে নিম্নগামী হওয়া) থেকে বাজার পর্যবেক্ষকদের সিদ্ধান্ত এই যে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এক মন্দাবস্থার দিকে ধাবমান।

এমতাবস্থায় অর্থনীতিবিদদের সামনে প্রধানতম প্রশ্ন হল, আমেরিকান অর্থনীতির নিয়ন্তা শক্তি কি মন্দাকে আহ্বান না জানিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হারকে নির্ধারণে সমর্থ হবে? যদি তেমন কিছু ঘটে তবে বিশ্বের অর্থনীতির সর্বত্রই তার প্রভাব পড়বে। যদি বিশ্ববাণিজ্যের গতিতে শ্লথতা দেখা দেয়, তাহলে সারা বিশ্বের রফতানি বাণিজ্যও তার দ্বারা আক্রান্ত হবে, যার কুপ্রভাব পড়বে পৃথিবীর নানা,দেশে।

এমনকি, যদি এসব কিছু থেকে সরে এসেও দেখা যায়, তা হলেও তুলনামূলক কিছু পরিসংখ্যান সুসংবাদ বহন করার চেয়ে বিশ্বের ক্ষেত্রে দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। নানা দেশে 'আর্থিক বৃদ্ধি' বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী ফলতে শুরু করেছে। যদিও সামান্য কিছু দেশ মুদ্রাস্ফীতির খুব খারাপ দশাতেও একটি মানসম্পন্ন মাত্রা বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। দেশগুলোর মাসিক উৎপাদনের পরিসংখ্যান মোটামুটি ভাবে ঠিকই থেকেছে। তবে, বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে ব্যবসায় মন্দার ছবিও একই সঙ্গে উঠে আসছে। মোদ্দা কথায়, বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার ছায়া অবশ্যই দৃশ্যমান।

বিশ্ব আর্থিক মন্দার সম্ভাব্য বিপদে এককভাবে কোনও দেশের সরকারের ভূমিকা খুবই সামান্য। সরকার তার আর্থিক নীতির প্রসারণ ঘটাতে পারে, মহামারির ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন বিচ্যুতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে এবং এই মুহূর্তে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট গোলযোগের মোকাবিলা করতে পারে। এ লক্ষ্যে,  কোভিডের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।

চীন সেটা শক্ত হাতে করে চলেছে। চীনের সর্ববৃহৎ মহানগর এবং অর্থনতিক হৃৎপিণ্ড সাংহাইয়ের দ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও এমন ক্ষেত্রে এ কথা ভাবা বৃথা যে, দেশের অর্থনীতিতে কোনও পতন লক্ষণীয় হয়ে উঠবে না এবং বিশ্বের অন্যত্রও তা দৃশ্যমান হবে না। বিশেষত, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু পর থেকে বিশ্বের কোনও কোনও স্থানে আবারও কোভিড মহামারির তরঙ্গ নতুন করে দেখা দিচ্ছে। সম্ভবত এই তরঙ্গগুলো আরও প্রকট এবং প্রসারিত হয়ে দেখা দেবে। সুতরাং পরিসংখ্যানের দিক থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে যতখানি উজ্জ্বল বলেই প্রচার করা হোক না কেন, তা নিয়ে উল্লসিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা বহুমুখী সঙ্কট-দীর্ণ এক বিপন্ন বিশ্বেই বাস করছি।

বিপন্নতার সর্বশেষ নমুনা দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পাকিস্তানে ক্ষমতায় দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পথে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। দেশটির অর্থনীতির যে অবস্থা, তা সেখানকার রাজনীতির মতোই দোদুল্যমান। শ্রীলঙ্কায় চলছে চরম সঙ্কট আর ঋণের বোঝার চাপ। সেদেশের অর্থনীতি নিয়ে সতর্কতা জানিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ। বলেছে, সেখানে জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে কোনও পরিবর্তন ঘটবে না। দেখা দেবে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি। ঝুঁকি আছে ঘাটতির।

