বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী টেক ইভেন্ট আমেরিকার সিইএস ফেয়ারে ওয়ালটন
শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জমকালো টেক ইভেন্ট ‘কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো (সিইএস)-২০২৩’। আমেরিকার লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিতব্য সর্ববৃহৎ এই প্রযুক্তি মেলায় যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন। সিইএস ফেয়ারে বিশ্বের বড় বড় টেক জায়ান্টগুলো তাদের প্রযুক্তির উৎকর্ষতা উপস্থাপন করে থাকে।
অন্যতম শীর্ষ গ্লোবাল ব্র্যান্ডের অগ্রযাত্রায় ওয়ালটন এ মেলায় যুগান্তকারী উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে। উপস্থাপন করবে আগামী প্রজন্মের সর্বাধুনিক ফিচারের নানা প্রযুক্তিপণ্য। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন শিল্প খাতের জন্য এটি বিশাল মাইলফলক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে।
উল্লেখ্য, প্রযুক্তি খাতের মেগা শো সিইএস হচ্ছে বিশ্বসেরা উদ্ভাবকদের মিলনমেলা। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ মেলায় নতুন উদ্ভাবনী পণ্য ও ধারণা প্রদর্শনের পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলো নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ পায়। যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত প্রদর্শনী কেন্দ্র ‘লাস ভেগাস কনভেনশন সেন্টার’ এ ২ দশমিক ৬ মিলিয়নেরও বেশি বর্গফুট জায়গাজুড়ে এ মেলার আয়োজন করেছে কনজ্যুমার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন (সিটিএ)। চলতি বছর ৫ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ মেলা।
এবারের মেলায় প্রযুক্তি খাতের খ্যাতনামা গ্লোবাল ব্র্যান্ডসহ সাড়ে ৪ হাজারের বেশি কোম্পানির অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শিত হবে। এতে ১৬০টিরও বেশি দেশের দেড় লাখ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী, প্রযুক্তিবিদ, কনজ্যুমার টেকনোলজি সরবাহকারী ও ডেভেলপার অংশগ্রহণ করবে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন। তাই, সিইএস ফেয়ারে ওয়ালটনের অংশগ্রহণকে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতের জন্য মাইলফলক বলে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা শাখা) নায়েম উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফেয়ারগুলো এই অর্থনৈতিক কূটনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। সেক্ষেত্রে সিইএস অবশ্যই একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশ থেকে ওয়ালটন প্রথমবারের মতো এ প্ল্যাটফর্মে অংশ নিতে যাচ্ছে, এটি সুসংবাদ। আমরা প্রতিনিয়ত বিশ্ব দরবারে দেশকে তুলে ধরার প্রয়াসে কাজ করছি। ইতিবাচক কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ে জোর দিচ্ছি। এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্মে ওয়ালটন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এ আয়োজনে ওয়ালটনের সফলতা এবং মঙ্গল কামনা করছি।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভিউল্যুশনে ওয়ালটনের অনেক বড় ভূমিকা আছে। আমাদের ইলেকট্রনিক্স খাতে ওয়ালটন যে অবদান রাখছে, তা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই গর্বের। ওয়ালটন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। ওয়ালটন তাদের পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে। ওয়ালটনের সিইএস ফেয়ারে অংশগ্রহণের ফলে ইলেকট্রনিক্স খাতে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান বলেন, ইউরোপের কয়েকটি দেশে আমাদের দেশ থেকে ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিতব্য কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো বা সিইএস-২০২৩ আমেরিকার বাজারে ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানির জন্য একটি ‘নকিং ডোর’ হতে পারে। এই ফেয়ারে ওয়ালটন আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে, এটি অবশ্যই সুসংবাদ। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম আরো সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছি।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও গোলাম মুর্শেদ বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তিপণ্য খাতের ফ্ল্যাগশিপ ট্রেড শো ‘সিইএস’-এ ওয়ালটন প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অংশগ্রহণ করছে। যেখানে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত আগামী প্রজম্মের সর্বাধুনিক ফিচারের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিপণ্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা হবে। এটি শুধু ওয়ালটনেরই নয়; বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন শিল্প খাতের জন্যও এক বিশাল মাইলফলক। এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে, অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।
ওয়ালটন টিভির চিফ বিজনেস অফিসার ও সিইএস মেলার সমন্বয়ক প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন জানান, ওয়ালটনের ভিশন ‘গো গ্লোবাল ২০৩০’ অর্জনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তারা ‘সিইএস’-এ অংশ নিয়েছেন। মেলার ১৭৯২৮ নাম্বার প্যাভিলিয়নটি ওয়ালটনের। তিনি সবাইকে ‘সিইএস’ ফেয়ারে ওয়ালটনের জায়ান্ট প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনের আহ্বান জানান।
জানা গেছে, ‘সিইএস-২০২৩’ আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) বেজড অত্যাধুনিক ফিচারের প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শন করবে ওয়ালটন। এর মধ্যে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী স্মার্ট এয়ার কন্ডিশনার (এসি); ৩ডি এমএসও ইনভার্টার টেকনোলজি, ক্লাউড কানেকটিভিটি, স্মার্ট অ্যালার্ট সিস্টেম, সুপার ফ্রিজিং টেকনোলজি, ফাস্ট আইস মেকিং, ইউনিফরম কুলিং ফ্লো এবং আল্ট্রা লো নয়েজ ফিচারসমৃদ্ধ স্মার্ট রেফ্রিজারেটর; ফোর-কে রেজ্যুলেশনের ওয়েবওএস অপারেটিং সিস্টেম, ভিডিএস সনদপ্রাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার বাল্ব ও ফায়ার প্রোটেকশন এজেন্ট, ডলবি অ্যাটোমসের মতো সর্বাধুনিক ফিচারের গুগল সার্টিফায়েড অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি, ১১ জেনারেশনের ল্যাপটপ, পিসিবি (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড), স্মার্টওয়াচ, স্মার্ট টেবিল, সাইলেন্ট ফিচারের পরিবেশবান্ধব কম্প্রেসর, স্মার্টফোন, অ্যারোডাইনামিক ডিজাইনের লো-নয়েজ ফ্যান।
সিইএস-এ প্রদর্শিতব্য ওয়ালটনের পণ্য তালিকায় আরও আছে—অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও গ্লাস ডোর, ওক্সিফ্রেশ, এয়ার ট্র্যাশ, স্টেইন ট্র্যাশ, ইন্টেলিজেন্ট ড্রাইং, ওয়াইফাই স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচারের ওয়াশিং মেশিন, আইস ক্র্যাশার, চপার, এসএস ব্লেন্ডার, ওয়াইফাই বেজড স্মার্ট কন্ট্রোল এলইডি লাইট, ডিজিটাল কুকার, রাইস কুকার, ইন্ডাকশন কুকার, স্মার্ট স্টিম মোড, মাইক্রোফাইবার প্যাড স্ট্রাকচার এবং এলইডি ডিসপ্লে উইনডো ফিচারের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার।
পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি ‘সিইএস-২০২৩’ এ ১৭৫টির বেশি কনফারেন্স সেশন হবে। এসব সেশনে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) ও রোবোটিক্স, পরিবেশ ও স্থায়িত্ব, মেটাভার্স ও গেমিং, ডিজিটাল স্বাস্থ্য, স্মার্ট হোম ও লাইফস্টাইল, যানবাহন প্রযুক্তি ও উন্নত গতিশীলতা, হোম বিনোদন, স্ট্রিমিং এবং আরও অনেক কিছুর অগ্রগতি তুলে ধরা হবে।