এলপিজি আমদানিকারকরাই মানছেন না বিইআরসির দর
বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) ঘোষিত এলপি গ্যাসের দর আমদানিকারকরা পালন করছেন না। বিইআরসি যেদিন ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১১৭৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সেদিন পাইকারি পর্যায়ে ১২০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
এমনটাই দাবি করেছেন বাংলাদেশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. সেলিম খান। রোববার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ((বিইআরসি) হল রুমে এলপি গ্যাসের দর ঘোষণার সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিম খান এমন অভিযোগ করেন। বিইআরসি কর্তৃক এপ্রিল মাসের দর ঘোষণার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে সেলিম খানের এমন অভিযোগে কমিশন খানিকটা বিব্রত পরিস্থিতির মুখে পড়ে যায়।
সেলিম খান বলেন, আপনারা ১২ কেজি সিলিন্ডারের দর ২৪৪ টাকা কমিয়ে ১১৭৮ টাকা করেছেন। কিন্তু আমদানিকারকরা আজকে (২ এপ্রিল) মিল গেটে ১২ কেজির দর ঘোষণা করেছে ১২০০ টাকা। বিইআরসির হিসেব অনুযায়ী আমাদের (ডিস্ট্রিবিউটর) পাওয়ার কথা ১১০৬ টাকা দরে। এরপর আমাদের কমিশন ৩৪ টাকা এবং খুচরা বিক্রেতার কমিশন ৩৮ টাকা ধরে ভোক্তা পর্যায়ে ১১৭৮ টাকা হওয়ার কথা। অথচ আমাদেরকে ৯৪ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। আমাদের পক্ষে ১১৭৮ টাকা বিইআরসি ঘোষিত দরে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
অভিন্ন অভিযোগ করেন বাংলাদেশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক তাহের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহের কোরাইশী। ওমেরা এলপি গ্যাসের ওই ডিস্ট্রিবিউটর দাবি করেন, তাদের কোম্পানিও মিলগেটে ১২০০ টাকা দর ঘোষণা করেছে। তাদের কমপক্ষে ৯০ টাকা কমিশন না হলে লোকসান দিতে হবে।
তিনি বলেন, গতমাসে (মার্চে) ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ১৪২২ টাকায়। অথচ তখন আমাদের কিনতে হয়েছে ১৪৫০ টাকা দরে। বিইআরসি ঘোষিত দরে কোন দিনেই তারা কিনতে পাননি।
জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান নূরুল আমিন অনেকটা দায়সারা উত্তর দেন। তিনি বলেন, আমরা আজকে দর ঘোষণা করলাম, দেখেন কমে কিনা। আমরা আমদানিকারকদের সঙ্গে বসেই দর চূড়ান্ত করেছি। তারা অবশ্যই মেনে চলবে। যদি না হয়, আমাদের অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সামনে এসে যে অভিযোগ দিলেন, তারপরও আর কি অভিযোগ পেতে চান। সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে খানিকটা তড়িঘড়ি করে সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করা হয়।
ঘোষিত দরে বাজারে এলপি গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ পুরনো। এসব অভিযোগের বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দর ঘোষণা করলাম, এখন ভোক্তা অধিদফতর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানো হবে। দর কার্যকর করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে, আর জোরদার করা হবে।
বিইআরসি চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন ছিল, মোবাইল কোর্টে শুধু খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা তো বিইআরসি ঘোষিত দরে কিনতে পারছে না। আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। কমিশন এ বিষয়ে কি ভাবছে। জবাবে বলেন, প্রয়োজন হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তাপর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৪৪ টাকা কমিয়ে ১১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা গত মার্চে ছিল ১৪২২ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৪৯৮ টাকা। অন্যদিকে অটোগ্যাস লিটার ৫৪.৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে সর্বপ্রথম দেশে বেসরকারি পর্যায়ে বিক্রি হওয়া এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই থেকে প্রতিমাসেই নিয়ম করে দাম সমন্বয় চলছে। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন। ১২ এপ্রিল দর ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল আমদানি নির্ভর এই জ্বালানির সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে ভিত্তি মূল্য ধরা হবে।সৌদির দর উঠানামা করলে ভিত্তিমূল্য উঠানামা করবে। অন্যান্য কমিশন অরপরিবর্তিত থাকবে।
এলপি গ্যাসের দর ঘোষণার শুরু থেকেই টানাপোড়েল চলে আসছে বিইআরসি ও আমদানিকারকদের মধ্যে। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে দর ঘোষণার পর কমিশন নিয়ে আপত্তি তোলেন লোয়াব (এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন)। তারা কমিশন বাড়িয়ে দেওয়ায় দাবি তোলেন। বিইআরসি অনেকটা বাধ্য হয়ে ৭ মাসের মাথায় ৩৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪১ টাকা করেন। তারপরও খুব কম সময়েই দর কার্যকর হতে দেখা গেছে।