আইএমএফ বলেছে, নাজুক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের অন্যত্র স্বল্পমেয়াদী ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদী বিপদ বৃদ্ধি পাবে। দেশে দেশে সরকারের তরফে বিশেষ কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গৃহীত না হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলবে। জ্বালানি তেল, পরিবহণ ব্যবস্থা ও সরবরাহ নেটওয়ার্কে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সবমিলিয়ে বিশ্বের নানা দেশে আর্থিক মন্দাভাব সৃষ্টি হওয়ার বিপদও ফুঁসছে।

   

বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল



রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল

বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ভোজ্য তেলের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক-ভ্যাট) প্রত্যাহারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু, ভোজ্য তেলের ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করে দিলেও তা মানার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

বাজারে গিয়ে দেখা যায় নির্ধারিত মূল্যের চাইতেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। দাম নেবার কারণ জানতে চাইলে দায়সারা উত্তর ব্যবসায়ীদের।

গতকাল (১৮ এপ্রিল) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

সংবাদ সম্মেলনে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ১৮ টাকা বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম দুই টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা করা হয়েছে।

তবে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বাজারে গিয়ে দেখা গেছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের কোন তোয়াক্কা করছে না দোকানীরা।

প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও লিটার প্রতি ১৮ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা করে। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা দরে। তবে ভিন্ন চিত্র ছিলো ৫ লিটারের বোতলজাত তেলের দামে। সরকারের বেঁধে দামের চাইতেও প্রতি ৫ লিটারের বোতলে ১৮ টাকা কম মূল্যে ৮০০ টাকা করে বিক্রি করছেন দোকানীরা।

সরকারের বেঁধে দামে তেল বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে রাব্বি ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী লুতফুর রহমান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, গতকাল কি ঘোষণা হইছে তেলের দাম কমছে নাকি বাড়ছে তা ভালো করে জানিনা। তবে শুনছি ফেছবুকে টিভিতে। আমাদের দোকানে যে তেল আছে তা আগের দামে কেনা। তাই আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন তেল আসলে আবার নতুম দামে বিক্রি করবো। খোলা তেলে ১৮ টাকা বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐ যে বললাম আগের দামে কেনা। আমি তো নতুন দামের চাইতে ৫ লিটারের বোতলে ১৮ টাকা কম নিচ্ছি এখনো। কিন্তু খোলা তেল আমার আগের দামে কেনা তাই ১৮ টাকা বেশি নিতেছি। দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এলে যতো দ্রুত দাম বাড়ে কিন্তু দাম কমানোর ঘোষণা এলে কমেনা কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বড় বড় পাইকারদের কাজ। তারা সিন্ডিকেট করে। কিন্তু আমাদের এমন সুযোগ নেই। আমরা এক দুই টন মাল সর্বোচ্চ কিনি। কখনো আরও কম কিনি।

আরেক ব্যবসায়ী খাদিজা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোসলে উদ্দিন বলেন, ৫ লিটারের তেলের বোতলে যে দাম ৮০০ টাকা দেয়া সেই দামে বিক্রি করছি। এছাড়া এক লিটারের বোতলের দাম ১৬৩ টাকা দামে বিক্রি করছি। তবে খোলা তেল আমার কেনা ছিলো ১৬৩ টাকা করে তাই আমি ১৬৪/১৬৫ টাকা দামে বিক্রি করতেছি। খোলা তেল ১৪৭ টাকা সরকার নির্ধারণ করছে কিন্তু সেটা কি ভালো নাকি মন্দা জানিনা। যে দামে কিনি তার থেকে এক দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি করি।

একটি সিকিউরিটি গার্ডের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আলতাফ হোসেন। তার কাছে খোলা তেল কতো নিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৬৫ টাকা নিলো। খোলা তেলে দুই টাকা কমে ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে জানেন কিনা প্রশ্ন করলে আলতাফ হোসেন বলেন, ভাই এসব খবর দিয়ে তো কোন কাজ হয়না। দাম বাড়লে তখন ব্যবসায়ীরা পারলে আরও বাড়িয়ে নেয়। অথচ কমলে তিন মাসেও দাম কমার খবর থাকেনা। আপনার সামনেই তো বেশি নিলো কিছু করার আছে বলেন? আমি এক লিটার তেল নিতে আসছি। এখন এদের সাথে কি দাম নিয়ে ঝগড়া করবো।

