বাংলাদেশে সংকট নেই: আইএমএফ

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল

বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের (চলতি হিসাবে ভারসাম্য) ওপর চলমান চাপ আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

মঙ্গলবার আইএমএফের মুখপাত্র রাহুল আনন্দ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট নিয়ে এমন পূর্বাভাস দেন।

বিজ্ঞাপন

‘আইএমএফ’-এর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্টে (আরএসটি) বাংলাদেশের আগ্রহের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন তিনি। ওই তহবিল থেকেই বাংলাদেশ ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে, যা দিয়ে দ্রুত হ্রাস পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পারবে।

রাহুল বলেন, বাংলাদেশ বেলআউট চাওয়ার মতো সংকটে নেই। তবে বৈদেশিক মুদ্রার আগাম মজুদের ব্যবস্থা হিসেবে আরএসটি থেকে ঋণ চাওয়ার উদ্যোগকে একটি ভালো পদক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সম্প্রতি জ্বালানি তেল ও সারের দাম বাড়িয়েছেএমন গুজবের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত ঋণের বিষয়ে আইএমএফ এখনো আলোচনা শুরু করতে পারেনি, তাই কোনো সংস্কারেরও পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, অক্টোবরে আইএমএফের বার্ষিক সভার পর ঋণ আলোচনার জন্য প্রথম প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত মাসে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আসে। এ সময় তারা বাংলাদেশের সামষ্টিক-অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়। ওই সময় আইএমএফের কর্মকর্তারা জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি বাস্তবায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি পরিবর্তন এবং ব্যাংকিং খাতের সুশাসন জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে।

আমদানির তুলনায় রপ্তানি কমে যাওয়া এবং প্রবাসী আয় না বাড়ায় কয়েক মাস ধরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘১৫০ কোটি ডলার করে তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে বাজেট সহায়তার অর্থ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশি^ক পরিস্থিতির কারণে শিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ প্রায় সব পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। এক বছরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ১৩০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ে। আর এলএনজির দাম বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। সারের দামও একই হারে বেড়েছে। সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকায় দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। উন্নত দেশে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানিজনিত কারণে বাংলাদেশেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যালেন্স অব পেমেন্টে রেকর্ড ঘাটতি হয়েছে। আমদানির তুলনায় রপ্তানি একই সমান্তরালে না বাড়ায় চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিরাপদ অবস্থানে রাখতেই আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এসব ঋণের শর্ত হিসেবে কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কার করতে হচ্ছে সরকারকে। 

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তারা বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।