যে কারণে ‘চা দিবস’ গুরুত্ববহ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়নে জাতীয়ভাবে চা দিবস পালিত। ছবি: বার্তা২৪

ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়নে জাতীয়ভাবে চা দিবস পালিত। ছবি: বার্তা২৪

চা বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশি নানা জাতের চা এর পরিচিতি দেশের মানুষের মাঝে তুলে ধরাসহ আন্তর্জাতিকভাবে দেশের চায়ের সুনাম ছড়িয়ে দিতে সম্প্রতি ৪ জুন, শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে জাতীয় চা দিবস।

বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এই দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চা শিল্পে জাতির পিতার অবদান এবং চা বোর্ডে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে। ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসাবে তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চা শিল্পে বঙ্গবন্ধু অবদান রাখেন। তাঁর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় ১৯৫৭ সালে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ঢাকার মতিঝিলে চা বোর্ডের কার্যালয় স্থাপিত হয়।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের ২০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে জাতীয় চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ৪ জুন বাংলাদেশে প্রথম চা দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছর এই দিবসটি উদযাপন করা হবে। দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও চা প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আছে। বিশেষ করে চা উৎপাদনকারী অঞ্চল চট্টগ্রাম, সিলেট ও পঞ্চগড়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন আছে।

চা দিবসের দৃষ্টিনন্দন প্রকাশনা। ছবি: বার্তা২৪

চলতি বছরের চা দিবস রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার  আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম এনডিসি পিএসসি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

বিজ্ঞাপন

আলোচনা সভা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শুরু হবে দিনব্যাপী চা মেলা। মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চা প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে। সকল শ্রেণির দর্শনার্থীদের জন্য চা মেলা উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন এবং শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা বোর্ডের অধীনস্থ মিউজিয়ামে রক্ষিত চা শিল্পের দুর্লভ উপকরণ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।

চা বোর্ড জানিয়েছে, জাতীয় চা দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশের চা উৎপাদনকারী অঞ্চল চট্টগ্রাম, সিলেট, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণে আরও একটি চা মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশে এখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চা উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২১ সালে দেশে ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ ১৪ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। দেশে এখন বৃহৎ চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানের সংখ্যা আট হাজারেরও বেশি। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় দেশে চা পানের পরিমাণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, দেশে চা উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশে চায়ের ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়েছে। দেশে ঘরে ঘরে চায়ের ব্যবহার বাড়ছে, সে কারণে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও সেভাবে আমরা রফতানি করতে পারছি না। কারণ আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, চায়ের ব্যবহার বেড়েছে। চায়ের উৎপাদন বাড়াতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

টিপু মুনশি আরো বলেন, চায়ের নতুন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণা বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের চা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এতদিন শুধু দেশের পাহাড়ি অঞ্চল অর্থাৎ চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও সিলেটে চা উৎপাদিত হতো, এখন দেশের উত্তরাঞ্চল পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটের সমতল ভূমিতেও চা উৎপাদিত হচ্ছে। এতে অন্য ফসল চাষে অনুপযোগী জমিগুলোতে চা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে ও দেশে চা শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে বিপুল পরিমাণ চা রফতানি করতে পারবো।

বিটিবি সূত্র জানায়, ১৮৪০ সালে দেশে এক ব্যক্তির উদ্যোগে চা উৎপাদন শুরু হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে। চা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের চা উৎপাদনকারী অঞ্চলের জেলাগুলোতে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও চা মেলার আয়োজন করা হয়েছে।