আরেকজন ক্রেতা সজিব মোল্লা বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বাড়ে তবে খোলা তেলের দাম কমাইছে শুনে ভালো লাগলো। তবে দুই টাকা দাম কমায় তার প্রভাব আসলে বাজারে পরেনি। তাছাড়া লোক দেখানো বাজার মনিটরিং করে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কখনো সম্ভব না। একদিকে ব্যবসায়ীদের উপর ট্যাক্স বসাইবেন। জরিমানা করবেন আবার বলবেন দাম কমাইতে তারা কিভাবে দাম কমাবে। জীবনে শুনছেন কোনকিছুর দাম বাড়লে তা আবার কমে সহজে।

;

শিশুখাদ্য সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চমাত্রায় চিনি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নেসলের শিশুখাদ্য সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চমাত্রার চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা পাবলিক আই ও ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের করা গবেষণায় এ তথ্য মিলেছে। শিশুদের খাবারে যাতে চিনি যুক্ত করা না হয় এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মানদণ্ড পরীক্ষায় কোনো ধরনের ক্ষতিকারক বিষয় সামনে আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বিএসটিআই’র পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য কোম্পানি নেসলে বেশ কয়েকটি দেশে শিশুদের জন্য তৈরি করা দুধ ও সিরিয়াল পণ্যগুলোতে বাড়তি চিনি ও মধু যুক্ত করে, যা স্থূলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন। নেসলের শিশুখাদ্যে বাড়তি চিনি যুক্ত করার আইন লঙ্ঘনের এই ঘটনা কেবল এশিয়ান, আফ্রিকান এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে নেসলের শিশুখাদ্য সেরেলাক থেকে একজন শিশুকে একবার যে পরিমাণ খাবার পরিবেশন করা হয়, তাতে প্রায় ৩ দশমিক ৩ গ্রাম বাড়তি চিনি উপস্থিতি আছে।

পাবলিক আই বলছে, নেসলে সুইজারল্যান্ডে বাজারজাত করা তাদের পণ্য সেরেলাকে বাড়তি কোনও চিনি ব্যবহার করে না। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে সেরেলাকে বাড়তি চিনি যুক্ত করে তারা।

এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। নেসলের শিশুখাদ্য পণ্যের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গবেষণায় পাওয়া ফল একটি বৈজ্ঞানিক প্যানেলের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া যুগান্তরকে বলেন, খাদ্যে ভেজাল কিংবা দূষণের কারণে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সব সময় ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। এক গবেষণায় নেসলের দুটি পণ্য সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চমাত্রার চিনির উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে। এটা আমরা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। বিএসটিআই’র মানদণ্ডে পরিমাপ করব। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা সামনে এলে বা অভিযোগ প্রমাণিত হলে পণ্য দুটি বাজার থেকে তুলে নেওয়ার সুপারিশ করব। এছাড়া মামলা করারও সুযোগ আছে।

এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি নেসলে ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্রর সঙ্গে কথা বলেছে। ওই মুখপাত্র বলেছেন, তারা গত পাঁচ বছরে নেসলের শিশুখাদ্যে যোগ করা চিনির পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়েছে। এছাড়া আরও কমিয়ে আনার বিষয়ে তারা পণ্যগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, ভারতে নেসলের ১৫টি সেরেলাক শিশুখাদ্য থেকে একটি শিশুকে একবার যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তাতে গড়ে প্রায় ৩ গ্রাম চিনি থাকে। একই পণ্য জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যে বিক্রি করা হচ্ছে বাড়তি চিনি ছাড়াই। অন্যদিকে ইথিওপিয়া ও থাইল্যান্ডে এই চিনির পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পণ্যের মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই সূত্র জানায়, এটি অন্য দেশের তৈরিকৃত পণ্য। তবে এগুলো আমাদের দেশের মানদণ্ড অনুযায়ী এক নাও হতে পারে। সেরেলাক ও নিডো যদি দেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মান ঠিক রেখে পণ্য তৈরি করে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু যেহেতু একটি প্রতিবেদনে ক্ষতির বিষয়টি এসেছে, তাই এই বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে দেখা হবে। যদি কোনো ক্ষতিকারক কিছু থাকে, তাহলে পদক্ষেপ নেব।

;

সরবরাহ স্বাভাবিক তবুও বাজার চড়া



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
সরবরাহ স্বাভাবিক তবুও বাজার চড়া

সরবরাহ স্বাভাবিক তবুও বাজার চড়া

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ঈদ পরবর্তীত বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও নিত্য পণ্যের দাম চড়া। ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকলেও ঊর্ধ্বমুখী শাক সবজি ও মাছের দাম। বিশেষ করে ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই বাজারে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কাওরান কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

কাওরান বাজারের খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আজকে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা কেজি, রসুন ২০০-২২০ টাকা কেজি, আদা ২০০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ৮০-১২০ টাকা কেজি, ধনেপাতা কেজি ১০০টাকা আর আটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে। লেবুর হালি ৩০-৪০ টাকা।

এছাড়া শবজির বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকলেও দাম আগের মতোই চড়া ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নাই। মিষ্টি কুমড়া ৪০, মুলা ৫০-৬০, পটল ৭০ _১২০, বেগুন ৬০ টাকা,বরবটি ৮০,  জালি প্রতি পিছ ৬০ টাকা, ভেন্ডি ৬০ টাকা কেজি, টমেটো ৫০ শশা ৫০, লাউ প্রতি পিস ৭০-৮০ করলা ১২০ টাকা, করলা ৬০-৭০, বাধাকপি ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, গাজর ৬০, ক্যাপসিকাম ৪৫০ টাকা।

তবে মাছ মাংসের বাজারে দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্রেতারা বলছে মাছের গায়ে হাত দেয়া যায় না। বাজারে আজকে দেশি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা কেজি, মলা মাছ ৭০০ টাকা কেজি, নদীর চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা কেজি, এবং চাষের চিংড়ি ৭০০টাকা কেজি, আইর মাছ ৮০০টাকা কেজি,কাতল ৭০০ টাকা, দেশি বড় বোয়াল ১২০০ টাকা, কোরাল মাছ ১০০০ টাকা। আর ৫০০গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকা কেজি।মুরগী ২১০ টাকা, গরু ৭৫০-৭৮০ টাকা,

কল্যাণপুর থেকে কাওরান বাজারে সপ্তাহের বাজার করতে এসেছেন সুফিয়া বেগম। তিনি জানান ৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছি বাজারে। মাত্র ৫ জনের সংসারের বাজার করতে ইতিমধ্যে বাজারের প্রায় অর্ধেক টাকা শেষ হয়েছে শুধু মাছ কিনতে। এখনো সবজি ও ঘরের অন্যান্য বাজার করা বাকি। আগে যেখানে মাত্র ৩ হাজার টাকায় সপ্তাহের পুরো বাজার শেষ হয়ে যেতো সেখানে এখন ৫ হাজার টাকা দিয়ে কোনমতে টেনেটুনে সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে। কাওরান বাজারে কিছুটা কম দামে কিনতে আসলে দামের পার্থক্য এলাকার বাজারের চাইতে খুব একটা কম না। তবে টাটকা পণ্য পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। বাজারের  ভয়াবহ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুইজনে মিলে কামাই করেও এখন অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসারের চাহিদা মেটাতে।

কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী লতিফ বার্তা২৪.কম’কে জানান, বাজারে সরবরাহ আছে কিন্তু চাহিদার তুলনায় কম। তাই বেড়েছে সকল মাছের দাম। দেশি মাছের চাহিদা বেশি থাকায় তার দাম একটু বেশি। তবে চাষের মাছের দাম আগের মতোই আছে।

;

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে একভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

;